হাওর বার্তা ডেস্কঃ আমি বিশ্বাস করি স্রষ্টা এবং ভাগ্যকে। প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী হওয়াটা যে ভাগ্যের ব্যাপার তাও আমি বিশ্বাস করি। একজন প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী যে কেউ হতে পারে না। এ ধরণের দায়িত্ব যারা পেয়ে থাকেন তাদের উপর স্রষ্টার বিশেষ রহমত রয়েছে।
তবে একটি জিনিস বুঝতে বেশ সমস্যা হচ্ছে তা হলো যারা এমন একটি দায়িত্ব পান কীভাবে তাদের প্রতি বেশির ভাগ মানুষের ঘৃণা জন্ম নেয়? বর্তমানে বিশ্বের সব প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর কাউকেই মানুষ খুব একটা পছন্দ করছে না। কিন্তু কেন? সবাই কী ক্ষমতা পেয়ে খারাপ হয়েছে নাকি আমাদের সমস্যার কারণে তাদেরকে আমরা অপছন্দ করছি?
বর্তমানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার কোভিড-১৯ এর আক্রান্তের কথা শোনার পর বিশ্বের অনেক মানুষের মধ্যে কেমন যেন একটি সুখের বার্তা বয়ে এনেছে। জানি না উনি কেন এত মানুষের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত।
ক্ষমতা এমন একটি জিনিস যা কেউ সহজে ছাড়তে চায় না কিন্তু কথাটি সব সময় সঠিক নয়। সুইডেনে প্রায়ই এমনটি ঘটে। দেখা যায় দলের প্রধান বা সংসদের এমপি এমনকি সহকারী প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছাকৃতভাবে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। আমি অনেকবার বিষয়টি ভেবেছি কী কারণ থাকতে পারে এর পেছনে।
গ্রহণযোগ্য কারণ আমার মতে এরা জনগণের প্রতিনিধি। ক্ষমতা এবং তার ব্যবহার যদি সঠিকভাবে না করতে পারে তখন নিজ থেকেই সরে যায়। মনে কী পড়ে কোভিড-১৯ এর শুরুতে জার্মান অর্থমন্ত্রীর সুইসাইডের কথা! তিনি জনগণের সেবা করতে ব্যর্থ হয়েছেন এমন ধারণা তাকে কঠিনভাবে পিঁড়া দেয়, তাই সুইসাইড করেন।
পৃথিবীতে অনেক দেশ রয়েছে যেখানে জনগণ তার সরকারকে পছন্দ করছে না। অথচ সরকার দিব্বি মনের আনন্দে ক্ষমতার জোরে দেশ পরিচালনা করে চলেছে। এসব দেশের সরকার প্রধানদের ধারণা তারা ছাড়া অন্য কেউ দেশ পরিচালনা করতে পারে না।
বড় বড় ইন্ডাস্ট্রিতেও এসব লক্ষণীয়। এসব ইন্ডাস্ট্রির লিডাররা অনেক সময় নিজেদেরকে এত দক্ষ মনে করেন যে কোম্পানির অন্য কাউকে বিশ্বাস করে না। এমন কি অন্যদের ওপর কোন কাজ দিয়ে ভরসাও পায় না। এসব ক্ষেত্রে দিনে দিনে কোম্পানির সমস্ত কর্মচারী তাদের মোটিভেশন এবং মোড়াল ভ্যালু হারিয়ে ফেলে। শেষে এককেন্দ্রিক পরিচালকের ব্যর্থতার কারণে সেই কোম্পানি ধ্বংসের মুখে পতিত হয়।
একটি দেশের সব ক্ষমতা যখন একজনের কাছে থাকে তখন সে দেশের সমস্ত কর্মীরা উদ্যোগ হারিয়ে ফেলে এবং হয়ে যায় ব্যক্তি কেন্দ্রিক। ক্ষমতাকে সঠিকভাবে বিকেন্দ্রীকরণই হচ্ছে একজন দক্ষ নেতার প্রধান গুণ। এই গুণ যার মাঝে গড়ে উঠে না সে কখনও আদর্শ নেতা হতে পারে না। সেক্ষেত্রে দিনরাত খেটে জনগণের কাছ থেকে বিদ্রূপ ছাড়া আর কিছুই পায় না। অথচ তারা দেখা যাচ্ছে হাসপাতালে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে সেই সাথে দেশের জন্য কাজ করে চলছে। তবুও ভাবছে না কে দায়িত্ব নিবে হঠাৎ যদি তাদের মৃত্যু হয়ে যায়।
আমার অভিজ্ঞতায় যা শিখেছি তা হলো একজন লিডার তখনই সফল যখন তার অবর্তমানে কোন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান বা দেশ সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়। নেতার কাজ নেতৃত্ব দেয়া, আর কর্মীর কাজ তা ফলো করা। যখন নেতার কোন ফলোয়ার না থাকে তখন তিনি সেভেন টু ইলেভেন নয়, টুয়েন্টিফোর আওয়ারস কাজ করেন, তবে ফলাফল আশাতীত হয় না।
১৯৮৬ সালের কোন এক সময়ের কথা। একটি মেয়েকে হঠাৎ বলেছিলাম তুমি সুন্দর তাই তোমাকে পছন্দ করি। উত্তরে বলেছিল পছন্দ অপছন্দ তোমার ব্যাপার। তবে আমাকে তোমার মত করে ভাবতে চাপ দিও না। ভালোবাসা বিশ্বাস এসব জোর করে পাওয়া যায় না। কারণ এসব অনুভূতির বিষয়। সেটার যদি অভাব থাকে তবে হাজার সুন্দর হলেও পছন্দ করে কোন লাভ হবে না।
তবে কাউকে পছন্দ করার মাধ্যমে ভালোবাসা এবং বিশ্বাস জন্মাবার সুযোগটা বেশি থাকে। কিন্তু যদি শুরুটাই অপছন্দের হয় তাহলে ভালোবাসা বা বিশ্বাস জন্মাবার সুযোগটাই আসে না। যাই হোক আমি বিশ্বাস করি শুরুটা যেন সুন্দর চিন্তা চেতনা দিয়ে হয়। সর্বোপরি ভালোবাসা ধরা বা ছোঁয়া যায় না শুধু অনুভব করা ছাড়া। কারণ ভালোবাসায় রয়েছে শুধু ভালোবাসা।