ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভর্তি বাণিজ্য কি আদৌ বন্ধ হবে

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ প্রতি বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির নামে চলে অবাধ বাণিজ্য। এটি কি দুর্নীতি নয়? যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠনের শপথ নেবে, সেখানে ভর্তি হতেই দুর্নীতি দেখতে হচ্ছে তাদের। এ থেকে কী শিক্ষা নেবে তারা! স্কুলে ভর্তির মৌসুমে রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারনির্ধারিত ভর্তি ফি’র বাইরে ‘গলাকাটা’ অর্থ অভিভাবকদের কাছ থেকে আদায় করে বিভিন্ন নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন উন্নয়নের নাম করে অভিভাবকদের কাছ থেকে গড়ে মাথাপিছু অতিরিক্ত ৫ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। অভিভাবকরাও সন্তানকে ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে বেশি টাকা দিতে বাধ্য হন।

বস্তুত ভর্তির ব্যাপারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মানে না কোনো সরকারি নির্দেশনা। প্রতি বছর আড়ালে-আবডালে ভর্তি বাণিজ্য চালিয়ে যায় তারা। ভর্তির সময় বেশি টাকা নেয়ার ব্যাপারে স্কুলগুলোর বক্তব্য হচ্ছে, ব্যয় বেড়েছে, তাই বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত অর্থ নিতে হচ্ছে। কিন্তু ব্যয় বেড়েছে বলে সরকার তো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। শিক্ষকদের বেতন স্কেল বৃদ্ধি করেছে। তবে ভর্তি বাণিজ্যে সরকারি কলেজের চেয়ে বেসরকারি কলেজগুলো অনেক বেশি এগিয়ে। উপর মহলের যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে বেসরকারি কলেজগুলো লাগামহীন হয়ে গেছে।

বরাবরের মতো চলতি বছরও একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি। এছাড়া এই ফিয়ের অধিক অর্থ আদায় করলে এমপিও বাতিল করার হুশিয়ারিও দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরুর আগেই বেসরকারি কলেজের ভর্তি ফিসহ মাসিক বেতন ও যাবতীয় খরচের বিষয়ে অবহিত হয়ে সংশ্লিষ্ট কলেজে ভর্তির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভর্তিতে মফস্বল, পৌর ও মেট্রোপলিটন এলাকার বেসরকারি কলেজগুলো একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তিতে সেশন ফিসহ ভর্তি ফি সর্বসাকুল্যে এক হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় দুই হাজার টাকা এবং ঢাকা মহানগর ছাড়া অন্য মেট্রোপলিটন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তিন হাজার টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না। মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে পাঁচ হাজার টাকার বেশি অর্থ আদায় করা যাবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার আংশিক এমপিওভুক্ত বা এমপিওবহির্ভূত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো উন্নয়ন ও এমপিওবহির্ভূত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেয়ার জন্য শিক্ষার্থী ভর্তির সময় ভর্তি ফি, সেশন চার্জ ও উন্নয়ন ফিসহ বাংলা মাধ্যমে সর্বোচ্চ সাড়ে সাত হাজার টাকা এবং ইংরেজি ভার্সনে সর্বোচ্চ সাড়ে আট হাজার টাকা নিতে পারবে। উন্নয়ন খাতে কোনো প্রতিষ্ঠান এবার দেড় হাজার টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে রেড ক্রিসেন্ট ফি বাবদ ১২ টাকা নিতে পারবে। কোনো শিক্ষার্থীর পাঠ বিরতি থাকলে এবং বিলম্বে ভর্তি হলে তাকে ১৫০ টাকা পাঠ বিলম্ব ফি এবং ১০০ টাকা বিলম্ব ভর্তি ফি দিতে হবে। এছাড়া সরকারি কলেজগুলোকে সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী ফি সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। সব ফি রসিদের মাধ্যমে নিতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ভর্তি নীতিমালা না মেনে শিক্ষার্থী ভর্তি করালে সেই কলেজের পাঠদানের অনুমতি বা স্বীকৃতি বাতিলসহ কলেজের এমপিওভুক্তি বাতিল করা হবে।

এমন কঠোর নির্দেশনার পরও ভর্তি বাণিজ্য বন্ধ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তাব্যক্তিদের সদিচ্ছাই পারে এ বাণিজ্য রোধ করে অবাধ ও সুষ্ঠু ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে। আমরা আশা করব, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর কোনো ভর্তি বাণিজ্য হবে না।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

ভর্তি বাণিজ্য কি আদৌ বন্ধ হবে

আপডেট টাইম : ০৩:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ প্রতি বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির নামে চলে অবাধ বাণিজ্য। এটি কি দুর্নীতি নয়? যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠনের শপথ নেবে, সেখানে ভর্তি হতেই দুর্নীতি দেখতে হচ্ছে তাদের। এ থেকে কী শিক্ষা নেবে তারা! স্কুলে ভর্তির মৌসুমে রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারনির্ধারিত ভর্তি ফি’র বাইরে ‘গলাকাটা’ অর্থ অভিভাবকদের কাছ থেকে আদায় করে বিভিন্ন নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন উন্নয়নের নাম করে অভিভাবকদের কাছ থেকে গড়ে মাথাপিছু অতিরিক্ত ৫ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। অভিভাবকরাও সন্তানকে ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে বেশি টাকা দিতে বাধ্য হন।

বস্তুত ভর্তির ব্যাপারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মানে না কোনো সরকারি নির্দেশনা। প্রতি বছর আড়ালে-আবডালে ভর্তি বাণিজ্য চালিয়ে যায় তারা। ভর্তির সময় বেশি টাকা নেয়ার ব্যাপারে স্কুলগুলোর বক্তব্য হচ্ছে, ব্যয় বেড়েছে, তাই বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত অর্থ নিতে হচ্ছে। কিন্তু ব্যয় বেড়েছে বলে সরকার তো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। শিক্ষকদের বেতন স্কেল বৃদ্ধি করেছে। তবে ভর্তি বাণিজ্যে সরকারি কলেজের চেয়ে বেসরকারি কলেজগুলো অনেক বেশি এগিয়ে। উপর মহলের যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে বেসরকারি কলেজগুলো লাগামহীন হয়ে গেছে।

বরাবরের মতো চলতি বছরও একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি। এছাড়া এই ফিয়ের অধিক অর্থ আদায় করলে এমপিও বাতিল করার হুশিয়ারিও দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরুর আগেই বেসরকারি কলেজের ভর্তি ফিসহ মাসিক বেতন ও যাবতীয় খরচের বিষয়ে অবহিত হয়ে সংশ্লিষ্ট কলেজে ভর্তির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভর্তিতে মফস্বল, পৌর ও মেট্রোপলিটন এলাকার বেসরকারি কলেজগুলো একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তিতে সেশন ফিসহ ভর্তি ফি সর্বসাকুল্যে এক হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় দুই হাজার টাকা এবং ঢাকা মহানগর ছাড়া অন্য মেট্রোপলিটন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তিন হাজার টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না। মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে পাঁচ হাজার টাকার বেশি অর্থ আদায় করা যাবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার আংশিক এমপিওভুক্ত বা এমপিওবহির্ভূত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো উন্নয়ন ও এমপিওবহির্ভূত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেয়ার জন্য শিক্ষার্থী ভর্তির সময় ভর্তি ফি, সেশন চার্জ ও উন্নয়ন ফিসহ বাংলা মাধ্যমে সর্বোচ্চ সাড়ে সাত হাজার টাকা এবং ইংরেজি ভার্সনে সর্বোচ্চ সাড়ে আট হাজার টাকা নিতে পারবে। উন্নয়ন খাতে কোনো প্রতিষ্ঠান এবার দেড় হাজার টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে রেড ক্রিসেন্ট ফি বাবদ ১২ টাকা নিতে পারবে। কোনো শিক্ষার্থীর পাঠ বিরতি থাকলে এবং বিলম্বে ভর্তি হলে তাকে ১৫০ টাকা পাঠ বিলম্ব ফি এবং ১০০ টাকা বিলম্ব ভর্তি ফি দিতে হবে। এছাড়া সরকারি কলেজগুলোকে সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী ফি সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। সব ফি রসিদের মাধ্যমে নিতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ভর্তি নীতিমালা না মেনে শিক্ষার্থী ভর্তি করালে সেই কলেজের পাঠদানের অনুমতি বা স্বীকৃতি বাতিলসহ কলেজের এমপিওভুক্তি বাতিল করা হবে।

এমন কঠোর নির্দেশনার পরও ভর্তি বাণিজ্য বন্ধ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তাব্যক্তিদের সদিচ্ছাই পারে এ বাণিজ্য রোধ করে অবাধ ও সুষ্ঠু ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে। আমরা আশা করব, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর কোনো ভর্তি বাণিজ্য হবে না।