ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পেঁয়াজের ঝাঁজ, মরিচের ঝাল বেড়েছে

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পেঁয়াজের দামে চলছে লাফালাফি। এই বাড়ে তো এই কমে, এই কমে তো এই বাড়ে। তবে দামের ঝাঁজটা সেই যে বেড়েছে, তেমনি আছে। কমছে না মোটেও। আর মরিচের ঝালও কি কম? ক্রেতা মুখে তুলবেন কী, দামের ঝালেই লাল!
আজ সোমবার কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজের আড়াতে বিদ্যুতের আলোয় ঝিলিক দিচ্ছিল স্তূপ করে রাখা পেঁয়াজগুলো। বস্তায় করে থরে থরে সাজানো রয়েছে পেঁয়াজ। জামাল মিয়ার আড়তে বসে হিসাব-কিতাব নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন পেঁয়াজের ব্যাপারী মো. রতন মিয়া। তিনি বলেন, ‘পিঁয়াইজের (পেঁয়াজ) দাম ঠিক থাকছে না। গত সপ্তাহের মঙ্গল ও বুধবার দেশি পিঁয়াইজ বেচলাম ৫৩-৫৪ টাকা দরে। আইজ এই পিঁয়াইজ বেচছি ৬৩-৬৪ টাকায়। ইন্ডিয়ান (ভারতীয়) মোটা পিঁয়াইজ ছিল ৪৬-৪৭ টাকা, আর ইন্ডিয়ান লম্বা পিঁয়াইজ ছিল ৪৭-৪৮ টাকা। আইজ দাম হইসে ৫৩-৫৪ টাকা।’

দাম বাড়ার কারণ কী শুধুই বৃষ্টি? রতন মিয়া বলেন, ‘বৃষ্টিতে না, ইন্ডিয়াতেই পিঁয়াইজের দাম এখন বাড়তির দিকে। এর জন্য দেশি পিঁয়াইজেও টান পড়ছে। আর এই টানে দেশি আর ইন্ডিয়ান মিলাইয়া সব পিঁয়াইজে দাম বাড়ছে।’

রতন মিয়াসহ বেশ কয়েকজন পেঁয়াজের ব্যাপারীর ভাষ্য, কারওয়ান বাজারে দেশি পেঁয়াজের চালান বেশি আসে ফরিদপুর ও পাবনা থেকে। কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, শরীয়তপুর জেলা থেকে দেশি পেঁয়াজ আসে। এসব জেলার হাটগুলো থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করে ঢাকায় আনা হয়। কিন্তু হাটেই পেঁয়াজের দাম চড়া। আজ পাবনায় ৪০ কেজির পেঁয়াজের বস্তার দাম পড়ছে দুই হাজার ৩০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা। আড়ত চার্জ, শ্রমিক, পরিবহন, বস্তা, বস্তা বাঁধার সুতাসহ এক বস্তা পেঁয়াজ কারওয়ান বাজার পর্যন্ত আনতে খরচ পড়ছে আরও ২০০ টাকা।

আড়তদারদের মতে, পেঁয়াজের দাম আর খুব একটা বাড়বে না। আপাতত দাম কমারও সম্ভাবনা নেই। নতুন পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত দাম এমনই থাকবে। বৃষ্টি বেশি হওয়ায় চাষিরাও তো দেরি করে পেঁয়াজ চাষ শুরু করবে। এসব কারণেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে।

পাইকারি বাজারে চেয়ে খুচরা বাজারের পরিস্থিতি আরও অন্য রকম। কেজি প্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা করে দাম বেশি। কারওয়ান বাজার থেকে পেঁয়াজে কিনে মিরপুর-১০ নম্বর বাজারে আনেন সিরাজুল ইসলাম নামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি এখন ৭০ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মূল্য তালিকায়ও এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়ে গেছে।

কাঁচামরিচ: কলাবাগানের বশিরউদ্দিন রোডের একটি হোস্টেল পরিচালনা করেন মো. সুমন নামে এক যুবক। কারওয়ান বাজারে থেকে শাকসবজি, মাছ-মাংস কিনে থাকেন তিনি। পণ্যের তালিকায় সব সময় থাকে কাঁচামরিচ। কিন্তু আজ দেখা গেল, কাঁচাবাজারের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরে ঘুরে কাঁচামরিচের দাম যাচাই করছেন সুমন। কাঁচামরিচের ব্যাপারী মো. মিলন মিয়ার আড়ত থেকে এক পাল্লা (পাঁচ কেজি) কাঁচামরিচ কেনার সময় ভুরু কুঁচকে ছিলেন তিনি। সুমন বলেন, পাঁচ কেজির দাম এক হাজার টাকা। এক কেজি কাঁচামরিচের পাইকারি মূল্য ২০০ টাকা। এই দামে মরিচ কিনলে চেহারা এমন হবে না তো কী হবে? প্রতি পাল্লার দাম ছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা।

কয়েক দিনের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম বেড়ে যাওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ জানালেন সুমনের পাশে দাঁড়ানো মিলন মিয়া। তিনি বলেন, ‘দেশের বাজারে থেকে জোগান যা-ই হোক না কেন, ভারতীয় কাঁচামরিচেই দাম ওঠা-নামা করে। সকালে বাড়ে তো দুপুরে কমে যায়। আবার বিকেলে বাড়লে রাতে দাম কমে।’

বৃষ্টির কারণে বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত ভারতীয় কাঁচামরিচবাহী ট্রাক কারওয়ান বাজারে আসেনি। তাই গতকাল দেশি ভালো মানের কাঁচামরিচের এক পাল্লার দাম উঠে ১২০০ টাকা। আজ সকালে তিনটি ট্রাকে করে ভারতীয় কাঁচামরিচ। তাই দেশি কাঁচামরিচের দাম কমে ১০০০ টাকা হয়েছে বলে জানান মিলন মিয়া।

মিলন মিয়া বলেন, কাঁচামরিচ বড়ই অন্য রকমের। শীতের সময় ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা কেজি হিসেবে এক পাল্লার দাম ৭৫ টাকা থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। আবার বৃষ্টিবাদলের সময় এক কেজি কাঁচামরিচের দাম ২৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

বাজারে দেশি ও ভারতীয় ছাড়াও দেশি হাইব্রিড কাঁচামরিচ বিক্রি হয়ে থাকে। এর দাম রাখা হচ্ছে ৯০০ টাকা এক পাল্লা। কারওয়ান বাজারের কাঁচামরিচের ব্যাপারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্রেতাদের কাছে বগুড়ার কাঁচামরিচের কদর বেশি। তবে খুব মানুষই দেশি-ভারতীয় আর হাইব্রিডের পার্থক্য ধরতে পারেন। দেশি কাঁচামরিচে জোগান আসে বগুড়া থেকে বেশি। এ ছাড়া নওগাঁ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা থেকে আসে মরিচ। ঝাল বেশি থাকায় জামালপুরের কাঁচামরিচও ক্রেতারা খুঁজে থাকেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

পেঁয়াজের ঝাঁজ, মরিচের ঝাল বেড়েছে

আপডেট টাইম : ০৯:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পেঁয়াজের দামে চলছে লাফালাফি। এই বাড়ে তো এই কমে, এই কমে তো এই বাড়ে। তবে দামের ঝাঁজটা সেই যে বেড়েছে, তেমনি আছে। কমছে না মোটেও। আর মরিচের ঝালও কি কম? ক্রেতা মুখে তুলবেন কী, দামের ঝালেই লাল!
আজ সোমবার কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজের আড়াতে বিদ্যুতের আলোয় ঝিলিক দিচ্ছিল স্তূপ করে রাখা পেঁয়াজগুলো। বস্তায় করে থরে থরে সাজানো রয়েছে পেঁয়াজ। জামাল মিয়ার আড়তে বসে হিসাব-কিতাব নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন পেঁয়াজের ব্যাপারী মো. রতন মিয়া। তিনি বলেন, ‘পিঁয়াইজের (পেঁয়াজ) দাম ঠিক থাকছে না। গত সপ্তাহের মঙ্গল ও বুধবার দেশি পিঁয়াইজ বেচলাম ৫৩-৫৪ টাকা দরে। আইজ এই পিঁয়াইজ বেচছি ৬৩-৬৪ টাকায়। ইন্ডিয়ান (ভারতীয়) মোটা পিঁয়াইজ ছিল ৪৬-৪৭ টাকা, আর ইন্ডিয়ান লম্বা পিঁয়াইজ ছিল ৪৭-৪৮ টাকা। আইজ দাম হইসে ৫৩-৫৪ টাকা।’

দাম বাড়ার কারণ কী শুধুই বৃষ্টি? রতন মিয়া বলেন, ‘বৃষ্টিতে না, ইন্ডিয়াতেই পিঁয়াইজের দাম এখন বাড়তির দিকে। এর জন্য দেশি পিঁয়াইজেও টান পড়ছে। আর এই টানে দেশি আর ইন্ডিয়ান মিলাইয়া সব পিঁয়াইজে দাম বাড়ছে।’

রতন মিয়াসহ বেশ কয়েকজন পেঁয়াজের ব্যাপারীর ভাষ্য, কারওয়ান বাজারে দেশি পেঁয়াজের চালান বেশি আসে ফরিদপুর ও পাবনা থেকে। কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, শরীয়তপুর জেলা থেকে দেশি পেঁয়াজ আসে। এসব জেলার হাটগুলো থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করে ঢাকায় আনা হয়। কিন্তু হাটেই পেঁয়াজের দাম চড়া। আজ পাবনায় ৪০ কেজির পেঁয়াজের বস্তার দাম পড়ছে দুই হাজার ৩০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা। আড়ত চার্জ, শ্রমিক, পরিবহন, বস্তা, বস্তা বাঁধার সুতাসহ এক বস্তা পেঁয়াজ কারওয়ান বাজার পর্যন্ত আনতে খরচ পড়ছে আরও ২০০ টাকা।

আড়তদারদের মতে, পেঁয়াজের দাম আর খুব একটা বাড়বে না। আপাতত দাম কমারও সম্ভাবনা নেই। নতুন পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত দাম এমনই থাকবে। বৃষ্টি বেশি হওয়ায় চাষিরাও তো দেরি করে পেঁয়াজ চাষ শুরু করবে। এসব কারণেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে।

পাইকারি বাজারে চেয়ে খুচরা বাজারের পরিস্থিতি আরও অন্য রকম। কেজি প্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা করে দাম বেশি। কারওয়ান বাজার থেকে পেঁয়াজে কিনে মিরপুর-১০ নম্বর বাজারে আনেন সিরাজুল ইসলাম নামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি এখন ৭০ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মূল্য তালিকায়ও এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়ে গেছে।

কাঁচামরিচ: কলাবাগানের বশিরউদ্দিন রোডের একটি হোস্টেল পরিচালনা করেন মো. সুমন নামে এক যুবক। কারওয়ান বাজারে থেকে শাকসবজি, মাছ-মাংস কিনে থাকেন তিনি। পণ্যের তালিকায় সব সময় থাকে কাঁচামরিচ। কিন্তু আজ দেখা গেল, কাঁচাবাজারের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরে ঘুরে কাঁচামরিচের দাম যাচাই করছেন সুমন। কাঁচামরিচের ব্যাপারী মো. মিলন মিয়ার আড়ত থেকে এক পাল্লা (পাঁচ কেজি) কাঁচামরিচ কেনার সময় ভুরু কুঁচকে ছিলেন তিনি। সুমন বলেন, পাঁচ কেজির দাম এক হাজার টাকা। এক কেজি কাঁচামরিচের পাইকারি মূল্য ২০০ টাকা। এই দামে মরিচ কিনলে চেহারা এমন হবে না তো কী হবে? প্রতি পাল্লার দাম ছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা।

কয়েক দিনের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম বেড়ে যাওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ জানালেন সুমনের পাশে দাঁড়ানো মিলন মিয়া। তিনি বলেন, ‘দেশের বাজারে থেকে জোগান যা-ই হোক না কেন, ভারতীয় কাঁচামরিচেই দাম ওঠা-নামা করে। সকালে বাড়ে তো দুপুরে কমে যায়। আবার বিকেলে বাড়লে রাতে দাম কমে।’

বৃষ্টির কারণে বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত ভারতীয় কাঁচামরিচবাহী ট্রাক কারওয়ান বাজারে আসেনি। তাই গতকাল দেশি ভালো মানের কাঁচামরিচের এক পাল্লার দাম উঠে ১২০০ টাকা। আজ সকালে তিনটি ট্রাকে করে ভারতীয় কাঁচামরিচ। তাই দেশি কাঁচামরিচের দাম কমে ১০০০ টাকা হয়েছে বলে জানান মিলন মিয়া।

মিলন মিয়া বলেন, কাঁচামরিচ বড়ই অন্য রকমের। শীতের সময় ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা কেজি হিসেবে এক পাল্লার দাম ৭৫ টাকা থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। আবার বৃষ্টিবাদলের সময় এক কেজি কাঁচামরিচের দাম ২৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

বাজারে দেশি ও ভারতীয় ছাড়াও দেশি হাইব্রিড কাঁচামরিচ বিক্রি হয়ে থাকে। এর দাম রাখা হচ্ছে ৯০০ টাকা এক পাল্লা। কারওয়ান বাজারের কাঁচামরিচের ব্যাপারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্রেতাদের কাছে বগুড়ার কাঁচামরিচের কদর বেশি। তবে খুব মানুষই দেশি-ভারতীয় আর হাইব্রিডের পার্থক্য ধরতে পারেন। দেশি কাঁচামরিচে জোগান আসে বগুড়া থেকে বেশি। এ ছাড়া নওগাঁ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা থেকে আসে মরিচ। ঝাল বেশি থাকায় জামালপুরের কাঁচামরিচও ক্রেতারা খুঁজে থাকেন।