ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাল আমদানি বাড়ছে, দামও কিছুটা কমেছে

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রাজধানীর পাইকারি বাজারে চালের দাম আরও কিছুটা কমেছে। মোটা চালের পাশাপাশি আমদানি শুরু হয়েছে মাঝারি মানের চালও। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সর্বশেষ দফায় আমদানি শুল্ক আরও কমিয়ে ফেলায় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অবশ্য সরু চাল আমদানি খুব বেশি শুরু হয়নি।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের চালের আড়তগুলোতে গতকাল মঙ্গলবার প্রতি কেজি ভারতীয় স্বর্ণা নামের মোটা চাল ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়, যা কিছুদিন আগেও কেজিপ্রতি ৪১ থেকে ৪২ টাকা ছিল। অন্যদিকে নতুন আসা ভারতীয় রত্না নামের মাঝারি মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৩ টাকা কেজি দরে।

ঢাকার পাইকারি বাজারে আমদানি করা চাল আসছে মূলত ভারত থেকে। ভারতকেন্দ্রিক আমদানিকারকদের মধ্যে চাল আমদানির বেশ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাইতে শুরু হওয়া চলতি অর্থবছরের প্রথম ১ মাস ১২ দিনে ৫ লাখ ৪০ হাজার টন চাল আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে এবং আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার টন চাল। এর আগের পুরো এক বছরে আমদানি হয়েছিল ১ লাখ ৮৮ হাজার টন চাল।

কৃষি মার্কেটে গতকাল গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন দোকানে ভারতীয় নুরজাহান ও এবি ব্র্যান্ডের চালের বস্তা। বিক্রেতারা জানান, প্রথম দফায় চালের আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করার পর ভারতীয় মোটা চাল আমদানি শুরু হয়। এই চালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৪১ থেকে ৪২ টাকা। এরপর চালের শুল্ক আরও কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করার পর দাম আরও ২ টাকা কমেছে।

গত ১৭ আগস্ট চাল আমদানির শুল্ক ২ শতাংশ নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর। গত বোরো মৌসুমে উৎপাদন কমে যাওয়া এবং বন্যার কারণে দীর্ঘদিন পরে চাল আমদানিতে উৎসাহ দিচ্ছে সরকার।

সার্বিকভাবে মোহাম্মদপুর ও বাবুবাজার-বাদামতলীর পাইকারি বাজারে মোটা চালের মধ্যে দেশি হাইব্রিড ৩৬-৩৭ টাকা, ভারতীয় স্বর্ণা ৩৮-৪০ টাকা ও দেশি স্বর্ণা ৪১-৪৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় নতুন আসা মাঝারি মানের রত্না চাল ৪৩ টাকা, একই ধরনের দেশি বিআর আটাশ চাল ৪৫-৪৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সরু চালের মধ্যে মিনিকেট মান ও ব্র্যান্ডভেদে ৪৯ থেকে ৫৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে অবশ্য নতুন করে দাম কমেনি। সেখানে মোটা চাল কেজিপ্রতি ৪৩-৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

জানতে চাইলে মোহাম্মদপুরের চাল আমদানিকারক শরিফুল ইসলাম বাঙালী কণ্ঠ কে বলেন, চালের দাম আরেকটু কমবে। কারণ স্থলবন্দরের ভারতীয় অংশে ট্রাকের জট এখনো কমেনি। বন্দরে জট কমলে বাজারে প্রভাব পড়বে।

যশোরের বেনাপোল বন্দরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে গতকাল প্রতি কেজি মোটা চালের দর ছিল ৩৭ টাকা। অন্যদিকে রত্না নামের মাঝারি মানের চাল ৩৮ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি হয়েছে। এই চাল ভারতীয় স্বর্ণা চালের চেয়ে কিছুটা লম্বা ও সরু। ভারত থেকে মিনিকেট চালও আসছে, বেনাপোলে কেজিপ্রতি দাম চাওয়া হচ্ছে ৪৭ টাকা। ওই স্থলবন্দরকেন্দ্রিক আমদানিকারক রহমত উল্লাহ বাঙালী কণ্ঠ কে বলেন, গত কয়েক দিনে দাম কিছুটা কমেছে।

বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়েই এখন বেশির ভাগ ভারতীয় চাল আমদানি হচ্ছে। এ দুটি বন্দরকেন্দ্রিক একটি ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট প্রতিষ্ঠানের মালিক রফিকুল ইসলাম বাঙালী কণ্ঠ কে বলেন, শুল্ক কমানোর পর চাল আমদানিতে ব্যবসায়ীদের লাভ হচ্ছে। এতে আমদানিতে আগ্রহ বেশ বেড়েছে। তিনি বলেন, প্রতি ১০০ টনের চালানে এখন শুল্ক আসছে প্রায় ৩৭ হাজার টাকা, যা ১০ শতাংশ শুল্কের সময় সোয়া ৩ লাখ টাকার মতো লাগত।

দেশি চালের বাজার সম্পর্কে বাবুবাজারের শিল্পী রাইস এজেন্সির মালিক কাওসার রহমান বলেন, মিলমালিকেরা আশা করছেন ঈদের পরে চালের দাম বাড়বে। এ কারণে তাঁরা এখন চালের দামই বলছেন না। ধানের দাম বেশি হওয়ায় তাঁদের চাল উৎপাদনে খরচ বেশি পড়েছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

চাল আমদানি বাড়ছে, দামও কিছুটা কমেছে

আপডেট টাইম : ১১:২৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অগাস্ট ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রাজধানীর পাইকারি বাজারে চালের দাম আরও কিছুটা কমেছে। মোটা চালের পাশাপাশি আমদানি শুরু হয়েছে মাঝারি মানের চালও। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সর্বশেষ দফায় আমদানি শুল্ক আরও কমিয়ে ফেলায় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অবশ্য সরু চাল আমদানি খুব বেশি শুরু হয়নি।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের চালের আড়তগুলোতে গতকাল মঙ্গলবার প্রতি কেজি ভারতীয় স্বর্ণা নামের মোটা চাল ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়, যা কিছুদিন আগেও কেজিপ্রতি ৪১ থেকে ৪২ টাকা ছিল। অন্যদিকে নতুন আসা ভারতীয় রত্না নামের মাঝারি মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৩ টাকা কেজি দরে।

ঢাকার পাইকারি বাজারে আমদানি করা চাল আসছে মূলত ভারত থেকে। ভারতকেন্দ্রিক আমদানিকারকদের মধ্যে চাল আমদানির বেশ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাইতে শুরু হওয়া চলতি অর্থবছরের প্রথম ১ মাস ১২ দিনে ৫ লাখ ৪০ হাজার টন চাল আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে এবং আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার টন চাল। এর আগের পুরো এক বছরে আমদানি হয়েছিল ১ লাখ ৮৮ হাজার টন চাল।

কৃষি মার্কেটে গতকাল গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন দোকানে ভারতীয় নুরজাহান ও এবি ব্র্যান্ডের চালের বস্তা। বিক্রেতারা জানান, প্রথম দফায় চালের আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করার পর ভারতীয় মোটা চাল আমদানি শুরু হয়। এই চালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৪১ থেকে ৪২ টাকা। এরপর চালের শুল্ক আরও কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করার পর দাম আরও ২ টাকা কমেছে।

গত ১৭ আগস্ট চাল আমদানির শুল্ক ২ শতাংশ নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর। গত বোরো মৌসুমে উৎপাদন কমে যাওয়া এবং বন্যার কারণে দীর্ঘদিন পরে চাল আমদানিতে উৎসাহ দিচ্ছে সরকার।

সার্বিকভাবে মোহাম্মদপুর ও বাবুবাজার-বাদামতলীর পাইকারি বাজারে মোটা চালের মধ্যে দেশি হাইব্রিড ৩৬-৩৭ টাকা, ভারতীয় স্বর্ণা ৩৮-৪০ টাকা ও দেশি স্বর্ণা ৪১-৪৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় নতুন আসা মাঝারি মানের রত্না চাল ৪৩ টাকা, একই ধরনের দেশি বিআর আটাশ চাল ৪৫-৪৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সরু চালের মধ্যে মিনিকেট মান ও ব্র্যান্ডভেদে ৪৯ থেকে ৫৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে অবশ্য নতুন করে দাম কমেনি। সেখানে মোটা চাল কেজিপ্রতি ৪৩-৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

জানতে চাইলে মোহাম্মদপুরের চাল আমদানিকারক শরিফুল ইসলাম বাঙালী কণ্ঠ কে বলেন, চালের দাম আরেকটু কমবে। কারণ স্থলবন্দরের ভারতীয় অংশে ট্রাকের জট এখনো কমেনি। বন্দরে জট কমলে বাজারে প্রভাব পড়বে।

যশোরের বেনাপোল বন্দরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে গতকাল প্রতি কেজি মোটা চালের দর ছিল ৩৭ টাকা। অন্যদিকে রত্না নামের মাঝারি মানের চাল ৩৮ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি হয়েছে। এই চাল ভারতীয় স্বর্ণা চালের চেয়ে কিছুটা লম্বা ও সরু। ভারত থেকে মিনিকেট চালও আসছে, বেনাপোলে কেজিপ্রতি দাম চাওয়া হচ্ছে ৪৭ টাকা। ওই স্থলবন্দরকেন্দ্রিক আমদানিকারক রহমত উল্লাহ বাঙালী কণ্ঠ কে বলেন, গত কয়েক দিনে দাম কিছুটা কমেছে।

বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়েই এখন বেশির ভাগ ভারতীয় চাল আমদানি হচ্ছে। এ দুটি বন্দরকেন্দ্রিক একটি ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট প্রতিষ্ঠানের মালিক রফিকুল ইসলাম বাঙালী কণ্ঠ কে বলেন, শুল্ক কমানোর পর চাল আমদানিতে ব্যবসায়ীদের লাভ হচ্ছে। এতে আমদানিতে আগ্রহ বেশ বেড়েছে। তিনি বলেন, প্রতি ১০০ টনের চালানে এখন শুল্ক আসছে প্রায় ৩৭ হাজার টাকা, যা ১০ শতাংশ শুল্কের সময় সোয়া ৩ লাখ টাকার মতো লাগত।

দেশি চালের বাজার সম্পর্কে বাবুবাজারের শিল্পী রাইস এজেন্সির মালিক কাওসার রহমান বলেন, মিলমালিকেরা আশা করছেন ঈদের পরে চালের দাম বাড়বে। এ কারণে তাঁরা এখন চালের দামই বলছেন না। ধানের দাম বেশি হওয়ায় তাঁদের চাল উৎপাদনে খরচ বেশি পড়েছে।