ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জনসভায় বাধার অভিযোগ

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ প্রায় দেড় বছর পর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি জনসমাবেশে ভাষণ দিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। জনসমাবেশটি নিয়ে রাজনৈতিক সচেতন মহলে ঔত্সুক্য যেমন ছিল, তেমনি উৎকণ্ঠাও কম ছিল না।

সমাবেশের দিন রাজধানীতে কোথাও বড় ধরনের কোনো অঘটন ঘটেনি। এটা স্বস্তির বিষয়। বিএনপির অভিযোগ, সমাবেশের দিন রবিবার আশপাশের জেলাগুলো থেকে ঢাকামুখী গণপরিবহন চলাচলে বাধা দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। ঢাকার সমাবেশে যোগদানে বাধা দিতে প্রশাসনের সহায়তায় কোনো কোনো জায়গায় সরকারি দলের লোকজন গাড়ি চলাচলে বাধা দিয়েছে।

কোথাও কোথাও প্রশাসনের লোকজন গাড়িতে তল্লাশিও চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দিনভর সারা দেশের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। বিএনপি বলেছে, সরকারই বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল। অন্যদিকে বাস মালিক সমিতির নেতা ও সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়ে মালিকদের অনেকে বাস নামাননি। আশপাশের জেলায় অভিযান চালিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের আটক করার খবরও এসেছে সংবাদমাধ্যমে।

বাংলাদেশের রাজনীতি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—এই প্রধান দুটি দলকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। মাঝের সেনাশাসনের সময় বাদ দিলে এই দুই দলই ক্ষমতায় থেকেছে। কোনো দেশে দুটি রাজনৈতিক দল প্রধান দল হিসেবে বিবেচিত হবে—এটা অস্বাভাবিক নয়। বিশ্বের অনেক দেশের রাজনীতিতেই দুটি দল প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত। আমাদের দেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনৈতিক বক্তব্যে পরস্পরের প্রতি দোষারোপ স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় প্রয়োজন পরমতসহিষ্ণুতা, যা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একেবারেই অনুপস্থিত বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। রাজনৈতিক নেতৃত্ব বক্তব্য দিতে গিয়ে পারস্পরিক বিষোদ্গার করে থাকে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে আমাদের গণতন্ত্র কখনো সংকটমুক্ত হতে পারবে না। বিএনপির জনসমাবেশে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে এটা স্পষ্ট করেছেন যে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় না বিএনপি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সাংবিধানিক পথেই নির্বাচনে যেতে চায়। মৌলিক এই ফারাক শেষ পর্যন্ত কোন পর্যায়ে গিয়ে শেষ হবে, তা এখনই বলা যাবে না।

বিএনপির জনসমাবেশ অনুষ্ঠানে বাধা দেওয়া নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, তা সত্যি হলে অবশ্যই নিন্দনীয়। গণতান্ত্রিকব্যবস্থায় যেকোনো শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অধিকার রাজনৈতিক দলগুলোর আছে। আবার সমাবেশের দিন গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষকে যে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা চাই দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিকশিত হোক। ফিরে আসুক পরমতসহিষ্ণুতা। পারস্পরিক মতবিনিময়ের মাধ্যমে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

জনসভায় বাধার অভিযোগ

আপডেট টাইম : ০৯:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ প্রায় দেড় বছর পর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি জনসমাবেশে ভাষণ দিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। জনসমাবেশটি নিয়ে রাজনৈতিক সচেতন মহলে ঔত্সুক্য যেমন ছিল, তেমনি উৎকণ্ঠাও কম ছিল না।

সমাবেশের দিন রাজধানীতে কোথাও বড় ধরনের কোনো অঘটন ঘটেনি। এটা স্বস্তির বিষয়। বিএনপির অভিযোগ, সমাবেশের দিন রবিবার আশপাশের জেলাগুলো থেকে ঢাকামুখী গণপরিবহন চলাচলে বাধা দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। ঢাকার সমাবেশে যোগদানে বাধা দিতে প্রশাসনের সহায়তায় কোনো কোনো জায়গায় সরকারি দলের লোকজন গাড়ি চলাচলে বাধা দিয়েছে।

কোথাও কোথাও প্রশাসনের লোকজন গাড়িতে তল্লাশিও চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দিনভর সারা দেশের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। বিএনপি বলেছে, সরকারই বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল। অন্যদিকে বাস মালিক সমিতির নেতা ও সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়ে মালিকদের অনেকে বাস নামাননি। আশপাশের জেলায় অভিযান চালিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের আটক করার খবরও এসেছে সংবাদমাধ্যমে।

বাংলাদেশের রাজনীতি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—এই প্রধান দুটি দলকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। মাঝের সেনাশাসনের সময় বাদ দিলে এই দুই দলই ক্ষমতায় থেকেছে। কোনো দেশে দুটি রাজনৈতিক দল প্রধান দল হিসেবে বিবেচিত হবে—এটা অস্বাভাবিক নয়। বিশ্বের অনেক দেশের রাজনীতিতেই দুটি দল প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত। আমাদের দেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনৈতিক বক্তব্যে পরস্পরের প্রতি দোষারোপ স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় প্রয়োজন পরমতসহিষ্ণুতা, যা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একেবারেই অনুপস্থিত বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। রাজনৈতিক নেতৃত্ব বক্তব্য দিতে গিয়ে পারস্পরিক বিষোদ্গার করে থাকে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে আমাদের গণতন্ত্র কখনো সংকটমুক্ত হতে পারবে না। বিএনপির জনসমাবেশে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে এটা স্পষ্ট করেছেন যে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় না বিএনপি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সাংবিধানিক পথেই নির্বাচনে যেতে চায়। মৌলিক এই ফারাক শেষ পর্যন্ত কোন পর্যায়ে গিয়ে শেষ হবে, তা এখনই বলা যাবে না।

বিএনপির জনসমাবেশ অনুষ্ঠানে বাধা দেওয়া নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, তা সত্যি হলে অবশ্যই নিন্দনীয়। গণতান্ত্রিকব্যবস্থায় যেকোনো শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অধিকার রাজনৈতিক দলগুলোর আছে। আবার সমাবেশের দিন গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষকে যে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা চাই দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিকশিত হোক। ফিরে আসুক পরমতসহিষ্ণুতা। পারস্পরিক মতবিনিময়ের মাধ্যমে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ।