ঢাকা , শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পিতা-মাতার দায়িত্ব সন্তানদের নিতে হবে

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ পিতা-মাতার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালনের জন্য পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সন্তানদের কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, সন্তানের কারণে পিতা-মাতার কষ্ট হয় এবং তাদের মুখ থেকে যাতে ‘উহ্’ শব্দটি বের না হয়, এমনভাবে তাদের সেবা যত্ন করতে হবে। পিতা-মাতার প্রতি আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করার জন্য আয়াতও নাজিল করেছেন। ‘অকুল রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা।’  কোরআন এবং হাদিসে পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব পালন নিয়ে বহুভাবে তাকিদ দেয়া হয়েছে। তবে আখেরি জামানায় এসে অনেক সন্তানকেই পিতা-মাতার প্রতি উদাসীন হতে দেখা যায়। তারা যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। যে পিতা-মাতা নিজে কষ্ট করে বা না খেয়ে সন্তানকে অত্যন্ত মায়া-মমতা দিয়ে যত্ন করে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলেন দেখা যায়, সেই পিতা-মাতা সন্তানের দ্বারা অনেক সময় অবহেলিত, বঞ্চিত ও কষ্ট পান। মাঝে মাঝে এমন সংবাদও দেখা যায়, বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে সুশিক্ষিত অনেক সন্তান রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যায়। অনেকে তাদের বোঝা মনে করে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়। যে পিতা-মাতা গায়ের রক্ত পানি করে সন্তানের ভরণ-পোষণ করে বড় করে তোলে বৃদ্ধ বয়সে সেই পিতা-মাতাকেই অত্যন্ত কষ্টের দিন যাপন করতে হয়। সাধারণত পারিবারিক মূল্যবোধ ও নৈতিক অবক্ষয়ের কারণেই সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতাকে অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হতে হয়।
পিতা-মাতা ও পরিবারের সিনিয়র সদস্যদের সন্তানের বাধ্যতামূলক ভরণ-পোষণ করার জন্য দেশে আইন প্রণীত হয়েছে। ২০১৩ সালে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন পাস করা হয়। আইন অমান্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও রয়েছে। এ আইনে পিতা-মাতা, দাদা-দাদী এবং নানা-নানির ভরণ-পোষণ করা সন্তানের নৈতিক ও আইনি দায়িত্ব হিসেবে বলা হয়েছে। অন্যথায় তাদের শাস্তির বিধান রয়েছে। যদি কোনো প্রবীণ তার সন্তানের বিরুদ্ধে ভরণ-পোষণ না করার অভিযোগ আনেন এবং তা প্রমাণিত হলে সন্তানদের ১ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদন্ড ভোগ করতে হবে বলে আইনে বলা হয়েছে। এছাড়া বলা হয়েছে, কোনো সন্তান তার বাবা বা মাকে অথবা উভয়কে তার বা ক্ষেত্রমতো তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো বৃদ্ধ নিবাস কিংবা অন্য কোথাও একত্রে কিংবা আলাদাভাবে বাস করতে বাধ্য করতে পারবে না। আইনের মূল কথা হচ্ছে, সন্তানকে তার পিতা-মাতার ভরণ- পোষণ এবং যত্নের পরিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবে এ আইনটি বিধির অভাবে পরিপূর্ণভাবে কার্যকর হচ্ছে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, সুসন্তান এবং দায়িত্বশীল পিতা-মাতা একে অপরের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে, এটাই মানব সভ্যতার মূল শিক্ষা। একে অন্যের প্রতি দায়িত্বশীল না হলে মানুষের মানুষ হয়ে উঠার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। সন্তান জন্মদানের পর পিতা-মাতা যেভাবে নিজের জীবন তুচ্ছ করে সন্তানকে আগলে রাখে, তাকে বড় করে তোলে তার মূল্য কোনো কিছুর বিনিময়ে হয় না। পিতা-মাতার মূল্য সন্তানের পক্ষে শোধ করা সম্ভব নয়। দুঃখের বিষয়, বর্তমানে পরিবার ও সমাজে যে নৈতিক মূল্যবোধের অভাব এবং অবক্ষয় দেখা দিয়েছে, তাতে পিতা-মাতা ও সন্তানের সম্পর্ক অনেকটা শিথিল হয়ে যাচ্ছে। অনেক পিতা-মাতার ব্যস্ততার কারণে সন্তানের প্রতি যথাযথ মনোযোগ দিতে না পারায় সন্তান যেমন বিপথে চলে যাচ্ছে, তেমনি পিতা-মাতা নিজের জীবনের দিকে না তাকিয়ে সন্তানকে মানুষ করার জন্য যেভাবে নিবেদিত, তা অনেক সন্তান উপলব্ধি করছে না। ফলে অনেক উচ্চশিক্ষিত ও সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতা উপেক্ষিত হচ্ছে। তারা পিতা-মাতাকে বোঝা মনে করছে। তারা পিতা-মাতার সাথে একসাথে বসবাস করার চিন্তা না করে আলাদা করে দিচ্ছে কিংবা কোনো বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ঠিকমতো ভরণ-পোষণ দিচ্ছে না। একসাথে থাকলেও বাবা-মায়ের যথাথথ খোঁজ-খবর নিচ্ছে না। তারা এটা বুঝতে চায় না, এক সময় তাদেরও বৃদ্ধকালে উপনীত হতে হবে এবং তাদের সন্তানরাও অনুরূপ আচরণ করতে পারে। যদি একবার চিন্তা করে, তাদের মানুষ করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পিতা-মাতা কতটা ত্যাগ ও সংগ্রাম করেছেন এবং পবিত্র কোরআন ও হাদিসে পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্যের বিষয়টি স্মরণ করে, তবে কোনো সুসন্তানের পক্ষে পিতা-মাতার প্রতি উদাসীন থাকার কথা নয়। পরিতাপের বিষয়, আধুনিক যুগে এসে সন্তানদের মধ্যে এ ধরনের বোধ ও উপলব্ধি খুব কমই কাজ করতে দেখা যায়। তারা এটা মনে করে না, যে পিতা-মাতা নিজেদের নিঃশেষ করে তাদের গড়ে তুলেছে, বৃদ্ধ বয়সে এসে তারা কোথায় যাবে, কার কাছে থাকবে, কে দেখা-শোনা করবে। অনেকের মধ্যে এ প্রবণতা কাজ করে, পিতা-মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারলেই ভাল। ফলে অসংখ্য পিতা-মাতা বৃদ্ধ বয়সে এসে সন্তান কর্তৃক উপেক্ষিত ও অবহেলার শিকার হচ্ছে। এ কারণেই সরকার পিতা-মাতার ভরণ- পোষণের বিষয়টি সন্তান কর্তৃক নিশ্চিত করার জন্য আইন প্রণয়ন করেছে। অথচ এটা আইনের বিষয় নয়, এটা পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের স্বাভাবিক দায়িত্ব এবং মায়া-মমতার বিষয়।
প্রচলিত একটা কথা আছে, ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত’। এ কথার মর্মার্থ হচ্ছে, পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য কত বড় তা বোঝানো। এ সময়ে অনেক সন্তানই তাদের এ দায়িত্ব পালন করতে চায় না। এর জন্য আমাদের পারিবারিক শিক্ষা, সামাজিক মূল্যবোধের অভাব দায়ী। আমাদের আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থাও এ দায়িত্ব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবহিত করতে সক্ষম হচ্ছে না। তবে মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় এ দায়িত্ব সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান দেয়া হয়। আমরা মনে করি, প্রতিটি শিশুকে জীবনের সূচনা লগ্ন থেকে পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে গড়ে তোলা অপরিহার্য। পিতা-মাতা সন্তানকে আদর-যত্ন করতে ও মানবিক মূল্যবোধ শিক্ষা দিতে যথাযথ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন এটাও একান্তভাবে কাম্য। ছোট থেকেই যদি সন্তানকে এ ব্যাপারে শিক্ষা দেয়া হয়, তবে সন্তান বড় হলে তার সুফল পিতা-মাতাই পাবেন। পাশাপাশি সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার দায়িত্বের বিষয়টিও তুলে ধরতে হবে। এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষা থেকে পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব সম্পর্কে পাঠ্যপুস্তকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরতে হবে। সুসন্তান হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পিতা-মাতা এবং শিক্ষকসহ অভিভাবক শ্রেণীকে দায়িত্ব নিতে হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

পিতা-মাতার দায়িত্ব সন্তানদের নিতে হবে

আপডেট টাইম : ০৩:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ মার্চ ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ পিতা-মাতার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালনের জন্য পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সন্তানদের কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, সন্তানের কারণে পিতা-মাতার কষ্ট হয় এবং তাদের মুখ থেকে যাতে ‘উহ্’ শব্দটি বের না হয়, এমনভাবে তাদের সেবা যত্ন করতে হবে। পিতা-মাতার প্রতি আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করার জন্য আয়াতও নাজিল করেছেন। ‘অকুল রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা।’  কোরআন এবং হাদিসে পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব পালন নিয়ে বহুভাবে তাকিদ দেয়া হয়েছে। তবে আখেরি জামানায় এসে অনেক সন্তানকেই পিতা-মাতার প্রতি উদাসীন হতে দেখা যায়। তারা যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। যে পিতা-মাতা নিজে কষ্ট করে বা না খেয়ে সন্তানকে অত্যন্ত মায়া-মমতা দিয়ে যত্ন করে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলেন দেখা যায়, সেই পিতা-মাতা সন্তানের দ্বারা অনেক সময় অবহেলিত, বঞ্চিত ও কষ্ট পান। মাঝে মাঝে এমন সংবাদও দেখা যায়, বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে সুশিক্ষিত অনেক সন্তান রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যায়। অনেকে তাদের বোঝা মনে করে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়। যে পিতা-মাতা গায়ের রক্ত পানি করে সন্তানের ভরণ-পোষণ করে বড় করে তোলে বৃদ্ধ বয়সে সেই পিতা-মাতাকেই অত্যন্ত কষ্টের দিন যাপন করতে হয়। সাধারণত পারিবারিক মূল্যবোধ ও নৈতিক অবক্ষয়ের কারণেই সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতাকে অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হতে হয়।
পিতা-মাতা ও পরিবারের সিনিয়র সদস্যদের সন্তানের বাধ্যতামূলক ভরণ-পোষণ করার জন্য দেশে আইন প্রণীত হয়েছে। ২০১৩ সালে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন পাস করা হয়। আইন অমান্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও রয়েছে। এ আইনে পিতা-মাতা, দাদা-দাদী এবং নানা-নানির ভরণ-পোষণ করা সন্তানের নৈতিক ও আইনি দায়িত্ব হিসেবে বলা হয়েছে। অন্যথায় তাদের শাস্তির বিধান রয়েছে। যদি কোনো প্রবীণ তার সন্তানের বিরুদ্ধে ভরণ-পোষণ না করার অভিযোগ আনেন এবং তা প্রমাণিত হলে সন্তানদের ১ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদন্ড ভোগ করতে হবে বলে আইনে বলা হয়েছে। এছাড়া বলা হয়েছে, কোনো সন্তান তার বাবা বা মাকে অথবা উভয়কে তার বা ক্ষেত্রমতো তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো বৃদ্ধ নিবাস কিংবা অন্য কোথাও একত্রে কিংবা আলাদাভাবে বাস করতে বাধ্য করতে পারবে না। আইনের মূল কথা হচ্ছে, সন্তানকে তার পিতা-মাতার ভরণ- পোষণ এবং যত্নের পরিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবে এ আইনটি বিধির অভাবে পরিপূর্ণভাবে কার্যকর হচ্ছে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, সুসন্তান এবং দায়িত্বশীল পিতা-মাতা একে অপরের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে, এটাই মানব সভ্যতার মূল শিক্ষা। একে অন্যের প্রতি দায়িত্বশীল না হলে মানুষের মানুষ হয়ে উঠার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। সন্তান জন্মদানের পর পিতা-মাতা যেভাবে নিজের জীবন তুচ্ছ করে সন্তানকে আগলে রাখে, তাকে বড় করে তোলে তার মূল্য কোনো কিছুর বিনিময়ে হয় না। পিতা-মাতার মূল্য সন্তানের পক্ষে শোধ করা সম্ভব নয়। দুঃখের বিষয়, বর্তমানে পরিবার ও সমাজে যে নৈতিক মূল্যবোধের অভাব এবং অবক্ষয় দেখা দিয়েছে, তাতে পিতা-মাতা ও সন্তানের সম্পর্ক অনেকটা শিথিল হয়ে যাচ্ছে। অনেক পিতা-মাতার ব্যস্ততার কারণে সন্তানের প্রতি যথাযথ মনোযোগ দিতে না পারায় সন্তান যেমন বিপথে চলে যাচ্ছে, তেমনি পিতা-মাতা নিজের জীবনের দিকে না তাকিয়ে সন্তানকে মানুষ করার জন্য যেভাবে নিবেদিত, তা অনেক সন্তান উপলব্ধি করছে না। ফলে অনেক উচ্চশিক্ষিত ও সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতা উপেক্ষিত হচ্ছে। তারা পিতা-মাতাকে বোঝা মনে করছে। তারা পিতা-মাতার সাথে একসাথে বসবাস করার চিন্তা না করে আলাদা করে দিচ্ছে কিংবা কোনো বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ঠিকমতো ভরণ-পোষণ দিচ্ছে না। একসাথে থাকলেও বাবা-মায়ের যথাথথ খোঁজ-খবর নিচ্ছে না। তারা এটা বুঝতে চায় না, এক সময় তাদেরও বৃদ্ধকালে উপনীত হতে হবে এবং তাদের সন্তানরাও অনুরূপ আচরণ করতে পারে। যদি একবার চিন্তা করে, তাদের মানুষ করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পিতা-মাতা কতটা ত্যাগ ও সংগ্রাম করেছেন এবং পবিত্র কোরআন ও হাদিসে পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্যের বিষয়টি স্মরণ করে, তবে কোনো সুসন্তানের পক্ষে পিতা-মাতার প্রতি উদাসীন থাকার কথা নয়। পরিতাপের বিষয়, আধুনিক যুগে এসে সন্তানদের মধ্যে এ ধরনের বোধ ও উপলব্ধি খুব কমই কাজ করতে দেখা যায়। তারা এটা মনে করে না, যে পিতা-মাতা নিজেদের নিঃশেষ করে তাদের গড়ে তুলেছে, বৃদ্ধ বয়সে এসে তারা কোথায় যাবে, কার কাছে থাকবে, কে দেখা-শোনা করবে। অনেকের মধ্যে এ প্রবণতা কাজ করে, পিতা-মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারলেই ভাল। ফলে অসংখ্য পিতা-মাতা বৃদ্ধ বয়সে এসে সন্তান কর্তৃক উপেক্ষিত ও অবহেলার শিকার হচ্ছে। এ কারণেই সরকার পিতা-মাতার ভরণ- পোষণের বিষয়টি সন্তান কর্তৃক নিশ্চিত করার জন্য আইন প্রণয়ন করেছে। অথচ এটা আইনের বিষয় নয়, এটা পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের স্বাভাবিক দায়িত্ব এবং মায়া-মমতার বিষয়।
প্রচলিত একটা কথা আছে, ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত’। এ কথার মর্মার্থ হচ্ছে, পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য কত বড় তা বোঝানো। এ সময়ে অনেক সন্তানই তাদের এ দায়িত্ব পালন করতে চায় না। এর জন্য আমাদের পারিবারিক শিক্ষা, সামাজিক মূল্যবোধের অভাব দায়ী। আমাদের আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থাও এ দায়িত্ব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবহিত করতে সক্ষম হচ্ছে না। তবে মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় এ দায়িত্ব সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান দেয়া হয়। আমরা মনে করি, প্রতিটি শিশুকে জীবনের সূচনা লগ্ন থেকে পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে গড়ে তোলা অপরিহার্য। পিতা-মাতা সন্তানকে আদর-যত্ন করতে ও মানবিক মূল্যবোধ শিক্ষা দিতে যথাযথ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন এটাও একান্তভাবে কাম্য। ছোট থেকেই যদি সন্তানকে এ ব্যাপারে শিক্ষা দেয়া হয়, তবে সন্তান বড় হলে তার সুফল পিতা-মাতাই পাবেন। পাশাপাশি সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার দায়িত্বের বিষয়টিও তুলে ধরতে হবে। এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষা থেকে পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব সম্পর্কে পাঠ্যপুস্তকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরতে হবে। সুসন্তান হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পিতা-মাতা এবং শিক্ষকসহ অভিভাবক শ্রেণীকে দায়িত্ব নিতে হবে।