ঢাকা , শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রূপকল্প ২০৪১

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশের কাতারে সামিল করার লক্ষ্য সামনে রেখে রূপকল্প ২০৪১ এর রূপরেখা অনুমোদন দিয়েছে সরকার। ২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৯.৯ শতাংশ, গড় মাথাপিছু আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৯৯৪ মার্কিন ডলার, প্রত্যাশিত গড় আয়ুষ্কাল ৮০ বছর। এ সময়ের মধ্যে বিনিয়োগ দাঁড়াবে ৪৬.৯ শতাংশ এবং রাজস্ব আদায়ের হার দাঁড়াবে ২৪.১শতাংশ। এমন সব হিসাব নিকাশ ও লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে প্রণীত রূপকল্প ২০৪১ এর খসড়া গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেন কমিটির চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এফডিআর ৩ শতাংশ, সরকারি বিনিয়োগ ৮.৯ শতাংশ এবং বেসরকারি বিনিয়োগ ৩৮ শতাংশের উপর ভর করে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বেগবান হয়ে উঠবে। মোট জাতীয় সঞ্চয় ৪৬.৭ শতাংশ, মোট দেশজ সঞ্চয় ৪২.৭ শতাংশ, মূল্যস্ফীতি ৪.৪ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দারিদ্র্য নিরসন, আয়বৈষম্য হ্রাস, নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রফতানি বহুমুখীকরণ, বৈদেশিক বাণিজ্য ও লেনদেনে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা, টেকসই বিদ্যুত ও জ্বালানি ব্যবস্থাপনা, টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মতো ইস্যুগুলোকে সামনে রেখে এই রূপকল্প প্রণয়ন করার কথা বলা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দৃশ্যমান এসব প্রত্যাশা, পরিকল্পনা তথা রূপকল্প খুবই আশাব্যঞ্জক। তবে চলমান বাস্তবতায় এই লক্ষ্যমাত্রা এবং জনগণের আস্থা অর্জন কতটা সম্ভব তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ আছে। বিশেষত: গণতন্ত্রায়ন এবং সুশাসন নিশ্চিত করার মতো রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিরসনের উপর এই রূপকল্পের বাস্তবায়ন অনেকাংশে নির্ভরশীল।

অষ্টম জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহারে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ প্রথম রূপকল্প ২০২১ বা ‘ভিশন ২০২১’ এর ঘোষণা দিয়েছিল। নতুন প্রজন্মের কাছে তা ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা, যা ২০২১ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার জন্য ভিশন-২০২১ এর লক্ষ্য হিসেবে যে ৮টি বিষয় চিহ্নিত করা হয়েছিল, তা হচ্ছে- ১. গণতন্ত্র ও কার্যকর সংসদীয় ব্যবস্থা, ২. রাজনৈতিক কাঠামো, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং জনগণের অংশগ্রহণ, ৩. আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুশাসন এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব এড়ানো, ৪. রাজনৈতিক সংস্কৃতির রূপান্তর, ৫ দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন, ৬. ক্ষমতায়ন ও মহিলাদের জন্য সমান অধিকার, ৭. অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও উদ্যোগ এবং ৮. বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের অবস্থান উন্নত করা। চলমান বাস্তবতার বিচারে ভিশন ২০২১’র রূপরেখা বা লক্ষ্যসমূহ অনেক বেশি বাস্তবসম্মত ও জনআকাক্সক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। এসব লক্ষ্য অর্জন ছাড়া উন্নত তো নয়ই স্থিতিশীল বাংলাদেশের প্রত্যাশা অর্জনও সম্ভব নয়। ভিশন ২০২১ শুধুমাত্র ডিজিটাল বাংলাদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সেখানে গণতন্ত্র, সুশাসন, নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ, বৈষম্য নিরসনসহ সামাজিক-অর্থনৈতিক অগ্রগতির মূল ভিত্তিসমূহকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে একযুগ পেরিয়ে গেছে, মাঝখানে দু’টি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে সব নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ, আস্থা, বিশ্বাস, অংশগ্রহণসহ রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে স্বীকৃত মূল্যবোধের চর্চা কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে, সামগ্রিক অর্জনের প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ এসব বিষয় কম বিবেচ্য নয়। মানুষের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে ভূলুণ্ঠিত করে নৈতিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে চরম অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিয়ে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ও অবকাঠামো উন্নয়নকে উন্নত বা কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ বলা চলে না। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ছাড়া সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং উন্নয়নের নানা পরিসংখ্যানগত হিসাব নিকাশ ও দাবি-দাওয়া নিয়ে দেশে রাজনৈতিক বিতর্ক অনেক হয়েছে এবং হচ্ছে। যেনতেন প্রকারে পরিসংখ্যান দিয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে যে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা দেশে চলছে তা’ আদৌ জনআকাক্সক্ষার পরিপূরক কিনা তা নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। একদিকে আমরা উন্নত বাংলাদেশের রূপরেখা মেলে ধরছি, অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার পথরেখাও দেখতে পাচ্ছি, একই সময়ে দেখতে পাচ্ছি, বায়ু দূষণে বিশ্বে শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের রাজধানী বিশ্বের বসবাসের অযোগ্য শহরগুলোর তালিকায় শীর্ষে স্থান পাচ্ছে। বাংলাদেশের নদীগুলো দখলে-দূষণে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। শহরের মানুষকে এখনো নিরাপদ পানির যোগান দিতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য থেকে শুরু করে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ পর্যন্ত ভেজাল-নকল থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, ভেজাল খাদ্যের কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যেতে বাধ্য হচ্ছে। দেশে উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা না পেয়ে হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। এ সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা এভাবে বিদেশে চলে যাচ্ছে। খুন, ধর্ষণ, নৈতিক অবক্ষয়, মাদক, অশ্লীলতা, কিশোর অপরাধ, মানবিক মূল্যবোধের চরম হীনাবস্থা ইত্যাদি জাতীয় জীবনের নৈতিক মানকে অতি দ্রুত হতাশাজনক পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে। রাজনৈতিক ক্ষমতা ও পদ-পদবি ব্যবহার করে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি করে একশ্রেণির মানুষ রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছে। অন্যদিকে উপযুক্ত কর্মসংস্থান, মূল্যস্ফীতি এবং চিকিৎসার ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে লাখ লাখ পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। অপরিমেয় ভ্যাট, ট্যাক্স, ইউটিলিটির বর্ধিত ব্যয়, ঘুষ, চাঁদা জীবনযাত্রার ব্যয়ভারে মানুষের নাভিশ্বাস ওঠছে। নিরাপত্তাহীনতা, সামাজিক অবক্ষয় এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার নিগড়ে স্বস্তিহীন জীবন পার করছে মানুষ। রূপকল্প ২০৪১ এর রূপরেখা বাস্তবায়নের আগে মানুষের জন্য স্বস্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা, গণতন্ত্র, সুশাসন, জননিরাপত্তা ও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরসন ছাড়া সব উন্নয়নই অর্থহীন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

রূপকল্প ২০৪১

আপডেট টাইম : ০৯:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশের কাতারে সামিল করার লক্ষ্য সামনে রেখে রূপকল্প ২০৪১ এর রূপরেখা অনুমোদন দিয়েছে সরকার। ২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৯.৯ শতাংশ, গড় মাথাপিছু আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৯৯৪ মার্কিন ডলার, প্রত্যাশিত গড় আয়ুষ্কাল ৮০ বছর। এ সময়ের মধ্যে বিনিয়োগ দাঁড়াবে ৪৬.৯ শতাংশ এবং রাজস্ব আদায়ের হার দাঁড়াবে ২৪.১শতাংশ। এমন সব হিসাব নিকাশ ও লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে প্রণীত রূপকল্প ২০৪১ এর খসড়া গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেন কমিটির চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এফডিআর ৩ শতাংশ, সরকারি বিনিয়োগ ৮.৯ শতাংশ এবং বেসরকারি বিনিয়োগ ৩৮ শতাংশের উপর ভর করে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বেগবান হয়ে উঠবে। মোট জাতীয় সঞ্চয় ৪৬.৭ শতাংশ, মোট দেশজ সঞ্চয় ৪২.৭ শতাংশ, মূল্যস্ফীতি ৪.৪ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দারিদ্র্য নিরসন, আয়বৈষম্য হ্রাস, নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রফতানি বহুমুখীকরণ, বৈদেশিক বাণিজ্য ও লেনদেনে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা, টেকসই বিদ্যুত ও জ্বালানি ব্যবস্থাপনা, টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মতো ইস্যুগুলোকে সামনে রেখে এই রূপকল্প প্রণয়ন করার কথা বলা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দৃশ্যমান এসব প্রত্যাশা, পরিকল্পনা তথা রূপকল্প খুবই আশাব্যঞ্জক। তবে চলমান বাস্তবতায় এই লক্ষ্যমাত্রা এবং জনগণের আস্থা অর্জন কতটা সম্ভব তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ আছে। বিশেষত: গণতন্ত্রায়ন এবং সুশাসন নিশ্চিত করার মতো রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিরসনের উপর এই রূপকল্পের বাস্তবায়ন অনেকাংশে নির্ভরশীল।

অষ্টম জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহারে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ প্রথম রূপকল্প ২০২১ বা ‘ভিশন ২০২১’ এর ঘোষণা দিয়েছিল। নতুন প্রজন্মের কাছে তা ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা, যা ২০২১ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার জন্য ভিশন-২০২১ এর লক্ষ্য হিসেবে যে ৮টি বিষয় চিহ্নিত করা হয়েছিল, তা হচ্ছে- ১. গণতন্ত্র ও কার্যকর সংসদীয় ব্যবস্থা, ২. রাজনৈতিক কাঠামো, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং জনগণের অংশগ্রহণ, ৩. আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুশাসন এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব এড়ানো, ৪. রাজনৈতিক সংস্কৃতির রূপান্তর, ৫ দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন, ৬. ক্ষমতায়ন ও মহিলাদের জন্য সমান অধিকার, ৭. অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও উদ্যোগ এবং ৮. বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের অবস্থান উন্নত করা। চলমান বাস্তবতার বিচারে ভিশন ২০২১’র রূপরেখা বা লক্ষ্যসমূহ অনেক বেশি বাস্তবসম্মত ও জনআকাক্সক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। এসব লক্ষ্য অর্জন ছাড়া উন্নত তো নয়ই স্থিতিশীল বাংলাদেশের প্রত্যাশা অর্জনও সম্ভব নয়। ভিশন ২০২১ শুধুমাত্র ডিজিটাল বাংলাদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সেখানে গণতন্ত্র, সুশাসন, নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ, বৈষম্য নিরসনসহ সামাজিক-অর্থনৈতিক অগ্রগতির মূল ভিত্তিসমূহকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে একযুগ পেরিয়ে গেছে, মাঝখানে দু’টি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে সব নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ, আস্থা, বিশ্বাস, অংশগ্রহণসহ রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে স্বীকৃত মূল্যবোধের চর্চা কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে, সামগ্রিক অর্জনের প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ এসব বিষয় কম বিবেচ্য নয়। মানুষের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে ভূলুণ্ঠিত করে নৈতিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে চরম অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিয়ে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ও অবকাঠামো উন্নয়নকে উন্নত বা কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ বলা চলে না। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ছাড়া সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং উন্নয়নের নানা পরিসংখ্যানগত হিসাব নিকাশ ও দাবি-দাওয়া নিয়ে দেশে রাজনৈতিক বিতর্ক অনেক হয়েছে এবং হচ্ছে। যেনতেন প্রকারে পরিসংখ্যান দিয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে যে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা দেশে চলছে তা’ আদৌ জনআকাক্সক্ষার পরিপূরক কিনা তা নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। একদিকে আমরা উন্নত বাংলাদেশের রূপরেখা মেলে ধরছি, অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার পথরেখাও দেখতে পাচ্ছি, একই সময়ে দেখতে পাচ্ছি, বায়ু দূষণে বিশ্বে শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের রাজধানী বিশ্বের বসবাসের অযোগ্য শহরগুলোর তালিকায় শীর্ষে স্থান পাচ্ছে। বাংলাদেশের নদীগুলো দখলে-দূষণে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। শহরের মানুষকে এখনো নিরাপদ পানির যোগান দিতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য থেকে শুরু করে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ পর্যন্ত ভেজাল-নকল থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, ভেজাল খাদ্যের কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যেতে বাধ্য হচ্ছে। দেশে উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা না পেয়ে হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। এ সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা এভাবে বিদেশে চলে যাচ্ছে। খুন, ধর্ষণ, নৈতিক অবক্ষয়, মাদক, অশ্লীলতা, কিশোর অপরাধ, মানবিক মূল্যবোধের চরম হীনাবস্থা ইত্যাদি জাতীয় জীবনের নৈতিক মানকে অতি দ্রুত হতাশাজনক পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে। রাজনৈতিক ক্ষমতা ও পদ-পদবি ব্যবহার করে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি করে একশ্রেণির মানুষ রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছে। অন্যদিকে উপযুক্ত কর্মসংস্থান, মূল্যস্ফীতি এবং চিকিৎসার ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে লাখ লাখ পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। অপরিমেয় ভ্যাট, ট্যাক্স, ইউটিলিটির বর্ধিত ব্যয়, ঘুষ, চাঁদা জীবনযাত্রার ব্যয়ভারে মানুষের নাভিশ্বাস ওঠছে। নিরাপত্তাহীনতা, সামাজিক অবক্ষয় এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার নিগড়ে স্বস্তিহীন জীবন পার করছে মানুষ। রূপকল্প ২০৪১ এর রূপরেখা বাস্তবায়নের আগে মানুষের জন্য স্বস্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা, গণতন্ত্র, সুশাসন, জননিরাপত্তা ও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরসন ছাড়া সব উন্নয়নই অর্থহীন।