ঢাকা , শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝুঁকিপূর্ণ প্লাজমা থেরাপি

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ মহামারীর এ সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য প্লাজমা থেরাপি নিয়ে হুলস্থুল কর্মকাণ্ড চলছে। বিশেষজ্ঞ মতামত ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের ফলে অনেকে ধরে নিচ্ছেন, কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেই প্লাজমা থেরাপি তাকে সারিয়ে তুলতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমাদের অনেক ডাক্তারও বাছবিচার ছাড়াই প্লাজমা থেরাপির কথা বলছেন। আর হেপাটাইটিস এ, বি, সি, এইডস ও অন্যান্য রোগ বা যে কোনো ধরনের জীবাণু পরীক্ষা ছাড়াই করোনা থেকে সুস্থ ব্যক্তির কাছ থেকে প্লাজমা নিয়ে প্রয়োগ করা হচ্ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত গুরুতর রোগীর দেহে। এতে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি হয়তো করোনা থেকে মুক্ত হচ্ছেন; কিন্তু অজান্তে নিজের শরীরে নিয়ে নিচ্ছেন নানা রোগের জীবাণু, যা বাকি জীবন তাকে তাড়িয়ে বেড়াবে। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।

এজন্য প্লাজমা নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। যেমন- প্লাজমা দাতার শরীরে হেপাটাইটিস এ, বি ও সি’র অস্তিত্ব রয়েছে কিনা, রক্তে প্লাজমার পরিমাণ কেমন আছে, দাতার করোনা সংক্রমণের পরীক্ষা আরটি-পিসিআরের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছিল কিনা এবং তিনি করোনামুক্ত হওয়ার পর ১৪ দিন পার হয়েছে কিনা। এ ছাড়া এইডস ও অন্যান্য জটিল রোগের জীবাণু প্লাজমা দাতার শরীরে রয়েছে কিনা, সেটিও পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া দরকার। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, মলিকিউলার টেস্ট না করে কেবল র‌্যাপিড টেস্ট করে এবং প্লাজমার নিউট্রালাইজ অ্যান্টিবডি না করেই প্লাজমা নেয়া ও প্রয়োগ করা হচ্ছে। অথচ মলিকিউলার টেস্ট ছাড়া হেপাটাইটিস এ, বি ও সি অনেক সময় ধরা পড়ে না এবং আমাদের দেশে গড়ে ১৪ শতাংশ মানুষ এসব ভাইরাল ইনফেকশনে আক্রান্ত। সুতরাং এগুলো ভালোভাবে পরীক্ষা ছাড়া প্লাজমা না নেয়া এবং করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর শরীরে তা প্রয়োগ না করাই স্বাস্থ্যসঙ্গত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিধি অনুযায়ী, প্লাজমা থেরাপি ট্রায়াল ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহার করা যায়, চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে নয়। ১৯৫৪ সাল থেকে শুরু হওয়া প্লাজমা থেরাপি ট্রায়াল হিসেবেই বিভিন্ন দেশে ব্যবহার হচ্ছে; কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে অনেক ডাক্তার সেটি না মেনে একে সরাসরি চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার করে যাচ্ছেন। আমরা মনে করি, মহামারীর এ সময়ে সাময়িক উপকারের জন্য ভালোভাবে চিন্তাভাবনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে চিকিৎসা হিসেবে প্লাজমা থেরাপি ব্যবহারের লাগাম টেনে ধরার বিকল্প নেই। কারণ, প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগের পরও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে। বাকি যে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ সুস্থ হয়েছেন, তারা প্লাজমা থেরাপি ছাড়াও সুস্থ হয়ে উঠতেন বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সুতরাং এটি প্রয়োগের জন্য অন্যান্য ঝুঁকি নেয়ার কোনো অর্থ যে নেই, তা স্পষ্ট। তার ওপর সংগৃহীত প্লাজমা করোনাভাইরাসমুক্ত কিনা, সেটিও নিশ্চিত করে বলা যায় না। কারণ কেউ আক্রান্ত হওয়ার পর ওষুধ খেয়ে সুস্থ হলেও পুনরায় টেস্ট না করে প্লাজমা দেয়ার হিড়িক পড়েছে। এমনকি প্লাজমা দেয়ার জন্য একশ্রেণির দালালের উদ্ভব ও অর্থ লেনদেনের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারের প্লাজমাসংক্রান্ত গাইডলাইন ও তার কঠোর অনুসরণই সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতের একমাত্র পথ।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

ঝুঁকিপূর্ণ প্লাজমা থেরাপি

আপডেট টাইম : ০৩:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ জুলাই ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ মহামারীর এ সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য প্লাজমা থেরাপি নিয়ে হুলস্থুল কর্মকাণ্ড চলছে। বিশেষজ্ঞ মতামত ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের ফলে অনেকে ধরে নিচ্ছেন, কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেই প্লাজমা থেরাপি তাকে সারিয়ে তুলতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমাদের অনেক ডাক্তারও বাছবিচার ছাড়াই প্লাজমা থেরাপির কথা বলছেন। আর হেপাটাইটিস এ, বি, সি, এইডস ও অন্যান্য রোগ বা যে কোনো ধরনের জীবাণু পরীক্ষা ছাড়াই করোনা থেকে সুস্থ ব্যক্তির কাছ থেকে প্লাজমা নিয়ে প্রয়োগ করা হচ্ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত গুরুতর রোগীর দেহে। এতে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি হয়তো করোনা থেকে মুক্ত হচ্ছেন; কিন্তু অজান্তে নিজের শরীরে নিয়ে নিচ্ছেন নানা রোগের জীবাণু, যা বাকি জীবন তাকে তাড়িয়ে বেড়াবে। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।

এজন্য প্লাজমা নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। যেমন- প্লাজমা দাতার শরীরে হেপাটাইটিস এ, বি ও সি’র অস্তিত্ব রয়েছে কিনা, রক্তে প্লাজমার পরিমাণ কেমন আছে, দাতার করোনা সংক্রমণের পরীক্ষা আরটি-পিসিআরের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছিল কিনা এবং তিনি করোনামুক্ত হওয়ার পর ১৪ দিন পার হয়েছে কিনা। এ ছাড়া এইডস ও অন্যান্য জটিল রোগের জীবাণু প্লাজমা দাতার শরীরে রয়েছে কিনা, সেটিও পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া দরকার। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, মলিকিউলার টেস্ট না করে কেবল র‌্যাপিড টেস্ট করে এবং প্লাজমার নিউট্রালাইজ অ্যান্টিবডি না করেই প্লাজমা নেয়া ও প্রয়োগ করা হচ্ছে। অথচ মলিকিউলার টেস্ট ছাড়া হেপাটাইটিস এ, বি ও সি অনেক সময় ধরা পড়ে না এবং আমাদের দেশে গড়ে ১৪ শতাংশ মানুষ এসব ভাইরাল ইনফেকশনে আক্রান্ত। সুতরাং এগুলো ভালোভাবে পরীক্ষা ছাড়া প্লাজমা না নেয়া এবং করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর শরীরে তা প্রয়োগ না করাই স্বাস্থ্যসঙ্গত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিধি অনুযায়ী, প্লাজমা থেরাপি ট্রায়াল ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহার করা যায়, চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে নয়। ১৯৫৪ সাল থেকে শুরু হওয়া প্লাজমা থেরাপি ট্রায়াল হিসেবেই বিভিন্ন দেশে ব্যবহার হচ্ছে; কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে অনেক ডাক্তার সেটি না মেনে একে সরাসরি চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার করে যাচ্ছেন। আমরা মনে করি, মহামারীর এ সময়ে সাময়িক উপকারের জন্য ভালোভাবে চিন্তাভাবনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে চিকিৎসা হিসেবে প্লাজমা থেরাপি ব্যবহারের লাগাম টেনে ধরার বিকল্প নেই। কারণ, প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগের পরও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে। বাকি যে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ সুস্থ হয়েছেন, তারা প্লাজমা থেরাপি ছাড়াও সুস্থ হয়ে উঠতেন বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সুতরাং এটি প্রয়োগের জন্য অন্যান্য ঝুঁকি নেয়ার কোনো অর্থ যে নেই, তা স্পষ্ট। তার ওপর সংগৃহীত প্লাজমা করোনাভাইরাসমুক্ত কিনা, সেটিও নিশ্চিত করে বলা যায় না। কারণ কেউ আক্রান্ত হওয়ার পর ওষুধ খেয়ে সুস্থ হলেও পুনরায় টেস্ট না করে প্লাজমা দেয়ার হিড়িক পড়েছে। এমনকি প্লাজমা দেয়ার জন্য একশ্রেণির দালালের উদ্ভব ও অর্থ লেনদেনের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারের প্লাজমাসংক্রান্ত গাইডলাইন ও তার কঠোর অনুসরণই সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতের একমাত্র পথ।