বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ দীর্ঘদিন দেন দরবারের পর অবশেষে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে আলোর মুখ দেখছে দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক চা নিলাম কেন্দ্র। আজ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ আন্তর্জাতিক নিলাম কেন্দ্রটি উদ্বোধন করবেন।
এর মাধ্যমে স্থানীয় বাগান মালিকসহ চা শিল্পসংশ্লিষ্টদের আন্তর্জাতিক নিলাম কেন্দ্র স্থাপনে দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হচ্ছে। পাশাপাশি নিলাম কেন্দ্রটির উদ্বোধন ঘিরে স্থানীয় চা উৎপাদনকারী ও খাত সংশ্লিষ্টদের মনে ব্যাপক আগ্রহ ও উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে।
চা বাগান মালিকরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের কারণে পরিবহন ব্যয় বাবদ বছরের অন্তত ২০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। চায়ের মান অক্ষুণ্ন থাকবে। কমে আসবে দামও। ফলে ক্রেতারা আমদানি করা চায়ের তুলনায় দেশে উৎপাদিত চা কম দামে ও বেশি পরিমাণে কিনতে পারবেন, যা পুরো চা শিল্পের বিকাশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
১৮৪৯ সালে সিলেটের মালনিছড়ায় বাগান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উপমহাদেশে চা উৎপাদনের সূচনা হয়। বর্তমানে সিলেট জেলায় ২০টি, মৌলভীবাজারে ৯৩টি এবং হবিগঞ্জ জেলায় ২২টি চা বাগান রয়েছে।
বর্তমানে দেশে প্রতিবছর গড়ে সাত কোটি কেজি চা উৎপাদন হয়। এর মধ্যে সিলেট অঞ্চলে উৎপাদন হয় প্রায় ছয় কোটি কেজি চা, যার ৭৫ শতাংশই উৎপাদন হয় মৌলভীবাজারের বাগানগুলোয়। দেশের সিংহভাগ চা উৎপাদনে সিলেট অঞ্চলের একক আধিপত্য থাকলেও পণ্যটির আন্তর্জাতিক নিলাম কেন্দ্রের অবস্থান চট্টগ্রামে। সিলেট থেকে উৎপাদিত চা চট্টগ্রাম নিয়ে এর পর তা নিলামে তোলেন সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে মান কমার পাশাপাশি পরিবহন ব্যয় যুক্ত হওয়ায় চায়ের দাম বেড়ে যায়।
সিলেট অঞ্চলে উৎপাদিত চা নিলামের জন্য চট্টগ্রামে নিয়ে যেতে প্রতিবছর সব মিলে ৫-৬ হাজার ট্রাক ভাড়া করতে হয়। সেই হিসাবে ট্রাকপ্রতি ২০ হাজার টাকা ধরলে বছর শেষে পণ্যটির সম্মিলিত পরিবহন ব্যয় দাঁড়ায় ১০-১২ কোটি টাকা। এ কারণে শ্রীমঙ্গলে একটি আন্তর্জাতিক নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের দাবি ওঠে। কেন্দ্রটি স্থাপনের উদ্যোগের অংশ হিসেবে শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে ২০১১ সালে ‘শ্রীমঙ্গল চা নিলাম কেন্দ্র বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন গড়ে ওঠে।
২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৌলভীবাজার সফরকালে শ্রীমঙ্গলে দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণা দেন। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে টিপিটিএবি আত্মপ্রকাশ করে।
শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও চা ব্যবসায়ী মো. কামাল হোসেন জানান, প্রাথমিকভাবে একটি ভাড়া করা ভবনে নিলাম কেন্দ্রটির কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এখানে চা মজুদের জন্য তিনটি পৃথক ওয়্যার হাউজ রয়েছে। পরবর্তীতে স্থায়ী ভবনে কেন্দ্রটি স্থানান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে।
টিপিটিএবির সদস্য সচিব জহর তরফদার বলেন, সিলেট অঞ্চলে উৎপাদিত চা চট্টগ্রামে নিয়ে নিলামে তুলতে সময় ও ব্যয় দুটোই বেশি লাগত। এ কারণে উৎপাদিত চায়ের মানও কমে যেত, বাড়ত দাম।