বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। রাজনৈতিক মাঠে সততা নিষ্ঠা আদর্শের উজ্জলতার প্রতিচ্ছবির নাম। ভাটির জেলা কিশোরগঞ্জের ছেলে আশরাফের জন্মদিন আজ। বাংলার স্বাধীনতার অনতম সংগঠক, যুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, জাতীয় চার নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের জৈষ্ঠপুত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের বছরের প্রথম দিনে ময়মনসিংহ শহরে জন্মগ্রহন করেন। তার পৈতৃক নিবাস তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহাকুমায়।
ময়মনসিংহ শহরেই ফুটেছে আশরাফের শৈশবের ফুল। বাবা সৈয়দ নজরুলের রাজনৈতিক পদচারণ দেখতে দেখতেই রাজনীতির হাতে করি হয় সৈয়দ আশরাফের। বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ছিলেন। কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তরুন টকবগে সৈয়দ আশরাফ দেশের জন্য অস্ত্র তুলে নেন। তিনি মুক্তিবাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন। ভারতের দেরাদুনে প্রশিক্ষণ নেন তিনি।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। পারিবারিক ঐতিহ্যের সূত্র ধরে তিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৭০ বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ–সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জাতীয় চার নেতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তিনি যুক্তরাজ্য চলে যান। প্রবাস জীবনে তিনি যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
আশরাফুল ইসলাম ১৯৯৬ সালে দেশে ফিরে আসেন এবং কিশোরগঞ্জ সদর আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় তিনি নির্বাচিত হন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন।
ব্যক্তিগত জীবনে সৈয়দ আশরাফুল ব্রিটিশ ভারতীয় শীলা ঠাকুরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। শীলা লন্ডনে শিক্ষকতা করতেন এবং ২৩ অক্টোবর ২০১৭ সালে তিনি মৃত্যুবরন করেছেন। তাদের একটি মেয়ে রয়েছে (রীমা ঠাকুর), যে লন্ডনের এইচএসবিসি ব্যাংকে চাকরি করেন।
সৈয়দ আশরাফুল দীর্ঘদিন ধরে থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন থেকে ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যান না ফেরার দেশে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সৈয়দ আশরাফ থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।