ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে কিছু প্রস্তাব

জাতীয় সংসদের একজন সাবেক সংসদ সদস্য বা আইনপ্রণেতা হিসেবে আমি মনে করি, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন পরিচালনা, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী কমিটি থাকা প্রয়োজন। এ কমিটিতে অর্থ মন্ত্রণালয়সহ উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। কমিটির দায়িত্ব-কর্তব্য হবে বৈশ্বিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জাতীয় উন্নয়নের পরিকল্পনা নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নের কৌশল স্থির করা। মূলত দারিদ্র্য নিরসনের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করা। BOT (Build Operate and Transfer against Toll)-এর মাধ্যমে উন্নত দেশের সারিতে বাংলাদেশের অবস্থান নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বহুমুখী উন্নয়নের জন্য প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর : চট্টগ্রামের কুতুবদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর প্রতিষ্ঠার চলমান কাজ ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন। এতে আমাদের দেশ অনেক রাজস্ব আয় করতে সক্ষম হবে। কারণ, সমুদ্রের নাব্যতার কারণে বড় জাহাজগুলো বাংলাদেশে আসে না। বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন পণ্য নিয়ে বিভিন্ন জাহাজ বন্দরে নোঙর করে; যা কিছু আসে তা গভীর সমুদ্রে নোঙর করে এবং ওই জাহাজ থেকে ফিডার ভেসেলের মাধ্যমে পণ্য খালাস করে সরবরাহ নিতে গিয়ে আমদানিকারকদের প্রতি টনে ১০ থেকে ১৫ ডলার বেশি দিতে হয়। এতে করে পণ্যের দামও অনেক বেড়ে যায়। পণ্যের দাম বাড়লে সাধারণ ভোক্তার ওপর এর প্রভাব পড়ে। তাই কুতুবদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন করলে সেখানে ২.৫০ থেকে ৩.০০ লাখ টন জাহাজ নোঙর করতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ, সিঙ্গাপুরের মতো চট্টগ্রামের কুতুবদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত বড় বড় মাদার ভেসেল নোঙর করতে পারবে। এ প্রকল্পটি জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চীন বা জাপানের অভিজ্ঞ কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে এবং এতে তারা রাজি হবে বলে আমি মনে করি।

বাংলাদেশ বিমান : স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই বাংলাদেশ বিমান লোকসানের সম্মুখীন। প্রয়োজনের তুলনায় অধিক লোক নিয়োগ, অনিয়ম-দুর্নীতি ও সর্বোপরি ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা বাংলাদেশ বিমানের লোকসানের বোঝা ভারী করেছে। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে Emirates Airlines-এর মতো বিদেশি অভিজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির কাছ থেকে বাংলাদেশ বিমানের জন্য আলোচনার মাধ্যমে ম্যানেজমেন্ট হায়ার করা উচিত। প্রায় ১৭ কোটি জনগণের দেশ বাংলাদেশ। এখানে প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি এয়ারলাইন্স আসবে-যাবে। এখানে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা লাভ হবে।

বিমানবন্দর : দেশের বৃহৎ স্বার্থে এবং একটি সর্ববৃহৎ প্রকল্প হিসেবে নতুন এয়ারপোর্ট অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নির্মাণ করার প্রস্তাব করছি; যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখবে। ব্যাংককের অনুরূপ বাংলাদেশ এয়ারপোর্টকে আরও আধুনিকায়ন করা উচিত।

যানজটমুক্ত ঢাকা মহানগর : বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমানে দুঃসহ ও তীব্র যানজট ঢাকা মহানগরীর জন্য বিরাট অভিশাপ। জনজীবন প্রায় স্থবির। এ থেকে মুক্ত হওয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রকাশ থাকে যে, যানজটের কারণে গাড়ি চালু অবস্থায় থেমে থাকতে হয়, এতে করে বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত তেল খরচ হয় এবং সময় নষ্ট হয়। BOT ভিত্তিতে বাস্তবতার নিরিখে সারা ঢাকা মহানগরে প্রয়োজনীয়সংখ্যক ফ্লাইওভার নির্মাণ, মেট্রো-বুলেট ট্রেন চালু করে যানজট নিরসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। পুরনো ড্রেনেজ স্যুয়ারেজের স্থলে আধুনিক স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাপনার জন্য জাপান, কোরিয়া বা চীনের সহায়তা গ্রহণ করা যেতে পারে।

পর্যটন : প্রকৃতির লীলাভূমি হচ্ছে বাংলাদেশ। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত বিশ্বে বৃহত্তম ও অতুলনীয়। সুন্দরবন হচ্ছে বিশ্ববাসীর কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। আমাদের রয়েছে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ভাণ্ডার। সুতরাং, পর্যটন শিল্পের বিকাশের সুযোগ রয়েছে অপরিসীম। তাছাড়া কুয়াকাটা, রাঙ্গামাটি ও সেন্টমার্টিনকেও পর্যটন নগরী হিসেবে তোলা যেতে পারে। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সমুদ্র সৈকতজুড়ে পর্যটন শিল্পকে আকর্ষণীয় ও আধুনিকায়ন করা যেতে পারে। জাপানের সঙ্গে ২০ বছর চুক্তি করে BOT-এর মাধ্যমে পর্যটন শিল্পকে সমৃদ্ধ করা যেতে পারে।

পর্যটন শিল্পের আরও প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন পর্যটন এলাকাকে ব্যাংকক ও পাতায়ার মতো ফ্রি জোন করা যেতে পারে। এতে করে বিদেশিরা বাংলাদেশে পর্যটনে আকৃষ্ট হয়ে ইউরোপ, আমেরিকার মতো আমাদের দেশেও ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আসবে এবং বিপুল পরিমাণে অর্থ ব্যয় করবে। এর মাধ্যমে দেশ বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারে। পাশাপাশি রাজস্ব খাতেও আয় বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া বিদেশি যেসব কোম্পানি বাংলাদেশে বিভিন্ন সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ করছে, তাদেরও বিনোদনের একটি অন্যতম স্থান হিসেবে পরিণত হবে। এতে তাদের কাজের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা ও নদীমাতৃক দেশ। এর সৌন্দর্য সারা বিশ্বে অতুলনীয়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক : দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে বেগবান করা এবং স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে বিশ্বমানে উন্নীত করা অতীব প্রয়োজন। ঢাকার কাঁচপুর হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ২৫০ কিলোমিটার রাস্তায় বুলেট ট্রেন স্থাপনসহ ছয় লেনের মহাসড়ক BOT-এর মাধ্যমে উন্নয়ন করা অতীব জরুরি। বুলেট ট্রেন স্থাপন করলে তা ঢাকার কাঁচপুর থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ২৫০ কিলোমিটার রাস্তা মাত্র ৪০ মিনিটে যাতায়াত করতে পারবে। এতে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গিয়েও মানুষ অফিস এবং বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করতে পারবে। তাতে করে ঢাকা শহরের ওপর চাপ কমবে। বুলেট ট্রেনের ব্যাপারে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ, যেমন- জার্মানি, কোরিয়া ও চীনের বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসতে প্রতি ট্রাকের ভাড়া ৬ থেকে ৭ হাজার টাকার মতো। অথচ ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাক ভাড়া ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা দিতে হয়। তাতে করে পণ্যের খরচ অনেক বেশি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তারা ভোগান্তির শিকার হয়। যাত্রীবাহী গাড়ির জন্য আলাদা লেন নির্মাণ প্রয়োজন। এতে করে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই লেনের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে যাত্রীরা পৌঁছাতে সক্ষম হবে। মনে রাখতে হবে, সময় বাঁচলে অনেক কাজের গতি বৃদ্ধি পাবে।

সড়ক ও জনপথ : দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ও নির্মাণাধীন সড়ক ও জনপথের কাজ অত্যন্ত নিম্নমানের। প্রধান কারণ হচ্ছে, দরপত্র আহ্বান থেকে শুরু করে সড়ক ও জনপথ নির্মাণের কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি; যার ফলে প্রতি বছর সড়ক ও জনপথ মেরামতে প্রচুর পরিমাণ অর্থ অযথা ব্যয় করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যে কোনো সড়ক-মহাসড়ক যেন আরসিসি দ্বারা নির্মাণ করা হয়। এতে সড়ক-মহাসড়কের স্থায়িত্বকাল দীর্ঘমেয়াদি হবে এবং বছর বছর সংস্কার ও মেরামত করতে হবে না।

এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া, চীন বা কোরিয়ার কোনো অভিজ্ঞ কোম্পানিকে সড়ক ও জনপথ নির্মাণের কাজ দিলে একদিকে আর্থিক সাশ্রয় হবে, অপরদিকে কাজের মানও উন্নত হবে। ভালো উদাহরণ হচ্ছে, উত্তরবঙ্গে যমুনা সেতুর পরে কোরিয়ান কোম্পানি যে রাস্তা তৈরি করেছে তা এখনও অক্ষত অবস্থায় আছে, কারণ কাজের মান ছিল অত্যন্ত ভালো। তাছাড়া সড়ক, মহাসড়ক, শাখা সড়কগুলো পিচ দ্বারা তৈরি না করে আরসিসি ঢালাই করে নির্মাণ করলে বছরের পর বছর স্থায়ী হবে।

আবাসিক প্রকল্প : ঢাকা-চট্টগ্রাম ছয় লেনের রাস্তার মতো বাংলাদেশের যেসব ছয় লেনের সড়ক রয়েছে, ওই সড়কের ৫০০ ফুট দূরত্বের মধ্যে একটি করে স্যাটেলাইট টাউন গড়ে তোলা যেতে পারে।

বিদেশে আমাদের দেশের রাষ্ট্রদূতদের নির্দেশ দেয়া হোক, যাতে করে বিদেশি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহায়তায় বিনিয়োগকারীদের নিয়ে মিটিং করে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য উৎসাহিত করা হয়। BOT ভিত্তিতে বিনিয়োগ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত হবে।

সারা দেশে ইঙঞ ভিত্তিতে সড়ক, মহাসড়ক, ব্রিজ, বড় বড় স্থাপনা তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।

স্বাধীনতার পর থেকে সাটুরিয়া ও শিমুলিয়া ফেরিঘাট ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যে নদীপথ দিয়ে ফেরি চলাচল করে, বর্তমান নাব্যতার কারণে সেখানে প্রায়ই ফেরি চলাচলে অসুবিধা হয়। প্রায় ১৭ কোটি জনগণের বাংলাদেশের এ ফেরিঘাটটি ওই অঞ্চলের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। ফেরি বন্ধ থাকার সঙ্গে সঙ্গে পণ্যবাহী শত শত ট্রাক আটকা পড়ে যায়। এতে অনেক পচনশীল পণ্য থাকে, যা যথাসময়ে বিভিন্ন আড়তে পৌঁছাতে পারে না এবং ট্রাকের মধ্যেই অনেক পণ্য পচে যায়। এতে ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হয়। তাছাড়া শত শত বাস ও প্রাইভেট পরিবহনের যাত্রীদের ভোগান্তির সীমা থাকে না। তাই ওই এলাকায় BOT-এর মাধ্যমে ব্রিজ নির্মাণ করা অতীব জরুরি বলে আমি মনে করছি। ওই স্থানে অনেক আগেই ব্রিজ নির্মাণ করা উচিত ছিল। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এর থেকে বড় বড় নদীর ওপর দিয়ে BOT-এর মাধ্যমে ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে। সেই আলোকে আমাদের দেশেও করতে কোনো অসুবিধা নেই। শুধু নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার লক্ষ্য অর্জন করতে হবে।

Private Public Partnership (PPP)-এর মাধ্যমে বিভিন্ন বেসরকারি শিল্পপতির সঙ্গে সমন্বয় করে যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন কলকারখানা ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করার জন্য সরকার একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বাস্তবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন বিভিন্ন কারণেই সম্ভব হবে না। তার মধ্যে অন্যতম হল বেসরকারি শিল্পপতিদের কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ নেই যে, তারা সরকারের সঙ্গে পিপিপির মাধ্যমে কোনো প্রকল্প কিংবা কোনো কাজ যৌথভাবে করবে। তাছাড়া তাদের কোনো সরঞ্জামও নেই।

সারা দেশে রেল ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত নাজুক ও মানসম্মত না হওয়া এবং দীর্ঘদিনের পুরনো রেললাইন সংস্কার না করার কারণে বেশিরভাগ জেলাতেই রেল চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, যদিও সরকার রেললাইনের সংস্কার, নতুন লাইন স্থাপন, মিটারগেজকে ব্রডগেজে রূপান্তর, উন্নত ইঞ্জিন ও বগি সংগ্রহ করে রেলকে লাভজনক ও মানসম্মত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রেল ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত হওয়া উচিত। সেই আলোকে BOT-এর মাধ্যমে সারা দেশে বুলেট ট্রেন স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এখানে আমাদের কোনো বিনিয়োগ করা লাগবে না। জাপান, কোরিয়া, চায়নাসহ আরও উন্নত দেশগুলো BOT-এর মাধ্যমে আমাদের দেশর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে আগ্রহী।

বর্তমান সরকার উত্তরা থেকে মিরপুর, আগারগাঁও (জংশন), ফার্মগেট, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রেলের কাজ প্রায় শেষের পথে এগিয়ে এনেছে; কিন্তু এসব রুট ছাড়াও ঢাকা শহরে বড় সড়কগুলোর উপর দিয়ে মেট্রো রেলের লাইন সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। এতে করে ঢাকা শহরের মানুষের যোগাযোগব্যবস্থা অতি সহজ হবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে গাড়ি যানজটে থেকে কাজের সময় নষ্ট হয়, অন্যদিকে যানজটে বসে থেকে বিপুল পরিমাণে তেল এবং গ্যাস অপচয় হয়। ফলে দেশের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এর থেকেও পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে।

আমাদের দেশ নদীমাতৃক। অনেক নদী রয়েছে; কিন্তু ওইসব নদীর নাব্য কমে গেছে। তাছাড়া নদীভাঙনের কারণে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়ে বাড়িঘর, চাষাবাদের জমি, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নদীখনন ও নদীর পাড়ে বাঁধ (দেয়াল) দেয়া উচিত। প্রয়োজনে জাপান, কোরিয়া, চীনের অভিজ্ঞ কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এসব প্রকল্প আমাদের পক্ষে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। প্রতিটি নদীর বাঁধে আরসিসি ওয়াল নির্মাণ জরুরি। তাহলে আমাদের দেশে বন্যায় বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হবে না। নদীর পানি ভালো থাকবে এবং তিস্তার পানির প্রয়োজন হবে না। আমাদের নদীগুলোতে সর্বদাই পানি থাকবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, BOT-এর মাধ্যমে দেশে যেসব বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে তাতে বাংলাদেশের কোনো অর্থই ব্যয় হবে না। শুধু নীতিগত সিদ্ধান্ত ও সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। যেমনটি করেছে মালয়েশিয়া।

পরিশেষে জাতির পিতার সুযোগ্যকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমি বিনয়ের সঙ্গে জানাচ্ছি, আপনি এদেশের অনেক উন্নয়ন করেছেন। উল্লেখিত প্রস্তাবনাগুলো আপনার সদয় বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করলাম। আপনি এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করলে দেশ ও জাতি সারাজীবন আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে।

এম এ হাসেম : সাবেক সংসদ সদস্য; প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি এবং চেয়ারম্যান, পারটেক্স গ্রুপ

 

facebook sharing button
messenger sharing button
twitter sharing button
pinterest sharing button
linkedin sharing button
Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে কিছু প্রস্তাব

আপডেট টাইম : ০৪:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২০

জাতীয় সংসদের একজন সাবেক সংসদ সদস্য বা আইনপ্রণেতা হিসেবে আমি মনে করি, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন পরিচালনা, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী কমিটি থাকা প্রয়োজন। এ কমিটিতে অর্থ মন্ত্রণালয়সহ উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। কমিটির দায়িত্ব-কর্তব্য হবে বৈশ্বিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জাতীয় উন্নয়নের পরিকল্পনা নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নের কৌশল স্থির করা। মূলত দারিদ্র্য নিরসনের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করা। BOT (Build Operate and Transfer against Toll)-এর মাধ্যমে উন্নত দেশের সারিতে বাংলাদেশের অবস্থান নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বহুমুখী উন্নয়নের জন্য প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর : চট্টগ্রামের কুতুবদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর প্রতিষ্ঠার চলমান কাজ ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন। এতে আমাদের দেশ অনেক রাজস্ব আয় করতে সক্ষম হবে। কারণ, সমুদ্রের নাব্যতার কারণে বড় জাহাজগুলো বাংলাদেশে আসে না। বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন পণ্য নিয়ে বিভিন্ন জাহাজ বন্দরে নোঙর করে; যা কিছু আসে তা গভীর সমুদ্রে নোঙর করে এবং ওই জাহাজ থেকে ফিডার ভেসেলের মাধ্যমে পণ্য খালাস করে সরবরাহ নিতে গিয়ে আমদানিকারকদের প্রতি টনে ১০ থেকে ১৫ ডলার বেশি দিতে হয়। এতে করে পণ্যের দামও অনেক বেড়ে যায়। পণ্যের দাম বাড়লে সাধারণ ভোক্তার ওপর এর প্রভাব পড়ে। তাই কুতুবদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন করলে সেখানে ২.৫০ থেকে ৩.০০ লাখ টন জাহাজ নোঙর করতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ, সিঙ্গাপুরের মতো চট্টগ্রামের কুতুবদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত বড় বড় মাদার ভেসেল নোঙর করতে পারবে। এ প্রকল্পটি জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চীন বা জাপানের অভিজ্ঞ কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে এবং এতে তারা রাজি হবে বলে আমি মনে করি।

বাংলাদেশ বিমান : স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই বাংলাদেশ বিমান লোকসানের সম্মুখীন। প্রয়োজনের তুলনায় অধিক লোক নিয়োগ, অনিয়ম-দুর্নীতি ও সর্বোপরি ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা বাংলাদেশ বিমানের লোকসানের বোঝা ভারী করেছে। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে Emirates Airlines-এর মতো বিদেশি অভিজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির কাছ থেকে বাংলাদেশ বিমানের জন্য আলোচনার মাধ্যমে ম্যানেজমেন্ট হায়ার করা উচিত। প্রায় ১৭ কোটি জনগণের দেশ বাংলাদেশ। এখানে প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি এয়ারলাইন্স আসবে-যাবে। এখানে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা লাভ হবে।

বিমানবন্দর : দেশের বৃহৎ স্বার্থে এবং একটি সর্ববৃহৎ প্রকল্প হিসেবে নতুন এয়ারপোর্ট অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নির্মাণ করার প্রস্তাব করছি; যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখবে। ব্যাংককের অনুরূপ বাংলাদেশ এয়ারপোর্টকে আরও আধুনিকায়ন করা উচিত।

যানজটমুক্ত ঢাকা মহানগর : বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমানে দুঃসহ ও তীব্র যানজট ঢাকা মহানগরীর জন্য বিরাট অভিশাপ। জনজীবন প্রায় স্থবির। এ থেকে মুক্ত হওয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রকাশ থাকে যে, যানজটের কারণে গাড়ি চালু অবস্থায় থেমে থাকতে হয়, এতে করে বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত তেল খরচ হয় এবং সময় নষ্ট হয়। BOT ভিত্তিতে বাস্তবতার নিরিখে সারা ঢাকা মহানগরে প্রয়োজনীয়সংখ্যক ফ্লাইওভার নির্মাণ, মেট্রো-বুলেট ট্রেন চালু করে যানজট নিরসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। পুরনো ড্রেনেজ স্যুয়ারেজের স্থলে আধুনিক স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাপনার জন্য জাপান, কোরিয়া বা চীনের সহায়তা গ্রহণ করা যেতে পারে।

পর্যটন : প্রকৃতির লীলাভূমি হচ্ছে বাংলাদেশ। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত বিশ্বে বৃহত্তম ও অতুলনীয়। সুন্দরবন হচ্ছে বিশ্ববাসীর কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। আমাদের রয়েছে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ভাণ্ডার। সুতরাং, পর্যটন শিল্পের বিকাশের সুযোগ রয়েছে অপরিসীম। তাছাড়া কুয়াকাটা, রাঙ্গামাটি ও সেন্টমার্টিনকেও পর্যটন নগরী হিসেবে তোলা যেতে পারে। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সমুদ্র সৈকতজুড়ে পর্যটন শিল্পকে আকর্ষণীয় ও আধুনিকায়ন করা যেতে পারে। জাপানের সঙ্গে ২০ বছর চুক্তি করে BOT-এর মাধ্যমে পর্যটন শিল্পকে সমৃদ্ধ করা যেতে পারে।

পর্যটন শিল্পের আরও প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন পর্যটন এলাকাকে ব্যাংকক ও পাতায়ার মতো ফ্রি জোন করা যেতে পারে। এতে করে বিদেশিরা বাংলাদেশে পর্যটনে আকৃষ্ট হয়ে ইউরোপ, আমেরিকার মতো আমাদের দেশেও ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আসবে এবং বিপুল পরিমাণে অর্থ ব্যয় করবে। এর মাধ্যমে দেশ বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারে। পাশাপাশি রাজস্ব খাতেও আয় বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া বিদেশি যেসব কোম্পানি বাংলাদেশে বিভিন্ন সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ করছে, তাদেরও বিনোদনের একটি অন্যতম স্থান হিসেবে পরিণত হবে। এতে তাদের কাজের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা ও নদীমাতৃক দেশ। এর সৌন্দর্য সারা বিশ্বে অতুলনীয়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক : দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে বেগবান করা এবং স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে বিশ্বমানে উন্নীত করা অতীব প্রয়োজন। ঢাকার কাঁচপুর হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ২৫০ কিলোমিটার রাস্তায় বুলেট ট্রেন স্থাপনসহ ছয় লেনের মহাসড়ক BOT-এর মাধ্যমে উন্নয়ন করা অতীব জরুরি। বুলেট ট্রেন স্থাপন করলে তা ঢাকার কাঁচপুর থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ২৫০ কিলোমিটার রাস্তা মাত্র ৪০ মিনিটে যাতায়াত করতে পারবে। এতে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গিয়েও মানুষ অফিস এবং বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করতে পারবে। তাতে করে ঢাকা শহরের ওপর চাপ কমবে। বুলেট ট্রেনের ব্যাপারে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ, যেমন- জার্মানি, কোরিয়া ও চীনের বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসতে প্রতি ট্রাকের ভাড়া ৬ থেকে ৭ হাজার টাকার মতো। অথচ ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাক ভাড়া ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা দিতে হয়। তাতে করে পণ্যের খরচ অনেক বেশি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তারা ভোগান্তির শিকার হয়। যাত্রীবাহী গাড়ির জন্য আলাদা লেন নির্মাণ প্রয়োজন। এতে করে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই লেনের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে যাত্রীরা পৌঁছাতে সক্ষম হবে। মনে রাখতে হবে, সময় বাঁচলে অনেক কাজের গতি বৃদ্ধি পাবে।

সড়ক ও জনপথ : দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ও নির্মাণাধীন সড়ক ও জনপথের কাজ অত্যন্ত নিম্নমানের। প্রধান কারণ হচ্ছে, দরপত্র আহ্বান থেকে শুরু করে সড়ক ও জনপথ নির্মাণের কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি; যার ফলে প্রতি বছর সড়ক ও জনপথ মেরামতে প্রচুর পরিমাণ অর্থ অযথা ব্যয় করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যে কোনো সড়ক-মহাসড়ক যেন আরসিসি দ্বারা নির্মাণ করা হয়। এতে সড়ক-মহাসড়কের স্থায়িত্বকাল দীর্ঘমেয়াদি হবে এবং বছর বছর সংস্কার ও মেরামত করতে হবে না।

এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া, চীন বা কোরিয়ার কোনো অভিজ্ঞ কোম্পানিকে সড়ক ও জনপথ নির্মাণের কাজ দিলে একদিকে আর্থিক সাশ্রয় হবে, অপরদিকে কাজের মানও উন্নত হবে। ভালো উদাহরণ হচ্ছে, উত্তরবঙ্গে যমুনা সেতুর পরে কোরিয়ান কোম্পানি যে রাস্তা তৈরি করেছে তা এখনও অক্ষত অবস্থায় আছে, কারণ কাজের মান ছিল অত্যন্ত ভালো। তাছাড়া সড়ক, মহাসড়ক, শাখা সড়কগুলো পিচ দ্বারা তৈরি না করে আরসিসি ঢালাই করে নির্মাণ করলে বছরের পর বছর স্থায়ী হবে।

আবাসিক প্রকল্প : ঢাকা-চট্টগ্রাম ছয় লেনের রাস্তার মতো বাংলাদেশের যেসব ছয় লেনের সড়ক রয়েছে, ওই সড়কের ৫০০ ফুট দূরত্বের মধ্যে একটি করে স্যাটেলাইট টাউন গড়ে তোলা যেতে পারে।

বিদেশে আমাদের দেশের রাষ্ট্রদূতদের নির্দেশ দেয়া হোক, যাতে করে বিদেশি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহায়তায় বিনিয়োগকারীদের নিয়ে মিটিং করে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য উৎসাহিত করা হয়। BOT ভিত্তিতে বিনিয়োগ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত হবে।

সারা দেশে ইঙঞ ভিত্তিতে সড়ক, মহাসড়ক, ব্রিজ, বড় বড় স্থাপনা তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।

স্বাধীনতার পর থেকে সাটুরিয়া ও শিমুলিয়া ফেরিঘাট ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যে নদীপথ দিয়ে ফেরি চলাচল করে, বর্তমান নাব্যতার কারণে সেখানে প্রায়ই ফেরি চলাচলে অসুবিধা হয়। প্রায় ১৭ কোটি জনগণের বাংলাদেশের এ ফেরিঘাটটি ওই অঞ্চলের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। ফেরি বন্ধ থাকার সঙ্গে সঙ্গে পণ্যবাহী শত শত ট্রাক আটকা পড়ে যায়। এতে অনেক পচনশীল পণ্য থাকে, যা যথাসময়ে বিভিন্ন আড়তে পৌঁছাতে পারে না এবং ট্রাকের মধ্যেই অনেক পণ্য পচে যায়। এতে ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হয়। তাছাড়া শত শত বাস ও প্রাইভেট পরিবহনের যাত্রীদের ভোগান্তির সীমা থাকে না। তাই ওই এলাকায় BOT-এর মাধ্যমে ব্রিজ নির্মাণ করা অতীব জরুরি বলে আমি মনে করছি। ওই স্থানে অনেক আগেই ব্রিজ নির্মাণ করা উচিত ছিল। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এর থেকে বড় বড় নদীর ওপর দিয়ে BOT-এর মাধ্যমে ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে। সেই আলোকে আমাদের দেশেও করতে কোনো অসুবিধা নেই। শুধু নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার লক্ষ্য অর্জন করতে হবে।

Private Public Partnership (PPP)-এর মাধ্যমে বিভিন্ন বেসরকারি শিল্পপতির সঙ্গে সমন্বয় করে যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন কলকারখানা ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করার জন্য সরকার একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বাস্তবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন বিভিন্ন কারণেই সম্ভব হবে না। তার মধ্যে অন্যতম হল বেসরকারি শিল্পপতিদের কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ নেই যে, তারা সরকারের সঙ্গে পিপিপির মাধ্যমে কোনো প্রকল্প কিংবা কোনো কাজ যৌথভাবে করবে। তাছাড়া তাদের কোনো সরঞ্জামও নেই।

সারা দেশে রেল ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত নাজুক ও মানসম্মত না হওয়া এবং দীর্ঘদিনের পুরনো রেললাইন সংস্কার না করার কারণে বেশিরভাগ জেলাতেই রেল চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, যদিও সরকার রেললাইনের সংস্কার, নতুন লাইন স্থাপন, মিটারগেজকে ব্রডগেজে রূপান্তর, উন্নত ইঞ্জিন ও বগি সংগ্রহ করে রেলকে লাভজনক ও মানসম্মত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রেল ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত হওয়া উচিত। সেই আলোকে BOT-এর মাধ্যমে সারা দেশে বুলেট ট্রেন স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এখানে আমাদের কোনো বিনিয়োগ করা লাগবে না। জাপান, কোরিয়া, চায়নাসহ আরও উন্নত দেশগুলো BOT-এর মাধ্যমে আমাদের দেশর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে আগ্রহী।

বর্তমান সরকার উত্তরা থেকে মিরপুর, আগারগাঁও (জংশন), ফার্মগেট, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রেলের কাজ প্রায় শেষের পথে এগিয়ে এনেছে; কিন্তু এসব রুট ছাড়াও ঢাকা শহরে বড় সড়কগুলোর উপর দিয়ে মেট্রো রেলের লাইন সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। এতে করে ঢাকা শহরের মানুষের যোগাযোগব্যবস্থা অতি সহজ হবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে গাড়ি যানজটে থেকে কাজের সময় নষ্ট হয়, অন্যদিকে যানজটে বসে থেকে বিপুল পরিমাণে তেল এবং গ্যাস অপচয় হয়। ফলে দেশের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এর থেকেও পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে।

আমাদের দেশ নদীমাতৃক। অনেক নদী রয়েছে; কিন্তু ওইসব নদীর নাব্য কমে গেছে। তাছাড়া নদীভাঙনের কারণে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়ে বাড়িঘর, চাষাবাদের জমি, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নদীখনন ও নদীর পাড়ে বাঁধ (দেয়াল) দেয়া উচিত। প্রয়োজনে জাপান, কোরিয়া, চীনের অভিজ্ঞ কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এসব প্রকল্প আমাদের পক্ষে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। প্রতিটি নদীর বাঁধে আরসিসি ওয়াল নির্মাণ জরুরি। তাহলে আমাদের দেশে বন্যায় বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হবে না। নদীর পানি ভালো থাকবে এবং তিস্তার পানির প্রয়োজন হবে না। আমাদের নদীগুলোতে সর্বদাই পানি থাকবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, BOT-এর মাধ্যমে দেশে যেসব বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে তাতে বাংলাদেশের কোনো অর্থই ব্যয় হবে না। শুধু নীতিগত সিদ্ধান্ত ও সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। যেমনটি করেছে মালয়েশিয়া।

পরিশেষে জাতির পিতার সুযোগ্যকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমি বিনয়ের সঙ্গে জানাচ্ছি, আপনি এদেশের অনেক উন্নয়ন করেছেন। উল্লেখিত প্রস্তাবনাগুলো আপনার সদয় বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করলাম। আপনি এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করলে দেশ ও জাতি সারাজীবন আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে।

এম এ হাসেম : সাবেক সংসদ সদস্য; প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি এবং চেয়ারম্যান, পারটেক্স গ্রুপ

 

facebook sharing button
messenger sharing button
twitter sharing button
pinterest sharing button
linkedin sharing button