বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ শীতলক্ষ্যা নদীতে প্রায় অর্ধশত যাত্রী নিয়ে লঞ্চডুবির ঘটনাটি মর্মান্তিক। এ ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অনেকেই। এ সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত ২৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন অনেকেই। ডুবে যাওয়া লঞ্চটি নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জ যাচ্ছিল।
জানা যায়, একটি কোস্টার জাহাজ পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে লঞ্চটিকে অন্তত ২০০ মিটার টেনে নিয়ে যায়, এরপর লঞ্চটি ডুবে যায়। অর্থাৎ এ দুর্ঘটনার জন্য ঝড় বা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, মানুষই দায়ী। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তা উদ্ঘাটন করতে হবে।
দেশে প্রায় প্রতি বছরই ছোট-বড় নৌ দুর্ঘটনায় শত শত মানুষের মৃত্যুর অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রীবহন, চালকের অদক্ষতা ও অনভিজ্ঞতা, লঞ্চের নকশায় সমস্যা, ফিটনেস তদারকির অভাব ইত্যাদি কারণে লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। তবে বিষয়টি আলোচনায় আসে কেবল তখনই, যখন কোনো লঞ্চডুবিতে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়।
অন্য সময় এ বিষয়গুলো দেখভাল করার যেন কেউ থাকে না। লঞ্চডুবির ঘটনায় কারও তেমন কোনো শাস্তিও হয় না। লঞ্চ দুর্ঘটনা রোধে প্রথমেই কঠোর শাস্তির বিধান করা উচিত। উল্লেখ্য, প্রচলিত আইনে অনেক ফাঁকফোকর থাকায় দুর্ঘটনার জন্য দায়ী লঞ্চ মালিক ও চালকদের শাস্তির যে বিধান আছে, তা কার্যকর করা খুবই কঠিন।
বস্তুত যে কোনো দুর্ঘটনা রোধেই সংশ্লিষ্ট আইন ও তার বাস্তবায়ন কঠোর হওয়া প্রয়োজন। সেই সঙ্গে সঠিক নকশা অনুযায়ী লঞ্চ নির্মাণ, লঞ্চের ফিটনেস নিয়মিত তদারকি এবং চালক ও সহযোগীদের দক্ষতা-অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে এ পুরো খাতটির ওপর কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলাদেশ নদীপ্রধান দেশ। এখনও অনেক স্থানের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম নৌপথ। আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী হওয়ার কারণেও অনেকে লঞ্চকে বেছে নেন যাতায়াতের মাধ্যম হিসাবে। তাই এ মাধ্যমটির নিরাপত্তার দিকে অধিকতর দৃষ্টি দেওয়া দরকার। ভুলে গেলে চলবে না, লঞ্চডুবিতে যারা প্রাণ হারান তাদের পরিবারে চিরদিনের জন্য দুঃখের বীজ বপন হয়।
রোববার শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবিতে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি। সরকারের পক্ষ থেকে যেন প্রতিটি পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হয়। সেই সঙ্গে লঞ্চডুবির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে অবশ্যই।