বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রোপা আমন চাষে সার, কীটনাশক, জমি প্রস্তুত, ক্ষেত মজুর ও বারবার জমিতে কীটনাশক প্রয়োগে যে খরচ হয়েছে তাতে কুলিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন নওগাঁর কৃষকরা।
সবে হাট-বাজারগুলোয় ধান উঠতে শুরু করেছে। ফলে দাম একটু চড়া। তবে এক সপ্তাহ বাদেই ওই দামে হেরফের হবে। শুকনো ধানের দামই একটু বেশি পড়ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি সূত্রে জানা যায়, নওগাঁয় এবার রোপা আমন ধান চাষ হয়েছিল ২ লাখ ১৪০ হেক্টর জমিতে। এবার বন্যায় ধানের ক্ষতির জমির পরিমাণ ৩৮ হাজার ৪৩১ হেক্টর। বর্তমানে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৬৯৯ হেক্টর। এবার প্রতি বিঘা জমিতে ধান আকারে উৎপাদনের পরিমাণ ধরা হয়েছে সাড়ে ১৬ মন। চাল আকারে ১১ মন। মাত্র ১০ আগে ধান কাটার কাজ শুরু হয়েছে।
গতকাল (২৩ নভেম্বর) পর্যন্ত ধান কাটার পরিমাণ ছিল শতকরা ২৩ ভাগ।
সরেজমিন জেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, মাঠে এখনো সব ধান পেকে ওঠেনি। তবে কিষান-কিষানী ইতোমধ্যে খলিয়ানসহ নানা আয়োজনে ব্যস্ত নতুন ধান ঘরে তুলতে। যে ক্ষেতের ধানগুলো পাকছে, কৃষক সেই ক্ষেত থেকে ধান কাটছেন।
প্রাকৃতিক কারণে এবার পোকা-মাকড়ের উপদ্রব একটু বেশিই ছিল। ফলে প্রতিটা সময় কৃষকের দুঃচিন্তায় কেটেছে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোয় পরবর্তীতে চিনি আতপ ধান চাষ করা হয়েছে। মাঠে এখন সেই ধান সবেমাত্র ফলতে শুরু করেছে। চিনি আতপ ধান বিঘাতে সর্বোচ ১২ মন পর্যন্ত উৎপাদন হয়। জেলা জুড়ে জিরাশাইল, পাইজাম, স্বর্ণা-৫, বীনা-৭সহ নানান জাতের ধান চাষ করা হয়েছে এবার রোপা-আমন মৌসুমে।
জেলার মহাদেবপুর উপজেলার চোমাশিয়া গ্রামের কৃষক জসিম উদ্দীন বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও আমি ৬ বিঘা জমিতে আমন স্বর্ণা-৫ জাতের ধান লাগিয়েছি। ইতিমধ্যে কিছু ধান কেটে বাজারে নিয়ে মাত্র ৯২০ টাকা দরে প্রতি মন বিক্রি করেছি। ধান চাষে যে পরিমাণ খরচ পড়েছে সেই হিসেব কষলে লোকসান গুনতে হবে।
বুধবার জেলার প্রসিদ্ধ ও বড় ধানের হাট মহাদেবপুরের মাতাজীহাট ও রানীনগর উপজেলার আবাদপুকুর ধানের হাটে গিয়ে দেখা যায়, শুখনো ধানের আমদানি খুবই কম। কৃষক তাদের খরচ চালাতে অনেকটা বাধ্য হয়েই আধা শুকনো ধান হাটে বিক্রির জন্য এনেছেন। তবে ক্রেতার সংখ্য অনেক।
ওই দুটি হাটে জিরাশাইল ১৪০০ টাকা, পাইজাম ১৫৫০ টাকা, স্বর্ণা-৫ প্রকার ভেদে ৯০৫, থেকে ৯১০ টাকা, বীনা-৭ ধান ৯৬০, থেকে ৯৯২ টাকা এবং ৪৯ জাতের ধান ১০১০ থেকে ১০২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
মাতাজীহাটের ধান ব্যবসায়ী শুকুর আলী বলেন, হাট-বাজারে সবে নতুন ধান উঠতে শুরু করেছে। ব্যাপক হারে ধান ওঠার জন্য এখনো ৮/১০ দিন অপেক্ষা করতে হবে। যেটুকু ধান হাটে কৃষকরা আনছেন তা ধান কাটার খরচের টাকার জন্য। যা দিয়ে তারা কৃষি শ্রমিকের মজুরিসহ অন্যান্য কাজে খরচ করবেন। ফলে শুকনো ধানের জন্য আরো সময় লাগবে।
এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনোজিত কুমার মল্লিক বলেন, গড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এই ক’দিনে শতকরা ২৩ ভাগ জমির রোপা-আমন ধান কেটেছে কৃষক। বন্যা এবং বন্যার আগে বৃষ্টিতে রোপা-আমন ধান চাষে কৃষকরা চরম বিড়ম্বনায় পড়েন। বন্যা পরবর্তী অনেক কৃষক চিনি আতপ ধান চাষ করেছেন। ওই ধান উঠতে একটু দেরি হবে।