ঢাকা , শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কিশোর গ্যাং কালচার প্রতিরোধ করতে হবে

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং কালচার। কিশোর গ্যাং দ্বারা পরিচালিত অপরাধ যেন একটি সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিতে যাচ্ছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহর-বন্দরে উঠতি বয়সের ছেলেরা একত্রিত হয়ে চালিয়ে যাচ্ছে নানা ধরনের অসামাজিক তৎপরতা। বিভিন্ন নামে এলাকাভিত্তিক নতুন নতুন সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে তুলেছে কিশোর গ্যাং। কখনও কখনও পাড়া-মহল্লায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত হয় ভয়ংকর সব কিশোর গ্যাং।

আধিপত্য বিস্তার, মাদক সেবন ও বিপণনের স্বার্থে ওদের গ্রুপে গ্রুপে মারামারি-খুনাখুনি লেগেই থাকে। তারা ঘটায় হত্যাকাণ্ডের মতো কর্মকাণ্ডও। কিশোর গ্যাংয়ের কাছে দেশি অস্ত্রের ছড়াছড়ি, এমনকি অত্যাধুনিক বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রও থাকে। মুঠোফোন ব্যবহার করে, এমনকি ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য ও ছবি আদান-প্রদান করে পরস্পরকে হামলার নির্দেশ দেয় তারা। যে বয়সে বই নিয়ে কিশোরদের স্কুলে যাওয়ার কথা, সেই বয়সে ছুরি-চাকু হাতে কিশোররা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে। শিশু ধর্ষণের মতো জঘন্য কাজেও উঠতি বয়সের কিশোরদের জড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটছে। কিশোর অপরাধের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে গোটা সমাজে।

গত ১৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের ইস্পাহানি এলাকায় দুই কিশোর গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্র ধরে স্থানীয় দুই কিশোর ১৮ বছরের নিহাদ ও ১৫ বছরের জিসান শীতলক্ষ্যা নদীতে ঝাঁপ দিলে তাদের মৃত্যু ঘটে। তবে সারা দেশে গ্যাং কালচারের অস্তিত্ব থাকলেও ঢাকায় এর দাপট বেশি। সূত্রমতে, রাজধানীতে ৬২টি কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে ৪২টি সক্রিয় রয়েছে। প্রতিটি গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ এবং এদের বয়স ১৫ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। একটি সূত্রমতে, গত ১০-১১ বছরে রাজধানীতে ঘটে যাওয়া আলোচিত হত্যাকাণ্ডের বেশিরভাগই কিশোর অপরাধীদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদারের নেতৃত্বে এরা বড় ধরনের চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাদাবাজি, ইভটিজিং এবং মাদক বিক্রির মতো কাজে যুক্ত হচ্ছে। অস্ত্র বহনসহ নানা অপরাধমূলক কাজে কিশোরদের লিপ্ত থাকার নজির রয়েছে। সন্ত্রাসী চক্রের সদস্যরা ছিন্নমূল পরিবারের কিশোরদের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে তাদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে নিজেদের দলে টানে। সাহসী ও বুদ্ধিমান কিশোরদের চুরি, ছিনতাইয়ের মতো ছোটখাটো অপরাধের বাইরেও মাদক বিক্রি, অস্ত্র ও বোমা বহনের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা হয়। এ কাজের জন্য ওদের দেয়া হয় লোভনীয় অঙ্কের অর্থ। অর্থের প্রলোভনে পড়ে কিশোররা একসময় অপরাধ জগতের স্থায়ী সদস্য হয়ে যায়।

কিশোর গ্যাং কালচার প্রতিরোধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। এজন্য অধিকারবঞ্চিত কিশোরদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা ও বাঁচার অধিকার দিতে হবে তাদের। কিশোররা উপযুক্ত শিক্ষা নিয়ে যোগ্যতা অনুসারে কাজ করার সুযোগ পেলে কখনও অপরাধে জড়াবে না। এ জন্য সর্বস্তরের শিশুর জন্য সুশিক্ষা দানের ব্যবস্থা নিতে হবে। নিুবিত্তের শিশুদের জন্য স্বল্পমেয়াদি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দিয়ে তাদের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিতে হবে। কিশোরদের খেলাধুলা ও বিনোদন সুবিধা দিতে হবে। ছিন্নমূল কিশোরদের করতে হবে পুনর্বাসন। অপরাধ চক্রে জড়িয়ে যাওয়া কিশোরদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষার পাশাপাশি ওদের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে উন্নত চিন্তা-চেতনা নিয়ে বেড়ে ওঠার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণসহ সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করাও জরুরি। কিশোর গ্যাং কালচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

কিশোর গ্যাং কালচার প্রতিরোধ করতে হবে

আপডেট টাইম : ০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং কালচার। কিশোর গ্যাং দ্বারা পরিচালিত অপরাধ যেন একটি সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিতে যাচ্ছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহর-বন্দরে উঠতি বয়সের ছেলেরা একত্রিত হয়ে চালিয়ে যাচ্ছে নানা ধরনের অসামাজিক তৎপরতা। বিভিন্ন নামে এলাকাভিত্তিক নতুন নতুন সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে তুলেছে কিশোর গ্যাং। কখনও কখনও পাড়া-মহল্লায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত হয় ভয়ংকর সব কিশোর গ্যাং।

আধিপত্য বিস্তার, মাদক সেবন ও বিপণনের স্বার্থে ওদের গ্রুপে গ্রুপে মারামারি-খুনাখুনি লেগেই থাকে। তারা ঘটায় হত্যাকাণ্ডের মতো কর্মকাণ্ডও। কিশোর গ্যাংয়ের কাছে দেশি অস্ত্রের ছড়াছড়ি, এমনকি অত্যাধুনিক বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রও থাকে। মুঠোফোন ব্যবহার করে, এমনকি ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য ও ছবি আদান-প্রদান করে পরস্পরকে হামলার নির্দেশ দেয় তারা। যে বয়সে বই নিয়ে কিশোরদের স্কুলে যাওয়ার কথা, সেই বয়সে ছুরি-চাকু হাতে কিশোররা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে। শিশু ধর্ষণের মতো জঘন্য কাজেও উঠতি বয়সের কিশোরদের জড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটছে। কিশোর অপরাধের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে গোটা সমাজে।

গত ১৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের ইস্পাহানি এলাকায় দুই কিশোর গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্র ধরে স্থানীয় দুই কিশোর ১৮ বছরের নিহাদ ও ১৫ বছরের জিসান শীতলক্ষ্যা নদীতে ঝাঁপ দিলে তাদের মৃত্যু ঘটে। তবে সারা দেশে গ্যাং কালচারের অস্তিত্ব থাকলেও ঢাকায় এর দাপট বেশি। সূত্রমতে, রাজধানীতে ৬২টি কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে ৪২টি সক্রিয় রয়েছে। প্রতিটি গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ এবং এদের বয়স ১৫ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। একটি সূত্রমতে, গত ১০-১১ বছরে রাজধানীতে ঘটে যাওয়া আলোচিত হত্যাকাণ্ডের বেশিরভাগই কিশোর অপরাধীদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদারের নেতৃত্বে এরা বড় ধরনের চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাদাবাজি, ইভটিজিং এবং মাদক বিক্রির মতো কাজে যুক্ত হচ্ছে। অস্ত্র বহনসহ নানা অপরাধমূলক কাজে কিশোরদের লিপ্ত থাকার নজির রয়েছে। সন্ত্রাসী চক্রের সদস্যরা ছিন্নমূল পরিবারের কিশোরদের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে তাদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে নিজেদের দলে টানে। সাহসী ও বুদ্ধিমান কিশোরদের চুরি, ছিনতাইয়ের মতো ছোটখাটো অপরাধের বাইরেও মাদক বিক্রি, অস্ত্র ও বোমা বহনের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা হয়। এ কাজের জন্য ওদের দেয়া হয় লোভনীয় অঙ্কের অর্থ। অর্থের প্রলোভনে পড়ে কিশোররা একসময় অপরাধ জগতের স্থায়ী সদস্য হয়ে যায়।

কিশোর গ্যাং কালচার প্রতিরোধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। এজন্য অধিকারবঞ্চিত কিশোরদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা ও বাঁচার অধিকার দিতে হবে তাদের। কিশোররা উপযুক্ত শিক্ষা নিয়ে যোগ্যতা অনুসারে কাজ করার সুযোগ পেলে কখনও অপরাধে জড়াবে না। এ জন্য সর্বস্তরের শিশুর জন্য সুশিক্ষা দানের ব্যবস্থা নিতে হবে। নিুবিত্তের শিশুদের জন্য স্বল্পমেয়াদি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দিয়ে তাদের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিতে হবে। কিশোরদের খেলাধুলা ও বিনোদন সুবিধা দিতে হবে। ছিন্নমূল কিশোরদের করতে হবে পুনর্বাসন। অপরাধ চক্রে জড়িয়ে যাওয়া কিশোরদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষার পাশাপাশি ওদের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে উন্নত চিন্তা-চেতনা নিয়ে বেড়ে ওঠার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণসহ সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করাও জরুরি। কিশোর গ্যাং কালচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।