বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ এমএম সিল্ক ফ্যাক্টরি, রিফাত সিল্ক ফ্যাক্টরি ও নিশা সিল্ক ফ্যাক্টরি। রাজশাহীর বিসিক শিল্প এলাকায় এই নামগুলো এখন অতীত।
সিল্ক (রেশম) কারখানা বন্ধ হয়ে এসব স্থানে এখন গড়ে উঠেছে কারিগরি কলেজ, প্লাস্টিক কারখানা, অ্যালুমিনিয়ামের কারখানাসহ নানা প্রতিষ্ঠান। এভাবে একে একে বন্ধ হয়ে গেছে অন্তত ৭০টি সিল্ক কারখানা। অথচ আশির দশকে এই কারখানাগুলোই ছিল রাজশাহীর পরিচয়।
যেসব কারখানা এখনো চালু আছে, সেগুলোও চলছে কোনো মতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এর বাইরে সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন রেশম কারখানাটিও বন্ধ হয়ে আছে কয়েক বছর ধরে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, সরকারের পক্ষ থেকে একটু নজর দিলেই ঘুরে দাঁড়াতে পারে সম্ভাবনাময় এ শিল্প খাত। বাংলাদেশ রেশম শিল্প মালিক সমিতি এ শিল্প রক্ষায় বিভিন্ন সময়ে নানা দাবি জানিয়ে এলেও সেগুলোর বাস্তবায়নে তেমন পদক্ষেপ লক্ষ করা যায়নি।
আশির দশকে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে রাজশাহীতে অন্তত শতাধিক কারখানা গড়ে ওঠে। সেসব কারখানায় বিপুল পরিমাণ রেশম বস্ত্র উৎপাদিত হতে থাকে।
এসব রেশম বস্ত্র দেশের গণ্ডি পেরিয়ে চলে যেতে থাকে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশগুলোতে।
নব্বইয়ের দশকে এই রেশমশিল্পে নেমে আসে ধস। সে সময় সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে বিপুল পরিমাণ সুতা আমদানি হতে থাকে চীন থেকে। এতে মার খেতে থাকে দেশে গড়ে ওঠা রেশম সুতা উৎপাদনকারী কারখানাগুলো। এভাবে একে একে বন্ধ হয়ে যেতে থাকে রেশম সুতা উৎপাদনকারী কারখানাগুলো। এমনকি অব্যাহত লোকসানের মুখে ২০০২ সালে রাজশাহীতে গড়ে ওঠা সরকারি রেশম কারখানাটিও বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। অন্যদিকে চীন থেকে আমদানীকৃত সুতার দামও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। একসময় যে সুতার দাম ছিল প্রতি টন এক হাজার ডলার, এখন সেখানে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ডলার। কিন্তু সেই তুলনায় বাড়েনি কাপড়ের দাম। ফলে একে একে বন্ধ হতে থাকে রাজশাহীতে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা কারখানাগুলোও।
বাংলাদেশ রেশম শিল্প মালিক সমিতির দেওয়া তথ্য মতে, রাজশাহীর বিসিক শিল্প এলাকায় এখন সর্বোচ্চ ১০-১২টি রেশম কারখানা চালু আছে। আগে রেশমের পাশাপাশি রেশমের বাদপড়া সুতার ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছিল প্রায় তিন হাজার তাঁতশিল্প কারখানা। এখন সেগুলোর একটিও নেই।
বাংলাদেশ রেশম মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, রেশমশিল্পে আগে যেখানে বিসিক থেকে বরাদ্দকৃত প্লটের প্রতি একরে সার্ভিস চার্জ আদায় করা হতো বছরে ১২ হাজার টাকা, এখন সেখানে আদায় করা হচ্ছে এক লাখ ৪৪ হাজার টাকা। আবার শতকপ্রতি সরকারি ৩৫ টাকার খাজনার স্থলে বিসিক আদায় করছে ১৫০ টাকা করে। কিন্তু তারা সরকারের কোষাগারে জমা দিচ্ছে মাত্র ৩৫ টাকা। ব্যাংক সুদের হারও এ শিল্পের জন্য কমানো হয়নি। বরং অন্যান্য ব্যবসার মতো এ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ঋণের জন্যও আদায় করা হচ্ছে ১৪-১৫ শতাংশ সুদ। ফলে ব্যবসায়ীরা দিন দিন রেশমশিল্পের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। আর তাতে করেই অন্যান্য শিল্প-কারখানাসহ নানা ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। তিনি আরো বলেন, ‘সরকার একটু নজর দিলেই বিশাল সম্ভাবনাময় ঐতিহ্যবাহী রেশম আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এর জন্য প্রথমেই রাজশাহী থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত সরাসরি রেল যোগাযোগ চালু করতে হবে। রাজশাহী থেকে পণ্যবাহী কার্গো বিমান চালু করতে হবে। পদ্মা নদী ড্রেজিং করে নৌপরিবহন চালু করতে হবে। তাহলে রাজশাহীর রেশম সুতার বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী কাপড় বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল বৈদেশিক অর্থ উপার্জন করা যাবে। আর তাতেই ঘুরে দাঁড়াবে ঐতিহ্যবাহী রেশমশিল্প।