ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক ও কর্মচারীরা ভালো নেই

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ দেশের প্রায় ৪০ হাজার কিন্ডারগার্টেনে কর্মরত প্রায় ৮ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যসহ প্রায় অর্ধকোটি মানুষের জন্য আর্থিক সহায়তা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে গত ৮ মাসে তারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হয়েছে, যা বিভিন্ন মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

নিরুপায় হয়ে তিনজন শিক্ষক আত্মহত্যা করেছেন। বিভিন্ন রোগে মারা গেছেন আরও ১৪ জন শিক্ষক। অনেকে পেশা পরিবর্তন করেছেন। শিক্ষক যখন ‘ভ্যানচালক’, ‘ফল বা তরকারি বিক্রেতা’, কিংবা ‘রাজমিস্ত্রির জোগালি’ তখন আমরা লজ্জিত হই। আবার বেশিরভাগ স্কুল ভাড়াবাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় করোনায় ভাড়া দিতে না পেরে কেউ বিদ্যালয় বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছেন।

‘স্কুল বিক্রি হচ্ছে’ বিজ্ঞাপনটি শিক্ষাসচেতন মানুষের হৃদয়কে ভারাক্রান্ত করলেও গলেনি এ সেক্টরের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তাব্যক্তিদের হৃদয়। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন যদি আলোচনা করি, তাহলে শিক্ষকদের যে মর্যাদার কথা তিনি বলতেন ও ভাবতেন, সেই মর্যাদা আজ কোথায়?

আমি মাঠ পর্যায়ের প্রায় একশ’ স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের বক্তব্য হল, আমাদের স্কুলগুলোতে ১০-২০ শতাংশ ভালো অভিভাবক আছেন, যারা স্বেচ্ছায় বেতন দিয়েছেন। বাকিরা জানিয়েছেন, ‘যেহেতু স্কুল বন্ধ, সেহেতু আমরা বেতন দিতে পারব না। করোনার কারণে আমরাও বিপদে আছি।’

সরকারি অনুদানের সুযোগ না থাকায় যেখানে স্বাভাবিক অবস্থায়ই কিন্ডারগার্টেনগুলোর চলতে কষ্ট হয়, সেখানে দীর্ঘ ৮ মাস বেতন না পেলে বা ২০ শতাংশ পেলে কী অবস্থা হয়, তা সহজেই অনুমেয়। এ অবস্থায় কে তাদের পাশে এসে দাঁড়াবে? এক শব্দে এর উত্তর-সরকার।

সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে : ‘রাষ্ট্র- ক. একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সব বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য; খ. সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছাপ্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য; গ. আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’

রাষ্ট্রকে দেয়া সাংবিধানিক এই পবিত্র দায়িত্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি কিন্ডারগার্টেনগুলোও বছরের পর বছর বিনা পারিশ্রমিকে ও যথেষ্ট নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আসছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেসব বইপাঠ্য, সেসব বই-ই পড়াচ্ছেন কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীদের সুকুমার বৃত্তির বিকাশ সাধনে ও ইংরেজিতে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দু-একটি অতিরিক্ত বইও পড়াচ্ছেন তারা।

জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন, শুমারি-জরিপসহ যে কোনো রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকরা দায়িত্ব পালন করে সরকারকে নিয়মিত সহায়তা করছেন। শিক্ষকরা ভিক্ষুক নন। তারা আত্মমর্যাদায় বিশ্বাসী। তারা অন্যদের মতো হাত পাততে পারেন না। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকসংক্রান্ত যে হালনাগাদ তথ্য আছে, সেখানে কিন্ডারগার্টেনের তথ্যও আছে।

২০২০ সালে হালনাগাদ করা সেই তথ্যানুযায়ী স্কুলভিত্তিক আর্থিক সহায়তার একটি বাজেট করলেই হয়। শিক্ষকের পাশাপাশি স্কুলের জন্যও যদি একটুখানি বরাদ্দ রাখা যায়, তাহলে উদ্যোক্তারাও উজ্জীবিত হবেন। সরকারি পাঠ্যবই যেভাবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়, টাকাটাও সেভাবে সহজেই বিতরণ করা যেতে পারে। আনুষ্ঠানিকভাবে স্ব স্ব এলাকার সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতেও বিতরণ করা হতে পারে। সেখানে শিক্ষা বিভাগসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও উপস্থিত থাকবেন। এতে সরকারের সুনাম বাড়বে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনাকালের বিশেষ বিবেচনায় কিন্ডারগার্টেন খাতে একটি সম্মানজনক বরাদ্দ দেবেন বলে আমরা আশাবাদী।

এম এ ওয়াদুদ : প্রধান সমন্বয়কারী, কিন্ডারগার্টেন ও সমমান স্কুল রক্ষা জাতীয় কমিটি

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক ও কর্মচারীরা ভালো নেই

আপডেট টাইম : ০৫:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ দেশের প্রায় ৪০ হাজার কিন্ডারগার্টেনে কর্মরত প্রায় ৮ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যসহ প্রায় অর্ধকোটি মানুষের জন্য আর্থিক সহায়তা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে গত ৮ মাসে তারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হয়েছে, যা বিভিন্ন মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

নিরুপায় হয়ে তিনজন শিক্ষক আত্মহত্যা করেছেন। বিভিন্ন রোগে মারা গেছেন আরও ১৪ জন শিক্ষক। অনেকে পেশা পরিবর্তন করেছেন। শিক্ষক যখন ‘ভ্যানচালক’, ‘ফল বা তরকারি বিক্রেতা’, কিংবা ‘রাজমিস্ত্রির জোগালি’ তখন আমরা লজ্জিত হই। আবার বেশিরভাগ স্কুল ভাড়াবাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় করোনায় ভাড়া দিতে না পেরে কেউ বিদ্যালয় বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছেন।

‘স্কুল বিক্রি হচ্ছে’ বিজ্ঞাপনটি শিক্ষাসচেতন মানুষের হৃদয়কে ভারাক্রান্ত করলেও গলেনি এ সেক্টরের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তাব্যক্তিদের হৃদয়। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন যদি আলোচনা করি, তাহলে শিক্ষকদের যে মর্যাদার কথা তিনি বলতেন ও ভাবতেন, সেই মর্যাদা আজ কোথায়?

আমি মাঠ পর্যায়ের প্রায় একশ’ স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের বক্তব্য হল, আমাদের স্কুলগুলোতে ১০-২০ শতাংশ ভালো অভিভাবক আছেন, যারা স্বেচ্ছায় বেতন দিয়েছেন। বাকিরা জানিয়েছেন, ‘যেহেতু স্কুল বন্ধ, সেহেতু আমরা বেতন দিতে পারব না। করোনার কারণে আমরাও বিপদে আছি।’

সরকারি অনুদানের সুযোগ না থাকায় যেখানে স্বাভাবিক অবস্থায়ই কিন্ডারগার্টেনগুলোর চলতে কষ্ট হয়, সেখানে দীর্ঘ ৮ মাস বেতন না পেলে বা ২০ শতাংশ পেলে কী অবস্থা হয়, তা সহজেই অনুমেয়। এ অবস্থায় কে তাদের পাশে এসে দাঁড়াবে? এক শব্দে এর উত্তর-সরকার।

সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে : ‘রাষ্ট্র- ক. একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সব বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য; খ. সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছাপ্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য; গ. আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’

রাষ্ট্রকে দেয়া সাংবিধানিক এই পবিত্র দায়িত্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি কিন্ডারগার্টেনগুলোও বছরের পর বছর বিনা পারিশ্রমিকে ও যথেষ্ট নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আসছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেসব বইপাঠ্য, সেসব বই-ই পড়াচ্ছেন কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীদের সুকুমার বৃত্তির বিকাশ সাধনে ও ইংরেজিতে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দু-একটি অতিরিক্ত বইও পড়াচ্ছেন তারা।

জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন, শুমারি-জরিপসহ যে কোনো রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকরা দায়িত্ব পালন করে সরকারকে নিয়মিত সহায়তা করছেন। শিক্ষকরা ভিক্ষুক নন। তারা আত্মমর্যাদায় বিশ্বাসী। তারা অন্যদের মতো হাত পাততে পারেন না। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকসংক্রান্ত যে হালনাগাদ তথ্য আছে, সেখানে কিন্ডারগার্টেনের তথ্যও আছে।

২০২০ সালে হালনাগাদ করা সেই তথ্যানুযায়ী স্কুলভিত্তিক আর্থিক সহায়তার একটি বাজেট করলেই হয়। শিক্ষকের পাশাপাশি স্কুলের জন্যও যদি একটুখানি বরাদ্দ রাখা যায়, তাহলে উদ্যোক্তারাও উজ্জীবিত হবেন। সরকারি পাঠ্যবই যেভাবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়, টাকাটাও সেভাবে সহজেই বিতরণ করা যেতে পারে। আনুষ্ঠানিকভাবে স্ব স্ব এলাকার সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতেও বিতরণ করা হতে পারে। সেখানে শিক্ষা বিভাগসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও উপস্থিত থাকবেন। এতে সরকারের সুনাম বাড়বে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনাকালের বিশেষ বিবেচনায় কিন্ডারগার্টেন খাতে একটি সম্মানজনক বরাদ্দ দেবেন বলে আমরা আশাবাদী।

এম এ ওয়াদুদ : প্রধান সমন্বয়কারী, কিন্ডারগার্টেন ও সমমান স্কুল রক্ষা জাতীয় কমিটি