বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে ব্যক্তির কোনো কিছুই ভালো থাকার কথা নয়। আর যদি তা হয় মানসিক স্বাস্থ্য, তাহলে ব্যক্তিজীবনে এর আরও বেশি প্রভাব পড়ে এবং পারিবারিক জীবন, কর্মজীবন, সামাজিক জীবন, এমনকি বৈবাহিক জীবনেও নেমে আসে দুর্বিষহ যাতনা।
মানসিক সমস্যা ও লক্ষণ : নিজ পরিবারের কেউ বা পরিচিত কেউ হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে গেলে, ভাবনার জগতে ডুবে থাকলে বুঝতে হবে তিনি মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। হঠাৎ কোনো ব্যক্তিকে বেশিরভাগ সময় যদি কল্পনায় ডুবে থাকতে দেখা যায়, বুঝতে হবে তিনি মানসিক সমস্যায় আছেন। যদি কারও কোনো কথায় দ্রুত মন খারাপ হয় এবং ছোটখাটো কথায় উদাসীনতা প্রকাশ পায়, তাহলে ধরে নিতে হবে তিনি মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। পরিবারের সদস্য, পরিচিত বা আপনজনদের সঙ্গে হঠাৎ কথাবার্তা বা মেলামেশার পরিমাণ কমে গেলে এবং সবার সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকলে বুঝতে হবে তিনি ডিপ্রেশনে ভুগছেন। কেউ হঠাৎ নেশাগ্রস্ত হলে অর্থাৎ ধূমপানসহ বিভিন্ন নেশাজাতীয় কিছু সেবন শুরু করলে মনে করতে হবে তিনি মানসিকভাবে সুস্থ নন। এছাড়াও যদি কোনো ব্যক্তিকে আগের তুলনায় বেশি ঘুমোতে অথবা বেশি খেতে দেখা যায়, তখন বুঝতে হবে তিনি মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এসব ছাড়াও মানসিক সমস্যার অন্যান্য লক্ষণ হল- কাজকর্মে ধীরগতি দেখা দেয়া, বিবাহিত জীবনে সম্পর্কের অবনতি ঘটা, আত্মহত্যা করার মনোভাব দেখা দেয়া, সারাক্ষণ যে কোনো তুচ্ছ কারণেও দুশ্চিন্তা বেড়ে যাওয়া, অস্বস্তি, ভয় ও আতঙ্কগ্রস্ত হওয়া, হঠাৎ বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠা, মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া, এমনকি তুচ্ছ কারণে দুশ্চিন্তা বেড়ে যাওয়া, কারও ওপর বিশ্বাস রাখতে না পারা এবং কাউকে অতিশয় বিশ্বাস করা, এমনকি নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলা। এসব লক্ষণের কোনোটি দেখা দিলে একজন ব্যক্তির মাঝে মানসিক রোগ বাসা বেঁধেছে বলে ধারণা করা যায়।
আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা নেই বললেই চলে। আমরা এখনও নিজেদের মানসিক সমস্যার কথা বলতে সংকোচবোধ করি। অথচ অন্যান্য রোগের মতোই মানসিক রোগের চিকিৎসা নেয়া জরুরি। আমাদের দেশে একটি প্রবণতা আছে- যে কোনো মানসিক রোগীকে আমরা পাগল বলি, যে কারণে অনেকেই এ রোগটির কথা সহজে প্রকাশ করেন না বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন না।
মানসিক সমস্যা দূর করতে হলে প্রথমত জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে হবে। নিজেকে সময় দিতে হবে; পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখাসহ নিয়মিত শরীরচর্চা, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। মানসিক রোগকে অবহেলা না করে বা লুকিয়ে না রেখে মনোচিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। মানসিক সমস্যার কারণগুলো শনাক্ত করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং কাউন্সেলিং করাতে হবে।
হুসনা তাসনিমা আনজুম : মহাপরিচালকের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতর