মাসটি ছিল ডিসেম্বর। তারিখ ১৬। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বয়স ২০১৭ সালে যৌবনদীপ্ত ৪৬ বছরে স্পর্শ করলেও জাতি হিসাবে আমাদের রয়েছে হাজার বছরের ঋদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
উপমহাদেশের নমস্য ইতিহাসবিদ স্যার যদুনাথ সরকার, আরসি মজুমদার, নীহাররঞ্জন রায়, দীনেশচন্দ্র সেন, রাখালদাস বন্দোপাধ্যায় এবং আবদুল করিমের মতো পণ্ডিতগণ গবেষণালব্ধ সেই বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন। সর্বসাম্প্রতিকতমকালে গোলাম মুরশিদ ‘হাজার বছরের বাঙালি’ এবং মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ‘গঙ্গাঋদ্ধি থেকে বাংলাদেশ’ নামক গ্রন্থে আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের নতুন বিন্যাস রচনা করেছেন। বিশিষ্ট দক্ষিণ এশীয় পণ্ডিত ভিলেন ভ্যান সেন্ডাল কিছুদিন আগে সুদূর অতীত থেকে তথ্য আহরণ করে লিখেছেন চমৎকার একটি ইতিহাস গ্রন্থ, যার নাম ‘হিস্টরি অব বাংলাদেশ’। অতএব, অতীতে যেমন, বর্তমানেও তেমনিভাবে বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে একটি উল্লেখ্যযোগ্য এবং আলোচিত নাম। রক্ত ও ত্যাগ মিশে আছে যে নামের পরতে পরতে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মোহনী নেতৃত্বে বাংলাদেশ নামের দেশটির নির্মাণ ও স্থিতি এ জাতিসত্ত্বার প্রতিটি মানুষের অংশগ্রহণমূলক-সংগ্রামশীলতায় প্রোজ্জ্বল।
অথচ ১৭৭৭ সালে রেনেল-এর পূর্বে বাংলাদেশের কোনো মানচিত্র কেউ অঙ্কন করেন নি। ঊনবিংশ শতাব্দীতে জন ম্যাকের নেতৃত্বে বাংলা ভাষায় প্রথম মানচিত্র রচিত হয়। তারও আগে প্রাচীন মিশরীয় টলেমীর মানচিত্রে আবছাভাবে হিমালয় থেকে সমুদ্রস্পর্শী অঞ্চলের উল্লেখ রয়েছে। তখন স্যাটেলাইটের যুগ ছিল না। অতএব সবই কাগজে বিম্বিত প্রতিচিত্র মাত্র। কিছুটা কল্পনা, কিছুটা ধারণার প্রকাশ। বহু বছর পর, ১৯৭১ সালে কারো দিকে না তাকিয়ে বা অপেক্ষা না করেই বাংলাদেশের মানুষ নিজেই স্বদেশের মানচিত্র অঙ্কন করেন। শুধু অঙ্কনই নয়, দামাল যুদ্ধের রক্ত মেখে পৃথিবী উদার আকাশের মুক্ত বাতাসে উড্ডীন করেন স্বাধীনতার রক্তিম পতাকা। আজ মানুষের হাতে হাতে যুদ্ধজয়ে স্মৃতিমাখা অপরাজেয় পতাকা; বিশ্বের সর্বত্র বাংলাদেশের প্রতীকচিহ্ণ হয়ে আকাশ ও দিগন্ত দোলায়িত করছে স্বাধীনতার অমর স্মারকবাহী লাল-সবুজের পতাকা।