ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কলোরেক্টাল ক্যানসার নিরাময়যোগ্য

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ একটা সময় ছিল যখন ক্যানসার শব্দটি শুনলেই সবাই ভয় পেয়ে যেত। যদিও এ রোগের প্রবণতা এখনো কমেনি, তবে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান এখন রোগীদের জন্য নিরাময়যোগ্য একাধিক উপায় বের করেছে। যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যানসার আক্রান্ত ব্যক্তিরা স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে পারেন।

কিছু ক্ষেত্রে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের জন্য একটিমাত্র চিকিৎসা থাকে। তবে বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসার নানা বিকল্প রয়েছে। যেমন, কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপির সঙ্গে অস্ত্রোপচার, ইমিউনোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি, হরমোন থেরাপি, স্টেম সেল প্রতিস্থাপন ইত্যাদি।

সাধারণভাবে ক্যানসার হলো শরীরের অন্যান্য অংশে আক্রমণ বা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাসহ অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধিজনিত এক ধরনের রোগ। ক্যানসারের সঙ্গে বিনাইন টিউমারের পার্থক্য হচ্ছে, বিনাইন টিউমার ছড়িয়ে পড়ে না। ক্যানসারের সম্ভাব্য লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে পিন্ড, অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস এবং অন্ত্রের গতিবিধি পরিবর্তন। মূলত তামাক ও অ্যালকোহলের অভ্যাস, স্থূলতা, দুর্বল ডায়েট ও শরীরচর্চার অভাবে ক্যানসার হতে পারে।

পুরুষদের সবচেয়ে সাধারণ ধরনের ক্যানসার হলো ফুসফুস ক্যানসার, প্রোস্টেট ক্যানসার, কলোরেক্টাল ক্যানসার এবং পাকস্থলীর ক্যানসার। নারীদের মধ্যে সর্বাধিক ধরনের ক্যানসারগুলো হলো স্তন ক্যান্সার, কলোরেক্টাল ক্যানসার, ফুসফুসের ক্যানসার এবং জরায়ুর ক্যানসার।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে ক্যানসার সম্পর্কিত কোনো গবেষণা বা জরিপ করা হয়নি, যা জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করতে পারত। ফুসফুসের ক্যানসার বা স্তন ক্যানসারের বিষয়ে একাধিক সচেতনতা প্রচারণা চালানো হলেও কোলোরেক্টাল ক্যানসার নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয় না।

প্রতিবছর মার্চ মাসে বিশ্বজুড়ে কলোরেক্টাল ক্যানসারের সচেতনতা নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। তবে এ উদ্যোগটি দেশে ব্যাপকভাবে পরিচালনা করা হয় না, যদিও এটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করা উচিত।

কোলন বা মলদ্বার থেকে কলোরেক্টাল ক্যানসার বা অন্ত্রের ক্যানসারের বিকাশ। উৎস বা বিকাশের ওপর ভিত্তি করে এ রোগটির নামকরণ করা হয়েছে মলদ্বার বা কোলন ক্যানসার। বেশিরভাগ কোলোরেক্টাল ক্যানসার বার্ধক্য এবং জীবনযাত্রার কারণে হয়। জেনেটিক ডিসঅর্ডারের কারণেও এ ক্যানসার হয়, তবে সংখ্যায় খুব কম।

এ ক্যানসারের ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে খাদ্যাভাস, স্থূলতা, ধূমপান এবং শরীরচর্চার অভাব। এ ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় এমন খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে গরুর মাংস, প্রক্রিয়াজাত মাংস ও অ্যালকোহল।

গ্লোবাল ক্যানসার অবজারভেটরির তথ্যমতে, ২০২০ সালে বাংলাদেশে ২ হাজার ৭৫৩ জন নতুন করে কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১ হাজার ৭৭২ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। আশাব্যঞ্জক খবর হলো, এ রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা রয়েছে। কলোরেক্টাল ক্যানসারের চিকিৎসার মধ্যে কিছু শল্যচিকিৎসা, রেডিয়েশন থেরাপি, কেমোথেরাপি এবং টার্গেটেড থেরাপির সমন্বয় থাকতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ভালো হবে যদি আপনি কোনো স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসার পুরো প্রক্রিয়া স্বাচ্ছন্দ্য ও বিশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করতে পারেন। প্রথমদিকে কেমোথেরাপির একটি সময় থাকতে পারে।

রোগীদের নিওঅ্যাডজুভেন্ট কেমোরডিওথেরাপি করার পর তাদের ইতিবাচক ফলাফলের জন্য অস্ত্রোপচার করা উচিত। এক্ষেত্রে দুই ধরনের সার্জারি রয়েছে-কিহোল সার্জারি এবং ওপেন সার্জারি। কিহোল সার্জারি (মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারি) বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কারণ, এক্ষেত্রে রোগী দ্রুত সুস্থ হবে এবং ওপেন সার্জারির চেয়ে কম ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ভবিষ্যতে ক্যানসার জয়ীদের সেকেন্ডারি থেরাপি হিসাবে শরীরচর্চার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে।

প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ সবসময়ই ভালো। কলোরেক্টাল ক্যানসার প্রতিরোধে নিয়মিতভাবে ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিনভিত্তিক খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এগুলো ছাড়াও শরীরের ওজন নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা, প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা এবং ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন থেকে বিরত থাকা উচিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কোলন ক্যানসার এড়ানোর ক্ষেত্রে জীবনের প্রতি যত্নশীল দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে এবং সচেতন হয়ে চলতে হবে।

অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোজাম্মেল হোসাইন : সার্জারি বিভাগের প্রধান. খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

কলোরেক্টাল ক্যানসার নিরাময়যোগ্য

আপডেট টাইম : ০৮:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ মার্চ ২০২১

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ একটা সময় ছিল যখন ক্যানসার শব্দটি শুনলেই সবাই ভয় পেয়ে যেত। যদিও এ রোগের প্রবণতা এখনো কমেনি, তবে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান এখন রোগীদের জন্য নিরাময়যোগ্য একাধিক উপায় বের করেছে। যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যানসার আক্রান্ত ব্যক্তিরা স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে পারেন।

কিছু ক্ষেত্রে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের জন্য একটিমাত্র চিকিৎসা থাকে। তবে বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসার নানা বিকল্প রয়েছে। যেমন, কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপির সঙ্গে অস্ত্রোপচার, ইমিউনোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি, হরমোন থেরাপি, স্টেম সেল প্রতিস্থাপন ইত্যাদি।

সাধারণভাবে ক্যানসার হলো শরীরের অন্যান্য অংশে আক্রমণ বা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাসহ অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধিজনিত এক ধরনের রোগ। ক্যানসারের সঙ্গে বিনাইন টিউমারের পার্থক্য হচ্ছে, বিনাইন টিউমার ছড়িয়ে পড়ে না। ক্যানসারের সম্ভাব্য লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে পিন্ড, অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস এবং অন্ত্রের গতিবিধি পরিবর্তন। মূলত তামাক ও অ্যালকোহলের অভ্যাস, স্থূলতা, দুর্বল ডায়েট ও শরীরচর্চার অভাবে ক্যানসার হতে পারে।

পুরুষদের সবচেয়ে সাধারণ ধরনের ক্যানসার হলো ফুসফুস ক্যানসার, প্রোস্টেট ক্যানসার, কলোরেক্টাল ক্যানসার এবং পাকস্থলীর ক্যানসার। নারীদের মধ্যে সর্বাধিক ধরনের ক্যানসারগুলো হলো স্তন ক্যান্সার, কলোরেক্টাল ক্যানসার, ফুসফুসের ক্যানসার এবং জরায়ুর ক্যানসার।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে ক্যানসার সম্পর্কিত কোনো গবেষণা বা জরিপ করা হয়নি, যা জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করতে পারত। ফুসফুসের ক্যানসার বা স্তন ক্যানসারের বিষয়ে একাধিক সচেতনতা প্রচারণা চালানো হলেও কোলোরেক্টাল ক্যানসার নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয় না।

প্রতিবছর মার্চ মাসে বিশ্বজুড়ে কলোরেক্টাল ক্যানসারের সচেতনতা নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। তবে এ উদ্যোগটি দেশে ব্যাপকভাবে পরিচালনা করা হয় না, যদিও এটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করা উচিত।

কোলন বা মলদ্বার থেকে কলোরেক্টাল ক্যানসার বা অন্ত্রের ক্যানসারের বিকাশ। উৎস বা বিকাশের ওপর ভিত্তি করে এ রোগটির নামকরণ করা হয়েছে মলদ্বার বা কোলন ক্যানসার। বেশিরভাগ কোলোরেক্টাল ক্যানসার বার্ধক্য এবং জীবনযাত্রার কারণে হয়। জেনেটিক ডিসঅর্ডারের কারণেও এ ক্যানসার হয়, তবে সংখ্যায় খুব কম।

এ ক্যানসারের ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে খাদ্যাভাস, স্থূলতা, ধূমপান এবং শরীরচর্চার অভাব। এ ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় এমন খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে গরুর মাংস, প্রক্রিয়াজাত মাংস ও অ্যালকোহল।

গ্লোবাল ক্যানসার অবজারভেটরির তথ্যমতে, ২০২০ সালে বাংলাদেশে ২ হাজার ৭৫৩ জন নতুন করে কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১ হাজার ৭৭২ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। আশাব্যঞ্জক খবর হলো, এ রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা রয়েছে। কলোরেক্টাল ক্যানসারের চিকিৎসার মধ্যে কিছু শল্যচিকিৎসা, রেডিয়েশন থেরাপি, কেমোথেরাপি এবং টার্গেটেড থেরাপির সমন্বয় থাকতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ভালো হবে যদি আপনি কোনো স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসার পুরো প্রক্রিয়া স্বাচ্ছন্দ্য ও বিশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করতে পারেন। প্রথমদিকে কেমোথেরাপির একটি সময় থাকতে পারে।

রোগীদের নিওঅ্যাডজুভেন্ট কেমোরডিওথেরাপি করার পর তাদের ইতিবাচক ফলাফলের জন্য অস্ত্রোপচার করা উচিত। এক্ষেত্রে দুই ধরনের সার্জারি রয়েছে-কিহোল সার্জারি এবং ওপেন সার্জারি। কিহোল সার্জারি (মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারি) বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কারণ, এক্ষেত্রে রোগী দ্রুত সুস্থ হবে এবং ওপেন সার্জারির চেয়ে কম ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ভবিষ্যতে ক্যানসার জয়ীদের সেকেন্ডারি থেরাপি হিসাবে শরীরচর্চার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে।

প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ সবসময়ই ভালো। কলোরেক্টাল ক্যানসার প্রতিরোধে নিয়মিতভাবে ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিনভিত্তিক খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এগুলো ছাড়াও শরীরের ওজন নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা, প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা এবং ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন থেকে বিরত থাকা উচিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কোলন ক্যানসার এড়ানোর ক্ষেত্রে জীবনের প্রতি যত্নশীল দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে এবং সচেতন হয়ে চলতে হবে।

অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোজাম্মেল হোসাইন : সার্জারি বিভাগের প্রধান. খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ