বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ বঙ্গবন্ধু সরকারের পাট প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিন খান হাবু মিয়ার আজ ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী। মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের এই বর্ষীয়াণ নেতার কর্মময় জীবনের ব্যাপ্তি ছিল বিশাল। তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন আলেখ্য বিশ্লেষণ করার মতো যোগ্যতা বা ধৃষ্টতা আমার নেই। কিন্তু তার সঙ্গে থেকে তাকে নিবিড়ভাবে দেখেছি, তার সঙ্গে মিশেছি, তার দুঃখের সঙ্গী হতে পেরেছি। তার সাহচর্যে থেকে যা কিছু শিখেছি, দেখেছি তা আমাকে সবসময় অভিভূত করেছে। বিশাল হৃদয়ের অধিকারী এই জননেতা সব শ্রেণি-পেশার মানুষের বিপদে-আপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন। তার ব্রত ছিল মানবকল্যাণ। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে সর্বদা তার উপস্থিতি প্রত্যেক নেতাকর্মীর মধ্যে প্রাণসঞ্চার করত। মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী তেরশ্রীতে মোসলেম উদ্দিন খান হাবু মিয়ার দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণায় মুক্তিযুদ্ধের ৪৩ জন শহীদের স্মরণে একটি দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিসৌধ নির্মাণে তার ভূমিকা আমরা চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করব।
একদিন হঠাৎ করে তার অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঢাকার পরিবাগের একটি হাসপাতালে তাকে দেখতে যাই। হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন শ্রদ্ধেয় নেতা। দেখা হল, কথা হল না। নিথর নিস্তব্ধ, কথা বলতে পারছেন না। শুধুই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন আমাদের দিকে। আমি কয়েকবার নেতার মাথায় হাত বুলিয়ে কাকা বলে ডাকলাম। কিন্তু তিনি কথা বলতে পারলেন না। ২০১৩ সালের ১৬ নভেম্বর সেই দিনটিই ছিল নেতার সঙ্গে আমাদের শেষ দেখা। ২১ নভেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১টায় তিনি স্ত্রী, একমাত্র ছেলে ও তিন কন্যাসহ বহু আত্মীয়স্বজন ও রাজনৈতিক নেতাকর্মী রেখে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে যান। জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সব নেতাকর্মীর সর্বসম্মতিক্রমে মানিকগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ের পাশে শ্রদ্ধেয় নেতাকে সমাহিত করা হয়।
হাবু মিয়ার দীর্ঘ ৮৫ বছরের জীবন পরিক্রমায় ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের অভ্যুদয় অবধি ছিল তার দীপ্ত পদচারণা। মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন বারবার তাকে তাড়িত করেছে। তাই তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ৮৫ বছরে দাঁড়িয়েও নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার দীর্ঘ জীবন কেটেছে মানুষের মুক্তির সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করে। মনিকগঞ্জ সদরের গড়পাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৩০ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তিনি সারা জীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করেছেন। তার মৃত্যুতে মানিকগঞ্জ আওয়ামী লীগ পরিবারে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়।
তিনি ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন। ১৯৫৫ সালে এলএলবি পাস করার পর ১৯৫৭ সালে আইন পেশায় যোগ দেন। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ভালোবাসার এ মানুষটি তিনবার জাতীয় সংসদের সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি জেলা বারের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন দীর্ঘদিন এবং তিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত মানিকগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জড়িত ছিলেন বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও। তিনি মানিকগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, মানিকগঞ্জ ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও মানিকগঞ্জ স্টেডিয়াম, অফিসার্স ক্লাব প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। তার মতো ত্যাগী নেতার আজ খুবই প্রয়োজন। আমৃত্যু মানবমুক্তির স্বপ্ন দেখা এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে জানাই গভীর ভালোবাসা ও বিনম্র শ্রদ্ধা।
মুজিবর রহমান : প্রাবন্ধিক