বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আজ ১৭ মে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৮১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নির্বাসন শেষে তিনি বাংলার মাটিতে ফিরে আসেছেন। ওই দিনটি ছিল রবিবার। ওই দিন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে বহনকারী ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে ঢাকার তৎকালীন কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে তাকে একনজর দেখার জন্য কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত এলাকাজুড়ে লাখো জনতার ঢল নামে। সারাদেশের গ্রাম-গঞ্জ-শহর-নগর-বন্দর থেকে অধিকারবঞ্চিত মুক্তিপাগল জনতা সেদিন ছুটে এসেছিল রাজধানী ঢাকায়। এ সময় সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী লাখো কণ্ঠের স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা বিমানবন্দর এলাকা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ সময় তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রবাসে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ঐতিহাসিক হোটেল ইডেনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। এরপর দীর্ঘ নির্বাসিত সময় কাটানোর পর আজকের এই দিনে দেশে ফিরে আসেন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশে ফিরে বিমানবন্দরে লাখো জনতার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলার মানুষের মুক্তি সংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য আমি দেশে এসেছি। আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।’ স্বজন হারানোর বেদনায় কাতর বঙ্গবন্ধু কন্যা অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি সামান্য মেয়ে। সক্রিয় রাজনীতির দূরে থেকে আমি ঘর-সংসার করছিলাম।
কিন্তু সবকিছু হারিয়ে আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। বাংলার দুঃখী মানুষের সেবায় আমি আমার এ জীবন দান করতে চাই। আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেলসহ সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই।
দেশে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে ৩৭ বছরে প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্যের প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। ব্রাকেটবন্দি বহুধাবিভক্ত আওয়ামী লীগকে শুধু ঐক্যবদ্ধই নয়, শক্তহাতে হাল ধরে আওয়ামী লীগকে বিপুল জনসমর্থিত জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাণী দিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়েছে।
শেখ হাসিনার ৩৭তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে এবার আওয়ামী লীগ ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, শেখ হাসিনার সুন্দর জীবন ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দেশব্যাপী দোয়া, মিলাদ মাহফিল, আনন্দ শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ইত্যাদি। দিনটি উপলক্ষে আজ বিকাল ৩টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনাসভার আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে এক বিবৃতিতে দেশ ও জাতির কল্যাণে, গণতন্ত্রের উন্নয়নে ও আধুনিক এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ায় অসামান্য অবদান রাখার জন্য শেখ হাসিনার সুন্দর জীবন ও দীর্ঘায়ু কামনা করে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালনের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।