ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এ কেমন চিকিৎসক

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ খবরটি পড়তেই চমকে উঠতে হয়। এটা কেমন করে সম্ভব।

যমজ বাচ্চার একটিকে ভূমিষ্ঠ করিয়ে আরেকজনকে পেটে রেখেই অস্ত্রোপচার শেষ করেছেন একজন চিকিৎসক। যেখানে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টেও প্রসূতির যমজ বাচ্চার কথা উল্লেখ রয়েছে, তখন একজন চিকিৎসক এ কাজ কেমন করে করেন? সন্তান জন্মের এক মাস পর্যন্ত গর্ভে মৃত সন্তান বয়ে বেড়িয়েছেন এক মা। চিকিৎসক এই সন্তানকে টিউমার বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। পরে দ্বিতীয়বার আল্ট্রাসনোগ্রামের পর ধরা পড়ে, এই মায়ের পেটে আরেকটি মৃত বাচ্চা রয়েছে। প্রসূতিকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দায় সেরেছে অভিযুক্ত সংশ্লিষ্ট ক্লিনিক। এখন ঘটনা ধামাচাপা দিতে উঠেপড়ে লেগেছে।

দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে বাঙালী কণ্ঠ যে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে, তাতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে অব্যবস্থাপনার কথা উঠে এসেছে। সরকারি চিকিৎসকরা নিজেদের কর্মস্থলের চেয়ে ক্লিনিকের প্রতি বেশি মনোযোগী—এটা এখন গোপন কোনো বিষয় নয়। হাসপাতালের রোগী নিজেদের পছন্দের ক্লিনিকে নিয়ে চিকিৎসার ব্যাপারে চিকিৎসকদের আগ্রহ।

এতে উভয় পক্ষই লাভবান হয়। এই মায়ের ক্ষেত্রেও তেমনটি হয়েছে। যে ক্লিনিকে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছে, এটির মালিক স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক। স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীদের তাঁর ক্লিনিকে পাঠিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বাধ্য করেন। সরকারি অফিস চলাকালেও তিনি তাঁর ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের কাজ করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে শোকজ করা হয়েছে। একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট ক্লিনিক। কিন্তু এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। চিকিৎসাকে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করেছে যারা, তাদের অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যথাযথ বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে উল্লেখ থাকার পরও যখন যমজ বাচ্চার একটিকে পেটের মধ্যে রেখে সেলাই করে দেওয়া হয়, তখন তো ধরেই নেওয়া যায় যে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নাগরিকের প্রতি অবহেলা করা হয়েছে। ফলে শিশুটির মৃত্যুও ঘটেছে। শিশুটির মা-ও এখন ঝুঁকির মুখে। যেসব ক্লিনিকে এমন ঘটনা ঘটে, সেসব ক্লিনিক কেন একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে না? বিষয়টি নিয়ে এখন সবাইকে ভাবতে হবে।

চিকিৎসা হচ্ছে সেবা বাণিজ্য। এখানে চিকিৎসক থেকে শুরু করে সবাইকে সেবার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ক্লিনিকগুলোর পাশাপাশি চিকিৎসকরাও যদি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কাজ করেন, তাহলে দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে এনে বাংলাদেশ যখন বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে, তখন এ ধরনের চিকিৎসক ও ক্লিনিক দেশের সুনামেরও ক্ষতি করছে। কাজেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আমরা আশা করব, যাদের কারণে খাদিজার অনাগত সন্তান পৃৃথিবীর আলো দেখতে পায়নি, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

এ কেমন চিকিৎসক

আপডেট টাইম : ০৭:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ খবরটি পড়তেই চমকে উঠতে হয়। এটা কেমন করে সম্ভব।

যমজ বাচ্চার একটিকে ভূমিষ্ঠ করিয়ে আরেকজনকে পেটে রেখেই অস্ত্রোপচার শেষ করেছেন একজন চিকিৎসক। যেখানে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টেও প্রসূতির যমজ বাচ্চার কথা উল্লেখ রয়েছে, তখন একজন চিকিৎসক এ কাজ কেমন করে করেন? সন্তান জন্মের এক মাস পর্যন্ত গর্ভে মৃত সন্তান বয়ে বেড়িয়েছেন এক মা। চিকিৎসক এই সন্তানকে টিউমার বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। পরে দ্বিতীয়বার আল্ট্রাসনোগ্রামের পর ধরা পড়ে, এই মায়ের পেটে আরেকটি মৃত বাচ্চা রয়েছে। প্রসূতিকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দায় সেরেছে অভিযুক্ত সংশ্লিষ্ট ক্লিনিক। এখন ঘটনা ধামাচাপা দিতে উঠেপড়ে লেগেছে।

দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে বাঙালী কণ্ঠ যে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে, তাতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে অব্যবস্থাপনার কথা উঠে এসেছে। সরকারি চিকিৎসকরা নিজেদের কর্মস্থলের চেয়ে ক্লিনিকের প্রতি বেশি মনোযোগী—এটা এখন গোপন কোনো বিষয় নয়। হাসপাতালের রোগী নিজেদের পছন্দের ক্লিনিকে নিয়ে চিকিৎসার ব্যাপারে চিকিৎসকদের আগ্রহ।

এতে উভয় পক্ষই লাভবান হয়। এই মায়ের ক্ষেত্রেও তেমনটি হয়েছে। যে ক্লিনিকে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছে, এটির মালিক স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক। স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীদের তাঁর ক্লিনিকে পাঠিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বাধ্য করেন। সরকারি অফিস চলাকালেও তিনি তাঁর ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের কাজ করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে শোকজ করা হয়েছে। একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট ক্লিনিক। কিন্তু এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। চিকিৎসাকে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করেছে যারা, তাদের অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যথাযথ বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে উল্লেখ থাকার পরও যখন যমজ বাচ্চার একটিকে পেটের মধ্যে রেখে সেলাই করে দেওয়া হয়, তখন তো ধরেই নেওয়া যায় যে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নাগরিকের প্রতি অবহেলা করা হয়েছে। ফলে শিশুটির মৃত্যুও ঘটেছে। শিশুটির মা-ও এখন ঝুঁকির মুখে। যেসব ক্লিনিকে এমন ঘটনা ঘটে, সেসব ক্লিনিক কেন একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে না? বিষয়টি নিয়ে এখন সবাইকে ভাবতে হবে।

চিকিৎসা হচ্ছে সেবা বাণিজ্য। এখানে চিকিৎসক থেকে শুরু করে সবাইকে সেবার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ক্লিনিকগুলোর পাশাপাশি চিকিৎসকরাও যদি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কাজ করেন, তাহলে দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে এনে বাংলাদেশ যখন বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে, তখন এ ধরনের চিকিৎসক ও ক্লিনিক দেশের সুনামেরও ক্ষতি করছে। কাজেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আমরা আশা করব, যাদের কারণে খাদিজার অনাগত সন্তান পৃৃথিবীর আলো দেখতে পায়নি, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।