ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘জয়’-এর রাজনীতি বনাম রাজনীতির ‘জয়’ গোলাম মাওলা রনি

প্রধানমন্ত্রী তনয় জনাব সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কতটা যত্নশীল তা আমি বলতে পারব না। জয়ের বন্ধু-বান্ধব এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা তার ব্যাপারে কতটা সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন তা বোঝা যাচ্ছে না। অথচ পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তা যদি বুদ্ধিমত্তা, কৌশল এবং প্রজ্ঞা দ্বারা মোকাবিলা না করা হয় তবে আখেরে ক্ষয়ক্ষতি এবং দুর্ভোগ শুধু বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নয়- গোটা আওয়ামী লীগকেই বহন করতে হবে। জয় কি আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি অথবা তিনি কি আওয়ামী লীগের সম্পদ না দায় সে ব্যাপারে দেশবাসী কিছুই বুঝতে পারছে না- বুঝতে না পারার কারণ জনগণের নিবুর্দ্ধিতা নয়, বরং আওয়ামী শীর্ষ নেতৃত্বের ব্যর্থতা। আমি শীর্ষ নেতৃত্বকে দায়ী করলাম এ কারণে যে, তারা প্রায় সবাই জয়ের ব্যাপারে নিশ্চুপ। জয়সংক্রান্ত ব্যাপারে তাদের আবেগ-উচ্ছ্বাস, আগ্রহ-অনাগ্রহ কোনোটাই লক্ষ্য করা যায় না। এক অদ্ভুত শীতলতা নিয়ে তারা সবাই নিজেদের সব সময় নিরাপদ দূরত্বে রাখেন। অথচ দলের তৃণমূল পর্যায়ে যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে এবং মধ্যম সারির নেতৃবৃন্দের মধ্যে জনাব সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে প্রবল আগ্রহ রয়েছে। সাধারণ জনগণের মধ্যেও জয় সম্পর্কে আগ্রহের ঘাটতি নেই। কিন্তু তারা জয় সম্পর্কে নিজেদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে পারে না এ কারণে যে, তারা জয় সম্পর্কে কিছুই জানে না এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও জনগণকে জয় সম্পর্কে কিছুই জানানো হয় না।

 

আমার হঠাৎ করেই জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের কথা মনে পড়ল তার প্রয়াত মামা শেখ কামালের পরিণতির কথা স্মরণে আসার পর। শেখ কামালের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার এবং প্রপাগান্ডার জবাবে আমি একাধিকবার বাংলাদেশ প্রতিদিনে লিখেছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেই লেখা পড়েছিলেন। তিনি একজন তৎকালীন প্রভাবশালী প্রতিমন্ত্রী এবং একজন এমপি কাম সাবেক প্রভাবশালী ছাত্রনেতা এবং দলের সাংগঠনিক সম্পাদককে দায়িত্ব দিয়েছিলেন আমার সঙ্গে কথা বলে শেখ কামালের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার এবং ইমেজ সৃষ্টির জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে নেতৃদ্বয় আমার সঙ্গে যে আলাপ করেছিলেন তা স্মরণ করলে আজও হাসি চেপে রাখতে পারি না। ঘটনার দিন আমি পার্লামেন্ট অধিবেশনে বসা ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম একজন নেতা তড়িঘড়ি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আমার কাছে এলেন। অস্বাভাবিক বিনয়ে বললেন, রনি তোমার কাছে বসতে পারি। আমি ভারি আশ্চর্য হয়ে বললাম, অফকোর্স! প্লিজ! বসেন।

 

নেতা বললেন- আজ পত্রিকায় কি লিখেছ? আমি বললাম- শেখ কামাল সম্পর্কে লিখেছি। তার সম্পর্কে যে অপপ্রচার, মিথ্যাচার এবং বদনামসমূহ তৎকালীন জাসদ নেতৃত্ব এবং তাদের পত্রিকা গণকণ্ঠ প্রচার করত সে সবের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণসহ লিখেছি। আমার কথা শুনে নেতা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। গভীর এক তৃপ্তির নিঃশ্বাস নিয়ে হাসিমুখে বললেন- যাক বাবা বাঁচা গেল! আমি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি প্রশ্ন করলাম কেন? তিনি বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আজ রনি কি লিখেছে পড়েছ? উত্তর দিতে গিয়ে আমার মাথা আউলাঝাউলা হয়ে গেল- বললাম পড়েছি। এরপর আমি আরও ভয় পেয়ে গেলাম- কারণ আমি তো আসলে কিছুই পড়িনি। কি পড়ব, কোথায় পড়ব তাও জানি না। এরপর প্রধানমন্ত্রী বললেন, যাও। রনির সঙ্গে কথা বল।’ ব্যাস এ পর্যন্তই। শেখ কামালের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সেই নেতার সঙ্গে আমার পরবর্তীতে কোনো কথা বলার সুযোগ হয়নি। এ ব্যাপারে সাবেক প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আমার আলোচনা ছিল আরও কৌতূহল উদ্দীপক এবং আরও রসালো। সঙ্গত কারণেই সেই সব কথামালা এখানে বর্ণনা করলাম না।

 

যা বলছিলাম, শেখ কামালের বিরুদ্ধে যখন অপপ্রচার তুঙ্গে তখন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। এমনকি কোনো শীর্ষ নেতৃত্ব বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার জন্য একটি বক্তৃতা বা বিবৃতি দেননি। ফলে জনমত এবং জনরোষে কেবল শেখ কামাল এবং শেখ পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। পুরো আওয়ামী লীগকেই বদনামের দায়ভার নির্মমভাবে বহন করতে হয়েছিল এবং এখনো হচ্ছে। অথচ একটু চেষ্টা করলেই ইতিহাসের সেই সব মিথ্যা দায় থেকে শেখ কামালের বিদেহী আত্মাকে রক্ষা করা সম্ভব। এবার জয়ের প্রসঙ্গে কিছু বলা যাক। জয় রাজনীতিতে যুক্ত আছেন কিনা অথবা অনাগত দিনে আদৌ যুক্ত হবেন কিনা এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ, প্রধানমন্ত্রী অথবা জয় নিজ থেকে কিছু না বললেও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা জয়কে কেন্দ্র করে তাদের প্রচার প্রপাগান্ডা শুরু করে দিয়েছে অনেক দিন আগে থেকেই। নবম সংসদের ভিতরে, বাইরে, রাজপথে এবং বিদেশে চতুর্মুখী আক্রমণে জয়ের চরিত্রে কালিমা লেপন করার অব্যাহত চেষ্টা শুরু হয়েছে সেই ২০০৯ সালের প্রথম দিন থেকেই।

 

আওয়ামী লীগের প্রধান দুই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যথা বিএনপি এবং জামায়াত তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করে জয়বিরোধী প্রচার-প্রচারণা এবং প্রপাগান্ডায় নেমে পড়েছে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তারা আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতা-নেত্রী, সরকারের ভুলভ্রান্তি এবং দলের নেতিবাচক ইতিহাস নিয়ে নানা গদ্য ও পদ্য রচনার সঙ্গে জয়ের প্রসঙ্গ টেনে আনতেন। কিন্তু ২০১৫ সালের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তারা সব কিছু বাদ দিয়ে কেবল জয়কেই প্রধান টার্গেট করে বাহারি প্রচার-প্রপাগান্ডা চালাচ্ছেন।

 

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বেশ কয়েক মাস আগে জাতীয় প্রেসক্লাবে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ উত্থাপন করেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জয়ের একটি অ্যাকাউন্টে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার লেনদেনের প্রমাণপত্র তাদের হাতে রয়েছে। এ ঘটনার পর বিএনপি নেতারা বিভিন্ন টকশো, সভা সমিতি এবং সেমিনারে মার্কিন ফেডারেল কোর্টের একটি ডকুমেন্টের ফটোকপি উপস্থাপন করে নিজেদের বক্তব্যকে সত্য, বস্তুনিষ্ঠ এবং নির্ভুল বলে প্রমাণের অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে আসছিল অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে। তারা দেশে এবং বিদেশে ক্রমাগত প্রচার-প্রপাগান্ডা চালাতে চালাতে যখন এই বিশ্বাসে উপনীত হলো যে, বিষয়টি যথেষ্ট বিস্তৃতি লাভ করেছে এবং আওয়ামী লীগের তরফ থেকে কোনো রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া আসছে না তখন তারা তাদের নেত্রীকে দিয়ে বলাল যে জয়ের অ্যাকাউন্টে আড়াই হাজার কোটি টাকার অবৈধ অর্থ জমা আছে।

 

সম্মানিত পাঠক সঙ্গত কারণে দুটি প্রশ্ন করতে পারেন। প্রথমত, কেন বিএনপি অন্য সব কিছু বাদ দিয়ে জয়কে টার্গেট করল? দ্বিতীয়ত, জয়ের বিরুদ্ধে বিএনপি যখন রাজনৈতিক ভাইরাস ছড়াচ্ছে তখন কেবল জয় এবং তার মা ছাড়া কেন আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্য কোনো নেতা এগিয়ে আসছেন না। এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলার আগে একটি কথা বলে নেওয়া ভালো যে, জয়কে নিয়ে বিএনপি-জামায়াত যে জটিল রাজনৈতিক খেলা আরম্ভ করেছে তার জবাবে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন না করে শক্তি প্রদর্শনের নামে রাজনৈতিক মাস্তানি করছে। এতে করে দলটি তো বটেই স্বয়ং জয় এবং প্রধানমন্ত্রীর পরিবার এক অস্বস্তিকর পরিবেশের মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের লাখ লাখ সুবিধাভোগী নেতা-নেত্রী, মন্ত্রী, এমপি, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক এবং পেশাজীবী শ্রেণি থাকতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে কেন নিজ পুত্রের পক্ষে সাফাই গেয়ে সংসদে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করতে হবে অথবা স্বয়ং জয়কে নিজের পক্ষে সাফাই গেয়ে কেন ফেসবুকে বিবৃতি দিতে হবে? আজ যদি বিএনপির জায়গায় আওয়ামী লীগ থাকত এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উত্থাপিত হতো তবে বিএনপির সর্বস্তরের নেতার মুখে খই ফুটত। তারা ভীমরুলের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে হুল ফুটিয়ে বাক্য ও শব্দ সন্ত্রাসে সারা দেশে  উথাল-পাতাল অবস্থা সৃষ্টি করে ফেলত এবং দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামীবিরোধী মিছিল-মিটিং শুরু করে দিত। এবার প্রসঙ্গে ফিরে আসি। বিএনপি ধরেই নিয়েছে যে, রাজনৈতিক লড়াই, সংগ্রাম, বাদ বিসংবাদ এবং কূটকৌশলে তারা পেরে উঠবে না। গত সাত বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করে তারা দেখেছে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি বিশাল আকার ধারণ করেছে। অন্যদিকে তারা ক্ষুদ্রকায় এবং ভগ্ন দেহের মনের ক্রমাবনতিতে নিচে নামতে নামতে শক্তিশালীদের অত্যাচার এবং বিনোদনের উপকরণে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় তারা পেশিশক্তির পরিবর্তে মস্তিষ্ক ব্যবহার করে ক্ষমতাসীনদের প্রাণভোমরার খোঁজ শুরু করেছে রূপকথার গল্পের আদলে। তারা ১৯৭৪-৭৫ সালের বাংলার ইতিহাস এবং ওয়াটার লু যুদ্ধের পূর্ববর্তী এক বছরের ফ্রান্সের ইতিহাসের দুর্বলতাগুলো ২০১৬ সালে এসে নতুন করে মঞ্চায়নের চেষ্টা করছে। তারা জয় সম্পর্কে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের বর্তমান সেনসিবিলিটিকে টার্গেট করে জয়বিরোধী প্রচারে নেমেছে কয়েকটি লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে এবং লক্ষ্য পূরণে তারা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

 

আওয়ামী লীগ শীর্ষ নেতৃত্ব যদি নিজেদের ঐতিহাসিক দুর্ভাগ্যের পেছনের প্রপাগান্ডার প্রভাব এবং গুরুত্বকে স্মরণ করতে না চান অথবা মূল্যায়ন করতে না পারেন তবে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যেসব প্রচার-প্রপাগান্ডা বেশ জনপ্রিয় হয়ে পড়েছিল এবং তাদের পতনের কারণ হয়েছিল সেসব বিষয়ে মূল্যায়ন করলেই নিজেদের করণীয় সম্পর্কে সজাগ হতে পারবেন। উদাহরণ হিসেবে তৎকালীন হাওয়া ভবনের প্রসঙ্গ টানা যেতে পারে। ভবনটির তখন ভারি বদনাম। যেখানে যত অপকর্ম হয়- সব কিছুতেই ভবনের নাম চলে আসতে শুরু করে। মুরগি মিলন, টোকাই সাগর, কালা জাহাঙ্গীর, পিচ্চি হান্নান থেকে শুরু করে ছোটা শাকিল, দাউদ ইব্রাহিম প্রভৃতি নামের সঙ্গে লোকজন হাওয়া ভবনকে একত্র করে ফেলতে লাগল। সব টেন্ডার, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে ঘুষ, দুর্নীতি, কমিশন ইত্যাদি শব্দমালা হাওয়া ভবন এবং গাজীপুরের বনের মধ্যে তৈরি করা খোয়াব ভবনের মধ্যে বিরাট এক সংযোগ সেতু তৈরি করে ফেলল। পরিস্থিতি এমন দাঁড়াল যে, গুলিস্তানের হকার থেকে শুরু করে ফুটপাথের মুচি এবং শাহবাগ মোড়ের ভিক্ষুকরা পর্যন্ত বলাবলি করতে থাকল- ‘তাদের আয়ের সিংহভাগ চলে যায় হাওয়া ভবন এবং খোয়াব ভবনে।’ ক্ষমতাসীন বিএনপি তখন এসব প্রপাগান্ডাকে একদম পাত্তা দেয়নি এবং প্রতিপক্ষের অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করেনি। ফলে গত ৯টি বছর ধরে বাংলাদেশের বিএনপি নেতা-কর্মীদের কি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তা কেবল ভুক্তভোগীরাই বলতে পারবেন।

 

জয়ের বিষয়টি হাওয়া ভবনের সঙ্গে তুলনীয় নয়। এটি আরও স্পর্শকাতর এবং অস্বস্তিকর। কারণ জয় নামটির সঙ্গে বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ, প্রধানমন্ত্রী এবং মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তিসমূহের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জয়ের বিরুদ্ধে যেসব প্রচার-প্রচারণা এবং প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে তা আওয়ামীবিরোধী শক্তিসমূহের সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক কূটকৌশল এবং এক ধরনের রাজনৈতিক যুদ্ধ। রাষ্ট্রশক্তির ব্যবহার, শক্তি প্রয়োগ অথবা আইন আদালতের মারপ্যাঁচে এসব কূটকৌশল মোকাবিলা করা যাবে না। অন্যদিকে, জয় নিজে অথবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি তার সন্তানের পক্ষে সাফাই গান তবে নিজেদের অসহায়ত্ব এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দৈন্য ফুটে উঠবে। বিষয়টি দলীয়ভাবে এবং রাষ্ট্রশক্তির পরিবর্তে দলটির রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক শক্তি ব্যবহার করতে পারলে প্রতিপক্ষ হালে পানি পাবে না।

 

আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা হয়তো বলতে পারেন, আমি তো জয়ের পক্ষে বলেছি। এ ব্যাপারে আমার বক্তব্য হলো, তার বক্তব্যটি বেগম জিয়ার অভিযোগের কোনো রাজনৈতিক জবাব হয়নি। তিনি কেবল বলেছেন, বেগম জিয়া নির্বোধের মতো কথা বলেছেন। তার এই বক্তব্য দ্বারা আওয়ামী লীগ বা জয়ের কোনো লাভ হয়নি, উল্টো ক্ষতি হয়েছে। আমার প্রশ্ন হলো, কেন আওয়ামী লীগের জাতীয় পর্যায়ের জনপ্রিয় এবং পরিচিত মুখগুলো প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সাফল্য এবং জয় সম্পর্কে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় অর্থমন্ত্রীর লোক জড়িত এমনতরো অভিযোগ উত্থাপনকারী নেতা অথবা কারণে-অকারণে বেগম খালেদা জিয়ার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধারকারী নেতা-নেত্রী, মন্ত্রী-এমপিরা কেন জয়ের পক্ষে মুখ খুলছেন না। জয়ের অসংখ্য গুণাবলি, বিশ্বাস এবং প্রমাণযোগ্য সাফল্য কি আওয়ামী লীগ নেতারা জানেন না? অথবা বিশ্বব্যাপী পুতুলের প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়ে কথাবার্তা বললে প্রধানমন্ত্রীর পরিবার সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয় না? তবে তারা কেন কৃপণতা করছেন? প্রধানমন্ত্রী কি তাদের কোনো কিছু কম দিয়েছেন?  সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন

 

লেখক : কলামিস্ট।
Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

‘জয়’-এর রাজনীতি বনাম রাজনীতির ‘জয়’ গোলাম মাওলা রনি

আপডেট টাইম : ০৬:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ মে ২০১৬
প্রধানমন্ত্রী তনয় জনাব সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কতটা যত্নশীল তা আমি বলতে পারব না। জয়ের বন্ধু-বান্ধব এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা তার ব্যাপারে কতটা সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন তা বোঝা যাচ্ছে না। অথচ পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তা যদি বুদ্ধিমত্তা, কৌশল এবং প্রজ্ঞা দ্বারা মোকাবিলা না করা হয় তবে আখেরে ক্ষয়ক্ষতি এবং দুর্ভোগ শুধু বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নয়- গোটা আওয়ামী লীগকেই বহন করতে হবে। জয় কি আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি অথবা তিনি কি আওয়ামী লীগের সম্পদ না দায় সে ব্যাপারে দেশবাসী কিছুই বুঝতে পারছে না- বুঝতে না পারার কারণ জনগণের নিবুর্দ্ধিতা নয়, বরং আওয়ামী শীর্ষ নেতৃত্বের ব্যর্থতা। আমি শীর্ষ নেতৃত্বকে দায়ী করলাম এ কারণে যে, তারা প্রায় সবাই জয়ের ব্যাপারে নিশ্চুপ। জয়সংক্রান্ত ব্যাপারে তাদের আবেগ-উচ্ছ্বাস, আগ্রহ-অনাগ্রহ কোনোটাই লক্ষ্য করা যায় না। এক অদ্ভুত শীতলতা নিয়ে তারা সবাই নিজেদের সব সময় নিরাপদ দূরত্বে রাখেন। অথচ দলের তৃণমূল পর্যায়ে যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে এবং মধ্যম সারির নেতৃবৃন্দের মধ্যে জনাব সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে প্রবল আগ্রহ রয়েছে। সাধারণ জনগণের মধ্যেও জয় সম্পর্কে আগ্রহের ঘাটতি নেই। কিন্তু তারা জয় সম্পর্কে নিজেদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে পারে না এ কারণে যে, তারা জয় সম্পর্কে কিছুই জানে না এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও জনগণকে জয় সম্পর্কে কিছুই জানানো হয় না।

 

আমার হঠাৎ করেই জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের কথা মনে পড়ল তার প্রয়াত মামা শেখ কামালের পরিণতির কথা স্মরণে আসার পর। শেখ কামালের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার এবং প্রপাগান্ডার জবাবে আমি একাধিকবার বাংলাদেশ প্রতিদিনে লিখেছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেই লেখা পড়েছিলেন। তিনি একজন তৎকালীন প্রভাবশালী প্রতিমন্ত্রী এবং একজন এমপি কাম সাবেক প্রভাবশালী ছাত্রনেতা এবং দলের সাংগঠনিক সম্পাদককে দায়িত্ব দিয়েছিলেন আমার সঙ্গে কথা বলে শেখ কামালের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার এবং ইমেজ সৃষ্টির জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে নেতৃদ্বয় আমার সঙ্গে যে আলাপ করেছিলেন তা স্মরণ করলে আজও হাসি চেপে রাখতে পারি না। ঘটনার দিন আমি পার্লামেন্ট অধিবেশনে বসা ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম একজন নেতা তড়িঘড়ি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আমার কাছে এলেন। অস্বাভাবিক বিনয়ে বললেন, রনি তোমার কাছে বসতে পারি। আমি ভারি আশ্চর্য হয়ে বললাম, অফকোর্স! প্লিজ! বসেন।

 

নেতা বললেন- আজ পত্রিকায় কি লিখেছ? আমি বললাম- শেখ কামাল সম্পর্কে লিখেছি। তার সম্পর্কে যে অপপ্রচার, মিথ্যাচার এবং বদনামসমূহ তৎকালীন জাসদ নেতৃত্ব এবং তাদের পত্রিকা গণকণ্ঠ প্রচার করত সে সবের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণসহ লিখেছি। আমার কথা শুনে নেতা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। গভীর এক তৃপ্তির নিঃশ্বাস নিয়ে হাসিমুখে বললেন- যাক বাবা বাঁচা গেল! আমি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি প্রশ্ন করলাম কেন? তিনি বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আজ রনি কি লিখেছে পড়েছ? উত্তর দিতে গিয়ে আমার মাথা আউলাঝাউলা হয়ে গেল- বললাম পড়েছি। এরপর আমি আরও ভয় পেয়ে গেলাম- কারণ আমি তো আসলে কিছুই পড়িনি। কি পড়ব, কোথায় পড়ব তাও জানি না। এরপর প্রধানমন্ত্রী বললেন, যাও। রনির সঙ্গে কথা বল।’ ব্যাস এ পর্যন্তই। শেখ কামালের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সেই নেতার সঙ্গে আমার পরবর্তীতে কোনো কথা বলার সুযোগ হয়নি। এ ব্যাপারে সাবেক প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আমার আলোচনা ছিল আরও কৌতূহল উদ্দীপক এবং আরও রসালো। সঙ্গত কারণেই সেই সব কথামালা এখানে বর্ণনা করলাম না।

 

যা বলছিলাম, শেখ কামালের বিরুদ্ধে যখন অপপ্রচার তুঙ্গে তখন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। এমনকি কোনো শীর্ষ নেতৃত্ব বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার জন্য একটি বক্তৃতা বা বিবৃতি দেননি। ফলে জনমত এবং জনরোষে কেবল শেখ কামাল এবং শেখ পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। পুরো আওয়ামী লীগকেই বদনামের দায়ভার নির্মমভাবে বহন করতে হয়েছিল এবং এখনো হচ্ছে। অথচ একটু চেষ্টা করলেই ইতিহাসের সেই সব মিথ্যা দায় থেকে শেখ কামালের বিদেহী আত্মাকে রক্ষা করা সম্ভব। এবার জয়ের প্রসঙ্গে কিছু বলা যাক। জয় রাজনীতিতে যুক্ত আছেন কিনা অথবা অনাগত দিনে আদৌ যুক্ত হবেন কিনা এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ, প্রধানমন্ত্রী অথবা জয় নিজ থেকে কিছু না বললেও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা জয়কে কেন্দ্র করে তাদের প্রচার প্রপাগান্ডা শুরু করে দিয়েছে অনেক দিন আগে থেকেই। নবম সংসদের ভিতরে, বাইরে, রাজপথে এবং বিদেশে চতুর্মুখী আক্রমণে জয়ের চরিত্রে কালিমা লেপন করার অব্যাহত চেষ্টা শুরু হয়েছে সেই ২০০৯ সালের প্রথম দিন থেকেই।

 

আওয়ামী লীগের প্রধান দুই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যথা বিএনপি এবং জামায়াত তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করে জয়বিরোধী প্রচার-প্রচারণা এবং প্রপাগান্ডায় নেমে পড়েছে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তারা আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতা-নেত্রী, সরকারের ভুলভ্রান্তি এবং দলের নেতিবাচক ইতিহাস নিয়ে নানা গদ্য ও পদ্য রচনার সঙ্গে জয়ের প্রসঙ্গ টেনে আনতেন। কিন্তু ২০১৫ সালের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তারা সব কিছু বাদ দিয়ে কেবল জয়কেই প্রধান টার্গেট করে বাহারি প্রচার-প্রপাগান্ডা চালাচ্ছেন।

 

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বেশ কয়েক মাস আগে জাতীয় প্রেসক্লাবে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ উত্থাপন করেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জয়ের একটি অ্যাকাউন্টে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার লেনদেনের প্রমাণপত্র তাদের হাতে রয়েছে। এ ঘটনার পর বিএনপি নেতারা বিভিন্ন টকশো, সভা সমিতি এবং সেমিনারে মার্কিন ফেডারেল কোর্টের একটি ডকুমেন্টের ফটোকপি উপস্থাপন করে নিজেদের বক্তব্যকে সত্য, বস্তুনিষ্ঠ এবং নির্ভুল বলে প্রমাণের অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে আসছিল অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে। তারা দেশে এবং বিদেশে ক্রমাগত প্রচার-প্রপাগান্ডা চালাতে চালাতে যখন এই বিশ্বাসে উপনীত হলো যে, বিষয়টি যথেষ্ট বিস্তৃতি লাভ করেছে এবং আওয়ামী লীগের তরফ থেকে কোনো রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া আসছে না তখন তারা তাদের নেত্রীকে দিয়ে বলাল যে জয়ের অ্যাকাউন্টে আড়াই হাজার কোটি টাকার অবৈধ অর্থ জমা আছে।

 

সম্মানিত পাঠক সঙ্গত কারণে দুটি প্রশ্ন করতে পারেন। প্রথমত, কেন বিএনপি অন্য সব কিছু বাদ দিয়ে জয়কে টার্গেট করল? দ্বিতীয়ত, জয়ের বিরুদ্ধে বিএনপি যখন রাজনৈতিক ভাইরাস ছড়াচ্ছে তখন কেবল জয় এবং তার মা ছাড়া কেন আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্য কোনো নেতা এগিয়ে আসছেন না। এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলার আগে একটি কথা বলে নেওয়া ভালো যে, জয়কে নিয়ে বিএনপি-জামায়াত যে জটিল রাজনৈতিক খেলা আরম্ভ করেছে তার জবাবে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন না করে শক্তি প্রদর্শনের নামে রাজনৈতিক মাস্তানি করছে। এতে করে দলটি তো বটেই স্বয়ং জয় এবং প্রধানমন্ত্রীর পরিবার এক অস্বস্তিকর পরিবেশের মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের লাখ লাখ সুবিধাভোগী নেতা-নেত্রী, মন্ত্রী, এমপি, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক এবং পেশাজীবী শ্রেণি থাকতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে কেন নিজ পুত্রের পক্ষে সাফাই গেয়ে সংসদে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করতে হবে অথবা স্বয়ং জয়কে নিজের পক্ষে সাফাই গেয়ে কেন ফেসবুকে বিবৃতি দিতে হবে? আজ যদি বিএনপির জায়গায় আওয়ামী লীগ থাকত এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উত্থাপিত হতো তবে বিএনপির সর্বস্তরের নেতার মুখে খই ফুটত। তারা ভীমরুলের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে হুল ফুটিয়ে বাক্য ও শব্দ সন্ত্রাসে সারা দেশে  উথাল-পাতাল অবস্থা সৃষ্টি করে ফেলত এবং দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামীবিরোধী মিছিল-মিটিং শুরু করে দিত। এবার প্রসঙ্গে ফিরে আসি। বিএনপি ধরেই নিয়েছে যে, রাজনৈতিক লড়াই, সংগ্রাম, বাদ বিসংবাদ এবং কূটকৌশলে তারা পেরে উঠবে না। গত সাত বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করে তারা দেখেছে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি বিশাল আকার ধারণ করেছে। অন্যদিকে তারা ক্ষুদ্রকায় এবং ভগ্ন দেহের মনের ক্রমাবনতিতে নিচে নামতে নামতে শক্তিশালীদের অত্যাচার এবং বিনোদনের উপকরণে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় তারা পেশিশক্তির পরিবর্তে মস্তিষ্ক ব্যবহার করে ক্ষমতাসীনদের প্রাণভোমরার খোঁজ শুরু করেছে রূপকথার গল্পের আদলে। তারা ১৯৭৪-৭৫ সালের বাংলার ইতিহাস এবং ওয়াটার লু যুদ্ধের পূর্ববর্তী এক বছরের ফ্রান্সের ইতিহাসের দুর্বলতাগুলো ২০১৬ সালে এসে নতুন করে মঞ্চায়নের চেষ্টা করছে। তারা জয় সম্পর্কে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের বর্তমান সেনসিবিলিটিকে টার্গেট করে জয়বিরোধী প্রচারে নেমেছে কয়েকটি লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে এবং লক্ষ্য পূরণে তারা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

 

আওয়ামী লীগ শীর্ষ নেতৃত্ব যদি নিজেদের ঐতিহাসিক দুর্ভাগ্যের পেছনের প্রপাগান্ডার প্রভাব এবং গুরুত্বকে স্মরণ করতে না চান অথবা মূল্যায়ন করতে না পারেন তবে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যেসব প্রচার-প্রপাগান্ডা বেশ জনপ্রিয় হয়ে পড়েছিল এবং তাদের পতনের কারণ হয়েছিল সেসব বিষয়ে মূল্যায়ন করলেই নিজেদের করণীয় সম্পর্কে সজাগ হতে পারবেন। উদাহরণ হিসেবে তৎকালীন হাওয়া ভবনের প্রসঙ্গ টানা যেতে পারে। ভবনটির তখন ভারি বদনাম। যেখানে যত অপকর্ম হয়- সব কিছুতেই ভবনের নাম চলে আসতে শুরু করে। মুরগি মিলন, টোকাই সাগর, কালা জাহাঙ্গীর, পিচ্চি হান্নান থেকে শুরু করে ছোটা শাকিল, দাউদ ইব্রাহিম প্রভৃতি নামের সঙ্গে লোকজন হাওয়া ভবনকে একত্র করে ফেলতে লাগল। সব টেন্ডার, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে ঘুষ, দুর্নীতি, কমিশন ইত্যাদি শব্দমালা হাওয়া ভবন এবং গাজীপুরের বনের মধ্যে তৈরি করা খোয়াব ভবনের মধ্যে বিরাট এক সংযোগ সেতু তৈরি করে ফেলল। পরিস্থিতি এমন দাঁড়াল যে, গুলিস্তানের হকার থেকে শুরু করে ফুটপাথের মুচি এবং শাহবাগ মোড়ের ভিক্ষুকরা পর্যন্ত বলাবলি করতে থাকল- ‘তাদের আয়ের সিংহভাগ চলে যায় হাওয়া ভবন এবং খোয়াব ভবনে।’ ক্ষমতাসীন বিএনপি তখন এসব প্রপাগান্ডাকে একদম পাত্তা দেয়নি এবং প্রতিপক্ষের অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করেনি। ফলে গত ৯টি বছর ধরে বাংলাদেশের বিএনপি নেতা-কর্মীদের কি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তা কেবল ভুক্তভোগীরাই বলতে পারবেন।

 

জয়ের বিষয়টি হাওয়া ভবনের সঙ্গে তুলনীয় নয়। এটি আরও স্পর্শকাতর এবং অস্বস্তিকর। কারণ জয় নামটির সঙ্গে বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ, প্রধানমন্ত্রী এবং মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তিসমূহের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জয়ের বিরুদ্ধে যেসব প্রচার-প্রচারণা এবং প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে তা আওয়ামীবিরোধী শক্তিসমূহের সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক কূটকৌশল এবং এক ধরনের রাজনৈতিক যুদ্ধ। রাষ্ট্রশক্তির ব্যবহার, শক্তি প্রয়োগ অথবা আইন আদালতের মারপ্যাঁচে এসব কূটকৌশল মোকাবিলা করা যাবে না। অন্যদিকে, জয় নিজে অথবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি তার সন্তানের পক্ষে সাফাই গান তবে নিজেদের অসহায়ত্ব এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দৈন্য ফুটে উঠবে। বিষয়টি দলীয়ভাবে এবং রাষ্ট্রশক্তির পরিবর্তে দলটির রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক শক্তি ব্যবহার করতে পারলে প্রতিপক্ষ হালে পানি পাবে না।

 

আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা হয়তো বলতে পারেন, আমি তো জয়ের পক্ষে বলেছি। এ ব্যাপারে আমার বক্তব্য হলো, তার বক্তব্যটি বেগম জিয়ার অভিযোগের কোনো রাজনৈতিক জবাব হয়নি। তিনি কেবল বলেছেন, বেগম জিয়া নির্বোধের মতো কথা বলেছেন। তার এই বক্তব্য দ্বারা আওয়ামী লীগ বা জয়ের কোনো লাভ হয়নি, উল্টো ক্ষতি হয়েছে। আমার প্রশ্ন হলো, কেন আওয়ামী লীগের জাতীয় পর্যায়ের জনপ্রিয় এবং পরিচিত মুখগুলো প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সাফল্য এবং জয় সম্পর্কে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় অর্থমন্ত্রীর লোক জড়িত এমনতরো অভিযোগ উত্থাপনকারী নেতা অথবা কারণে-অকারণে বেগম খালেদা জিয়ার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধারকারী নেতা-নেত্রী, মন্ত্রী-এমপিরা কেন জয়ের পক্ষে মুখ খুলছেন না। জয়ের অসংখ্য গুণাবলি, বিশ্বাস এবং প্রমাণযোগ্য সাফল্য কি আওয়ামী লীগ নেতারা জানেন না? অথবা বিশ্বব্যাপী পুতুলের প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়ে কথাবার্তা বললে প্রধানমন্ত্রীর পরিবার সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয় না? তবে তারা কেন কৃপণতা করছেন? প্রধানমন্ত্রী কি তাদের কোনো কিছু কম দিয়েছেন?  সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন

 

লেখক : কলামিস্ট।