ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাখিদের দিয়েই হচ্ছে খেতের পোকা দমন

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রংপুরে পাখিদের দিয়েই হচ্ছে খেতের পোকা দমন। পাখিরা দোল খেতে খেতে আরামে পোকা ধরে খাচ্ছে। কীটনাশক ওষুধ ছাড়াই পোকা দমনে পাওয়া যাচ্ছে সাফল্য।

পাখি দিযে পোকা দমনের এই পদ্ধতিকে বলা হয় পার্চিং পদ্ধতি। বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে পার্চিং পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে রংপুর অঞ্চলে। এই পদ্ধতির ফলে  কৃষকদের আর্থিক ক্ষতি কমার পাশাপাশি দূষণের হাত থেকে পরিবেশও রক্ষা হচ্ছে। রংপুরে এভাবে পোকা দমনে প্রায় ৮৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর ১০ থেকে ৩০ শতাংশ ফসলের ক্ষতি করে পোকামাকড়। আবার পোকামাকড়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় বাড়ে আরো ১০ শতাংশ। পার্চিং পদ্ধতির ফলে কৃষকরা যেমন ফসলের পোকামাকড় দমন করতে পারছেন তেমনি উৎপাদন ব্যয়ও কমে আসছে।

কৃষি অফিসের মতে, দুই ধরনের পার্চিং পদ্ধতি রয়েছে। এর একটি হচ্ছে মৃত পার্চিং (ডেড)। ডেড পার্চিং সাধারণত বাঁশের কঞ্চি, গাছের ডালপালা ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা হয়। অপরটি হচ্ছে  জীবন্ত পার্চিং (লাইভ)। এটি ধৈঞ্চা গাছের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। জীবন্ত পার্চিংয়ের ক্ষেত্রে আফ্রিকান ধৈঞ্চা খুবই উপকারি। ধান ফসলে প্রতি ৫ শতকে ১ টি করে পার্চিং ব্যবহার করতে হয়। একর প্রতি ১৮ টি থেকে ২০ টি পার্চিং ব্যবহার করা হয়। ফসল রোপণের পরপরই পার্চিং স্থাপন করা হয়।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের ৫ জেলায় এবার পার্চিং পদ্ধতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭৫টি। এর মধ্যে অর্জন হয়েছে ৫ লাখ ৭৪২ টি। অর্জনের শতকরা হার ৮৪ দশমিক ৭০ শতাংশ।

এর মধ্যে রংপুর জেলায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৯৫টি। এর মধ্যে লাইভ অর্থাত জীবন্ত অর্জিত হয়েছে ৪৩ হাজার ৭০০টি এবং ডেড অর্জিত হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৯৯৫টি। অর্জনের হার ৯৪ দশমিক ১৪ শতাংশ।

গাইবান্ধা জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৩ হাজার ১৩৫টি। এর মধ্যে লাইভ ৫ হাজার ৫০০টি এবং ডেড ৭১ হাজার ৮০০টি। অর্জনের হার ৬২ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

কুড়িগ্রামের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ১২ হাজার ৮৯৫টি। এর মধ্যে লাইভ ১৩ হাজার ৫৬৭টি এবং ডেড ৮৩ হাজার ৫২৩টি। অর্জনের হার ৮৬ শতাংশ।

লালমনিরহাটে লক্ষ্যমাত্রার ৫০ হাজার ২৫০টির মধ্যে লাইভ অর্জিত হয়েছে ২৬ হাজার ২০০টি এবং ডেড অর্জিত হয়েছে ৭ হাজার ৬৪৩টি। শতকরা হার ৮৯দশমিক ৩৫ শতাংশ।

নীলফামারীতে লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ১২ হাজার ৩৭০টি। এর মধ্যে লাইভ অর্জিত হয়েছে ৭২ হাজার ৬৪৭টি এবং ডেড অর্জিত হয়েছে ২৮ হাজার ২৩৮টি। শতকরা হার ৮৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদতত্ত্ববিদ মেজবাহুল ইসলাম জানান, পার্চিংয়ের মাধ্যমে পোকার বংশবিস্তার কমানো যায়। সহজেই পোকার বসতি ধ্বংস করা যায়। এমনকি পোকার বসতি তৈরি করার সুযোগ নষ্ট করা যায়। এছাড়াও পাখির বিষ্ঠা জমিতে জৈব পদার্থ যোগ করে জমির উর্বর শক্তি বৃদ্ধি করে। ফিঙ্গে, শালিক, বুলবুলি, শ্যামা, দোয়েল, সাত ভায়রা এসব পাখিরা পার্চিং এ বসে পোকা ধরে খায়। একটি ফিঙে পাখি সারা দিনে কমপক্ষে ৩০ টি করে মাজরা পোকার মথ, ডিম, কীড়া ও পুত্তলী খেয়ে থাকে। একটি পাখির দ্বারা প্রতি মাসে কমপক্ষে ২ লাখ ৭০ হাজার পোকা ধ্বংস করা সম্ভব হয়।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

পাখিদের দিয়েই হচ্ছে খেতের পোকা দমন

আপডেট টাইম : ০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রংপুরে পাখিদের দিয়েই হচ্ছে খেতের পোকা দমন। পাখিরা দোল খেতে খেতে আরামে পোকা ধরে খাচ্ছে। কীটনাশক ওষুধ ছাড়াই পোকা দমনে পাওয়া যাচ্ছে সাফল্য।

পাখি দিযে পোকা দমনের এই পদ্ধতিকে বলা হয় পার্চিং পদ্ধতি। বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে পার্চিং পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে রংপুর অঞ্চলে। এই পদ্ধতির ফলে  কৃষকদের আর্থিক ক্ষতি কমার পাশাপাশি দূষণের হাত থেকে পরিবেশও রক্ষা হচ্ছে। রংপুরে এভাবে পোকা দমনে প্রায় ৮৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর ১০ থেকে ৩০ শতাংশ ফসলের ক্ষতি করে পোকামাকড়। আবার পোকামাকড়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় বাড়ে আরো ১০ শতাংশ। পার্চিং পদ্ধতির ফলে কৃষকরা যেমন ফসলের পোকামাকড় দমন করতে পারছেন তেমনি উৎপাদন ব্যয়ও কমে আসছে।

কৃষি অফিসের মতে, দুই ধরনের পার্চিং পদ্ধতি রয়েছে। এর একটি হচ্ছে মৃত পার্চিং (ডেড)। ডেড পার্চিং সাধারণত বাঁশের কঞ্চি, গাছের ডালপালা ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা হয়। অপরটি হচ্ছে  জীবন্ত পার্চিং (লাইভ)। এটি ধৈঞ্চা গাছের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। জীবন্ত পার্চিংয়ের ক্ষেত্রে আফ্রিকান ধৈঞ্চা খুবই উপকারি। ধান ফসলে প্রতি ৫ শতকে ১ টি করে পার্চিং ব্যবহার করতে হয়। একর প্রতি ১৮ টি থেকে ২০ টি পার্চিং ব্যবহার করা হয়। ফসল রোপণের পরপরই পার্চিং স্থাপন করা হয়।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের ৫ জেলায় এবার পার্চিং পদ্ধতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭৫টি। এর মধ্যে অর্জন হয়েছে ৫ লাখ ৭৪২ টি। অর্জনের শতকরা হার ৮৪ দশমিক ৭০ শতাংশ।

এর মধ্যে রংপুর জেলায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৯৫টি। এর মধ্যে লাইভ অর্থাত জীবন্ত অর্জিত হয়েছে ৪৩ হাজার ৭০০টি এবং ডেড অর্জিত হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৯৯৫টি। অর্জনের হার ৯৪ দশমিক ১৪ শতাংশ।

গাইবান্ধা জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৩ হাজার ১৩৫টি। এর মধ্যে লাইভ ৫ হাজার ৫০০টি এবং ডেড ৭১ হাজার ৮০০টি। অর্জনের হার ৬২ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

কুড়িগ্রামের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ১২ হাজার ৮৯৫টি। এর মধ্যে লাইভ ১৩ হাজার ৫৬৭টি এবং ডেড ৮৩ হাজার ৫২৩টি। অর্জনের হার ৮৬ শতাংশ।

লালমনিরহাটে লক্ষ্যমাত্রার ৫০ হাজার ২৫০টির মধ্যে লাইভ অর্জিত হয়েছে ২৬ হাজার ২০০টি এবং ডেড অর্জিত হয়েছে ৭ হাজার ৬৪৩টি। শতকরা হার ৮৯দশমিক ৩৫ শতাংশ।

নীলফামারীতে লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ১২ হাজার ৩৭০টি। এর মধ্যে লাইভ অর্জিত হয়েছে ৭২ হাজার ৬৪৭টি এবং ডেড অর্জিত হয়েছে ২৮ হাজার ২৩৮টি। শতকরা হার ৮৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদতত্ত্ববিদ মেজবাহুল ইসলাম জানান, পার্চিংয়ের মাধ্যমে পোকার বংশবিস্তার কমানো যায়। সহজেই পোকার বসতি ধ্বংস করা যায়। এমনকি পোকার বসতি তৈরি করার সুযোগ নষ্ট করা যায়। এছাড়াও পাখির বিষ্ঠা জমিতে জৈব পদার্থ যোগ করে জমির উর্বর শক্তি বৃদ্ধি করে। ফিঙ্গে, শালিক, বুলবুলি, শ্যামা, দোয়েল, সাত ভায়রা এসব পাখিরা পার্চিং এ বসে পোকা ধরে খায়। একটি ফিঙে পাখি সারা দিনে কমপক্ষে ৩০ টি করে মাজরা পোকার মথ, ডিম, কীড়া ও পুত্তলী খেয়ে থাকে। একটি পাখির দ্বারা প্রতি মাসে কমপক্ষে ২ লাখ ৭০ হাজার পোকা ধ্বংস করা সম্ভব হয়।