বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ দেশের ব্যাংকিং সেক্টর এখন উদ্বৃত্ত তারল্য প্রবাহ নিয়ে বসে আছে। কিন্তু উদ্যোক্তারা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আসছে না। বিশেষ করে করোনাকালীন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণে কিছুটা হলেও দ্বিধান্বিত বলেই মনে হচ্ছে। ফলে ব্যক্তি খাতে যেভাবে বিনিয়োগ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল তা হচ্ছে না। কয়েক মাস আগে বিনিয়োগকারীদের দাবির মুখে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদ হার ৯ শতাংশ এবং আমানতের ওপর প্রদেয় সুদের সর্বোচ্চ হার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের ক্ষেত্রে সাড়ে ৫ শতাংশ এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংকের বেলায় ৬ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়।
সংশ্লিষ্ট মহল আশা করেছিলেন, ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা হলে উদ্যোক্তারা বেশি করে ঋণের জন্য প্রস্তাব নিয়ে আসবে। এতে ব্যক্তি খাতে ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংকের মালিকরা ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ নির্ধারণের বিপরীতে আমানতের ওপর আরোপিত সুদের হার কমিয়ে আনার দাবি জানালে বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতের ওপর প্রদেয় সুদের সর্বোচ্চ হার ৬ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়। একইসঙ্গে ব্যক্তি খাতের ব্যাংক মালিকদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মোট আমানতের ৫০ শতাংশ ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংকে সংরক্ষণের অনুমতি প্রদান করে।
আগে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মোট আমানতের ২৫ শতাংশ ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংকে সংরক্ষণ করতে পারত। বাংলাদেশ ব্যাংক যখন ব্যাংক ঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয় তখনই এ ব্যাপারে অনেকেই আপত্তি জানিয়েছিলেন। কারণ মুক্তবাজার অর্থনীতিতে এভাবে সুদের সর্বোচ্চ হার নির্ধারণ করে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বাজার চাহিদা এবং জোগানের ওপর ভিত্তি করেই সুদের হার নির্ধারিত হবে এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। সেই সময় অনেকেই বলেছিলেন, ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয় যেহেতু অনেক বেশি, কাজেই তাদের ‘কস্ট অব ফান্ড’ স্বাভাবিকভাবেই উচ্চ মাত্রায় রয়েছে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশ দিলেই সিডিউল ব্যাংকগুলো সুদের হার কমিয়ে আনতে পারবে না। যখন ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয় তখন আমি ব্যক্তিগতভাবে একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছিলাম তাদের কস্ট অব ফান্ড হচ্ছে সোয়া ৮ শতাংশ। কোনো ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ড যদি সোয়া ৮ শতাংশ হয় তাহলে সেই ব্যাংক কোনোভাবেই ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে পারবে না। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলোকে সুদের হার কমানোর জন্য নির্দেশ দিলে তারা বেশি করে হিডেন চার্জ আরোপ করবে। অথবা ঋণ সংকোচন নীতি গ্রহণ করবে।
করোনার কারণে উদ্যোক্তাদের আর্থিক অবস্থা তেমন একটা ভালো নেই। তারা পুঁজি স্বল্পতায় ভুগছে। তা সত্ত্বেও ব্যাংকে উদ্বৃত্ত তারল্য ক্রমশ স্ফীত হচ্ছে, এটাকে কোনোভাবেই স্বাভাবিক অবস্থা বলা যাবে না। কী কারণে ব্যাংকগুলোতে উদ্বৃত্ত তারল্যের এমন স্ফীতি ঘটছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। কিছুদিন আগের হিসাব অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকগুলোতে উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ ২ লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করে গেছে। গত জানুয়ারি মাসে ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ৮৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। গত বছর জুনে ব্যাংক আমানতের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৮০ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে আমানত বেড়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ২০২ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে আমানত বৃদ্ধি পেয়েছিল ৭৩ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে আমানত বেড়েছিল ৪০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যেভাবে আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে, এটা কোনোভাবেই স্বাভাবিক অবস্থার প্রতিফলন নয়। আমানত বৃদ্ধির পেছনে একটি বিশেষ কারণ হিসাবে কাজ করছে করোনা সংক্রমণ। করোনার কারণে বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলো ক্রমশ সংকুচিত হয়েছে। আগে যারা বিভিন্ন উদ্যোগে বিনিয়োগ করতেন তারা এখন তা না করে ব্যাংকে টাকা জমা রাখছেন, যদিও ব্যাংক আমানতের ওপর আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় কম সুদ দিচ্ছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা কর্মচ্যুত হয়ে দেশে ফিরে এসেছেন তারাও তাদের টাকা বিনিয়োগ না করে ব্যাংকে সংরক্ষণ করছেন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা আগের মতো পুঁজি সংগ্রহের জন্য মরিয়া হয়ে ঘুরছে না।
প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক ঋণের ওপর সুদের হার হ্রাস এবং আমানতের ওপর প্রদেয় সুদের হার কমানোর এ নির্দেশনা কেন বাস্তবায়িত হচ্ছে না? আমরা আসলে সমস্যার মূলে যেতে চাই না। ব্যাংকিং সেক্টরের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে খেলাপি ঋণের প্রবল উপস্থিতি। কোনোভাবেই খেলাপি ঋণ সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। বরং সাম্প্রতিক সময়ে কিস্তি আদায় না করে কৃত্রিমভাবে খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখানোর একটি প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। যেসব আইনি সংস্কার করা হয়েছে তার প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে খেলাপি ঋণের কিস্তি আদায় না করেই লেজারকে ক্লিন দেখানো।
কয়েক মাস আগে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে খেলাপি ঋণ এক বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরের জন্য পুনঃতফসিলিকরণ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ-এ তিন মাস রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এ অজুহাতে ৫০০ কোটি টাকা ও তদূর্ধ্ব খেলাপি ঋণ পুনর্গঠন করা হয়েছে। এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে মুখ চেনা একটি গোষ্ঠীকে লক্ষ করে। কারণ এ সুযোগ সবাইকে দেওয়া হয়নি। যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ৪৫০ কোটি টাকা ঋণ খেলাপির দায়ে জর্জরিত, সেই প্রতিষ্ঠান কি রাজনৈতিক আন্দোলনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি? তাহলে তাকে কেন এ সুযোগ দেওয়া হলো না? বকেয়া ঋণের কিস্তি আদায় না করেও লেজার ক্লিন দেখানোর চমৎকার একটি পন্থা হলো ঋণ হিসাব অবলোপন করা। অবলোপন শব্দটি উচ্চারিত হলেও আমাদের মনে মওকুফ শব্দটি এসে যায়। অনেকেই মনে করেন, ঋণ হিসাব অবলোপন অর্থ ঋণের দাবি ত্যাগ করা বা ঋণ মওকুফ করে দেওয়া। আসলে এটা কোনোভাবেই ঠিক নয়। কারণ ঋণ হিসাব অবলোপন অর্থ হচ্ছে খেলাপি ঋণের অর্থকে লেজারে প্রদর্শন না করে অন্যত্র সংরক্ষণ করা। এটি সেই ব্যক্তির মতো যার তিনটি ছেলে আছে।
এর মধ্যে দুজন সুস্থ স্বাভাবিক এবং একজন শারীরিকভাবে পঙ্গু। বাইরে থেকে কোনো অতিথি এলে তিনি সুস্থ দুই ছেলেকে তাদের সামনে এনে পরিচয় করিয়ে দেন। আর পঙ্গু ছেলেটিকে ঘরের ভেতর আটকে রাখেন। ঘরের ভেতর আটকে রাখলেও পঙ্গু ছেলেটি কিন্তু অস্তিত্ববিহীন হয়ে যায় না। তিনি অস্তিত্ববান কিন্তু প্রদর্শিত নন। ঋণ হিসাব অবলোপন ঠিক তেমিন। ব্যাংক অবলোপনকৃত ঋণ হিসাব থেকে কিস্তি আদায়ের চেষ্টা অব্যাহত রাখে। কিন্তু অবলোপনকৃত ঋণাঙ্ক ব্যাংকের লেজারে প্রদর্শন করে না। যেহেতু ব্যাংক অবলোপনকৃত ঋণ হিসাব থেকে কিস্তি আদায়ের ব্যাপারে সন্দিহান থাকে, তাই এ ধরনের অ্যাকাউন্ট থেকে কিস্তি আদায় হলে তা সরাসরি ব্যাংকের মুনাফার খাতে চলে যায়। ২০০৩ সাল থেকে ঋণ হিসাব অবলোপন করা হচ্ছে। তখন একটি ঋণ হিসাব অবলোপন করা বেশ কঠিন ছিল। কোনো ঋণ হিসাব মন্দ মানে শ্রেণিকৃত হওয়ার পর পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হলে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণপূর্বক উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়ের করতে সেই ঋণ হিসাব অবলোপন করা যেত। কিন্তু কিছু দিন আগে আইন সংশোধন করার ফলে মন্দ মানে শ্রেণিকৃত হওয়ার পর তিন বছর অতিক্রান্ত হলে সেই ঋণ হিসাবকে অবলোপন করা যায়। এ জন্য শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ এবং উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়েরের শর্তও শিথিল করা হয়েছে। ফলে ঋণ হিসাব অবলোপন করা এখন বেশ সহজ হয়েছে।
২০০৩ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৪৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ হিসাব অবলোপন করা হয়েছে। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১১ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবলোপনকৃত ঋণ হিসাবের স্থিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে যখন বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসে, তখন ব্যাংকিং সেক্টরের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ বর্ণিত সময়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে সাড়ে চার গুণ। গত সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণের যে হিসাব প্রদর্শন করা হয়েছে তা মোট খেলাপি ঋণের সত্যিকার পরিমাণ নয়। এর সঙ্গে অবলোপনকৃত ঋণাঙ্ক, পুনঃতফসিলিকরণকৃত ঋণ এবং মামলাধীন প্রকল্পের কাছে পাওনা ঋণের পরিমাণ যোগ করে দেখালে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। কারও কারও মতে, ব্যাংকিং সেক্টরের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। খেলাপি ঋণের কিস্তি আদায় করতে না পারলেও ব্যাংকগুলো মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রদর্শনের ক্ষেত্রে মোটেও উদার নয়। খেলাপি ঋণ সৃষ্টির পেছনে এক শ্রেণির ব্যাংক কর্মকর্তার ব্যাপক দুর্নীতি এবং অনিয়মও কম দায়ী নয়। তারা যদি ঋণ মঞ্জুরের সময় সঠিকভাবে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করতেন, তাহলে কোনো ঋণ খেলাপি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। আমাদের দেশের দুর্নীতির বিচার হয় না বললেই চলে। ব্যাংকিং সেক্টরে এত বড় বড় দুর্নীতি সংঘটিত হলো অথচ তার পেছনে যারা দায়ী তাদের শাস্তি হয়েছে খুব কমই। জনতা ব্যাংক একটি মাত্র শিল্পগোষ্ঠীকে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ মঞ্জুর করল অথচ যে বোর্ড এ ঋণ মঞ্জুর করেছে তাদের কারও কিছু হয়নি।
প্রশ্ন হলো, খেলাপি ঋণ সৃষ্টি হলে ব্যাংকগুলোর কী ক্ষতি? খেলাপি ঋণ সৃষ্টি হলে ব্যাংকগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্যাংক তার প্রদত্ত ঋণের কিস্তি আদায় করতে না পারলেও আমানতকারীদের কিন্তু ঠিকই সুদ প্রদান করতে হয়। খেলাপি ঋণের কিস্তি আদায় করতে না পারলে ব্যাংকের মুনাফার পরিমাণ হ্রাস পায়। কারণ প্রত্যেক শ্রেণিমানের ঋণের বিপরীতে নির্দিষ্ট হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেশি হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ঋণদান ক্ষমতা কমে যায়। কস্ট অব ফান্ড বেড়ে যায়। ফলে ব্যাংক চাইলেও তুলনামূলক কম সুদে নতুন উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে পারে না। ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেশি হওয়ার জন্য বিভিন্ন কারণ দায়ী। কিন্তু এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে খেলাপি ঋণ আদায় করতে না পারা। যেসব ব্যাংক কর্মকর্তা ঋণ দান কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তারা পরে ঋণ আদায়ের জন্য দায়বদ্ধ থাকেন না। ফলে তারা যেনতেনভাবে ঋণ দিলেও তাদের কিছু হয় না। যেসব কর্মকর্তা ঋণ মঞ্জুর প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকেন তাদের যদি আদায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখা যেত এবং ঋণের কিস্তি আদায় না হলে তার দায়ভার তাদের ওপর চাপানো যেত, তাহলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেকটাই কমে আসত।
এম এ খালেক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিষয়ক কলাম লেখক