ঢাকা , শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শব্দদূষণ বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের সময়ের গুরুত্বকে করছে অবজ্ঞা

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ মানুষ শব্দ যন্ত্রণায় জর্জরিত। পুরো দেশেই শব্দদূষণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শহরগুলোর অবস্থা সবচেয়ে করুণ। রাস্তার পাশের বাড়িঘরে, অফিস-আদালতে বসবাস করা দুঃসহ হয়ে পড়েছে।

যানবাহনের হর্ন, নানা অনুষ্ঠানের পটকাবাজি, লটারির টিকিট, বৈদ্যুতিক বাল্ব, কসমেটিকসহ বিভিন্ন দ্রব্য বিক্রির গাড়ি বা ভ্যানে ব্যবহৃত মাইকের শব্দে মানুষ দিশেহারা।

সাম্প্রতিক সময়ে এসব দূষণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দামি গাড়িতে সাইরেন বা হুটারের শব্দ। কিছু স্বঘোষিত নব্য ভিআইপি রাষ্ট্রীয় কোনো পদ-পদবিতে না থাকলেও প্রভাবশালীদের আত্মীয় অথবা ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনে নিজের ছোটখাটো দলীয় পদের পরিচয় ভাঙিয়ে রাস্তায় উচ্চশব্দে সাইরেনযুক্ত গাড়ি হাঁকিয়ে শব্দ সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। এরা গাড়ি ছাড়াও মোটরসাইকেলেও এখন সাইরেন লাগিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

আগে সাইরেন ব্যবহার করা হতো শুধু অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, পুলিশের পিকআপসহ অতি প্রয়োজনীয় ও জরুরি কাজে নিয়োজিত বিশেষ কিছু সরকারি গাড়িতে। সাইরেনের শব্দ শুনলে মানুষ ওইসব বাহনকে দ্রুত চলাচলের সুযোগ করে দিত। অথচ এই বিশেষ হর্ন এখন অনেক সাধারণ গাড়িতে দেখা যাচ্ছে। ক্ষমতার প্রভাব কাজে লাগিয়ে সাইরেন বাজিয়ে ভিআইপি জানান দেয়ার এ প্রবণতা একদিকে যেমন শব্দদূষণ বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের সময়ের গুরুত্বকে করছে অবজ্ঞা।

বিধি অনুযায়ী দেশে উল্টো পথে চলা বা সাইরেন বাজিয়ে রাস্তা ফাঁকা করে কোনো ভিআইপির চলাচল অনুমোদিত নয়। শুধু মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চলাচলের সময় রাস্তার একপাশ ফাঁকা করে চলাচলের বিধান রয়েছে। তবুও সেক্ষেত্রে অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসকে আলাদা গুরুত্ব দেয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের স্বঘোষিত নব্য ভিআইপিরা রাস্তাঘাটে ট্রাফিকদের মনঃসংযোগ করতে বা সামনের গাড়ি থেকে সহজে সাইড পাওয়ার বাড়তি সুবিধার আশায় এবং উল্টো পথে চলাচলের সুবিধা নিতে ব্যক্তিগত গাড়িতে সাইরেন সংযোজন করছে।

এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ গাড়ির হর্নের সঙ্গে ব্যক্তিগত গাড়ির হর্ন মিলে যাচ্ছে। বড় বড় শহরে যানজটে আটকে থাকা অ্যাম্বুলেন্স ক্রমাগত সাইরেন বাজিয়ে চলাচল করছে। আবার পাশের প্যাসেঞ্জারবাহী রেঞ্জারও একই হর্ন বাজাচ্ছে। পুলিশের পিকআপও ওই একই হর্ন দিচ্ছে। কী আজব ব্যাপার, সবার হর্ন একই রকম! ফলে সাইড দেয়া বা না দেয়া নিয়ে চরম বিভ্রান্তিতে পড়তে হচ্ছে গণপরিবহনের চালকদের।

এভাবে আর কতকাল? এভাবে চলতে থাকলে এবং গুরুত্বপূর্ণ যানবাহনের হর্ন সাধারণ যানবাহনে বাজতে থাকলে ভবিষ্যতে মানুষের মধ্যে বিদ্যমান সচেতনতাবোধটুকুও আর থাকবে না। ফলস্বরূপ ফায়ার সার্ভিস, পুলিশের পিকআপ এবং অ্যাম্বুলেন্সসহ গুরুত্বপূর্ণ গাড়ির সেবাদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।

সাইরেন হর্নের যথাযথ ব্যবহার সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

শব্দদূষণ বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের সময়ের গুরুত্বকে করছে অবজ্ঞা

আপডেট টাইম : ০২:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৯

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ মানুষ শব্দ যন্ত্রণায় জর্জরিত। পুরো দেশেই শব্দদূষণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শহরগুলোর অবস্থা সবচেয়ে করুণ। রাস্তার পাশের বাড়িঘরে, অফিস-আদালতে বসবাস করা দুঃসহ হয়ে পড়েছে।

যানবাহনের হর্ন, নানা অনুষ্ঠানের পটকাবাজি, লটারির টিকিট, বৈদ্যুতিক বাল্ব, কসমেটিকসহ বিভিন্ন দ্রব্য বিক্রির গাড়ি বা ভ্যানে ব্যবহৃত মাইকের শব্দে মানুষ দিশেহারা।

সাম্প্রতিক সময়ে এসব দূষণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দামি গাড়িতে সাইরেন বা হুটারের শব্দ। কিছু স্বঘোষিত নব্য ভিআইপি রাষ্ট্রীয় কোনো পদ-পদবিতে না থাকলেও প্রভাবশালীদের আত্মীয় অথবা ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনে নিজের ছোটখাটো দলীয় পদের পরিচয় ভাঙিয়ে রাস্তায় উচ্চশব্দে সাইরেনযুক্ত গাড়ি হাঁকিয়ে শব্দ সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। এরা গাড়ি ছাড়াও মোটরসাইকেলেও এখন সাইরেন লাগিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

আগে সাইরেন ব্যবহার করা হতো শুধু অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, পুলিশের পিকআপসহ অতি প্রয়োজনীয় ও জরুরি কাজে নিয়োজিত বিশেষ কিছু সরকারি গাড়িতে। সাইরেনের শব্দ শুনলে মানুষ ওইসব বাহনকে দ্রুত চলাচলের সুযোগ করে দিত। অথচ এই বিশেষ হর্ন এখন অনেক সাধারণ গাড়িতে দেখা যাচ্ছে। ক্ষমতার প্রভাব কাজে লাগিয়ে সাইরেন বাজিয়ে ভিআইপি জানান দেয়ার এ প্রবণতা একদিকে যেমন শব্দদূষণ বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের সময়ের গুরুত্বকে করছে অবজ্ঞা।

বিধি অনুযায়ী দেশে উল্টো পথে চলা বা সাইরেন বাজিয়ে রাস্তা ফাঁকা করে কোনো ভিআইপির চলাচল অনুমোদিত নয়। শুধু মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চলাচলের সময় রাস্তার একপাশ ফাঁকা করে চলাচলের বিধান রয়েছে। তবুও সেক্ষেত্রে অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসকে আলাদা গুরুত্ব দেয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের স্বঘোষিত নব্য ভিআইপিরা রাস্তাঘাটে ট্রাফিকদের মনঃসংযোগ করতে বা সামনের গাড়ি থেকে সহজে সাইড পাওয়ার বাড়তি সুবিধার আশায় এবং উল্টো পথে চলাচলের সুবিধা নিতে ব্যক্তিগত গাড়িতে সাইরেন সংযোজন করছে।

এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ গাড়ির হর্নের সঙ্গে ব্যক্তিগত গাড়ির হর্ন মিলে যাচ্ছে। বড় বড় শহরে যানজটে আটকে থাকা অ্যাম্বুলেন্স ক্রমাগত সাইরেন বাজিয়ে চলাচল করছে। আবার পাশের প্যাসেঞ্জারবাহী রেঞ্জারও একই হর্ন বাজাচ্ছে। পুলিশের পিকআপও ওই একই হর্ন দিচ্ছে। কী আজব ব্যাপার, সবার হর্ন একই রকম! ফলে সাইড দেয়া বা না দেয়া নিয়ে চরম বিভ্রান্তিতে পড়তে হচ্ছে গণপরিবহনের চালকদের।

এভাবে আর কতকাল? এভাবে চলতে থাকলে এবং গুরুত্বপূর্ণ যানবাহনের হর্ন সাধারণ যানবাহনে বাজতে থাকলে ভবিষ্যতে মানুষের মধ্যে বিদ্যমান সচেতনতাবোধটুকুও আর থাকবে না। ফলস্বরূপ ফায়ার সার্ভিস, পুলিশের পিকআপ এবং অ্যাম্বুলেন্সসহ গুরুত্বপূর্ণ গাড়ির সেবাদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।

সাইরেন হর্নের যথাযথ ব্যবহার সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে।