ঢাকা , শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিল নিয়ে ভোগান্তি দূর হোক

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ মহামারী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে একদিকে বিপর্যস্ত হয়েছে মানুষের জীবন-জীবিকা, অন্যদিকে ভোগান্তি বেড়েছে লাগামহীন ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের কারণে। মোটাদাগে যাকে বলে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’। বিদ্যুৎ বিভাগ ইউনিটের চেয়ে অতিরিক্ত বিল করে- এ অভিযোগ কমবেশি অনেক গ্রাহকেরই। করোনাকালে এ অভিযোগের পাল্লা আরও ভারি হয়েছে।

দেশে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লাইন ধরে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধকে নিরুৎসাহিত করে বিদ্যুৎ বিভাগ ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসের বিলে বিলম্ব মাশুল মওকুফ করলেও ৩০ জুনের মধ্যে বকেয়াসহ সব বিল পরিশোধের নির্দেশ দেয়। অন্যথায় জরিমানা, সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে এ আশঙ্কায় বিপাকে পড়েন গ্রাহকরা।

উদ্বেগের বিষয় হল, অনেক বাসায় অকল্পনীয় ও অস্বাভাবিক বেশি বিদ্যুৎ বিল এসেছে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার কারণে তাদের মিটার রিডার বাড়ি বাড়ি যেতে পারেননি, তাই গড় হিসাব করে বিল দেয়া হয়েছে।

প্রশ্ন হল, এতে প্রতি মাসের বিলই বেড়ে যাবে কেন? আর যদি তাদের মিটার রিডার বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতি মাসের বিলের মিটার চেক করতে না পারেন, সে দায় কি গ্রাহকের? অনুমান করে কি বিদ্যুৎ বিল প্রস্তুত করা যায়?

করোনা মহামারীর মধ্যে গ্রাহকদের ওপর অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল চাপিয়ে দেয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিতরণ কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়- ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল সমস্যার সমাধান হবে, জুলাই থেকে রিডিং দেখে বিদ্যুৎ বিল করা হবে। তাছাড়া অতিরিক্ত বিল ক্রমান্বয়ে সমন্বয় করা হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, বিতরণ কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল করার প্রবণতা থেকে এখনও বের হতে পারেনি। এখনও বন্ধ হয়নি তাদের ‘পুকুরচুরি’।

জুলাই মাসেও অনেক গ্রাহকের স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বিল এসেছে। জনসাধারণ এ ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলে অতিষ্ঠ। আমাদের ফেনী জেলার অনেক বাড়িতেই ভুতুড়ে বিল এসেছে। আমাদের বাসার বিদ্যুৎ বিল এসেছে স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ বেশি।

সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তির ভিত্তিতে বিতরণ কোম্পানিগুলো কাজ করে থাকে এবং একটা অর্থবছর ঘিরে তাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকে। শোনা যায়, অর্থবছরের শেষদিকে এসে কোম্পানিগুলো তাদের ঘাটতি মেটাতে গ্রাহকদের ওপর অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল চাপিয়ে দেয়। হয়রানির আশঙ্কায় অনেক গ্রাহক এ নিয়ে আপত্তি করার সাহস দেখান না। ফলে ভুতুড়ে বাড়তি বিদ্যুৎ বিল করে ওই কোম্পানিগুলো জনসাধারণের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়, যা বেআইনি। করোনা সংকটকালে এ প্রতারণা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।

স্বাভাবিক সময়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের সমস্যা সমাধানের জন্য গ্রাহকরা অফিসে ছোটাছুটি করতে পারেন। কিন্তু এই করোনা মহামারীর সময়ে এ ধরনের ছোটাছুটি ঝুঁকিপূর্ণ ও কঠিন। এই দুঃসময়ে দেশের জনসাধারণের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের এমন কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি- আপনারা বিষয়টির দ্রুত সমাধান করে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি নিরসন করুন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

বিল নিয়ে ভোগান্তি দূর হোক

আপডেট টাইম : ০৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ মহামারী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে একদিকে বিপর্যস্ত হয়েছে মানুষের জীবন-জীবিকা, অন্যদিকে ভোগান্তি বেড়েছে লাগামহীন ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের কারণে। মোটাদাগে যাকে বলে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’। বিদ্যুৎ বিভাগ ইউনিটের চেয়ে অতিরিক্ত বিল করে- এ অভিযোগ কমবেশি অনেক গ্রাহকেরই। করোনাকালে এ অভিযোগের পাল্লা আরও ভারি হয়েছে।

দেশে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লাইন ধরে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধকে নিরুৎসাহিত করে বিদ্যুৎ বিভাগ ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসের বিলে বিলম্ব মাশুল মওকুফ করলেও ৩০ জুনের মধ্যে বকেয়াসহ সব বিল পরিশোধের নির্দেশ দেয়। অন্যথায় জরিমানা, সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে এ আশঙ্কায় বিপাকে পড়েন গ্রাহকরা।

উদ্বেগের বিষয় হল, অনেক বাসায় অকল্পনীয় ও অস্বাভাবিক বেশি বিদ্যুৎ বিল এসেছে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার কারণে তাদের মিটার রিডার বাড়ি বাড়ি যেতে পারেননি, তাই গড় হিসাব করে বিল দেয়া হয়েছে।

প্রশ্ন হল, এতে প্রতি মাসের বিলই বেড়ে যাবে কেন? আর যদি তাদের মিটার রিডার বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতি মাসের বিলের মিটার চেক করতে না পারেন, সে দায় কি গ্রাহকের? অনুমান করে কি বিদ্যুৎ বিল প্রস্তুত করা যায়?

করোনা মহামারীর মধ্যে গ্রাহকদের ওপর অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল চাপিয়ে দেয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিতরণ কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়- ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল সমস্যার সমাধান হবে, জুলাই থেকে রিডিং দেখে বিদ্যুৎ বিল করা হবে। তাছাড়া অতিরিক্ত বিল ক্রমান্বয়ে সমন্বয় করা হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, বিতরণ কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল করার প্রবণতা থেকে এখনও বের হতে পারেনি। এখনও বন্ধ হয়নি তাদের ‘পুকুরচুরি’।

জুলাই মাসেও অনেক গ্রাহকের স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বিল এসেছে। জনসাধারণ এ ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলে অতিষ্ঠ। আমাদের ফেনী জেলার অনেক বাড়িতেই ভুতুড়ে বিল এসেছে। আমাদের বাসার বিদ্যুৎ বিল এসেছে স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ বেশি।

সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তির ভিত্তিতে বিতরণ কোম্পানিগুলো কাজ করে থাকে এবং একটা অর্থবছর ঘিরে তাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকে। শোনা যায়, অর্থবছরের শেষদিকে এসে কোম্পানিগুলো তাদের ঘাটতি মেটাতে গ্রাহকদের ওপর অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল চাপিয়ে দেয়। হয়রানির আশঙ্কায় অনেক গ্রাহক এ নিয়ে আপত্তি করার সাহস দেখান না। ফলে ভুতুড়ে বাড়তি বিদ্যুৎ বিল করে ওই কোম্পানিগুলো জনসাধারণের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়, যা বেআইনি। করোনা সংকটকালে এ প্রতারণা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।

স্বাভাবিক সময়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের সমস্যা সমাধানের জন্য গ্রাহকরা অফিসে ছোটাছুটি করতে পারেন। কিন্তু এই করোনা মহামারীর সময়ে এ ধরনের ছোটাছুটি ঝুঁকিপূর্ণ ও কঠিন। এই দুঃসময়ে দেশের জনসাধারণের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের এমন কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি- আপনারা বিষয়টির দ্রুত সমাধান করে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি নিরসন করুন।