ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডলারের বর্ধিত মূল্য চালের দাম গেছে দুই থেকে তিন টাকা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ গত কয়েকদিন ধরে অস্থির ডলারের বাজার। চালের আমদানি ব্যয় মেটানোর মুদ্রাটির দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে দুই থেকে তিন টাকা। আর বোরোর উৎপাদনে ঘাটতির পর আমদানির ওপর নির্ভরশীল চালের বাজারেও বেড়েছে দাম। গত চার দিন ধরে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত বোরো মৌসুমে হাওর এলাকায় বন্যায় বড় ধরনের ক্ষতি এবং এরপর উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ব্লাস্ট রোগের কারণে চালের উৎপাদনে এবার ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। গবেষণা সংস্থার হিসাবে, দেশে চাল উৎপাদনের প্রধান মৌসুমে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম উৎপাদন অস্থির করে তুলে চালের বাজার। সরকার নিজে আমদানি করে এবং শুল্ক কমিয়ে বেসরকারি খাতে আমদানিতে উৎসাহ দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।

এই চেষ্টা কিছুটা সফলও হয়। মোটা চালের দাম ৫০ থেকে কমে ৪২ থেকে ৪৪ টাকা, আর মোটা চালের দাম ৭০ টাকা থেকে কমে ৬০ এর কাছাকাছি নামে।

কিন্তু ডলারের বাজারে সাম্প্রতিক অস্থিরতা কয়েকদিন ধরে আবার দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে চালের। সরকার চালের শুল্ক কমানোর সময় আমদানিকারকরা ৮০ থেকে ৮১ টাকা দরে ডলার কিনলেও এখন কিনতে হচ্ছে ৮৩ থেকে ৮৫ টাকা দরে। আর এই বাড়তি টাকাটা তারা তুলে নিচ্ছেন চালের দাম বাড়িয়ে। এ কারণে পাইকারিতে চালের দাম এক টাকার মতো আর খুচরায় বেড়েছে দুই থেকে তিন টাকা।

আমদানিকারকদের পাশাপাশি দেশের মিল মালিকরাও এই তথ্য পেয়ে বাড়িয়ে দিয়েছেন দাম। ব্যবসায়ীরা জানান, এখন মিলগেটে প্রতি কেজি মিনিকেট মানভেদে ৫৪ থেকে ৫৭ টাকায় বিক্রি হয়, যা আগে ছিল ৫৩ থেকে ৫৫ টাকা। এ ছাড়া বিআর-২৮ চাল মিলগেটে ৪৩ থেকে ৪৪ টাকা ছিল। এখন তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে।

রাজধানীর বাবুবাজার এলাকার চালের পাইকারি আমদানিকারক বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ‘সম্প্রতি ডলারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রভাব চালের বাজারে পড়েছে। ডলারের দাম বৃদ্ধি পেলে চালের দাম বাড়বে, এটাইতো স্বাভাবিক।’

এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এবার দেশে বোরো মওসুমে অকাল বন্যার কারণে ব্যাপক ধান নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেকারণে কলগুলোতে ধানের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। ধানের দাম বৃদ্ধি পেলে বন্দরে চালের চাহিদা বেড়ে যায়। আমদানি বাড়লে ভারতও দাম বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।’

রাজধানীর রায়সাহেব বাজার ও বেগমবাজার চালের আড়তে বিভিন্ন মানের ভালো মিনিকেট চালের দাম উঠেছে কেজিপ্রতি ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায়, যা আগে ছিল ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা। প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। প্রতি কেজি স্বর্ণা চালের দাম ছিল ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৩৯ থেকে ৪১ টাকা। একইভাবে বেড়েছে মাঝারি মানের বিআর-২৮ চালের দামও।

বেগমবাজারের জাবেদা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ‘ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের বিভিন্ন মোকামে আমদানি করা চালের দাম বেড়েছে। একই সময়ে মিল মালিকরা চালের দাম বাড়িয়েছেন। এর প্রভাবে পাইকারি আড়তে একই হারে বেড়েছে। আমরা তো আর ইচ্ছেকৃতভাবে দাম বাড়াই না। উপর থেকে দাম বাড়তি থাকলে আমাদের মত ক্ষুদ্রব্যবসায়ীদের দাম তো বাড়াতেই হয়।’

পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, অনেক মিল মালিক ভারত থেকে মিনিকেট চাল আমদানি করে প্যাকেটজাত করে বিক্রি করছেন। আমদানিতে চালের দাম বেশি এবং দেশে ধানের দাম বৃদ্ধির কথা বলে চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

খুচরা বাজারে নতুন দামের প্রভাব পড়েছে। প্রতি কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বেড়ে খুচরায় এখন মিনিকেট ৬০ থেকে ৬৩ টাকা ও বিআর-২৮ সহ মাঝারি মানের চাল ৪৮ থেকে ৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা চালের দামও কেজিতে দুই টাকা বেড়ে ৪২ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর পলাশী বাজারের ব্যবসায়ী বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ‘বোরো মৌসুমে উৎপাদিত চাল থেকে তৈরি হয় মোটা স্বর্ণা ও মিনিকেট চাল। এখন আমন মৌসুম শুরু হলেও মিনিকেট চাল উৎপাদনের ধান মিলগুলো পাচ্ছে না। এ কারণে ভারত থেকে আমদানি করে বর্তমানে চাহিদা মিটছে। এ সুযোগে মোকামে দাম বাড়ানো হচ্ছে।’

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, চালের আমদানি মূল্যও বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ভারতে প্রতি টন সিদ্ধ চালের রফতানি মূল্য পাঁচ ডলার বেড়ে ৩৯৫ ডলার হয়েছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

ডলারের বর্ধিত মূল্য চালের দাম গেছে দুই থেকে তিন টাকা

আপডেট টাইম : ০৪:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ ডিসেম্বর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ গত কয়েকদিন ধরে অস্থির ডলারের বাজার। চালের আমদানি ব্যয় মেটানোর মুদ্রাটির দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে দুই থেকে তিন টাকা। আর বোরোর উৎপাদনে ঘাটতির পর আমদানির ওপর নির্ভরশীল চালের বাজারেও বেড়েছে দাম। গত চার দিন ধরে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত বোরো মৌসুমে হাওর এলাকায় বন্যায় বড় ধরনের ক্ষতি এবং এরপর উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ব্লাস্ট রোগের কারণে চালের উৎপাদনে এবার ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। গবেষণা সংস্থার হিসাবে, দেশে চাল উৎপাদনের প্রধান মৌসুমে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম উৎপাদন অস্থির করে তুলে চালের বাজার। সরকার নিজে আমদানি করে এবং শুল্ক কমিয়ে বেসরকারি খাতে আমদানিতে উৎসাহ দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।

এই চেষ্টা কিছুটা সফলও হয়। মোটা চালের দাম ৫০ থেকে কমে ৪২ থেকে ৪৪ টাকা, আর মোটা চালের দাম ৭০ টাকা থেকে কমে ৬০ এর কাছাকাছি নামে।

কিন্তু ডলারের বাজারে সাম্প্রতিক অস্থিরতা কয়েকদিন ধরে আবার দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে চালের। সরকার চালের শুল্ক কমানোর সময় আমদানিকারকরা ৮০ থেকে ৮১ টাকা দরে ডলার কিনলেও এখন কিনতে হচ্ছে ৮৩ থেকে ৮৫ টাকা দরে। আর এই বাড়তি টাকাটা তারা তুলে নিচ্ছেন চালের দাম বাড়িয়ে। এ কারণে পাইকারিতে চালের দাম এক টাকার মতো আর খুচরায় বেড়েছে দুই থেকে তিন টাকা।

আমদানিকারকদের পাশাপাশি দেশের মিল মালিকরাও এই তথ্য পেয়ে বাড়িয়ে দিয়েছেন দাম। ব্যবসায়ীরা জানান, এখন মিলগেটে প্রতি কেজি মিনিকেট মানভেদে ৫৪ থেকে ৫৭ টাকায় বিক্রি হয়, যা আগে ছিল ৫৩ থেকে ৫৫ টাকা। এ ছাড়া বিআর-২৮ চাল মিলগেটে ৪৩ থেকে ৪৪ টাকা ছিল। এখন তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে।

রাজধানীর বাবুবাজার এলাকার চালের পাইকারি আমদানিকারক বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ‘সম্প্রতি ডলারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রভাব চালের বাজারে পড়েছে। ডলারের দাম বৃদ্ধি পেলে চালের দাম বাড়বে, এটাইতো স্বাভাবিক।’

এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এবার দেশে বোরো মওসুমে অকাল বন্যার কারণে ব্যাপক ধান নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেকারণে কলগুলোতে ধানের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। ধানের দাম বৃদ্ধি পেলে বন্দরে চালের চাহিদা বেড়ে যায়। আমদানি বাড়লে ভারতও দাম বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।’

রাজধানীর রায়সাহেব বাজার ও বেগমবাজার চালের আড়তে বিভিন্ন মানের ভালো মিনিকেট চালের দাম উঠেছে কেজিপ্রতি ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায়, যা আগে ছিল ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা। প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। প্রতি কেজি স্বর্ণা চালের দাম ছিল ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৩৯ থেকে ৪১ টাকা। একইভাবে বেড়েছে মাঝারি মানের বিআর-২৮ চালের দামও।

বেগমবাজারের জাবেদা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ‘ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের বিভিন্ন মোকামে আমদানি করা চালের দাম বেড়েছে। একই সময়ে মিল মালিকরা চালের দাম বাড়িয়েছেন। এর প্রভাবে পাইকারি আড়তে একই হারে বেড়েছে। আমরা তো আর ইচ্ছেকৃতভাবে দাম বাড়াই না। উপর থেকে দাম বাড়তি থাকলে আমাদের মত ক্ষুদ্রব্যবসায়ীদের দাম তো বাড়াতেই হয়।’

পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, অনেক মিল মালিক ভারত থেকে মিনিকেট চাল আমদানি করে প্যাকেটজাত করে বিক্রি করছেন। আমদানিতে চালের দাম বেশি এবং দেশে ধানের দাম বৃদ্ধির কথা বলে চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

খুচরা বাজারে নতুন দামের প্রভাব পড়েছে। প্রতি কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বেড়ে খুচরায় এখন মিনিকেট ৬০ থেকে ৬৩ টাকা ও বিআর-২৮ সহ মাঝারি মানের চাল ৪৮ থেকে ৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা চালের দামও কেজিতে দুই টাকা বেড়ে ৪২ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর পলাশী বাজারের ব্যবসায়ী বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ‘বোরো মৌসুমে উৎপাদিত চাল থেকে তৈরি হয় মোটা স্বর্ণা ও মিনিকেট চাল। এখন আমন মৌসুম শুরু হলেও মিনিকেট চাল উৎপাদনের ধান মিলগুলো পাচ্ছে না। এ কারণে ভারত থেকে আমদানি করে বর্তমানে চাহিদা মিটছে। এ সুযোগে মোকামে দাম বাড়ানো হচ্ছে।’

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, চালের আমদানি মূল্যও বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ভারতে প্রতি টন সিদ্ধ চালের রফতানি মূল্য পাঁচ ডলার বেড়ে ৩৯৫ ডলার হয়েছে।