ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কারণ ছাড়াই বাড়ছে ভোজ্য তেলের দাম

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রাজধানীর বাজারগুলোতে কারণ ছাড়াই বাড়ছে ভোজ্য তেলের দাম। গত কয়েক মাসে দুই দফা বৃদ্ধির পর সম্প্রতি আবারো এক দফা বেড়েছে পণ্যটির দাম। রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজার এমন চিত্র দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো পণ্যের দামই বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কমছে না। অথচ বিশ্ববাজারে বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই দেশীয় বাজারে বেড়ে যায়। আর সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোও ভালোভাবে মনিটরিং করছে না বলে তাদের অভিযোগ। সপ্তাহখানেক ধরে বাজারে বর্ধিত দামের তেল বিক্রি শুরু হচ্ছে। এদিকে বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমেছে। তবে দাম কমার সুবিধা পাচ্ছেন না ক্রেতারা। অন্যদিকে খুচরা বাজারে খোলা ও বোতলজাত সব ধরনের তেল আগের মতো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে।  বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছরের অক্টোবরে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল (প্রতি লিটার) ব্র্যান্ডভেদে ৯৪ থেকে ৯৫ টাকা। এর কয়েক দিনের পর ছয়-সাত টাকা বাড়িয়ে ১০০ টাকা থেকে ১০২ টাকা হয়। দ্বিতীয় দফায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রতি লিটারে ৫ টাকা বাড়ানো হয়। সে হিসাবে গত সপ্তাহেও বাজারে ব্র্যান্ডভেদে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যেত প্রতি লিটার ১০৫ টাকা থেকে ১০৭ টাকায়। কয়েক দফা দাম বাড়িয়ে আবারো পরিশোধন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তেলের দাম লিটারে ৩ থেকে ৫ টাকা বাড়িয়েছে। বর্তমানে বাজারে এক লিটার বোতলজাত তেলের দাম রাখা হচ্ছে ১১১ টাকা। আর দুই লিটার বোতলজাত তেলের দাম রাখা হচ্ছে ২১০ টাকা। ফলে প্রায় এক বছরের ব্যবধানে বাজারের তেলের দাম তৃতীয় দফা বাড়নো হলো। আলোচ্য সময়ে ব্র্যান্ডভেদে প্রতি কেজি তেলের দর বৃদ্ধির পরিমাণ ১৫ থেকে ২০ টাকা।
বাজারে রূপচাঁদা ৫ লিটারের বোতলের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৫৩০ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা বাড়িয়ে ৫৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তীর ব্র্যান্ডের ৫ লিটারের বোতলে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৫৩০ টাকা নির্ধারণ হয়, যা আগে ছিল ৫২০ টাকা। এছাড়া এক লিটারের বোতলের দাম বাড়িয়ে তীর ১০৭ টাকা ও রূপচাঁদা ১১২ টাকা নির্ধারণ করেছে। বাজারে অন্য ব্র্যান্ডের তেলগুলোর দামও বাড়াচ্ছে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুচরা ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। সয়াবিন তেলের পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারে দামের ব্যবধান ৭ থেকে ৮ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৬ থেকে ৯০ টাকায়। পাইকারি দরের চেয়ে লিটারে ১১ থেকে ১৫ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের। খুচরায় পাম তেল ৭৩ থেকে ৭৫ টাকা ও সুপার পাম তেল ৭৫ থেকে ৭৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, দেশে গত এক বছরের ব্যবধানে বোতলজাত তেলের দাম বেড়েছে ১৭ শতাংশ। সয়াবিন তেল (লুজ) এক বছরে প্রতি লিটারে বেড়েছে ৩.৬৬ শতাংশ। সয়াবিন (বোতল) ৫ লিটার বেড়েছে ১৪.২৯ শতাংশ। সয়াবিন (বোতল) ১ লিটার বেড়েছে ১৪.২৯ শতাংশ। ১২.৭৭ শতাংশ। এ ছাড়া পাম অয়েল (লুজ) এক বছরে বেড়েছে ৬.৭৭ শতাংশ। পাম অয়েল (সুপার) ১ লিটার বেড়েছে ৭.৯৭ শতাংশ। এদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে গড়ে ৩ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে। গত বছর ডিসেম্বরে বিশ্ব বাজারে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিনের মূল্য ছিল ৮০০ ডলার। মার্চের শেষে তা বিক্রি হয়েছে ৭১০ ডলারে। চার মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম কমেছে ৯০ ডলার। কিন্তু দেশের বাজারে উল্টো দাম বেড়েছে।
জানা গেছে, দেশে তেলের দাম বৃদ্ধির আগে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনকে অবগত করার নিয়ম রয়েছে। প্রতিবারের ন্যায় এবারেও তাদের বিষয়টি অবগত করা হয়েছে বলে কমিশনের একটা সূত্র জানিয়েছে। তবে সে বিষয়ে অনুমোদনের পূর্বেই বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে ইচ্ছেমতো কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যে দাম বাড়াচ্ছে।
কাওরান বাজারের মুদি দোকানি হাবিব বলেন, প্রথমে বাজারে দাম বাড়িয়ে তেল ছাড়তে শুরু করে রূপচঁাঁদা। এরপর তীরের বাড়তি দামের তেল আসছে কয়েক দিন ধরে। বিক্রয় প্রতিনিধিরা আমাদের এমনটাই বলছে। আরেক বিক্রেতা বলেন, রূপচাঁদার ৫ লিটারের বোতল কোম্পানিগুলো আমাদের কাছে দাম রাখত ৫১০ টাকা। এখন রাখছে ৫১৫ টাকা। তারা বোতলের গায়ের দাম ৫৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৪০ করে দিয়েছে।
তেল পরিশোধন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় তেলের দাম বাড়াচ্ছেন। দেশের বোতলজাত সয়াবিন তেলের ৯০ শতাংশ বাজার সিটি, মেঘনা ও বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের নিয়ন্ত্রণে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

কারণ ছাড়াই বাড়ছে ভোজ্য তেলের দাম

আপডেট টাইম : ০৯:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অগাস্ট ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রাজধানীর বাজারগুলোতে কারণ ছাড়াই বাড়ছে ভোজ্য তেলের দাম। গত কয়েক মাসে দুই দফা বৃদ্ধির পর সম্প্রতি আবারো এক দফা বেড়েছে পণ্যটির দাম। রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজার এমন চিত্র দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো পণ্যের দামই বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কমছে না। অথচ বিশ্ববাজারে বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই দেশীয় বাজারে বেড়ে যায়। আর সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোও ভালোভাবে মনিটরিং করছে না বলে তাদের অভিযোগ। সপ্তাহখানেক ধরে বাজারে বর্ধিত দামের তেল বিক্রি শুরু হচ্ছে। এদিকে বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমেছে। তবে দাম কমার সুবিধা পাচ্ছেন না ক্রেতারা। অন্যদিকে খুচরা বাজারে খোলা ও বোতলজাত সব ধরনের তেল আগের মতো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে।  বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছরের অক্টোবরে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল (প্রতি লিটার) ব্র্যান্ডভেদে ৯৪ থেকে ৯৫ টাকা। এর কয়েক দিনের পর ছয়-সাত টাকা বাড়িয়ে ১০০ টাকা থেকে ১০২ টাকা হয়। দ্বিতীয় দফায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রতি লিটারে ৫ টাকা বাড়ানো হয়। সে হিসাবে গত সপ্তাহেও বাজারে ব্র্যান্ডভেদে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যেত প্রতি লিটার ১০৫ টাকা থেকে ১০৭ টাকায়। কয়েক দফা দাম বাড়িয়ে আবারো পরিশোধন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তেলের দাম লিটারে ৩ থেকে ৫ টাকা বাড়িয়েছে। বর্তমানে বাজারে এক লিটার বোতলজাত তেলের দাম রাখা হচ্ছে ১১১ টাকা। আর দুই লিটার বোতলজাত তেলের দাম রাখা হচ্ছে ২১০ টাকা। ফলে প্রায় এক বছরের ব্যবধানে বাজারের তেলের দাম তৃতীয় দফা বাড়নো হলো। আলোচ্য সময়ে ব্র্যান্ডভেদে প্রতি কেজি তেলের দর বৃদ্ধির পরিমাণ ১৫ থেকে ২০ টাকা।
বাজারে রূপচাঁদা ৫ লিটারের বোতলের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৫৩০ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা বাড়িয়ে ৫৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তীর ব্র্যান্ডের ৫ লিটারের বোতলে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৫৩০ টাকা নির্ধারণ হয়, যা আগে ছিল ৫২০ টাকা। এছাড়া এক লিটারের বোতলের দাম বাড়িয়ে তীর ১০৭ টাকা ও রূপচাঁদা ১১২ টাকা নির্ধারণ করেছে। বাজারে অন্য ব্র্যান্ডের তেলগুলোর দামও বাড়াচ্ছে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুচরা ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। সয়াবিন তেলের পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারে দামের ব্যবধান ৭ থেকে ৮ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৬ থেকে ৯০ টাকায়। পাইকারি দরের চেয়ে লিটারে ১১ থেকে ১৫ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের। খুচরায় পাম তেল ৭৩ থেকে ৭৫ টাকা ও সুপার পাম তেল ৭৫ থেকে ৭৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, দেশে গত এক বছরের ব্যবধানে বোতলজাত তেলের দাম বেড়েছে ১৭ শতাংশ। সয়াবিন তেল (লুজ) এক বছরে প্রতি লিটারে বেড়েছে ৩.৬৬ শতাংশ। সয়াবিন (বোতল) ৫ লিটার বেড়েছে ১৪.২৯ শতাংশ। সয়াবিন (বোতল) ১ লিটার বেড়েছে ১৪.২৯ শতাংশ। ১২.৭৭ শতাংশ। এ ছাড়া পাম অয়েল (লুজ) এক বছরে বেড়েছে ৬.৭৭ শতাংশ। পাম অয়েল (সুপার) ১ লিটার বেড়েছে ৭.৯৭ শতাংশ। এদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে গড়ে ৩ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে। গত বছর ডিসেম্বরে বিশ্ব বাজারে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিনের মূল্য ছিল ৮০০ ডলার। মার্চের শেষে তা বিক্রি হয়েছে ৭১০ ডলারে। চার মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম কমেছে ৯০ ডলার। কিন্তু দেশের বাজারে উল্টো দাম বেড়েছে।
জানা গেছে, দেশে তেলের দাম বৃদ্ধির আগে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনকে অবগত করার নিয়ম রয়েছে। প্রতিবারের ন্যায় এবারেও তাদের বিষয়টি অবগত করা হয়েছে বলে কমিশনের একটা সূত্র জানিয়েছে। তবে সে বিষয়ে অনুমোদনের পূর্বেই বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে ইচ্ছেমতো কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যে দাম বাড়াচ্ছে।
কাওরান বাজারের মুদি দোকানি হাবিব বলেন, প্রথমে বাজারে দাম বাড়িয়ে তেল ছাড়তে শুরু করে রূপচঁাঁদা। এরপর তীরের বাড়তি দামের তেল আসছে কয়েক দিন ধরে। বিক্রয় প্রতিনিধিরা আমাদের এমনটাই বলছে। আরেক বিক্রেতা বলেন, রূপচাঁদার ৫ লিটারের বোতল কোম্পানিগুলো আমাদের কাছে দাম রাখত ৫১০ টাকা। এখন রাখছে ৫১৫ টাকা। তারা বোতলের গায়ের দাম ৫৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৪০ করে দিয়েছে।
তেল পরিশোধন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় তেলের দাম বাড়াচ্ছেন। দেশের বোতলজাত সয়াবিন তেলের ৯০ শতাংশ বাজার সিটি, মেঘনা ও বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের নিয়ন্ত্রণে।