ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জিয়ার মাজার সরিয়ে দিলে অক্ষম বিএনপি কী করবে

বিএনপির ‘বিপ্লবী কুস্তিগীররা’ দলের ভদ্রলোকদের বিরুদ্ধে কুস্তি লড়তে পারেন, কিন্তু দলবিরোধীদের বিরুদ্ধে মাঠে নামতেই ভয় পান। দলের সর্বজনস্বীকৃত ক্যারিয়ার রাজনীতিবিদদের ঘাড় ধরে মাথাটা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে অপদস্থ করতে পারেন, কিন্তু দলের রাজনীতি ও আদর্শবিনাশী শক্তির ভয়ে গর্তে ডুবে লুকিয়ে থাকেন। সরকার বা অন্য কোনো বিদেশি সেবাদাস যখন রাজনৈতিক স্বার্থকেন্দ্রিক কৌশলগত বিবেচনায় বিএনপির কলিজায় হাত দিয়ে ফেলে, তখনো দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ পন্থায় অর্জিত বিপুল অর্থ-বিত্ত-বৈভবের মায়ায় বিএনপি দখলদাররা অপস্বার্থ চিন্তায় ও আত্মস্বার্থরক্ষার স্বার্থে পলায়নী মনোভাব নিয়ে ‘চোরাপথ’ হাতরায়।  প্রসঙ্গক্রমে একটি ঐতিহাসিক উক্তি উল্লেখ করছি—  A leader is one who knows the way, goes the way and shows the way. বাংলায় বোধ হয় এভাবেই বললে চলে যে, তিনিই প্রকৃত নেতা যিনি সঠিক পথ চেনেন, সঠিক পথে চলেন এবং অন্যদের সঠিক পথ দেখান। একদা বেগম খালেদা জিয়া প্রবীণ ও পোড়খাওয়া সহকর্মী বিচারপতি আবদুস সাত্তার, মির্জা গোলাম হাফিজ, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, এস. এ. বারী এটি, ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদার, মেজর জেনারেল (অব.) মাজেদুল হক, কর্নেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান, ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল হালিম চৌধুরী, কর্নেল (অব.) আকবর হোসেন, আবদুল মান্নান ভূঁইয়া প্রমুখকে সঙ্গে নিয়ে সঠিক পথে চলেছেন পথ চিনে, দলের সবাইকে পরিচালিত করেছেন সঠিক পথে। পরামর্শ করেছেন অভিজ্ঞ সঙ্গীদের সঙ্গে, পরামর্শ নিয়েছেন অভিজ্ঞজনদের। তাই ভুল কম হয়েছে। শহীদ জিয়ার আলোয় উদ্ভাসিত খালেদা জিয়া সাফল্যও অর্জন করেছেন রাজনীতিতে। প্রবীণ সহকর্মী যাদের নাম উল্লেখ করেছি, একজন ছাড়া বাকিদের কেউ বেঁচে নেই। জীবিতজন অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে অপমানিত-লাঞ্ছিত করে দল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তিনি ছিলেন দলের প্রথম মহাসচিব এবং দলীয় মনোনয়নে দেশের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট— রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি। জীবদ্দশায় দলে প্রায় একযুগের সফল মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে কোনো প্রকার কারণ দর্শানোর নোটিস বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান ছাড়াই বহিষ্কার করে দেওয়া হয় দলকে দুর্নীতিবাজমুক্ত ও পরিশীলিত করার উদ্দেশ্যে সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপনের অপরাধে। দলের দক্ষিণপন্থি প্রতিক্রিয়াশীল চক্র এবং নানা জানা কারণে যাদের সম্পর্কে পাবলিক পারসেপশন খুব খারাপ, তখন তাদের কি উল্লাস নৃত্য দেখেছে দলের প্রগতিশীল গণতন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুসারীরা ও দেশবাসী। দলের ভিতর সংস্কার প্রস্তাবের সমর্থক সৎ ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের নীরব কান্না আর হৃদয়ের রক্তক্ষরণ তখন কোনো ধরনের বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগ বেগম জিয়াকে দেয়নি উল্লিখিত অপরাধী চক্র। এসব অবিবেচনাপ্রসূত আত্মঘাতী কাজের প্রায়শ্চিত্ত এখনো করে চলেছে বিএনপি। একজন বদরুদ্দোজা চৌধুরী, একজন মান্নান ভূঁইয়ার যে কি প্রয়োজন ছিল বিএনপিতে, সংস্কারের মাধ্যমে দলকে দুর্বৃত্তায়নমুক্ত করা যে কত জরুরি ছিল, যাদের তা বোঝার ক্ষমতা আছে দলের তারা তা বুঝছেন, টের পাচ্ছেন হাড়ে হাড়ে। বিএনপি এখন মাজা সোজা করে দাঁড়াতেই পারে না। এখনো এত বিপুল জনসমর্থন থাকা সত্ত্বেও তা ক্যাশ করতে অক্ষম বিএনপি। সংগঠন দুর্বল হলে, নেতৃত্ব মানহীন ও বিপথগামী হলে জনসমর্থন কোনো কাজে আসে না। আমাদের প্রতিবেশী দেশের দিকে তাকালেই প্রমাণ মেলে। অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস এখনো সারা ভারতে একটি জনপ্রিয় দল, অথচ কী দুর্ভাগ্য, ৫৫৪ আসনের লোকসভায় ৫৪টি আসন নিয়ে সংসদীয় বিরোধী দলের মর্যাদাও আদায় করতে পারেনি দলটি। কংগ্রেসপ্রেমী, কংগ্রেস অনুরাগী অনেকেই নাকি সে দেশে এমন মন্তব্য করে থাকেন যে, ‘পোলার মুতে আছাড় খেয়েই’ সোনিয়া গান্ধী নিজের ও দলের এমন সর্বনাশ অনিবার্য করেছেন। অথচ অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, কংগ্রেসের এমন অনাকাঙ্ক্ষিত অধঃপতনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে দেশের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতির সৌরভ। বাংলাদেশেও বিএনপির বর্তমান ভঙ্গুর দশায় বেগম খালেদা জিয়া বা সাংগঠনিকভাবে বিএনপিই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ, ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে রাষ্ট্রের ওপর সব নাগরিকের মালিকানার অধিকার, বাড়ছে জনগণের স্বপ্নভঙ্গের বেদনা। বিএনপির জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে প্রতিপক্ষ নানা সমালোচনা করে। এটা স্রেফ রাজনৈতিক সুবিধা লাভের একটি হাস্যকর ও নোংরা প্রক্রিয়া। সত্য কথা হচ্ছে, দলটির জন্ম হয়েছে সময়ের দাবিতে, কালের চাহিদায়। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সুপরিকল্পিতভাবে বাকশাল গঠনের পর এদেশে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ এবং আধিপত্যবাদবিরোধী একটি দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী দল গঠন ছিল প্রকৃতই সময়ের দাবি। এটা হতোই। বিএনপি নামে না হয়ে হয়তো অন্য কোনো নামে হতো। জিয়া না হয়ে হয়তো অন্য কোনো সাহসী দেশপ্রেমিক বীর হতেন সে দলের প্রতিষ্ঠাতা। ভাগ্যের বরপুত্র জিয়াই হয়ে গেলেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা, দলটি বিএনপি। যে ঐতিহাসিক কারণে ও চাহিদায় জাতীয় গণআকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে জন্ম নিয়েছিল বিএনপি, সেই কারণ, সেই চাহিদা এখনো বিদ্যমান বলেই মনে করেন রাজনৈতিক অনেক বিশ্লেষক। কিন্তু দলটি সে চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। বিএনপির আগে জাসদের জন্ম হয় এবং বেশ জনপ্রিয়তাও পায়। কিন্তু একই ‘কেবলার’ অনুসারী হিসেবে পরিচিত এবং বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কায়েমের সশস্ত্র হঠকারী রাজনৈতিক লাইন জাসদকে জাতির কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক শক্তির অবস্থান দেয়নি বলেই বিএনপি অতি দ্রুত মানুষের হৃদয়ে আসন গেড়ে নেয়। এ আসন কারও জন্য কখনো চিরস্থায়ী হয় না। ভুল করলেই পতন অনিবার্য। ছুড়ে ফেলে জনগণ। বিএনপি নেতৃত্বের (যারা এখন দলকে নিজেদের মালিকানাধীন সম্পত্তি মনে করেন) যদি আত্মোপলব্ধি না হয়, আমূল সংস্কারের মাধ্যমে দলের অবয়বে জনগণের কাঙ্ক্ষিত ও সময়ের চাহিদা অনুযায়ী পরিবর্তন না আনেন, ‘আধুনিক মুসলিম লীগ’ থেকে দলকে আবার জিয়ার বিএনপিতে ফেরত না নেন, তাহলে জনগণ ও সময় খালেদা-তারেক বিএনপির ভরসায় বসে থাকবে তেমন ভাবা বোকামি হবে। সময়ের চাহিদা, কালের দাবিতে আবার হয়তো গড়ে উঠবে নতুন আরেক বিস্ময়শক্তির; নতুন নামে নতুন কোনো দল।

বিএনপির সামনে এখনো সময় আছে। আগেই বলেছি দলটি এখনো অনেক জনপ্রিয়। অনেক স্তাবক বলেন বেগম জিয়ার জনপ্রিয়তার জন্যই নাকি বিএনপি এত জনপ্রিয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, বেগম জিয়া ও বিএনপি— এই দুইয়ের মধ্যে বিএনপিই অধিক জনপ্রিয়। বিএনপির নেত্রী বলেই বেগম জিয়াও দেশের জনপ্রিয় জননন্দিত নেত্রী। আর বিএনপির এই জনপ্রিয়তার মূলে রয়েছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তার অমরত্ব। জিয়াউর রহমানের আলোতেই বিএনপি আলোকিত, আলোকিত বেগম জিয়া। শাহাদাতবরণের ৩৫-৩৬ বছর পরও জিয়ার ভাবমূর্তি এখনো অম্লান। প্রতিপক্ষ তার ইমেজ ডেস্ট্রয় করার জন্য যতবার যত ধরনের হিংসাশ্রয়ী অপপ্রয়াস চালিয়েছে ততবার তত বেশি ইতিহাসে তার নাম উজ্জ্বল হয়েছে। তার দলের বর্তমান ‘দখলদাররা’ বলতে গেলে এখনো তারা নাম বিক্রি করেই খাচ্ছে। জিয়াউর রহমানের অবর্তমানে তার উত্তরসূরির যোগ্যতা অবশ্য যথাযথভাবেই দেখিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু এখন মনে হয়, তিনি যেন আর পারছেন না। শহীদ জিয়ার নির্দিষ্ট করা পথ থেকে সরে আসা, দলের রাজনৈতিক স্খলন এক্ষেত্রে অবশ্যই আলোচনার বিষয়। বিএনপিকে যারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন তাদের একটি কঠোর সমালোচনা হচ্ছে, জিয়ার ইমেজ রক্ষা ও বৃদ্ধির ব্যাপারে বিএনপির উল্লেখযোগ্য কোনো কর্মকাণ্ড নেই নেহাত ঠেকায় পড়লে তার নাম ব্যবহার করা ছাড়া। অথচ তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ কি ক্ষমতায়, কি বিরোধী দলে, বঙ্গবন্ধুই তাদের প্রধান অবলম্বন হিসেবে মহিমান্বিত হয়েছে দলের সব কর্মকাণ্ডে। কোথাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম একবার উচ্চারণ হলে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ হয় দশবার। কারণ তারা জানে, বঙ্গবন্ধুই এখনো তাদের পথচলার আলোকবর্তিকা। বঙ্গবন্ধুর গায়ে কেউ সামান্য আঁচড় দিতে গেলেই আওয়ামী লীগের কণ্ঠে ‘বাঘের গর্জন’ শোনা যায়। বিএনপির ক্ষেত্রে দেখা যায় এর উল্টো। এটা দুর্ভাগ্যজনক। বিএনপির ‘কলিজায়’ হাত দেওয়ার কথা বলেছি লেখার শুরুতে। দেশ-বিদেশের সবাই জানেন যে, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক জাতীয় জাদুঘর থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। উদ্দেশ্য তো পরিষ্কার— জিয়াউর রহমানের ভাবমূর্তি বিনাশ করা, স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অবিস্মরণীয় অবদানকে নাকচ করার চেষ্টা। বিএনপি কী করেছে সরকারের ওই নিষ্ঠুর আচরণের প্রতিবাদে? তিনশ আসনবিশিষ্ট একটি হলে ক্ষুদ্র একটি প্রতিবাদ সভা? বিএনপির কাছে এটাই জিয়ার প্রাপ্য? কোনো ধরনের হঠকারী কর্মসূচি (তিন মাসের অবরোধ কর্মসূচির মতো) নেওয়ার কথা বলছি না, সারা দেশে দলের এবং প্রায় দুই ডজন অঙ্গ-সহযোগী দলের বক্তব্য-বিবৃতি, সমাবেশ-বিক্ষোভ, দেশব্যাপী লিফলেটিং, পোস্টারিং অবিরাম চলতে পারত এর প্রতিবাদে। এমন কি আরও বড় কোনো সংবিধানসম্মত গণতান্ত্রিক কর্মসূচি দিতে পারত দলটি। বেগম জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের চেয়ে জাতীয় জাদুঘর থেকে জিয়ার স্বাধীনতা পদক উচ্ছেদের সরকারি সিদ্ধান্তের মধ্যে কোনটা বড়, কোনটা ছোট সেটাই নির্ণয় করতে পারেনি বিএনপি। বিএনপির সক্ষমতা যাচাই করে নিয়েছে সরকার। আবেগতাড়িত বিষয়ে কোনো অ্যাকশনে গেলেও বিএনপি যে নড়েচড়ে ওঠার সাহসও হারিয়ে ফেলেছে তা বুঝে নিল সরকার। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, আরও বৃহত্তর কোনো জায়গায় হাত দেওয়ার ‘ড্রেস রিহার্সাল’ হলো জাদুঘর থেকে জিয়ার স্বাধীনতা পদক সরিয়ে নেওয়া। এরপর যদি শেরেবাংলানগর থেকে জিয়াউর রহমানের কবর সরিয়ে দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত সরকার নেয়, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ‘ঘানিতে ভাঙা খাঁটি শর্ষের তেল’ নাকে দিয়ে ‘বিএনপি’ তখনো হয়তো ঘুমিয়েই থাকবে। কত হাঁকডাক দেওয়া হয়েছিল কিছু দিন আগে। বিশেষ করে গত বছর জানুয়ারি-মার্চ তিন মাসের হঠকারী অবরোধ-আন্দোলনের ব্যর্থতার পর বলা হয়েছিল, দল পুনর্গঠন করে (এত পুরনো দল পুনর্গঠনের প্রয়োজন হলো কেন) সরকার পতনের আন্দোলনে যাবে। প্রায় পৌনে দুই বছর পর এখনো বাজছে একই ‘কলের গান’। পুনর্গঠনের কাজে হাত দেবেন দলীয় চেয়ারপারসন সৌদি আরব থেকে ফেরার পর। তা হলে এই পৌনে দুই বছরে কী হলো? আবার শোনানো হয়েছে, জাতীয় কাউন্সিলে নতুন কমিটি গঠনের পর শুরু হবে সরকারবিরোধী অভিযান। কিন্তু কই? তারা ‘বন্দী’ জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আর রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনের চার দেয়ালের মধ্যে। এই অক্ষম নেতৃত্বের বিএনপি আবার মধ্যবর্তী নির্বাচন চায়। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঈদের পরদিন এ দাবি জানিয়েছেন। সরকার যদি রাজি হয়ে যায় কী করবে বিএনপি? জাতীয় কাউন্সিলের পর যে দলের কমিটি করতে লাগে সাড়ে ৪ মাস, ৩০০ আসনে মনোনয়ন ঠিক করতে তো তাদের বছর কাবার হয়ে যাওয়ার কথা। তখন তো নির্বাচনের নির্ধারিত সময়ই এসে যাবে! রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হাঁকও দিয়ে রেখেছে বিএনপি। কোনটা করবে? জিয়াউর রহমানের ইমেজ রক্ষার আবেগতাড়িত ইস্যুতেই কিছু করতে যখন বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে, অন্য কিছু যে তারা করতে পারবে সে বিশ্বাস মানুষ রাখবে কী করে? জিয়ার আলোতেই এখনো বিএনপির ঔজ্জ্বল্য। সে আলোর প্রদীপ নিভিয়ে দেওয়ার চেষ্টা রোধের কোনো গণসংশ্লিষ্ট উদ্যোগ নেই, আছে শুধু লম্বা লম্বা কথা। অবস্থাটা এমন যে, বিএনপির জামাকাপড় খুলে জাঙ্গিয়া ধরে টানাটানি চলছে। আর বিএনপি মাথায় হাত দিয়ে দেখছে টুপিটা ঠিক আছে কিনা!  বিএনপির অগণিত ভক্ত-অনুরাগী এতে হতাশ, চরম হতাশ।

সরকারেরও উপলব্ধি করা দরকার যে, এভাবে জিয়ার পদক সরিয়ে বা তার কবর সরিয়ে মানুষের মন থেকে তাকে সরানো যাবে না। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের পর বঙ্গবন্ধুকে ঢাকায় দাফন করা হয়নি, পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে টুঙ্গিপাড়ায়। কিন্তু তাতে কি ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়েছে? টুঙ্গিপাড়া থেকেই বঙ্গবন্ধু উজ্জ্বল আলোর দ্যুতি ছড়াচ্ছেন। বার বার হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়েও সে আলোয় পথ খুঁজে পায় আওয়ামী লীগ। দলের অগণিত নেতা-কর্মীর চোখের সামনে থেকে সরে যায়, কেটে যায় অন্ধকারের অমানিশা।  জিয়ার কবরও যদি ঢাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, যেখানেই থাকুক সেখান থেকেই আলো বিচ্ছুরিত হবে। বিএনপি না পারলে অন্য কেউ এগিয়ে যাবে সে আলোর নিশানা ধরে। বিএনপির বাইরেও জিয়ার ভক্তকুলের অভাব নেই।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জিয়ার মাজার সরিয়ে দিলে অক্ষম বিএনপি কী করবে

আপডেট টাইম : ০৫:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বিএনপির ‘বিপ্লবী কুস্তিগীররা’ দলের ভদ্রলোকদের বিরুদ্ধে কুস্তি লড়তে পারেন, কিন্তু দলবিরোধীদের বিরুদ্ধে মাঠে নামতেই ভয় পান। দলের সর্বজনস্বীকৃত ক্যারিয়ার রাজনীতিবিদদের ঘাড় ধরে মাথাটা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে অপদস্থ করতে পারেন, কিন্তু দলের রাজনীতি ও আদর্শবিনাশী শক্তির ভয়ে গর্তে ডুবে লুকিয়ে থাকেন। সরকার বা অন্য কোনো বিদেশি সেবাদাস যখন রাজনৈতিক স্বার্থকেন্দ্রিক কৌশলগত বিবেচনায় বিএনপির কলিজায় হাত দিয়ে ফেলে, তখনো দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ পন্থায় অর্জিত বিপুল অর্থ-বিত্ত-বৈভবের মায়ায় বিএনপি দখলদাররা অপস্বার্থ চিন্তায় ও আত্মস্বার্থরক্ষার স্বার্থে পলায়নী মনোভাব নিয়ে ‘চোরাপথ’ হাতরায়।  প্রসঙ্গক্রমে একটি ঐতিহাসিক উক্তি উল্লেখ করছি—  A leader is one who knows the way, goes the way and shows the way. বাংলায় বোধ হয় এভাবেই বললে চলে যে, তিনিই প্রকৃত নেতা যিনি সঠিক পথ চেনেন, সঠিক পথে চলেন এবং অন্যদের সঠিক পথ দেখান। একদা বেগম খালেদা জিয়া প্রবীণ ও পোড়খাওয়া সহকর্মী বিচারপতি আবদুস সাত্তার, মির্জা গোলাম হাফিজ, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, এস. এ. বারী এটি, ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদার, মেজর জেনারেল (অব.) মাজেদুল হক, কর্নেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান, ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল হালিম চৌধুরী, কর্নেল (অব.) আকবর হোসেন, আবদুল মান্নান ভূঁইয়া প্রমুখকে সঙ্গে নিয়ে সঠিক পথে চলেছেন পথ চিনে, দলের সবাইকে পরিচালিত করেছেন সঠিক পথে। পরামর্শ করেছেন অভিজ্ঞ সঙ্গীদের সঙ্গে, পরামর্শ নিয়েছেন অভিজ্ঞজনদের। তাই ভুল কম হয়েছে। শহীদ জিয়ার আলোয় উদ্ভাসিত খালেদা জিয়া সাফল্যও অর্জন করেছেন রাজনীতিতে। প্রবীণ সহকর্মী যাদের নাম উল্লেখ করেছি, একজন ছাড়া বাকিদের কেউ বেঁচে নেই। জীবিতজন অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে অপমানিত-লাঞ্ছিত করে দল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তিনি ছিলেন দলের প্রথম মহাসচিব এবং দলীয় মনোনয়নে দেশের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট— রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি। জীবদ্দশায় দলে প্রায় একযুগের সফল মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে কোনো প্রকার কারণ দর্শানোর নোটিস বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান ছাড়াই বহিষ্কার করে দেওয়া হয় দলকে দুর্নীতিবাজমুক্ত ও পরিশীলিত করার উদ্দেশ্যে সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপনের অপরাধে। দলের দক্ষিণপন্থি প্রতিক্রিয়াশীল চক্র এবং নানা জানা কারণে যাদের সম্পর্কে পাবলিক পারসেপশন খুব খারাপ, তখন তাদের কি উল্লাস নৃত্য দেখেছে দলের প্রগতিশীল গণতন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুসারীরা ও দেশবাসী। দলের ভিতর সংস্কার প্রস্তাবের সমর্থক সৎ ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের নীরব কান্না আর হৃদয়ের রক্তক্ষরণ তখন কোনো ধরনের বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগ বেগম জিয়াকে দেয়নি উল্লিখিত অপরাধী চক্র। এসব অবিবেচনাপ্রসূত আত্মঘাতী কাজের প্রায়শ্চিত্ত এখনো করে চলেছে বিএনপি। একজন বদরুদ্দোজা চৌধুরী, একজন মান্নান ভূঁইয়ার যে কি প্রয়োজন ছিল বিএনপিতে, সংস্কারের মাধ্যমে দলকে দুর্বৃত্তায়নমুক্ত করা যে কত জরুরি ছিল, যাদের তা বোঝার ক্ষমতা আছে দলের তারা তা বুঝছেন, টের পাচ্ছেন হাড়ে হাড়ে। বিএনপি এখন মাজা সোজা করে দাঁড়াতেই পারে না। এখনো এত বিপুল জনসমর্থন থাকা সত্ত্বেও তা ক্যাশ করতে অক্ষম বিএনপি। সংগঠন দুর্বল হলে, নেতৃত্ব মানহীন ও বিপথগামী হলে জনসমর্থন কোনো কাজে আসে না। আমাদের প্রতিবেশী দেশের দিকে তাকালেই প্রমাণ মেলে। অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস এখনো সারা ভারতে একটি জনপ্রিয় দল, অথচ কী দুর্ভাগ্য, ৫৫৪ আসনের লোকসভায় ৫৪টি আসন নিয়ে সংসদীয় বিরোধী দলের মর্যাদাও আদায় করতে পারেনি দলটি। কংগ্রেসপ্রেমী, কংগ্রেস অনুরাগী অনেকেই নাকি সে দেশে এমন মন্তব্য করে থাকেন যে, ‘পোলার মুতে আছাড় খেয়েই’ সোনিয়া গান্ধী নিজের ও দলের এমন সর্বনাশ অনিবার্য করেছেন। অথচ অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, কংগ্রেসের এমন অনাকাঙ্ক্ষিত অধঃপতনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে দেশের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতির সৌরভ। বাংলাদেশেও বিএনপির বর্তমান ভঙ্গুর দশায় বেগম খালেদা জিয়া বা সাংগঠনিকভাবে বিএনপিই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ, ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে রাষ্ট্রের ওপর সব নাগরিকের মালিকানার অধিকার, বাড়ছে জনগণের স্বপ্নভঙ্গের বেদনা। বিএনপির জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে প্রতিপক্ষ নানা সমালোচনা করে। এটা স্রেফ রাজনৈতিক সুবিধা লাভের একটি হাস্যকর ও নোংরা প্রক্রিয়া। সত্য কথা হচ্ছে, দলটির জন্ম হয়েছে সময়ের দাবিতে, কালের চাহিদায়। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সুপরিকল্পিতভাবে বাকশাল গঠনের পর এদেশে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ এবং আধিপত্যবাদবিরোধী একটি দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী দল গঠন ছিল প্রকৃতই সময়ের দাবি। এটা হতোই। বিএনপি নামে না হয়ে হয়তো অন্য কোনো নামে হতো। জিয়া না হয়ে হয়তো অন্য কোনো সাহসী দেশপ্রেমিক বীর হতেন সে দলের প্রতিষ্ঠাতা। ভাগ্যের বরপুত্র জিয়াই হয়ে গেলেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা, দলটি বিএনপি। যে ঐতিহাসিক কারণে ও চাহিদায় জাতীয় গণআকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে জন্ম নিয়েছিল বিএনপি, সেই কারণ, সেই চাহিদা এখনো বিদ্যমান বলেই মনে করেন রাজনৈতিক অনেক বিশ্লেষক। কিন্তু দলটি সে চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। বিএনপির আগে জাসদের জন্ম হয় এবং বেশ জনপ্রিয়তাও পায়। কিন্তু একই ‘কেবলার’ অনুসারী হিসেবে পরিচিত এবং বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কায়েমের সশস্ত্র হঠকারী রাজনৈতিক লাইন জাসদকে জাতির কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক শক্তির অবস্থান দেয়নি বলেই বিএনপি অতি দ্রুত মানুষের হৃদয়ে আসন গেড়ে নেয়। এ আসন কারও জন্য কখনো চিরস্থায়ী হয় না। ভুল করলেই পতন অনিবার্য। ছুড়ে ফেলে জনগণ। বিএনপি নেতৃত্বের (যারা এখন দলকে নিজেদের মালিকানাধীন সম্পত্তি মনে করেন) যদি আত্মোপলব্ধি না হয়, আমূল সংস্কারের মাধ্যমে দলের অবয়বে জনগণের কাঙ্ক্ষিত ও সময়ের চাহিদা অনুযায়ী পরিবর্তন না আনেন, ‘আধুনিক মুসলিম লীগ’ থেকে দলকে আবার জিয়ার বিএনপিতে ফেরত না নেন, তাহলে জনগণ ও সময় খালেদা-তারেক বিএনপির ভরসায় বসে থাকবে তেমন ভাবা বোকামি হবে। সময়ের চাহিদা, কালের দাবিতে আবার হয়তো গড়ে উঠবে নতুন আরেক বিস্ময়শক্তির; নতুন নামে নতুন কোনো দল।

বিএনপির সামনে এখনো সময় আছে। আগেই বলেছি দলটি এখনো অনেক জনপ্রিয়। অনেক স্তাবক বলেন বেগম জিয়ার জনপ্রিয়তার জন্যই নাকি বিএনপি এত জনপ্রিয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, বেগম জিয়া ও বিএনপি— এই দুইয়ের মধ্যে বিএনপিই অধিক জনপ্রিয়। বিএনপির নেত্রী বলেই বেগম জিয়াও দেশের জনপ্রিয় জননন্দিত নেত্রী। আর বিএনপির এই জনপ্রিয়তার মূলে রয়েছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তার অমরত্ব। জিয়াউর রহমানের আলোতেই বিএনপি আলোকিত, আলোকিত বেগম জিয়া। শাহাদাতবরণের ৩৫-৩৬ বছর পরও জিয়ার ভাবমূর্তি এখনো অম্লান। প্রতিপক্ষ তার ইমেজ ডেস্ট্রয় করার জন্য যতবার যত ধরনের হিংসাশ্রয়ী অপপ্রয়াস চালিয়েছে ততবার তত বেশি ইতিহাসে তার নাম উজ্জ্বল হয়েছে। তার দলের বর্তমান ‘দখলদাররা’ বলতে গেলে এখনো তারা নাম বিক্রি করেই খাচ্ছে। জিয়াউর রহমানের অবর্তমানে তার উত্তরসূরির যোগ্যতা অবশ্য যথাযথভাবেই দেখিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু এখন মনে হয়, তিনি যেন আর পারছেন না। শহীদ জিয়ার নির্দিষ্ট করা পথ থেকে সরে আসা, দলের রাজনৈতিক স্খলন এক্ষেত্রে অবশ্যই আলোচনার বিষয়। বিএনপিকে যারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন তাদের একটি কঠোর সমালোচনা হচ্ছে, জিয়ার ইমেজ রক্ষা ও বৃদ্ধির ব্যাপারে বিএনপির উল্লেখযোগ্য কোনো কর্মকাণ্ড নেই নেহাত ঠেকায় পড়লে তার নাম ব্যবহার করা ছাড়া। অথচ তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ কি ক্ষমতায়, কি বিরোধী দলে, বঙ্গবন্ধুই তাদের প্রধান অবলম্বন হিসেবে মহিমান্বিত হয়েছে দলের সব কর্মকাণ্ডে। কোথাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম একবার উচ্চারণ হলে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ হয় দশবার। কারণ তারা জানে, বঙ্গবন্ধুই এখনো তাদের পথচলার আলোকবর্তিকা। বঙ্গবন্ধুর গায়ে কেউ সামান্য আঁচড় দিতে গেলেই আওয়ামী লীগের কণ্ঠে ‘বাঘের গর্জন’ শোনা যায়। বিএনপির ক্ষেত্রে দেখা যায় এর উল্টো। এটা দুর্ভাগ্যজনক। বিএনপির ‘কলিজায়’ হাত দেওয়ার কথা বলেছি লেখার শুরুতে। দেশ-বিদেশের সবাই জানেন যে, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক জাতীয় জাদুঘর থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। উদ্দেশ্য তো পরিষ্কার— জিয়াউর রহমানের ভাবমূর্তি বিনাশ করা, স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অবিস্মরণীয় অবদানকে নাকচ করার চেষ্টা। বিএনপি কী করেছে সরকারের ওই নিষ্ঠুর আচরণের প্রতিবাদে? তিনশ আসনবিশিষ্ট একটি হলে ক্ষুদ্র একটি প্রতিবাদ সভা? বিএনপির কাছে এটাই জিয়ার প্রাপ্য? কোনো ধরনের হঠকারী কর্মসূচি (তিন মাসের অবরোধ কর্মসূচির মতো) নেওয়ার কথা বলছি না, সারা দেশে দলের এবং প্রায় দুই ডজন অঙ্গ-সহযোগী দলের বক্তব্য-বিবৃতি, সমাবেশ-বিক্ষোভ, দেশব্যাপী লিফলেটিং, পোস্টারিং অবিরাম চলতে পারত এর প্রতিবাদে। এমন কি আরও বড় কোনো সংবিধানসম্মত গণতান্ত্রিক কর্মসূচি দিতে পারত দলটি। বেগম জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের চেয়ে জাতীয় জাদুঘর থেকে জিয়ার স্বাধীনতা পদক উচ্ছেদের সরকারি সিদ্ধান্তের মধ্যে কোনটা বড়, কোনটা ছোট সেটাই নির্ণয় করতে পারেনি বিএনপি। বিএনপির সক্ষমতা যাচাই করে নিয়েছে সরকার। আবেগতাড়িত বিষয়ে কোনো অ্যাকশনে গেলেও বিএনপি যে নড়েচড়ে ওঠার সাহসও হারিয়ে ফেলেছে তা বুঝে নিল সরকার। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, আরও বৃহত্তর কোনো জায়গায় হাত দেওয়ার ‘ড্রেস রিহার্সাল’ হলো জাদুঘর থেকে জিয়ার স্বাধীনতা পদক সরিয়ে নেওয়া। এরপর যদি শেরেবাংলানগর থেকে জিয়াউর রহমানের কবর সরিয়ে দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত সরকার নেয়, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ‘ঘানিতে ভাঙা খাঁটি শর্ষের তেল’ নাকে দিয়ে ‘বিএনপি’ তখনো হয়তো ঘুমিয়েই থাকবে। কত হাঁকডাক দেওয়া হয়েছিল কিছু দিন আগে। বিশেষ করে গত বছর জানুয়ারি-মার্চ তিন মাসের হঠকারী অবরোধ-আন্দোলনের ব্যর্থতার পর বলা হয়েছিল, দল পুনর্গঠন করে (এত পুরনো দল পুনর্গঠনের প্রয়োজন হলো কেন) সরকার পতনের আন্দোলনে যাবে। প্রায় পৌনে দুই বছর পর এখনো বাজছে একই ‘কলের গান’। পুনর্গঠনের কাজে হাত দেবেন দলীয় চেয়ারপারসন সৌদি আরব থেকে ফেরার পর। তা হলে এই পৌনে দুই বছরে কী হলো? আবার শোনানো হয়েছে, জাতীয় কাউন্সিলে নতুন কমিটি গঠনের পর শুরু হবে সরকারবিরোধী অভিযান। কিন্তু কই? তারা ‘বন্দী’ জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আর রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনের চার দেয়ালের মধ্যে। এই অক্ষম নেতৃত্বের বিএনপি আবার মধ্যবর্তী নির্বাচন চায়। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঈদের পরদিন এ দাবি জানিয়েছেন। সরকার যদি রাজি হয়ে যায় কী করবে বিএনপি? জাতীয় কাউন্সিলের পর যে দলের কমিটি করতে লাগে সাড়ে ৪ মাস, ৩০০ আসনে মনোনয়ন ঠিক করতে তো তাদের বছর কাবার হয়ে যাওয়ার কথা। তখন তো নির্বাচনের নির্ধারিত সময়ই এসে যাবে! রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হাঁকও দিয়ে রেখেছে বিএনপি। কোনটা করবে? জিয়াউর রহমানের ইমেজ রক্ষার আবেগতাড়িত ইস্যুতেই কিছু করতে যখন বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে, অন্য কিছু যে তারা করতে পারবে সে বিশ্বাস মানুষ রাখবে কী করে? জিয়ার আলোতেই এখনো বিএনপির ঔজ্জ্বল্য। সে আলোর প্রদীপ নিভিয়ে দেওয়ার চেষ্টা রোধের কোনো গণসংশ্লিষ্ট উদ্যোগ নেই, আছে শুধু লম্বা লম্বা কথা। অবস্থাটা এমন যে, বিএনপির জামাকাপড় খুলে জাঙ্গিয়া ধরে টানাটানি চলছে। আর বিএনপি মাথায় হাত দিয়ে দেখছে টুপিটা ঠিক আছে কিনা!  বিএনপির অগণিত ভক্ত-অনুরাগী এতে হতাশ, চরম হতাশ।

সরকারেরও উপলব্ধি করা দরকার যে, এভাবে জিয়ার পদক সরিয়ে বা তার কবর সরিয়ে মানুষের মন থেকে তাকে সরানো যাবে না। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের পর বঙ্গবন্ধুকে ঢাকায় দাফন করা হয়নি, পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে টুঙ্গিপাড়ায়। কিন্তু তাতে কি ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়েছে? টুঙ্গিপাড়া থেকেই বঙ্গবন্ধু উজ্জ্বল আলোর দ্যুতি ছড়াচ্ছেন। বার বার হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়েও সে আলোয় পথ খুঁজে পায় আওয়ামী লীগ। দলের অগণিত নেতা-কর্মীর চোখের সামনে থেকে সরে যায়, কেটে যায় অন্ধকারের অমানিশা।  জিয়ার কবরও যদি ঢাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, যেখানেই থাকুক সেখান থেকেই আলো বিচ্ছুরিত হবে। বিএনপি না পারলে অন্য কেউ এগিয়ে যাবে সে আলোর নিশানা ধরে। বিএনপির বাইরেও জিয়ার ভক্তকুলের অভাব নেই।