ঢাকা , শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সড়ক আদৌ নিরাপদ হবে কি

 

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ  সড়ক নিরাপদ করতে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ হয়েছে; কিন্তু নিরাপদ সড়কের কোনো লক্ষণ দেখছি না। এখনও দেখছি আইনের লোকজন হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালায়। উল্টোপথে সরকারি গাড়ি চলতে দেখি। সড়কে মৃত্যু থামার লক্ষণ দেখছি না।

প্রতিদিনই সড়কে মানুষ মরছে। আসলে বহু বছর ধরে দেখছি নিরাপদ সড়কের জন্য হাজারও হুঙ্কার, আন্দোলন, ধর্ম ঘট, মিছিল, সমাবেশ কত কিছুই না হয়; সড়ক আর নিরাপদ হয় না। আইন হয়, আইনের প্রয়োগ হয় না। সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে? মনে প্রশ্ন জাগে, আদৌ কি সড়ক আমাদের জন্য নিরাপদ হবে? থামবে কি সড়কে মৃত্যুর মিছিল?

সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ আশা জাগানিয়া। তবে মনে জোর পাই কম। আমাদের কত কিছুর জন্যই তো আইন আছে, প্রয়োগ হয় ক’টার? এ দেশে কঠোর নিরাপদ খাদ্য আইন আছে, তবুও প্রায় সব খাবারেই তো ভেজাল মেশানো থাকে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আইন আছে; কিন্তু এ দেশের নারীরা কতটা নিরাপদ? নুসরাতের মতো ক’টা ঘটনার বিচার হয়েছে এ দেশে। সড়ক আইন আগেও ছিল। প্রয়োগ হয়েছে কতটা?। নয়া আইনের প্রয়োগ নিয়েও মনে প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি মারে।

সড়ক নিরাপদ হওয়া খুবই জরুরি। এমন কোনো দিন নেই, যেদিন সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে না। এরশাদ সরকারের আমলে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করা হয়; কিন্তু পরিবহন শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে তা রহিত করতে বাধ্য হয় সরকার। এরপর থেকে বিভিন্ন সরকারকে পরিবহন শ্রমিকদের দাবি-দাওয়ার কাছে প্রায় জিম্মি থাকতে দেখা গেছে। অথচ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের শাস্তি না হওয়া, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন, লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালক কর্তৃক গাড়ি চালানো, আনফিট গাড়ি রাস্তায় নামানো, সড়ক যোগাযোগে অব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত চালকদের বিচারের কাঠগড়ায় নিয়ে আসার ঘটনা এ দেশে বিরল। দেখা গেছে, প্রায় সব দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই চালকরা পার পেয়ে গেছে। কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যায়নি তাদের বিরুদ্ধে।

এ দেশে সড়ক দুর্ঘটনার বেশিরভাগই মানবসৃষ্ট। এ বিবেচনায় দুর্ঘটনায় নিহতরা পরোক্ষভাবে হত্যারই শিকার। কিন্তু হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার কাঙ্ক্ষিত উদ্যোগ নেই। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা না কমে জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলেছে। সরকারি হিসাবে গত ১০ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা গেছে ৩৪ হাজার ৯১৮ জন। গড়ে প্রতি বছর মারা গেছে ৩ হাজার ৪৯১ জন। থানায় মামলা হয়েছে এমন দুর্ঘটনার হিসাব নিয়ে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে দায়িত্বশীলদের তরফ থেকে।

বেসরকারি হিসাবে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় ২০ হাজার ৩৪ জন। গড়ে প্রতিদিন মারা যায় প্রায় ৫৫ জন। সরকারি তথ্য ও বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত তথ্যের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান থাকার কারণ হল দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের ৬৭ ধরনের প্রশ্নের উত্তর সংগ্রহ করে প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। এ ঝামেলার কারণে অনেক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর বিষয়টি যথাযথভাবে রেকর্ডভুক্ত হয় না।

পুলিশের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২ হাজার ১৪০ জন। মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন ১ হাজার ১৮৬ এবং সামান্য আহত হয়েছেন ১৫৭ জন। সড়ক দুর্ঘটনাজনিত ক্ষয়ক্ষতির সাম্প্রতিক এক গবেষণা তথ্যে দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় ফি বছর ৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি সম্পদহানি হয়। এ হার দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৯৫ শতাংশের সমান। অন্য এক গবেষণা জরিপ থেকে জানা যায়, ৪৮ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যাত্রীবাহী বাস, ৩৭ শতাংশের জন্য দায়ী ট্রাক।

প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে একের পর এক অকালমৃত্যু আমাদের শুধু প্রত্যক্ষই করতে হচ্ছে না; এ দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক বিভীষিকাময় ও অরাজক পরিস্থিতিও মোকাবেলা করতে হচ্ছে। মৃত্যু যদি অকাল ও আকস্মিক হয় তবে তা মেনে নেয়া কঠিন। সংশ্লিষ্ট সবার প্রচেষ্টায় এ উদ্বেগজনক পরিস্থিতির নিরসন করতেই হবে। এভাবে চলতে পারে না। এভাবে অকালে মানুষের জীবনপ্রদীপ নিভে যেতে পারে না। পঙ্গুত্বের মতো দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিয়ে মানুষ জীবন কাটাতে পারে না। দেশে সন্ত্রাস দমনে যদি বিশেষ বাহিনী গঠন করা যায়, তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এ ধরনের বাহিনী গঠন করা হচ্ছে না কেন? জানমাল রক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আইন না মানাই সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। সবাইকে আইন মানতে বাধ্য করতে হবে।

আমরা সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পরিবহন মালিক-শ্রমিক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে সমন্বিত, আন্তরিক, সচেতন, দৃঢ় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা আশা করি।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

সড়ক আদৌ নিরাপদ হবে কি

আপডেট টাইম : ০১:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৯

 

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ  সড়ক নিরাপদ করতে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ হয়েছে; কিন্তু নিরাপদ সড়কের কোনো লক্ষণ দেখছি না। এখনও দেখছি আইনের লোকজন হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালায়। উল্টোপথে সরকারি গাড়ি চলতে দেখি। সড়কে মৃত্যু থামার লক্ষণ দেখছি না।

প্রতিদিনই সড়কে মানুষ মরছে। আসলে বহু বছর ধরে দেখছি নিরাপদ সড়কের জন্য হাজারও হুঙ্কার, আন্দোলন, ধর্ম ঘট, মিছিল, সমাবেশ কত কিছুই না হয়; সড়ক আর নিরাপদ হয় না। আইন হয়, আইনের প্রয়োগ হয় না। সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে? মনে প্রশ্ন জাগে, আদৌ কি সড়ক আমাদের জন্য নিরাপদ হবে? থামবে কি সড়কে মৃত্যুর মিছিল?

সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ আশা জাগানিয়া। তবে মনে জোর পাই কম। আমাদের কত কিছুর জন্যই তো আইন আছে, প্রয়োগ হয় ক’টার? এ দেশে কঠোর নিরাপদ খাদ্য আইন আছে, তবুও প্রায় সব খাবারেই তো ভেজাল মেশানো থাকে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আইন আছে; কিন্তু এ দেশের নারীরা কতটা নিরাপদ? নুসরাতের মতো ক’টা ঘটনার বিচার হয়েছে এ দেশে। সড়ক আইন আগেও ছিল। প্রয়োগ হয়েছে কতটা?। নয়া আইনের প্রয়োগ নিয়েও মনে প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি মারে।

সড়ক নিরাপদ হওয়া খুবই জরুরি। এমন কোনো দিন নেই, যেদিন সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে না। এরশাদ সরকারের আমলে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করা হয়; কিন্তু পরিবহন শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে তা রহিত করতে বাধ্য হয় সরকার। এরপর থেকে বিভিন্ন সরকারকে পরিবহন শ্রমিকদের দাবি-দাওয়ার কাছে প্রায় জিম্মি থাকতে দেখা গেছে। অথচ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের শাস্তি না হওয়া, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন, লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালক কর্তৃক গাড়ি চালানো, আনফিট গাড়ি রাস্তায় নামানো, সড়ক যোগাযোগে অব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত চালকদের বিচারের কাঠগড়ায় নিয়ে আসার ঘটনা এ দেশে বিরল। দেখা গেছে, প্রায় সব দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই চালকরা পার পেয়ে গেছে। কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যায়নি তাদের বিরুদ্ধে।

এ দেশে সড়ক দুর্ঘটনার বেশিরভাগই মানবসৃষ্ট। এ বিবেচনায় দুর্ঘটনায় নিহতরা পরোক্ষভাবে হত্যারই শিকার। কিন্তু হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার কাঙ্ক্ষিত উদ্যোগ নেই। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা না কমে জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলেছে। সরকারি হিসাবে গত ১০ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা গেছে ৩৪ হাজার ৯১৮ জন। গড়ে প্রতি বছর মারা গেছে ৩ হাজার ৪৯১ জন। থানায় মামলা হয়েছে এমন দুর্ঘটনার হিসাব নিয়ে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে দায়িত্বশীলদের তরফ থেকে।

বেসরকারি হিসাবে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় ২০ হাজার ৩৪ জন। গড়ে প্রতিদিন মারা যায় প্রায় ৫৫ জন। সরকারি তথ্য ও বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত তথ্যের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান থাকার কারণ হল দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের ৬৭ ধরনের প্রশ্নের উত্তর সংগ্রহ করে প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। এ ঝামেলার কারণে অনেক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর বিষয়টি যথাযথভাবে রেকর্ডভুক্ত হয় না।

পুলিশের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২ হাজার ১৪০ জন। মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন ১ হাজার ১৮৬ এবং সামান্য আহত হয়েছেন ১৫৭ জন। সড়ক দুর্ঘটনাজনিত ক্ষয়ক্ষতির সাম্প্রতিক এক গবেষণা তথ্যে দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় ফি বছর ৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি সম্পদহানি হয়। এ হার দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৯৫ শতাংশের সমান। অন্য এক গবেষণা জরিপ থেকে জানা যায়, ৪৮ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যাত্রীবাহী বাস, ৩৭ শতাংশের জন্য দায়ী ট্রাক।

প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে একের পর এক অকালমৃত্যু আমাদের শুধু প্রত্যক্ষই করতে হচ্ছে না; এ দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক বিভীষিকাময় ও অরাজক পরিস্থিতিও মোকাবেলা করতে হচ্ছে। মৃত্যু যদি অকাল ও আকস্মিক হয় তবে তা মেনে নেয়া কঠিন। সংশ্লিষ্ট সবার প্রচেষ্টায় এ উদ্বেগজনক পরিস্থিতির নিরসন করতেই হবে। এভাবে চলতে পারে না। এভাবে অকালে মানুষের জীবনপ্রদীপ নিভে যেতে পারে না। পঙ্গুত্বের মতো দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিয়ে মানুষ জীবন কাটাতে পারে না। দেশে সন্ত্রাস দমনে যদি বিশেষ বাহিনী গঠন করা যায়, তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এ ধরনের বাহিনী গঠন করা হচ্ছে না কেন? জানমাল রক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আইন না মানাই সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। সবাইকে আইন মানতে বাধ্য করতে হবে।

আমরা সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পরিবহন মালিক-শ্রমিক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে সমন্বিত, আন্তরিক, সচেতন, দৃঢ় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা আশা করি।