বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর যে বর্বর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে, সারা বিশ্ব তাকে চূড়ান্ত অমানবিক ঘটনা হিসেবেই দেখছে। জাতিসংঘ একে ‘জাতি নিধনের’ অপচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেছে।
অনেক বিশ্বনেতা সরাসরি একে গণহত্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাই তাঁরা নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। গতকাল রবিবার বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অবস্থা স্বচক্ষে দেখতে কক্সবাজারে গিয়েছিলেন জাপান, জার্মানি ও সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান। আগের দিন শনিবার তাঁরা সবাই ঢাকায় এসে পৌঁছেন। এর আগে সেখানে সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধিদল। তাঁরা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা শিবিরগুলো পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তাঁরা মার্কিন কংগ্রেসে তুলে ধরবেন। শনিবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং উই বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। শনিবার রাতেই তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, চীন চায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সৃষ্ট সংকট নিরসন করুক। চীন এ ক্ষেত্রে নিরপেক্ষভাবে সহযোগিতা করবে।
১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। দীর্ঘ সময় ধরে তাদের ভরণ-পোষণ করা বাংলাদেশের জন্য প্রায় অসম্ভব। এরই মধ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই যত দ্রুত এই সংকটের সমাধান হয়, বাংলাদেশের জন্য ততই মঙ্গল। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমার থেকে বিতাড়নের যে পরিকল্পনা নিয়ে তাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনী এমন বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে, তাতে মিয়ানমারের সরকার বা সেনাবাহিনী যে স্বেচ্ছায় তাদের ফিরিয়ে নিতে চাইবে, তা অনেকেই বিশ্বাস করেন না। প্রবল আন্তর্জাতিক চাপের কারণেই বলা যায়, তাদের সুর কিছুটা নরম হয়েছে। তাই এই চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। পাশাপাশি এটাও সত্য যে চূড়ান্ত পর্যায়ে দুই দেশকেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় দেশেরই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। চীনের সহযোগিতা সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের সঙ্গেও মিয়ানমারের সম্পর্ক যথেষ্ট ভালো। তাই ত্রিপক্ষীয়ভাবে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ খুবই ফলপ্রসূ হতে পারে বলে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন।
বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যার একটি যৌক্তিক সমাধান আশা করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও চায়, মিয়ানমার আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের দিকে এগিয়ে যাক এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিক। বাংলাদেশও এই সমস্যার টেকসই সমাধান চায়। তা না হলে আজ আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে, কাল আবার নির্যাতনের মুখে তারা পালিয়ে আসবে। পাশাপাশি এই সংকটের স্থায়ী সমাধান না হলে ক্রমে তা আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিও হয়ে উঠতে পারে। আমরা চাই, চীন ও আন্তর্জাতিক সহায়তায় দ্রুত এই সমস্যার যৌক্তিক ও স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করা হোক।