ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যেখানে বাঘের ভয়, শরীফ জামিল

সুন্দরবন পৃথিবীর এক বিরল সম্পদ। জাতিসংঘ একে বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা দিয়েছে। এর যে প্রাকৃতিক গঠন, এর যে জীবনচক্র, এখানে একটা প্রাণের বেঁচে থাকার সঙ্গে অন্য প্রাণ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এর একটা যদি ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাহলে বাকিটাও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ছোট্ট একটা প্রজাপতিও সুন্দরবনের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখছে। কারণ পুরো সুন্দরবনে উদ্ভিদরাজির পরাগায়ণে তার অবদান আছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের দুই অংশ মিলিয়ে ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারের সুন্দরবনে পাঁচ হাজার খাল আছে। এগুলো একটা আরেকটার সঙ্গে যুক্ত। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র টিকে থাকার পেছনে এসব খালের প্রবাহ থাকা জরুরী। শুধু তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়, আরও নানা কারণে এগুলো ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র।

আমাদের জন্য সুন্দরবনের সুরক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ এই বন আগামী দিনে বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রাখার প্রধান ঢাল। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে সমুদ্র অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারে। সিডরের চেয়েও বড় ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। সিডরের সময় সুন্দরবন অনেকটা নিজেকে বিলিয়ে দিয়েই আমাদের প্রাম-জনপদকে সুরক্ষ্ াদিয়েছে। এই সুন্দরবন না থাকলে তখন কী হত?  তাই সামনের দিনে সুন্দরবনের ক্ষতি হলে মানুষও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এক ফারাক্কা বাঁধের কারণে গত ৪০ বছরে সুন্দরবনের লবণাক্ততা দ্বিগুণ বেড়েছে। যার প্রভাব উত্তরবঙ্গে পর্যন্ত পড়েছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করার আগে এসব বিষয় আমাদের ভাবতে হবে।

পৃথিবীর অনেক দেশই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থকে সরে আসছে। কেউ কেউ চলমান বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে। দূষণের কারণে বেইজিংয়ের আশপাশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চীন ২০১৮ সাল পর্যন্ত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ স্থগিত করেছে।

সুন্দরবনে যে কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে, তাতে সালফার আছে। এই কয়লা পোড়ালে সালফার ডাই অক্সাইড ও নাইট্রাস অক্সাইড তৈরি হয়। মানুষের চুলের ৩০ ভাগের এক ভাগ পুরুত্বের ধূলিকণা (পার্টিকুলেট ম্যাটার) তৈরি হয়। এগুলো সুন্দরবনের পরিবেশ-প্রতিবেশ দূষণের কারণ হয়ে উঠবে। তাই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব থাকবে।

বিজ্ঞান-প্রযুক্তির কল্যাণে দূষণ কমানোর নানা উপায়ে বের হয়েছে। সালফার ডাই অক্সাইড ৯৮ শতাংশ হ্রাস করা যায়। তবে এটা করতে হলে ৩০০-৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। আমাদের রামপাল প্রকল্পের দরপত্রে থাকা তথ্যানুযায়ী ৭০ শতাংশ পর্যন্ত সালফার ডাই অক্সাইড নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা থাকতে পারে। নাইট্রাস অক্সাইডকে এসসিআর প্রযুক্তিতে নিয়ন্ত্রণ করার কথাও আছে।

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণ শতভাগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তবে কারিগরি সক্ষমতা বাড়িয়ে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। যা অনেক ব্যয়বহুল এবং আমাদের মতো গরীব দেশে তার ব্যবহার বাস্তবসম্মত নয়। রামপাল প্রকল্পের জন্যে এ ধরনের উদ্যোগ নেই। এখানে বরং সনাতনী প্রযুক্তির সমাবেশ দেখা যাচ্ছে। ব্যয়বহুল দূষণরোধী প্রযুক্তি এড়িয়ে চলার প্রবণতা আছে। প্রকল্পের কর্তাব্যক্তিরা যে ধরনের চিন্তাভাবনা করছেন, তা এই সময়ে এসে বাস্তবসম্মত নয়।

কয়লা পোড়ালে নিকেল, আর্সেনিকসহ নানা রাসায়নিক পদার্থ বের হবে। এগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্যও প্রযুক্তি আছে। কিন্তু এজন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। রামপালে কার্বন উৎপন্ন হবে, তা নিঃসরণে দৃশ্যত কোনো উদ্যোগ নেই। কয়লা  পরিবহন, মজুদ- সবকিছুই আসলে পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অংশীদার ভারতের এনটিপিসি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। যাদের বিনিয়োগ ১৫ শতাংশ। আমরা যতটুকু জেনেছি, তারা লাভ নিবে ৫০ শতাংশ। পুরো বিদ্যুৎ আবার এনটিপিসি বিক্রি করবে বাংলাদেশ সরকারের কাছে। অথচ আমাদের বিনিয়োগ ৭০ শতাংশ। এর মাধ্যমে আবার বাংলাদেশ শতভাগ ঝুঁকি নিচ্ছে। তারপরও বলব, এটা শুধু ভারতের স্বার্থ নয়। এটা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হতে পারে। কারণ এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক কোনো চাপও সেভাবে দেখতে পাচ্ছি না। দেশের একটি গোষ্ঠীর স্বার্থও দিনে দিনে স্পষ্ট হচ্ছে। সেখানে ভূমির দালালরা পর্যন্ত ভিড়ছে। তারা এরই মধ্যে রামপালে জায়গা কেনা শুরু করেছে। তার মানে প্লটের ব্যবসা হবে, হাউজিং হবে।

সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছু তথ্য উপস্থাপন করেছেন রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের পক্ষে। আমি বিনয়ের সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কিছু তথ্যের বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে যেসব দেশের উদাহরণ দিয়েছেন এর অনেকগুলো প্রকল্প পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলে তা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে সেসব দেশ। প্রধানমন্ত্রী জার্মানির অনেকগুলো প্রকল্পের কথা বলেছেন। জার্মানি রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা দিয়েছে ২০২০ সালের মধ্যে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে চলে যাবে। কয়লাভিত্তিক প্রকল্প যেগুলো আছে শুধু আপদকালীন তারা সেখান থেকে বিদ্যুৎ নেবে, না হলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ নেবে না। তারা শতভাগ নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে চলে যাবে।

রামপাল প্রকল্পের বিরোধিতা করছি বলে সরকার আমাদের ভুল বুঝতে পারে। আমরা আসলে তাদের সহযোগিতা করতে চাই। আমরা বলতে চাই, যারা রামপালের বিরুদ্ধে কথা বলছে তারাই সরকারের প্রকৃত বন্ধু। বাকিরা আসলে মতলববাজ। আমরা চাই না এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে সরকার ভবিষ্যতের জন্য একটি ভুল দৃষ্টান্ত তৈরি করে যাক। কারণ পৃথিবীর যত জায়গায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হয়েছে সে জায়গার মানুষ সেই সরকারকে শেষ বিচারে ভালো চোখে দেখেনি। আমরা চাই না কয়েক বছর পর এই সরকার, সেই অবস্থায় আসুক।

যে উন্নয়নের জন্য মানুষ হুমকির মুখে পড়বে, তা আসলে উন্নয়ন না। নিরপেক্ষ বিজ্ঞানভিত্তিক সর্বজনগ্রহণযোগ্য পরিবেশ-প্রতিবেশগত অভিঘাত সমীক্ষা যদি পক্ষে আসে, তবে আমরা রামপালের পক্ষে। কিন্তু বেশিরভাগ সমীক্ষা দেখবেন ক্ষতির কথা বলবে। তাই সুন্দরবনকে হুমকিতে রেখে আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্র সমর্থন করতে পারছি না।

শরীফ জামিল : বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন- বাপার যুগ্ম সম্পাদক ও সুন্দরবন রক্ষা কমিটির সদস্য

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

যেখানে বাঘের ভয়, শরীফ জামিল

আপডেট টাইম : ০৫:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সুন্দরবন পৃথিবীর এক বিরল সম্পদ। জাতিসংঘ একে বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা দিয়েছে। এর যে প্রাকৃতিক গঠন, এর যে জীবনচক্র, এখানে একটা প্রাণের বেঁচে থাকার সঙ্গে অন্য প্রাণ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এর একটা যদি ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাহলে বাকিটাও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ছোট্ট একটা প্রজাপতিও সুন্দরবনের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখছে। কারণ পুরো সুন্দরবনে উদ্ভিদরাজির পরাগায়ণে তার অবদান আছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের দুই অংশ মিলিয়ে ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারের সুন্দরবনে পাঁচ হাজার খাল আছে। এগুলো একটা আরেকটার সঙ্গে যুক্ত। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র টিকে থাকার পেছনে এসব খালের প্রবাহ থাকা জরুরী। শুধু তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়, আরও নানা কারণে এগুলো ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র।

আমাদের জন্য সুন্দরবনের সুরক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ এই বন আগামী দিনে বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রাখার প্রধান ঢাল। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে সমুদ্র অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারে। সিডরের চেয়েও বড় ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। সিডরের সময় সুন্দরবন অনেকটা নিজেকে বিলিয়ে দিয়েই আমাদের প্রাম-জনপদকে সুরক্ষ্ াদিয়েছে। এই সুন্দরবন না থাকলে তখন কী হত?  তাই সামনের দিনে সুন্দরবনের ক্ষতি হলে মানুষও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এক ফারাক্কা বাঁধের কারণে গত ৪০ বছরে সুন্দরবনের লবণাক্ততা দ্বিগুণ বেড়েছে। যার প্রভাব উত্তরবঙ্গে পর্যন্ত পড়েছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করার আগে এসব বিষয় আমাদের ভাবতে হবে।

পৃথিবীর অনেক দেশই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থকে সরে আসছে। কেউ কেউ চলমান বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে। দূষণের কারণে বেইজিংয়ের আশপাশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চীন ২০১৮ সাল পর্যন্ত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ স্থগিত করেছে।

সুন্দরবনে যে কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে, তাতে সালফার আছে। এই কয়লা পোড়ালে সালফার ডাই অক্সাইড ও নাইট্রাস অক্সাইড তৈরি হয়। মানুষের চুলের ৩০ ভাগের এক ভাগ পুরুত্বের ধূলিকণা (পার্টিকুলেট ম্যাটার) তৈরি হয়। এগুলো সুন্দরবনের পরিবেশ-প্রতিবেশ দূষণের কারণ হয়ে উঠবে। তাই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব থাকবে।

বিজ্ঞান-প্রযুক্তির কল্যাণে দূষণ কমানোর নানা উপায়ে বের হয়েছে। সালফার ডাই অক্সাইড ৯৮ শতাংশ হ্রাস করা যায়। তবে এটা করতে হলে ৩০০-৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। আমাদের রামপাল প্রকল্পের দরপত্রে থাকা তথ্যানুযায়ী ৭০ শতাংশ পর্যন্ত সালফার ডাই অক্সাইড নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা থাকতে পারে। নাইট্রাস অক্সাইডকে এসসিআর প্রযুক্তিতে নিয়ন্ত্রণ করার কথাও আছে।

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণ শতভাগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তবে কারিগরি সক্ষমতা বাড়িয়ে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। যা অনেক ব্যয়বহুল এবং আমাদের মতো গরীব দেশে তার ব্যবহার বাস্তবসম্মত নয়। রামপাল প্রকল্পের জন্যে এ ধরনের উদ্যোগ নেই। এখানে বরং সনাতনী প্রযুক্তির সমাবেশ দেখা যাচ্ছে। ব্যয়বহুল দূষণরোধী প্রযুক্তি এড়িয়ে চলার প্রবণতা আছে। প্রকল্পের কর্তাব্যক্তিরা যে ধরনের চিন্তাভাবনা করছেন, তা এই সময়ে এসে বাস্তবসম্মত নয়।

কয়লা পোড়ালে নিকেল, আর্সেনিকসহ নানা রাসায়নিক পদার্থ বের হবে। এগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্যও প্রযুক্তি আছে। কিন্তু এজন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। রামপালে কার্বন উৎপন্ন হবে, তা নিঃসরণে দৃশ্যত কোনো উদ্যোগ নেই। কয়লা  পরিবহন, মজুদ- সবকিছুই আসলে পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অংশীদার ভারতের এনটিপিসি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। যাদের বিনিয়োগ ১৫ শতাংশ। আমরা যতটুকু জেনেছি, তারা লাভ নিবে ৫০ শতাংশ। পুরো বিদ্যুৎ আবার এনটিপিসি বিক্রি করবে বাংলাদেশ সরকারের কাছে। অথচ আমাদের বিনিয়োগ ৭০ শতাংশ। এর মাধ্যমে আবার বাংলাদেশ শতভাগ ঝুঁকি নিচ্ছে। তারপরও বলব, এটা শুধু ভারতের স্বার্থ নয়। এটা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হতে পারে। কারণ এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক কোনো চাপও সেভাবে দেখতে পাচ্ছি না। দেশের একটি গোষ্ঠীর স্বার্থও দিনে দিনে স্পষ্ট হচ্ছে। সেখানে ভূমির দালালরা পর্যন্ত ভিড়ছে। তারা এরই মধ্যে রামপালে জায়গা কেনা শুরু করেছে। তার মানে প্লটের ব্যবসা হবে, হাউজিং হবে।

সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছু তথ্য উপস্থাপন করেছেন রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের পক্ষে। আমি বিনয়ের সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কিছু তথ্যের বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে যেসব দেশের উদাহরণ দিয়েছেন এর অনেকগুলো প্রকল্প পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলে তা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে সেসব দেশ। প্রধানমন্ত্রী জার্মানির অনেকগুলো প্রকল্পের কথা বলেছেন। জার্মানি রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা দিয়েছে ২০২০ সালের মধ্যে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে চলে যাবে। কয়লাভিত্তিক প্রকল্প যেগুলো আছে শুধু আপদকালীন তারা সেখান থেকে বিদ্যুৎ নেবে, না হলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ নেবে না। তারা শতভাগ নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে চলে যাবে।

রামপাল প্রকল্পের বিরোধিতা করছি বলে সরকার আমাদের ভুল বুঝতে পারে। আমরা আসলে তাদের সহযোগিতা করতে চাই। আমরা বলতে চাই, যারা রামপালের বিরুদ্ধে কথা বলছে তারাই সরকারের প্রকৃত বন্ধু। বাকিরা আসলে মতলববাজ। আমরা চাই না এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে সরকার ভবিষ্যতের জন্য একটি ভুল দৃষ্টান্ত তৈরি করে যাক। কারণ পৃথিবীর যত জায়গায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হয়েছে সে জায়গার মানুষ সেই সরকারকে শেষ বিচারে ভালো চোখে দেখেনি। আমরা চাই না কয়েক বছর পর এই সরকার, সেই অবস্থায় আসুক।

যে উন্নয়নের জন্য মানুষ হুমকির মুখে পড়বে, তা আসলে উন্নয়ন না। নিরপেক্ষ বিজ্ঞানভিত্তিক সর্বজনগ্রহণযোগ্য পরিবেশ-প্রতিবেশগত অভিঘাত সমীক্ষা যদি পক্ষে আসে, তবে আমরা রামপালের পক্ষে। কিন্তু বেশিরভাগ সমীক্ষা দেখবেন ক্ষতির কথা বলবে। তাই সুন্দরবনকে হুমকিতে রেখে আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্র সমর্থন করতে পারছি না।

শরীফ জামিল : বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন- বাপার যুগ্ম সম্পাদক ও সুন্দরবন রক্ষা কমিটির সদস্য