ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুখের স্বাস্থ্যরক্ষায় অবহেলা নয়

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ আজ ২০ মার্চ ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ ডে বা বিশ্ব মুখগহ্বর স্বাস্থ্য দিবস। দিবসটির এবারের মূল প্রতিপাদ্য-‘Be proud of your mouth’। এর মধ্যদিয়ে জনগণকে মুখের স্বাস্থ্য রক্ষায় আত্মবিশ্বাসী হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। গবেষণা বলছে, মুখের সঠিক যত্ন মুখগহ্বরে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতায়ও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই মুখের যত্নে আর অবহেলা নয়।

ক্যারিজ ও মাড়ি রোগ : দাঁতে গর্ত বা ডেন্টাল ক্যারিজ হয়নি-এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। নিঃসৃত লালার বিশেষ উপাদান দাঁতের বিভিন্ন পৃষ্ঠে আঠালোভাবে লেগে থাকে। নিয়মিত মুখ পরিষ্কার করা না-হলে সহজেই মুখের মধ্যকার সুপ্ত অগণিত জীবাণু, বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়া গর্তের মধ্যে জমে সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং মিষ্টিজাতীয় শর্করা খাদ্যকণা, কোমল পানীয়, আলুর চিপস প্রভৃতি খাবারকে কাজে লাগিয়ে এসিড তৈরি করে, যা দাঁতের শক্ত প্রতিরক্ষা আবরণকে ক্ষয় করে ডেন্টাল ক্যারিজ সৃষ্টি করে। একবার গর্ত শুরু হলে সেটি বন্ধ হয় না, যতক্ষণ-না ফিলিং চিকিৎসার মাধ্যমে গর্ত পূরণ করা হয়। তবে শুরুতে উপসর্গ না-থাকায় চলমান ক্ষয় থেকে সংক্রমণ ভেতরের মজ্জাকে আক্রান্ত করে ব্যথা সৃষ্টি করে আর ধীরে ধীরে সংক্রমণ দাঁতের গোড়ার হাড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তখন রুট ক্যানেলসহ নানা জটিল চিকিৎসার, এমনকি দাঁতটিকে ফেলে দেওয়ারও প্রয়োজন পড়তে পারে।

অন্যদিকে দাঁত ও মাড়ির সংযোগস্থলে জমাকৃত জীবাণু থেকে মাড়িতে নানা ধরনের প্রদাহের সৃষ্টি হয়। লালা থেকে আগত বিভিন্ন অজৈব পদার্থ এর সঙ্গে মিশে শক্ত পাথর বা ক্যালকুলাসে রূপ নেয়, যা মাড়িকে দুর্বল করে। ফলে মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে ও মাড়ি ফুলে যায়। সঠিক চিকিৎসা না-পেলে দাঁতের ধারক হাড় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে দাঁতকে নড়িয়ে দেয়। শারীরিক নানা রোগের কারণেও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে পারে, নিশ্বাসে দুর্গন্ধ হতে পারে। এসব রোগ জিইয়ে রাখলে শুধু দাঁতই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, এ থেকে সংক্রমণ রক্তে মিশে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে যে কোনো অঙ্গ যেমন: হার্ট, মস্তিষ্ক, ফুসফুস, রক্ত ও হাড়। আবার তা অনেক রোগকে প্রভাবিতও করতে পারে যেমন, ডায়াবেটিস।

বিভিন্ন ক্ষত : হরমোনের তারতম্য, অপুষ্টি, রক্তস্বল্পতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, মানসিক চাপ, বিভিন্ন ক্রনিক রোগ এবং পান, জর্দা, গুল ও ধূমপানের কারণে মুখে অনেক ধরনের ক্ষত বা ঘা দেখা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দু-সপ্তাহের মধ্যে ক্ষতগুলো ভালো হয়ে যায়। তবে এর বেশি সময় স্থায়ী হলে অবহেলার সুযোগ নেই। কারণ, অবহেলিত ঘা ক্যানসারের মতো ভয়াবহ রোগের জন্ম নিতে পারে।

অতি সংবেদনশীলতা : জোরে জোরে বা দীর্ঘ সময় নিয়মবহির্ভূত দাঁত ব্রাশ, কয়লা বা ছাই ব্যবহার, দাঁতে দাঁত ঘষার অভ্যাস, দাঁতে সুতা কাটা, দাঁত দিয়ে কোমল পানীয়র বোতলের কর্ক বা ক্লিপ খোলা, অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিক-অ্যাসিডিটি থেকে দাঁতের স্তর ক্ষয় হয়ে দাঁত ঠান্ডা বা মিষ্টি খাবারে শিরশির করতে পারে।

কসমেটিক চিকিৎসা : চোয়াল ও দাঁতের সামঞ্জস্য না-থাকলে দাঁত উঁচু-নিচু, ফাঁকা হতে পারে। অন্যদিকে মুখের অভ্যন্তরীণ কোনো কারণ, বিশেষ কোনো খাবার বা শারীরিক কোনো রোগে দাঁত বিবর্ণ হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে কসমেটিক ডেন্টাল চিকিৎসা এখন শতভাগ সফল। এ ছাড়াও দুর্ঘটনা, চোয়ালের হাড় ভাঙা, চোয়ালের জয়েন্টে সমস্যা, মুখ শুষ্কতা, স্নায়ু রোগসহ নানা কারণে রোগীকে কষ্ট পেতে হয়। এ থেকে রক্ষা পেতে সঠিক নিয়মে নিয়মিত দাঁতের সব পৃষ্ঠ পরিষ্কার রাখতে হবে। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে মিষ্টিজাতীয় খাদ্যের পরিবর্তে স্বাস্থ্যবান্ধব খাবারে অভ্যস্থ হতে হবে, সর্বোপরি ছয় মাস অন্তর অনুমোদিত ডেন্টাল চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ : ডেন্টাল চিকিৎসক

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

মুখের স্বাস্থ্যরক্ষায় অবহেলা নয়

আপডেট টাইম : ০৮:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ মার্চ ২০২১

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ আজ ২০ মার্চ ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ ডে বা বিশ্ব মুখগহ্বর স্বাস্থ্য দিবস। দিবসটির এবারের মূল প্রতিপাদ্য-‘Be proud of your mouth’। এর মধ্যদিয়ে জনগণকে মুখের স্বাস্থ্য রক্ষায় আত্মবিশ্বাসী হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। গবেষণা বলছে, মুখের সঠিক যত্ন মুখগহ্বরে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতায়ও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই মুখের যত্নে আর অবহেলা নয়।

ক্যারিজ ও মাড়ি রোগ : দাঁতে গর্ত বা ডেন্টাল ক্যারিজ হয়নি-এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। নিঃসৃত লালার বিশেষ উপাদান দাঁতের বিভিন্ন পৃষ্ঠে আঠালোভাবে লেগে থাকে। নিয়মিত মুখ পরিষ্কার করা না-হলে সহজেই মুখের মধ্যকার সুপ্ত অগণিত জীবাণু, বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়া গর্তের মধ্যে জমে সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং মিষ্টিজাতীয় শর্করা খাদ্যকণা, কোমল পানীয়, আলুর চিপস প্রভৃতি খাবারকে কাজে লাগিয়ে এসিড তৈরি করে, যা দাঁতের শক্ত প্রতিরক্ষা আবরণকে ক্ষয় করে ডেন্টাল ক্যারিজ সৃষ্টি করে। একবার গর্ত শুরু হলে সেটি বন্ধ হয় না, যতক্ষণ-না ফিলিং চিকিৎসার মাধ্যমে গর্ত পূরণ করা হয়। তবে শুরুতে উপসর্গ না-থাকায় চলমান ক্ষয় থেকে সংক্রমণ ভেতরের মজ্জাকে আক্রান্ত করে ব্যথা সৃষ্টি করে আর ধীরে ধীরে সংক্রমণ দাঁতের গোড়ার হাড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তখন রুট ক্যানেলসহ নানা জটিল চিকিৎসার, এমনকি দাঁতটিকে ফেলে দেওয়ারও প্রয়োজন পড়তে পারে।

অন্যদিকে দাঁত ও মাড়ির সংযোগস্থলে জমাকৃত জীবাণু থেকে মাড়িতে নানা ধরনের প্রদাহের সৃষ্টি হয়। লালা থেকে আগত বিভিন্ন অজৈব পদার্থ এর সঙ্গে মিশে শক্ত পাথর বা ক্যালকুলাসে রূপ নেয়, যা মাড়িকে দুর্বল করে। ফলে মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে ও মাড়ি ফুলে যায়। সঠিক চিকিৎসা না-পেলে দাঁতের ধারক হাড় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে দাঁতকে নড়িয়ে দেয়। শারীরিক নানা রোগের কারণেও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে পারে, নিশ্বাসে দুর্গন্ধ হতে পারে। এসব রোগ জিইয়ে রাখলে শুধু দাঁতই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, এ থেকে সংক্রমণ রক্তে মিশে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে যে কোনো অঙ্গ যেমন: হার্ট, মস্তিষ্ক, ফুসফুস, রক্ত ও হাড়। আবার তা অনেক রোগকে প্রভাবিতও করতে পারে যেমন, ডায়াবেটিস।

বিভিন্ন ক্ষত : হরমোনের তারতম্য, অপুষ্টি, রক্তস্বল্পতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, মানসিক চাপ, বিভিন্ন ক্রনিক রোগ এবং পান, জর্দা, গুল ও ধূমপানের কারণে মুখে অনেক ধরনের ক্ষত বা ঘা দেখা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দু-সপ্তাহের মধ্যে ক্ষতগুলো ভালো হয়ে যায়। তবে এর বেশি সময় স্থায়ী হলে অবহেলার সুযোগ নেই। কারণ, অবহেলিত ঘা ক্যানসারের মতো ভয়াবহ রোগের জন্ম নিতে পারে।

অতি সংবেদনশীলতা : জোরে জোরে বা দীর্ঘ সময় নিয়মবহির্ভূত দাঁত ব্রাশ, কয়লা বা ছাই ব্যবহার, দাঁতে দাঁত ঘষার অভ্যাস, দাঁতে সুতা কাটা, দাঁত দিয়ে কোমল পানীয়র বোতলের কর্ক বা ক্লিপ খোলা, অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিক-অ্যাসিডিটি থেকে দাঁতের স্তর ক্ষয় হয়ে দাঁত ঠান্ডা বা মিষ্টি খাবারে শিরশির করতে পারে।

কসমেটিক চিকিৎসা : চোয়াল ও দাঁতের সামঞ্জস্য না-থাকলে দাঁত উঁচু-নিচু, ফাঁকা হতে পারে। অন্যদিকে মুখের অভ্যন্তরীণ কোনো কারণ, বিশেষ কোনো খাবার বা শারীরিক কোনো রোগে দাঁত বিবর্ণ হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে কসমেটিক ডেন্টাল চিকিৎসা এখন শতভাগ সফল। এ ছাড়াও দুর্ঘটনা, চোয়ালের হাড় ভাঙা, চোয়ালের জয়েন্টে সমস্যা, মুখ শুষ্কতা, স্নায়ু রোগসহ নানা কারণে রোগীকে কষ্ট পেতে হয়। এ থেকে রক্ষা পেতে সঠিক নিয়মে নিয়মিত দাঁতের সব পৃষ্ঠ পরিষ্কার রাখতে হবে। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে মিষ্টিজাতীয় খাদ্যের পরিবর্তে স্বাস্থ্যবান্ধব খাবারে অভ্যস্থ হতে হবে, সর্বোপরি ছয় মাস অন্তর অনুমোদিত ডেন্টাল চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ : ডেন্টাল চিকিৎসক