বাঙালী কণ্ঠ ডে স্কঃ বড়পুকুরিয়া কয়লা চুরির মামলা নিষ্পত্তির আগেই অভিযুক্ত চীনা কোম্পানি এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়ামকে ১৮৬ কোটি টাকার জামানত ও বিল ফেরত দেয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক।
উল্লেখ্য, এই চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির (বিসিএমসিএল) বিরুদ্ধে ২১২ কোটি টাকার কয়লা চুরির অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলাটির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামানতের টাকা ফেরত দেয়ার সুযোগ নেই। কথা ছিল চুক্তি শেষে ‘স্কোপ অব ওয়ার্ক’ অনুযায়ী সব ধরনের দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি করে ঠিকাদারকে এ টাকা দেয়া হবে।
কিন্তু চুক্তি লঙ্ঘন করে পুরো টাকা দিয়ে দিয়েছে বিসিএমসিএল। গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত বৈঠকের সারসংক্ষেপপত্রের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, জ্বালানি বিভাগের সচিবের নির্দেশে এ অর্থ ছাড় করা হয়। সারসংক্ষেপপত্রের ৩.০৯ দফায় বলা হয়েছে, ‘চুক্তি নং বিসিএমসিএল/০৬/১৩৪/২০১১-এর সমাপ্তিকরণ ও রিটেনশন মানি ফেরত প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে বোর্ড সভায় উপস্থাপনের জন্য সচিব মহোদয় মৌখিক নির্দেশনা প্রদান করেন।’
যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা গেছে, এর ভিত্তিতেই ওই চীনা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এই বিপুল অঙ্কের অর্থছাড় করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অবশ্য জ্বালানি সচিব এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা জরুরি বলে মনে করি আমরা। কারণ এটি দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে।
বড়পুকুরিয়া কয়লা কেলেঙ্কারির ঘটনার পেছনে মূলত দুর্নীতিই দায়ী। পেট্রোবাংলার তদন্ত প্রতিবেদনে সিস্টেম লসের কারণে কয়লার ঘাটতির কথা বলা হলেও দুদকের তদন্তে প্রমাণ মিলেছে, কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। উল্লেখ্য, বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা চুরির ঘটনা কর্তৃপক্ষের নজরে প্রথম আসে গত বছরের জুনে। দেশের একমাত্র কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে এ খনি থেকেই কয়লা সরবরাহ করা হয়।
ফলে কয়লা চুরির ঘটনা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়। বিপুল পরিমাণ কয়লা চুরি যে একদিনে হয়নি, তা বলাই বাহুল্য। দীর্ঘদিন ধরেই কয়লা চুরি করে আসছিল দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তারা। ঘটনাটি এর আগে কারও নজরে আসেনি কেন, সেটিও এক বড় প্রশ্ন।
যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিসিএমসিএলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান পরিচালনা পর্ষদ সদস্যকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে চীনা কোম্পানিকে একের পর এক অবৈধ সুবিধা দিয়েছেন।
এ কারণেও ঘটনাটির একটি ব্যাপকভিত্তিক তদন্ত প্রয়োজন। সরকারি কাজে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে দুর্নীতির প্রশ্নে কোনো ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কেলেঙ্কারির সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের প্রত্যেকের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা হবে, এটাই কাম্য।