ঢাকা , শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জনসংখ্যা হোক জনশক্তি

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ পৃথিবীতে প্রতি মিনিটে প্রায় ২৫০টি শিশু জন্ম নেয় এবং বাংলাদেশে প্রায় ৯টি। ১৯৭১ সালে সাড়ে ৭ কোটি মানুষসহ স্বাধীন হওয়া দেশের ৫০ বছর না পেরোতেই জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটিতে। জনসংখ্যায় বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ আমাদের বাংলাদেশ, যদিও আয়তনে বিশ্বে আমরা ৯৪তম।

অতিরিক্ত জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে পরিবেশের। বিপুলসংখ্যক গাছ কেটে বাড়িঘর তৈরি করা হচ্ছে। অধিক পরিমাণে ফসলের জন্য উচ্চমাত্রায় রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হচ্ছে, যা নদী ও পুকুরে মিশে পানি দূষিত করছে। খাবার ও ফসল ফলাতে ভূগর্ভের পানি অধিক পরিমাণে উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। এসব বিষয় পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে জনসংখ্যার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। একদিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য জনশক্তি দেশের জনগণ থেকে আসে, অপরদিকে জনসংখ্যার অনভিপ্রেত আধিক্য ঘটলে তা দেশের উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই জনসংখ্যা কখনও আশীর্বাদ আবার কখনও অভিশাপ হিসেবে দেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির ফলে খাদ্য সমস্যা, বেকার সমস্যা, ভিক্ষাবৃত্তি, দুর্নীতি, চুরি-ছিনতাই, প্রতারণা, সন্ত্রাস ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়।

জনসংখ্যা সমস্যাকে বাংলাদেশের এক নম্বর সামাজিক সমস্যা বলা হয়ে থাকে। এর কারণ বিপুলসংখ্যক মানুষকে আমরা দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে পারিনি। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ চীন। চীনারা তাদের জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করেছে। ফলে চীন আজ বিশ্বের পরাক্রমশালী দেশগুলোর একটি।

আমাদেরও জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন। গুরুত্ব দেয়া উচিত কর্মমুখী শিক্ষার ওপর। সে ক্ষেত্রে জোর দিতে হবে কারিগরি শিক্ষায়।

এ দেশে কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটেনি বললেই চলে। নতুন কোনো কারিগরি প্রতিষ্ঠান সরকারিভাবে যেমন হচ্ছে না, তেমিন বেসরকারি উদ্যোগেও গড়ে উঠছে না। দেশে-বিদেশে প্রচুর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এই সেক্টরের প্রতি নজর নেই কারও। বিদেশে প্রশিক্ষিত নার্স ও নার্সিংয়ের ওপর ডিপ্লোমা কিংবা উচ্চতর ডিগ্রিধারীদের প্রচুর চাহিদা। এ বিষয়গুলোয় শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে হবে।

জনসংখ্যা কমিয়ে ফেলাই মূল সমস্যার সমাধান নয়। আজ জনসংখ্যা কমিয়ে ফেললে এক সময় তা আবারও বেড়ে উঠবে। তাই জনসংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এমন কিছু প্রকল্প হাতে নিতে হবে এবং এমন কিছু প্রকল্প উদ্ভাবন করতে হবে, যেগুলোর মাধ্যমে জনসংখ্যাকে পরিণত করা যাবে জনশক্তিতে।

এর জন্য বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ, পরিকল্পনাবিদদের একত্রে কাজ করতে হবে। সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা এবং যুগোপযোগী পদক্ষেপই পারে একটি দেশের জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে। আর এর মাধ্যমেই আমরা গড়ে তুলতে পারব সোনার বাংলাদেশ।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

জনসংখ্যা হোক জনশক্তি

আপডেট টাইম : ০৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জুলাই ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ পৃথিবীতে প্রতি মিনিটে প্রায় ২৫০টি শিশু জন্ম নেয় এবং বাংলাদেশে প্রায় ৯টি। ১৯৭১ সালে সাড়ে ৭ কোটি মানুষসহ স্বাধীন হওয়া দেশের ৫০ বছর না পেরোতেই জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটিতে। জনসংখ্যায় বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ আমাদের বাংলাদেশ, যদিও আয়তনে বিশ্বে আমরা ৯৪তম।

অতিরিক্ত জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে পরিবেশের। বিপুলসংখ্যক গাছ কেটে বাড়িঘর তৈরি করা হচ্ছে। অধিক পরিমাণে ফসলের জন্য উচ্চমাত্রায় রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হচ্ছে, যা নদী ও পুকুরে মিশে পানি দূষিত করছে। খাবার ও ফসল ফলাতে ভূগর্ভের পানি অধিক পরিমাণে উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। এসব বিষয় পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে জনসংখ্যার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। একদিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য জনশক্তি দেশের জনগণ থেকে আসে, অপরদিকে জনসংখ্যার অনভিপ্রেত আধিক্য ঘটলে তা দেশের উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই জনসংখ্যা কখনও আশীর্বাদ আবার কখনও অভিশাপ হিসেবে দেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির ফলে খাদ্য সমস্যা, বেকার সমস্যা, ভিক্ষাবৃত্তি, দুর্নীতি, চুরি-ছিনতাই, প্রতারণা, সন্ত্রাস ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়।

জনসংখ্যা সমস্যাকে বাংলাদেশের এক নম্বর সামাজিক সমস্যা বলা হয়ে থাকে। এর কারণ বিপুলসংখ্যক মানুষকে আমরা দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে পারিনি। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ চীন। চীনারা তাদের জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করেছে। ফলে চীন আজ বিশ্বের পরাক্রমশালী দেশগুলোর একটি।

আমাদেরও জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন। গুরুত্ব দেয়া উচিত কর্মমুখী শিক্ষার ওপর। সে ক্ষেত্রে জোর দিতে হবে কারিগরি শিক্ষায়।

এ দেশে কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটেনি বললেই চলে। নতুন কোনো কারিগরি প্রতিষ্ঠান সরকারিভাবে যেমন হচ্ছে না, তেমিন বেসরকারি উদ্যোগেও গড়ে উঠছে না। দেশে-বিদেশে প্রচুর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এই সেক্টরের প্রতি নজর নেই কারও। বিদেশে প্রশিক্ষিত নার্স ও নার্সিংয়ের ওপর ডিপ্লোমা কিংবা উচ্চতর ডিগ্রিধারীদের প্রচুর চাহিদা। এ বিষয়গুলোয় শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে হবে।

জনসংখ্যা কমিয়ে ফেলাই মূল সমস্যার সমাধান নয়। আজ জনসংখ্যা কমিয়ে ফেললে এক সময় তা আবারও বেড়ে উঠবে। তাই জনসংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এমন কিছু প্রকল্প হাতে নিতে হবে এবং এমন কিছু প্রকল্প উদ্ভাবন করতে হবে, যেগুলোর মাধ্যমে জনসংখ্যাকে পরিণত করা যাবে জনশক্তিতে।

এর জন্য বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ, পরিকল্পনাবিদদের একত্রে কাজ করতে হবে। সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা এবং যুগোপযোগী পদক্ষেপই পারে একটি দেশের জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে। আর এর মাধ্যমেই আমরা গড়ে তুলতে পারব সোনার বাংলাদেশ।