বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ দেশের চাহিদা মেটাতে আরো আড়াই লাখ টন চাল আমদানি করা হচ্ছে। এর মধ্যে সরকার থেকে সরকার (জি-টু-জি) পদ্ধতিতে থাইল্যান্ড থেকে দেড় লাখ টন নন-বাসমতী সিদ্ধ চাল আমদানি করছে সরকার। আর জাতীয় উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ১৭টি প্রতিষ্ঠান আমদানি করবে এক লাখ টন নন-বাসমতী সিদ্ধ চাল। আড়াই লাখ টন চাল আমদানিতে মোট ব্যয় হবে প্রায় এক হাজার ১৭ লাখ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে অনুষ্ঠিতব্য সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অনুমোদনের জন্য এ-সংক্রান্ত দুটি পৃথক ক্রয়প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন কমিটির আহ্বায়ক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অনুমোদনের জন্য এই ক্রয় প্রস্তাবের সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে, প্রতি টন চালের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৬৫ ডলার। এই দরে দেড় লাখ টন চাল আমদানি করতে মোট খরচ বাংলাদেশি টাকায় ৫৭৮ কোটি ৯২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। চালের জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনায় নিয়ে থাই কর্তৃপক্ষকে দেড় লাখ টন নন-বাসমতী সিদ্ধ চাল এলসি খোলার ৯০ দিনের মধ্যে সরবরাহের সময় বেধে দেওয়া হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, সরকারি পর্যায়ে খাদ্যশস্য ক্রয়ের চুক্তি হলে তা সরবরাহ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা থাকে না। বর্তমান পর্যায়ে সরকারি ভা-ারে খাদ্য মজুদ বাড়িয়ে সরবরাহ নিশ্চিত করা, জনসাধারণের মধ্যে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি সম্প্রসারণের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তাবলয় সুসংহত করা, সরকারের নির্ধারিত বিতরণ চ্যানেল নির্বিঘœভাবে পরিচালনা করা এবং খাদ্যশস্যের বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য জরুরি ভিত্তিতে সরকারি পর্যায়ে খাদ্যশস্য আমদানির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
এ বিষয়ে খাদ্যসচিব মো. কায়কোবাদ হোসেন বলেন, থাইল্যান্ড থেকে যে দরে চাল আমদানি করা হচ্ছে, তা বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ অবস্থায় দেশের চালের মজুদ সুসংহত করা এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় জরুরি সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার স্বার্থে সরকারিভাবে এ চাল আমদানি করা একান্ত প্রয়োজন।
এদিকে অপর এক প্রস্তাবনায় জাতীয় উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এক লাখ টন নন-বাসমতী সিদ্ধ চাল আমদানি করার অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এতে বলা হয়, জাতীয় উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বৈদেশিক উৎস থেকে আমদানিতব্য প্যাকেজ-১ এর আওতায় এক লাখ টন চাল আমদানি করা হবে। প্রতি টন ৪৩ হাজার ৭২০ টাকা থেকে ৪৫ হাজার ২৭০ টাকা হারে দেশের ৩৮টি কেন্দ্রে (লটে) ১৭টি প্রতিষ্ঠান এই চাল সরবরাহ করবে। এক লাখ টন চাল আমদানিতে মোট ৪৩৮ কোটি ২২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যা ও ব্লাস্ট রোগের কারণে এ বছর চাহিদার তুলনায় চাল কম উৎপাদন হওয়ায় দেশে চালের বাজারে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় জি-টু-জি পদ্ধতিতে চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ টন চাল সরবরাহ প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কম্বোডিয়ার কাছ থেকে আড়াই লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি হওয়ার পর ঋণপত্র খোলা হয়েছে। এ ছাড়া মিয়ানমার থেকে এক লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারের গুদামে তিন লাখ ৯৬ হাজার টন চাল এবং এক লাখ তিন হাজার টন গমসহ মোট খাদ্যশস্য মজুদের পরিমাণ চার লাখ ৯৯ হাজার টন।