বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বিপুলসংখ্যক প্রাণহানি, এরপর নিমতলীর অদূরে চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকার অগ্নিকাণ্ডে অনেক প্রাণহানির পরও সেখান থেকে রাসায়নিক গুদাম-কারখানা স্থানান্তরিত হয়নি।
এতে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দেবে-এটাই স্বাভাবিক। বস্তুত ‘বোমা’র মুখেই সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ বসবাস করছে। ১০ বছর আগে নিমতলী ট্র্যাজেডির পর সেখান থেকে রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কিন্তু স্থান নির্ধারণের পরও নানা অজুহাতে অদ্যাবধি স্থানান্তরিত হয়নি সেখানকার রাসায়নিক গুদাম-কারখানা। গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, সরকারের সংশ্লিষ্টরা এখনও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছেন না-কবে নাগাদ সরানো হবে এসব গুদাম-কারখানা।
লক্ষ করা যাচ্ছে, দেশে বড় কোনো দুর্ঘটনা বা দুর্যোগ হলেই শুধু তৎপর হয়ে ওঠেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা। গঠিত হয় নানা কমিটি ও কমিশন। এরপর দেয়া হয় একের পর এক সুপারিশ ও নির্দেশনা। কিন্তু পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই সেসব তৎপরতা থেমে যায়-এমনটি কাম্য নয়।
২০১০ সালে নিমতলী অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে পুরান ঢাকার রাসায়নিক ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন এবং নতুন লাইসেন্স প্রদান বন্ধ রেখেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু লাইসেন্স ছাড়াই চলছে রাসায়নিক ব্যবসা। ওইসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও তারা নতুন করে সংযোগ নিয়েছে।
আর ভবন মালিকরাও বেশি ভাড়া পাওয়ায় চুপ থাকছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাসায়নিক গুদাম, কারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সাইন বোর্ড সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে পুরান ঢাকায় কটি রাসায়নিক গুদাম, কারখানা বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, তা খুঁজে বের করতে তিনটি টিম গঠন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। অতীতে রাসায়নিক গুদাম ও কারাখানা সরাতে গঠিত কমিটির কার্যক্রম চলেছে ‘কচ্ছপ গতিতে’। গঠিত নতুন কমিটির কার্যক্রম কতটা গতিশীল হয়-সেটাই দেখার বিষয়।
নিমতলী ট্র্যাজেডির প্রতিটি বর্ষপূর্তিতে আমরা বলে এসেছি, আর কটি অগ্নিকাণ্ডের পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে? পুরান ঢাকাবাসীকে এই ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করতে হবে আর কতদিন?
আমাদের এসব কথা আর কতদিন বলতে হবে? জানা গেছে, পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদাম-কারখানাগুলো মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে এবং ঢাকার শ্যামপুর ও গাজীপুরের টঙ্গীতে ২০২২ সালের আগে স্থানান্তর করা সম্ভব হবে না। কাজেই এ সময় পর্যন্ত সেখানকার রাসায়নিক ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে ও নজরদারিতে রাখতে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা সেখানে আর কোনো অগ্নিকাণ্ড বা দুর্ঘটনা দেখতে চাই না।