বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রাজধানীর বনানী থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের নিরাপত্তা ও সৌন্দর্যের চলমান কাজের প্রস্তাব নাকচ করে নতুন করে প্রকল্প তৈরির নির্দেশনা দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় বনানী-টঙ্গী-জয়দেবপুর মহাসড়কের বনানী রেলক্রসিং হতে এয়ারপোর্ট মোড় পর্যন্ত উভয় পাশে ছয় কিলোমিটার সৌন্দর্য বর্ধন কাজ সম্পাদনের একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিল সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। কমিটি সে প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রস্তাবনায় বলা হয়- বনানী-টঙ্গী-জয়দেবপুর মহাসড়কের বনানী রেলক্রসিং হতে এয়ারপোর্ট মোড় পর্যন্ত মহাসড়কটি এয়ারপোর্ট সড়ক নামে পরিচিতি। এ সড়কে প্রতিদিন বিদেশি ভিভিআইপি, ভিআইপিসহ সাধারণ মানুষ যাতায়াত করে। কিন্তু সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ক্ষুদ্র আরবরিকালচার ইউনিট দ্বারা সড়কটির সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ সঠিকভাবে করা সম্ভব হচ্ছিল না। ৯০ দশকের করা কাজের সঙ্গে আধুনিক সুবিধা যোগ করে যুগোপযোগী করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ প্রেক্ষিতে মহাসড়কটির রক্ষণাবেক্ষণ ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য স্পন্সর নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর দরপত্রের মাধ্যমে বনানী-এয়ারপোর্ট মোড় পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার মহাসড়কাংশটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ১০ বছর মেয়াদে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রতিষ্ঠান ব্যয় করবে ৯০ কোটি ২২ লাখ ৪২ হাজার টাকা। আর এলইডি ডিসপ্লে বোর্ড, ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড, ডিজিটাল বিলবোর্ড ইত্যাদি স্থাপনের মাধ্যমে ৯৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকার আর্থিক সুবিধা নেবে প্রতিষ্ঠানটি।

মন্ত্রিসভা কমিটি প্রস্তাবনাটি পর্যালোচনা করে পুনরায় পাঠানোর জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ নির্দেশনা দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বনানী-এয়ারপোর্ট মোড় পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার মহাসড়কাংশটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ১০ বছর মেয়াদে স্পন্সর প্রতিষ্ঠান দ্বারা সম্পাদনের প্রস্তাবটি অনুমোদন দেয়নি। নতুন করে প্রস্তাবণা তৈরি করতে বলা হয়েছে।’

এদিকে, স্পন্সর প্রতিষ্ঠান ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপ মহাসড়কাংশটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সৌন্দর্য বর্ধনে এগিয়ে এসেছে। অধিকাংশ স্থানে উঠে গেছে নিরাপত্তা দেওয়ালের মূল কাঠামো। বাকি অংশের দেয়ালও নির্মাণাধীন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রকল্পের সূচনা করেন। এরই মধ্যে বেশ এগিয়েছে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ।

যদিও প্রকল্পটির শুরুতেই বনসাই গাছ লাগানো নিয়ে তোপের মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। অভিযোগ উঠে- ‘আসল’ গাছ কেটে ‘নকল’ গাছ লাগানোর। সড়কের ধারের কৃষ্ণচূড়া, রাঁধাচূড়া এবং অন্যান্য নানা জাতের গাছ কেটে বিদেশ থেকে আমদানি করা বনসাই গাছ লাগানো হয়েছে। এতে রাস্তার ধারের সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্দেশ্য কতটুকু পূরণ হয়েছে সে প্রশ্ন উঠেছে। পরবর্তীকালে বনসাই লাগানো বন্ধের নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়।

গত জুন মাসে মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে জানায়, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর বিমানবন্দর সড়কে সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় সাড়ে ৫ লাখ গাছের চারা লাগানো হবে। দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও শোভাবর্ধক গাছ লাগানোর মধ্য দিয়ে এ সড়কের দুই পাশ সবুজায়ন করা হবে।

সূত্র জানায়, মহাসড়টির পাশে থাকবে দীর্ঘ ছয় কিলোমিটার পরিচ্ছন্ন হাঁটা পথ। যে পথের ওপরই রঙিন ঘাসের ওপরে মাথা তুলবে বনসাঁই-বট, ঝাউ আর রকমারি ফুলের গাছ। রাতে মাথার ওপরে স্নিগ্ধ আলো ছড়াবে ঝাড়বাতি আকৃতির ল্যাম্প পোস্ট। থাকবে নিরাপত্তা দেওয়াল। ৪ থেকে ৭ ফুট উচ্চতার এই দেওয়াল বসবে সড়কের উত্তর পাশে। সে দেওয়াল আবার মোড়ানো থাকবে সবুজ লতায়। এর ওপর দিয়ে দেখা যাবে জোড়া লাইনে ট্রেনের আসা-যাওয়া। কিন্তু দেওয়াল অতিক্রম করে বাইরে থেকে ভেতরে বা ভেতর থেকে বাইরে যাওয়া সম্ভব হবে না। তাই দিন-দুপুর কি রাত-বিরেতে নিশ্চিত মনে হাঁটা যাবে ফুটপাতে।