বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ গত বছর বগুড়ায় আলুর বাম্পার ফলন হওয়ায় ভালো দাম পাচ্ছিল না কৃষক। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও আলু কিনে মজুদ করে রাখে ভালো দামের আশায়। গত ৩ মৌসুমে উত্তরাঞ্চলে আলুর ভালো ফলনের পাশাপাশি বছরজুড়ে দামও ছিল ভালো। মৌসুমের শুরুতে তুলনামূলক কম দামে আলু কিনে পরে বেশি দামে বিক্রি করেছেন মজুদদাররা। এবারও সেই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন তারা। তবে এবার সেই আশায় গুড়েবালি।
যারা গুদামে আলু রেখেছেন তারা দাম পাচ্ছেন না ঠিকই, কিন্তু যারা অল্প দামে কিনে ঢাকায় নিয়ে আসছেন তারা প্রায় ৬০০ শতাংশ অধিক দামে বিক্রি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ। বগুড়ায় কম দামে কিনে ঢাকায় অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের আলু। বগুড়া থেকে পুরান আলু কেজিপ্রতি সাড়ে তিন টাকায় কিনে সে আলু ঢাকায় বিক্রি করছে ২৫ টাকায়। এতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। ফলে সঠিক দাম না পেয়ে বিপাকে পড়ছে কৃষক ও বাড়তি দামের আশায় গুদামে মজুদ রাখা ব্যবসায়ীরা, আর অতিরিক্ত দামে ক্রয় করে দিশাহারা ক্রেতারা।
এছাড়া বাজারে নতুন আলু উঠতে শুরু করেছে দুসপ্তাহ আগ থেকেই। কিন্তু নতুন আসা আলুতেও ক্রেতা বা কৃষকের জন্য কোনো সুখবর নেই। কৃষকদের কাছ থেকে কম দরে কিনে ক্রেতাদের কাছে অতিরিক্ত দরে বিক্রি করার একই অভিযোগ রয়েছে নতুন আলু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। ২০ টাকায় কেজি প্রতি আলু ক্রয় করে ঢাকায় তা বিক্রি করছে ৬০ টাকায়। বগুড়ার আলুর পাইকারি বাজারে ৮৪ কেজির এক বস্তা পুরান আলু ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ অবস্থায় মজুদ করা আলু হিমাগার থেকে তুলছেন ব্যবসায়ীরা। আলু নিয়ে বিপাকে তারা। বগুড়ার ৩৩ হিমাগারে থাকা আলুতে কোটি কোটি টাকার লোকসানের আশঙ্কায় তারা।
বগুড়া থেকে আমাদের সংবাদদাতা মহাম্মদ আলী জানান, গত ১৬-১৭ মৌসুমে বগুড়া অঞ্চলে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছিল।
ভালো দামের আশায় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ আলু কিনে মজুদ করে রাখে। তবে গত বছরের রাখা আলুতে এবার বেশি দাম পাচ্ছেন না তারা। এবার তারা লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন। তিনি জানান, পুরান আলু ৮৪ কেজির বস্তা বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। যেমন- লাল পাকরি ৪০০, রোমনা ৩০০, পাকরি বীজ ৪৫০-৫০০, বীজ ৩০০, স্টিক ৪০০, সাদা ঘ্রাণ ২০০ ও ডায়মন্ড ৪০০ টাকায়। এছাড়া নতুন আলু মনপ্রতি ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরও জানান, গত মৌসুমে পর্যাপ্ত মজুদ এবং চলতি মৌসুমে নতুন আলু উত্তোলনের ফলে পুরান আলু হিমাগার থেকে নিচ্ছে না কৃষকরা। দাম না থাকায় কৃষকদের বস্তাপ্রতি লোকসান গুনতে হচ্ছে।
এক বস্তা লালশীল আলু মৌসুমে ক্রয় ও ভাড়াসহ খরচ হয়েছে ১৫৫০ টাকা, আর এ বছর তা বিক্রি হয়েছে কখনো ৫০০-৪০০-২০০ টাকায়। বগুড়া কৃষি আঞ্চলিক অফিসের দেয়া তথ্য মতে, ২০১৬-১৭ কৃষি মৌসুমে উত্তরের চার জেলা বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা, সিরাজগঞ্জে আলুচাষ হয়েছিল ১ লাখ ১৪ হাজার ১৬ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ২৩ লাখ ৫০ হাজার ২ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে আলুচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে ১ লাখ ১০ হাজার ৪১০ হেক্টর জমি।
ইতোমধ্যে চাষ হয়েছে ৪৭ হাজার ৩২৩ হেক্টর জমিতে। আগাম জাতের আলু উত্তোলন হয়েছে ১০০ হেক্টর। উৎপাদন প্রতি হেক্টরে ১৪ মেট্রিক টন।
জানা গেছে, গত মৌসুমে বগুড়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন আলু বেশি উৎপাদন হয়েছিল।
কারওয়ানবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. কাইয়ুম বেপারি আমার সংবাদকে পুরান আলু প্রতি কেজি ৭ টাকায় বিক্রির কথা বললেও পাইকারিতে ১৪ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া নতুন আলু ২০ টাকার কথা বললেও পাইকারিতে ৩০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।