ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২০০ কোটি টাকা রপ্তানি আয়ের সম্ভাবনা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ কোরবানির পশুর ফেলে দেয়া হাড়, শিংসহ উচ্ছিষ্ট রপ্তানি করে উপার্জিত হচ্ছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। এসব বর্জ্যের বড় বাজার হলো থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, চীন ও জাপান। বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, গত বছর পশুর বর্জ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১৭০ কোটি টাকারও বেশি। এ বছর এর পরিমাণ ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও প্রচার নিশ্চিত করা গেলে কোরবানির পশুর বর্জ্য হয়ে উঠতে পারে দেশের অর্থনীতির অন্যতম একটি খাত। দেশব্যাপী পর্যাপ্ত সংগ্রহশালা করতে পারলে হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। তবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না বলে এ খাতের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ।
জানা গেছে, ওষুধ ক্যাপসুলের কাভার, অপারেশনের সুতা, বিভিন্ন ধরনের শিল্পের অন্যতম কাঁচামালসহ নানা প্রয়োজনীয় পণ্য তৈরি হয় পশুর এসব উচ্ছিষ্ট অঙ্গ দিয়ে। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা কিংবা প্রচার না থাকায় গবাদি পশুর হাড়গোড়, ক্ষুর, শিং, লেজ কিংবা রক্ত শত কোটি টাকার সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতার অভাবে স্থান পায় ডাস্টবিনে। সরকার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিলে পরিবেশ দূষণ কমার পাশাপাশি অর্জন হবে বৈদেশিক মুদ্রাও।
মাংস ব্যবসায়ী সমিতি জানায়, ঈদে কোরবানি দেয়া গরু-মহিষের প্রতিটা অণ্ডকোষ ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে ক্রয় করা হয়েছে। রোদে শুকানোর পরে একশ’ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হবে এ বর্জ্যটি। সমিতি বলছে, এ বছর কোরবানি হওয়া গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, উট ও দুম্বা থেকে গত বছরের মতোই দেড় থেকে দুই হাজার মণ হাড়সহ অন্য বর্জ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। এদিকে কোরবানিকে ঘিরে পশুর এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহে ব্যস্ত ছিল অনেকেই। তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এগুলো সংগ্রহের পর ৩ টাকা কেজি দরে হাড় এবং পাকস্থলী ১২০ টাকা, শিং ১০০ টাকা, চোয়ালের হাড় ৩ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করেন। সমিতির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর শুধু কোরবানির পশু থেকে ১ হাজার মণ হাড়, ছয় হাজার কেজি যৌনাঙ্গ ও পাঁচশ’ মণ গোল্লা (নাড়িভুঁড়ি) সংগ্রহ করা হয়েছিল। সাধারণভাবে সমিতি সারাদেশ থেকে মাসে আড়াইশ’ মণ হাড় সংগ্রহ করতে পারে। সেই হিসাবে বছরজুড়ে সংগ্রহ করা হাড়ের এক-তৃতীয়াংশই আসে কোরবানির সময়।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ১৭০ কোটি টাকার পশুর হাড়, যৌনাঙ্গ ও গোল্লা বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। এবার বাংলাদেশ থেকে ২০০ কোটি টাকার সমমূল্যের নাড়িভুঁড়ি রপ্তানির আশা করা হচ্ছে। এসব পণ্যের বেশির ভাগ রপ্তানি হচ্ছে চীন, হংকং, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে। ইপিবি’র এক কর্মকর্তা বলেন, এখন শুধু ঢাকায় নাড়িভুঁড়ি সংরক্ষণ করে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। কিন্তু ঢাকার বাইরেরগুলো রপ্তানি করা হয় না। কারণ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। এসব সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে আরো অধিক পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
জানা গেছে, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, জাপান ও চীনে গরু মহিষের যৌনাঙ্গ, পেনিস বা লিঙ্গ অত্যন্ত দামি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এসব দেশে পশুর একেকটি যৌনাঙ্গ ৬ থেকে ৭ ডলারেও বিক্রি হয়। এর বাইরে গরু-মহিষের দাঁত ও হাড় থেকে তৈরি হয় ক্যাপসুলের কাভার। এ ছাড়া ট্যানারি থেকে পাওয়া উচ্ছিষ্ট চামড়া দিয়ে তৈরি জুতার সোল ও প্রক্রিয়াজাত করা চামড়ার ফেলে দেয়া অংশ থেকে সিরিশ কাগজ তৈরি হয়। অন্যদিকে পশুর রক্ত সংগ্রহের পর তা সেদ্ধ করা হয় এবং শুকিয়ে গুঁড়ো করা হয়। পরে সেই গুঁড়োর সঙ্গে শুঁটকি মাছ, সয়াবিন তেল ও যব মিলিয়ে তৈরি দানাদার মিশ্রণ ব্যবহার করা হয় মুরগি ও পাখির খাবারের জন্য। পশুর চর্বি দিয়ে তৈরি হয় সাবান। আর শিং থেকে তৈরি হয় বোতাম ও চিরুনি। আবার মহিষের শিংয়ের ডগা ব্যবহার করে জাপানে এক ধরনের খেলনা তৈরি করা হয়। গরু ও মহিষের নাড়ি প্রক্রিয়া করে মানুষের খাবারও তৈরি করা হয়। জাপানের জনপ্রিয় ও দামি ‘শোস্যাট রোল’ নামের খাবারটিও গরু ও মহিষের নাড়িভুঁড়ি দিয়েই তৈরি।
জানা গেছে, রাজধানীতে রয়েছে পশুর বর্জ্যের বিশাল বাজার। বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরায় ও হাসনাবাদ এলাকায় এ দুটি বাজার। আগে কেবল ঢাকার আশপাশ থেকে এই বাজারে শিং ও হাড় এলেও এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই এই বাজারে আসছে গরু-মহিষের শিং ও হাড়। এখানে প্রতিমণ শিং ৬০০ টাকা ও প্রতিমণ হাড় বিক্রি হয় ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে। এখান থেকে কেনা হাড় ও শিং চলে যায় বিভিন্ন দেশে।
বাংলাদেশ মাংস বিক্রেতা সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, বর্জ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতের বিষয়ে উৎসাহিত করতে পারলে এই খাত থেকে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। বিশেষ করে গণমাধ্যমে এ বিষয়টি ঠিকভাবে উঠে এলে কেউ আর পশুর বর্জ্য ফেলে দেবে না।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

২০০ কোটি টাকা রপ্তানি আয়ের সম্ভাবনা

আপডেট টাইম : ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ কোরবানির পশুর ফেলে দেয়া হাড়, শিংসহ উচ্ছিষ্ট রপ্তানি করে উপার্জিত হচ্ছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। এসব বর্জ্যের বড় বাজার হলো থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, চীন ও জাপান। বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, গত বছর পশুর বর্জ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১৭০ কোটি টাকারও বেশি। এ বছর এর পরিমাণ ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও প্রচার নিশ্চিত করা গেলে কোরবানির পশুর বর্জ্য হয়ে উঠতে পারে দেশের অর্থনীতির অন্যতম একটি খাত। দেশব্যাপী পর্যাপ্ত সংগ্রহশালা করতে পারলে হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। তবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না বলে এ খাতের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ।
জানা গেছে, ওষুধ ক্যাপসুলের কাভার, অপারেশনের সুতা, বিভিন্ন ধরনের শিল্পের অন্যতম কাঁচামালসহ নানা প্রয়োজনীয় পণ্য তৈরি হয় পশুর এসব উচ্ছিষ্ট অঙ্গ দিয়ে। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা কিংবা প্রচার না থাকায় গবাদি পশুর হাড়গোড়, ক্ষুর, শিং, লেজ কিংবা রক্ত শত কোটি টাকার সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতার অভাবে স্থান পায় ডাস্টবিনে। সরকার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিলে পরিবেশ দূষণ কমার পাশাপাশি অর্জন হবে বৈদেশিক মুদ্রাও।
মাংস ব্যবসায়ী সমিতি জানায়, ঈদে কোরবানি দেয়া গরু-মহিষের প্রতিটা অণ্ডকোষ ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে ক্রয় করা হয়েছে। রোদে শুকানোর পরে একশ’ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হবে এ বর্জ্যটি। সমিতি বলছে, এ বছর কোরবানি হওয়া গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, উট ও দুম্বা থেকে গত বছরের মতোই দেড় থেকে দুই হাজার মণ হাড়সহ অন্য বর্জ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। এদিকে কোরবানিকে ঘিরে পশুর এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহে ব্যস্ত ছিল অনেকেই। তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এগুলো সংগ্রহের পর ৩ টাকা কেজি দরে হাড় এবং পাকস্থলী ১২০ টাকা, শিং ১০০ টাকা, চোয়ালের হাড় ৩ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করেন। সমিতির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর শুধু কোরবানির পশু থেকে ১ হাজার মণ হাড়, ছয় হাজার কেজি যৌনাঙ্গ ও পাঁচশ’ মণ গোল্লা (নাড়িভুঁড়ি) সংগ্রহ করা হয়েছিল। সাধারণভাবে সমিতি সারাদেশ থেকে মাসে আড়াইশ’ মণ হাড় সংগ্রহ করতে পারে। সেই হিসাবে বছরজুড়ে সংগ্রহ করা হাড়ের এক-তৃতীয়াংশই আসে কোরবানির সময়।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ১৭০ কোটি টাকার পশুর হাড়, যৌনাঙ্গ ও গোল্লা বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। এবার বাংলাদেশ থেকে ২০০ কোটি টাকার সমমূল্যের নাড়িভুঁড়ি রপ্তানির আশা করা হচ্ছে। এসব পণ্যের বেশির ভাগ রপ্তানি হচ্ছে চীন, হংকং, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে। ইপিবি’র এক কর্মকর্তা বলেন, এখন শুধু ঢাকায় নাড়িভুঁড়ি সংরক্ষণ করে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। কিন্তু ঢাকার বাইরেরগুলো রপ্তানি করা হয় না। কারণ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। এসব সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে আরো অধিক পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
জানা গেছে, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, জাপান ও চীনে গরু মহিষের যৌনাঙ্গ, পেনিস বা লিঙ্গ অত্যন্ত দামি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এসব দেশে পশুর একেকটি যৌনাঙ্গ ৬ থেকে ৭ ডলারেও বিক্রি হয়। এর বাইরে গরু-মহিষের দাঁত ও হাড় থেকে তৈরি হয় ক্যাপসুলের কাভার। এ ছাড়া ট্যানারি থেকে পাওয়া উচ্ছিষ্ট চামড়া দিয়ে তৈরি জুতার সোল ও প্রক্রিয়াজাত করা চামড়ার ফেলে দেয়া অংশ থেকে সিরিশ কাগজ তৈরি হয়। অন্যদিকে পশুর রক্ত সংগ্রহের পর তা সেদ্ধ করা হয় এবং শুকিয়ে গুঁড়ো করা হয়। পরে সেই গুঁড়োর সঙ্গে শুঁটকি মাছ, সয়াবিন তেল ও যব মিলিয়ে তৈরি দানাদার মিশ্রণ ব্যবহার করা হয় মুরগি ও পাখির খাবারের জন্য। পশুর চর্বি দিয়ে তৈরি হয় সাবান। আর শিং থেকে তৈরি হয় বোতাম ও চিরুনি। আবার মহিষের শিংয়ের ডগা ব্যবহার করে জাপানে এক ধরনের খেলনা তৈরি করা হয়। গরু ও মহিষের নাড়ি প্রক্রিয়া করে মানুষের খাবারও তৈরি করা হয়। জাপানের জনপ্রিয় ও দামি ‘শোস্যাট রোল’ নামের খাবারটিও গরু ও মহিষের নাড়িভুঁড়ি দিয়েই তৈরি।
জানা গেছে, রাজধানীতে রয়েছে পশুর বর্জ্যের বিশাল বাজার। বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরায় ও হাসনাবাদ এলাকায় এ দুটি বাজার। আগে কেবল ঢাকার আশপাশ থেকে এই বাজারে শিং ও হাড় এলেও এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই এই বাজারে আসছে গরু-মহিষের শিং ও হাড়। এখানে প্রতিমণ শিং ৬০০ টাকা ও প্রতিমণ হাড় বিক্রি হয় ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে। এখান থেকে কেনা হাড় ও শিং চলে যায় বিভিন্ন দেশে।
বাংলাদেশ মাংস বিক্রেতা সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, বর্জ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতের বিষয়ে উৎসাহিত করতে পারলে এই খাত থেকে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। বিশেষ করে গণমাধ্যমে এ বিষয়টি ঠিকভাবে উঠে এলে কেউ আর পশুর বর্জ্য ফেলে দেবে না।