নারায়ণগঞ্জে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, ওবায়দুল কাদের, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাহবুবুল আলম হানিফ, শামীম ওসমান, সেলিম ওসমানসহ ৪৭০ জনের নামে হত্যাচেষ্টার পৃথক দুই মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আদালতের নির্দেশে দুটি মামলাই নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়ের করা হয়। যার একটিতে প্রধান আসামি শেখ হাসিনা এবং অন্যটিতে প্রধান আসামি শামীম ওসমান।
পৃথক দুটি মামলার বাদীও আলাদা দুজন ব্যক্তি। যে মামলায় শামীম ওসমানকে প্রধান আসামি করা হয়েছে সেটি গত ২১ জানুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় রুজু হয়েছে বলে অফিসার ইনচার্জ শাহিনুর আলম নিশ্চিত করেছেন।
মামলার সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২১ জুলাই বিকেল সোয়া তিনটায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের ডাচ-বাংলা ব্যাংক এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন চলাকালীন সাবেক এমপি শামীম ওসমান, তার ভাই জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি সেলিম ওসমানের নির্দেশে এবং শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরি ওসমান ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়ার নেতৃত্বে সশস্ত্র অবস্থায় মিছিলে হামলা চালায়। হামলায় তারা আগ্নেয়াস্ত্র, শর্টগান, পিস্তল, ককটেল, লাঠি, ইট-পাটকেল, এবং ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে।
এ সময় আলিফের (১৮) বা পায়ের হাঁটুতে গুলি লাগে এবং সে গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা ট্রাস্ট হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে দীর্ঘ চিকিৎসা গ্রহণ শেষে আলিফের বাবা অহিদ মিয়া (৪৭) বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করতে যান। থানায় মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি গত ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের চীফ জুডিশিয়াল আদালতে মামলার আবেদন করেন।
তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত নির্দেশ প্রদান করলে গত ২১ জানুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলাটি রুজু হয়। মামলাটিতে শামীম ওসমানসহ এজাহারনামীয় আসামি ৫৫ জন। এ ছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ১৫০ থেকে ২০০ জনকে।
অন্যদিকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে আদালতের নির্দেশে আরও একটি মামলা রুজু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ শাহিনুর আলম।
জানা যায়, গত ১৭ জানুয়ারি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সদস্য মো. মিরাজ হোসেন (২৬) নারায়ণগঞ্জের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় তাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মামলার আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সিদ্ধিরগঞ্জ থানাকে মামলা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন।
মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও আসামি করা হয়েছে- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সাংসদ শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সাংসদ সেলিম ওসমানসহ ৬৫ জনকে।
এ ছাড়া মামলাটিতে আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি বাসস্ট্যান্ডে মামলার ১ থেকে ১২নং আসামির নির্দেশে অন্যরা ছাত্র-জনতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। ঘটনার এক পর্যায়ের বিকেল আনুমানিক তিনটার সময় মো. মিরাজ হোসেনের দুই পায়ের রানে গুলি বিদ্ধ হন। এ সময় অন্তত আরও ১৫ থেকে ২০ জন গুলিবিদ্ধ হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
পরে স্থানীয়রা মিরাজকেসহ আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যায়। মিরাজকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে। পরে হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করতে গেলে আদালতে মামলার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে নারায়ণগঞ্জের বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল আদালতে মামলার আবেদন করলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাকে মামলা রুজু করার নির্দেশ দেয়।