ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীর আন্দাশুরা বিলে ফুটছে বিলুপ্তের পথে হাটা সাদাপদ্ম

ফুলের রাণী পদ্ম। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার ‘কেউ কথা রাখে নি’ কবিতায় বলেছিলেন ১০৮টি নীল পদ্মের কথা! এমনি সাহিত্যের পরতে পরতে মিলবে পদ্মের উপাখ্যান। নীল নয়, গোলাপী নয়, সাদাপদ্মের দেখা মিলবে তানোর উপজেলা সীমানাবর্তী চৌবাড়িয়া ইটভাটার পাশে আন্দাশুরা বিলে। শরতের ফুল হলেও বর্ষাতেই তার সৌন্দর্য ও শুভ্রতার প্রতীক নিয়ে হাজির হয় ‘পদ্ম’। প্রকৃতিতে নিজের রূপ বৈচিত্র্য অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছে জলাভূমি ও বিলেঝিলে ফুটে থাকা এ জলজ ফুলের রাণী।

প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া জলজ ফুলের রাণী এই পদ্মফুল সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় বিলের চিত্র। তাই প্রতিদিনই এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছে দর্শনার্থীরা! বাড়ছে বিলপাড়ে সাদাপদ্ম ফুল দেখতে আসা মানুষের সংখ্যা।

তবে নীল ও গোলাপী পদ্মের দেখা পওয়া গেলেও সাদাপদ্ম এখন অনেকটায় বিলুপ্তের পথে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বিলপাড়ের প্রবীণরা। সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বিস্তৃর্ণ বিল। বিলধারে ধান ক্ষেত। আর ধান ক্ষেতের পাশেই চারদিকে ভেসে রয়েছে অগণিত পদ্ম। শুভ্রতার সাদারং পদ্মফুল, সোনালী ধান ক্ষেত আর নীল আকাশ এই তিনে মিলে যেন এক মনোরম প্রকৃতি। দূর-দূরান্ত থেকে আসছে দর্শনার্থীরা এই বিলপাড়ে সাদাপদ্ম দেখতে।

সারা বছর পানি থাকে এমন জায়গায় পদ্ম ভাল জন্মে। তবে খাল-বিল, হাওর ইত্যাদিতেও এ উদ্ভিদ জন্মে। পাতা বড় এবং গোলাকৃতি, কোন কোন পাতা পানিতে লেপটে থাকে, কোনটা উঁচানো। বর্ষাকালে ফুল ফোটে। ফুল বৃহৎ এবং বহু পাপড়িযুক্ত। সাধারণত বোঁটার উপর খাড়া, ৮-১৫ সেমি চওড়া। ফুলের রং লাল, গোলাপি ও সাদা, সুগন্ধিযুক্ত। হিন্দুদের দুর্গাপূজার প্রিয় ফুল। ফুল ও ফলের ভেষজগুণ আছে। পদ্মের মূল, কান্ড, ফুলের বৃন্ত ও বীজ খাওয়া যায়। পুরাতন গাছের কন্দ এবং বীজের সাহায্যে এদের বংশবিস্তার হয়।

বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ) বারসিক এর সহযোগী কর্মসূচী কর্মকর্তা অমৃত কুমার সরকার বলেন, সাদাপদ্ম ফুল এখন অনেকটায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এর সংরক্ষণ প্রয়োজন। সাদাপদ্ম ঔষধিগুণ সম্পন্ন ফুল। শ্বেত রোগ ভালো করে। হ্নদরোগ ঝুঁকি ও যন্ত্রণা কমায়। কেবল পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে নয়, ভেষজ গুণ সমৃদ্ধ এই পদ্ম সংরক্ষণের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে আমরা এর যে কান্ডটি আছে সেটাকে যদি এনে পুকুরে লাগাই তাহলে এখান থেকে প্রচুর উৎপাদন করা সম্ভব।

এ নিয়ে তানোর উপজেলার পারিশো-দূর্গাপুর গ্রাম থেকে আন্দাশুরা বিল দেখাতে আসা দর্শনার্থী রিগান মন্ডল জানান, এক কথায় অনবদ্য। এমন সুন্দর সাদাপদ্ম দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। তাই বিভিন্ন ভাবে সেলফী তুলেছি মনের মতো করে। আরেক দর্শনার্থী হায়দার আলী জানান, দূর থেকে এমন সুন্দর সাদাপদ্ম থেকে দেখে আর থামতে পারলাম না। তাই ছুটে গিয়ে হাঁটুপানি ভেঙ্গে গোল গোল পদ্মপাতা ও পদ্মফুল তুলে আনলাম। সত্যি এ এক অন রকম অনুভূতি।

ভারত ও ভিয়েতনামের জাতীয় ফুল পদ্ম। প্রবল জ্বরে পদ্মপাতার ওপর শুয়ে থাকলে জ্বরের প্রকোপ কমে। পদ্ম হিন্দুদের কাছে অতি পবিত্র ফুল। প্রাচীন সাহিত্য, শিল্প ও স্থাপত্যকলায় পদ্মের নানামুখী ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বৌদ্ধদের কাছে এই সাদাপদ্ম সৌন্দর্য ও শুভ্রতার প্রতীক।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

রাজশাহীর আন্দাশুরা বিলে ফুটছে বিলুপ্তের পথে হাটা সাদাপদ্ম

আপডেট টাইম : ১০:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ মে ২০১৮

ফুলের রাণী পদ্ম। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার ‘কেউ কথা রাখে নি’ কবিতায় বলেছিলেন ১০৮টি নীল পদ্মের কথা! এমনি সাহিত্যের পরতে পরতে মিলবে পদ্মের উপাখ্যান। নীল নয়, গোলাপী নয়, সাদাপদ্মের দেখা মিলবে তানোর উপজেলা সীমানাবর্তী চৌবাড়িয়া ইটভাটার পাশে আন্দাশুরা বিলে। শরতের ফুল হলেও বর্ষাতেই তার সৌন্দর্য ও শুভ্রতার প্রতীক নিয়ে হাজির হয় ‘পদ্ম’। প্রকৃতিতে নিজের রূপ বৈচিত্র্য অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছে জলাভূমি ও বিলেঝিলে ফুটে থাকা এ জলজ ফুলের রাণী।

প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া জলজ ফুলের রাণী এই পদ্মফুল সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় বিলের চিত্র। তাই প্রতিদিনই এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছে দর্শনার্থীরা! বাড়ছে বিলপাড়ে সাদাপদ্ম ফুল দেখতে আসা মানুষের সংখ্যা।

তবে নীল ও গোলাপী পদ্মের দেখা পওয়া গেলেও সাদাপদ্ম এখন অনেকটায় বিলুপ্তের পথে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বিলপাড়ের প্রবীণরা। সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বিস্তৃর্ণ বিল। বিলধারে ধান ক্ষেত। আর ধান ক্ষেতের পাশেই চারদিকে ভেসে রয়েছে অগণিত পদ্ম। শুভ্রতার সাদারং পদ্মফুল, সোনালী ধান ক্ষেত আর নীল আকাশ এই তিনে মিলে যেন এক মনোরম প্রকৃতি। দূর-দূরান্ত থেকে আসছে দর্শনার্থীরা এই বিলপাড়ে সাদাপদ্ম দেখতে।

সারা বছর পানি থাকে এমন জায়গায় পদ্ম ভাল জন্মে। তবে খাল-বিল, হাওর ইত্যাদিতেও এ উদ্ভিদ জন্মে। পাতা বড় এবং গোলাকৃতি, কোন কোন পাতা পানিতে লেপটে থাকে, কোনটা উঁচানো। বর্ষাকালে ফুল ফোটে। ফুল বৃহৎ এবং বহু পাপড়িযুক্ত। সাধারণত বোঁটার উপর খাড়া, ৮-১৫ সেমি চওড়া। ফুলের রং লাল, গোলাপি ও সাদা, সুগন্ধিযুক্ত। হিন্দুদের দুর্গাপূজার প্রিয় ফুল। ফুল ও ফলের ভেষজগুণ আছে। পদ্মের মূল, কান্ড, ফুলের বৃন্ত ও বীজ খাওয়া যায়। পুরাতন গাছের কন্দ এবং বীজের সাহায্যে এদের বংশবিস্তার হয়।

বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ) বারসিক এর সহযোগী কর্মসূচী কর্মকর্তা অমৃত কুমার সরকার বলেন, সাদাপদ্ম ফুল এখন অনেকটায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এর সংরক্ষণ প্রয়োজন। সাদাপদ্ম ঔষধিগুণ সম্পন্ন ফুল। শ্বেত রোগ ভালো করে। হ্নদরোগ ঝুঁকি ও যন্ত্রণা কমায়। কেবল পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে নয়, ভেষজ গুণ সমৃদ্ধ এই পদ্ম সংরক্ষণের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে আমরা এর যে কান্ডটি আছে সেটাকে যদি এনে পুকুরে লাগাই তাহলে এখান থেকে প্রচুর উৎপাদন করা সম্ভব।

এ নিয়ে তানোর উপজেলার পারিশো-দূর্গাপুর গ্রাম থেকে আন্দাশুরা বিল দেখাতে আসা দর্শনার্থী রিগান মন্ডল জানান, এক কথায় অনবদ্য। এমন সুন্দর সাদাপদ্ম দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। তাই বিভিন্ন ভাবে সেলফী তুলেছি মনের মতো করে। আরেক দর্শনার্থী হায়দার আলী জানান, দূর থেকে এমন সুন্দর সাদাপদ্ম থেকে দেখে আর থামতে পারলাম না। তাই ছুটে গিয়ে হাঁটুপানি ভেঙ্গে গোল গোল পদ্মপাতা ও পদ্মফুল তুলে আনলাম। সত্যি এ এক অন রকম অনুভূতি।

ভারত ও ভিয়েতনামের জাতীয় ফুল পদ্ম। প্রবল জ্বরে পদ্মপাতার ওপর শুয়ে থাকলে জ্বরের প্রকোপ কমে। পদ্ম হিন্দুদের কাছে অতি পবিত্র ফুল। প্রাচীন সাহিত্য, শিল্প ও স্থাপত্যকলায় পদ্মের নানামুখী ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বৌদ্ধদের কাছে এই সাদাপদ্ম সৌন্দর্য ও শুভ্রতার প্রতীক।