বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সন্ত্রাস দমনের নামে মিয়ানমারে যা হচ্ছে, দৃশ্যত তা গণহত্যা। জাতিসংঘও স্বীকার করে নিয়েছে সাধারণ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী দমনের নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনের এই জনগোষ্ঠীকে সমূলে উৎপাটন করতে চাইছে। মানবাধিকারের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘এথনিক ক্লিনজিং’। মিয়ানমারে এমন ঘটনা যে এবারই প্রথম হচ্ছে, তা নয়। এর আগেও এমন ঘটনা সেখানে ঘটেছে। প্রতিবারই বিশ্ব জনমত মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। কিন্তু এবারে মিয়ানমারের কৌশল একটু ভিন্ন কি না, তা ভেবে দেখতে হচ্ছে। রাখাইন রাজ্য পুরোপুরি রোহিঙ্গামুক্ত করতে পারলে দেশটিকে আর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়তে হবে না। গত বছর এমন কথা উচ্চারণ করেছিলেন নোবেল বিজয়ী ডেসমন্ড টুটু। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে লেখা এক চিঠিতে তিনি বলেছিলেন, ‘মিয়ানমারের পরিস্থিতি সামাল দেওয়া না গেলে সেখানেও রুয়ান্ডা, দারফুর, বসনিয়া বা কসোভোর মতো গণহত্যা অবধারিত। ’ অনিবার্যভাবে সে পরিস্থিতির দিকেই হাঁটছে মিয়ানমার।
মিয়ানমারের সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্রও যেন এই গণহত্যাকে সমর্থন করছে। বিশ্ব সরব হলেও মিয়ানমার এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে নীরব। প্রতিদিন স্রোতের মতো রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে। এরই মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন। তুরস্কের ফার্স্ট লেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীও রোহিঙ্গা আশ্রয় কেন্দ্র ঘুরে দেখেছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব রোহিঙ্গা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন। তিনি নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির কাছে লেখা এক চিঠিতে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য পরিস্থিতিকে অত্যন্ত ভয়াবহ বলে উল্লেখ করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলতে মিয়ানমারকে পরামর্শ দিয়েছে। রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান। মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। এত কিছুর পরও অভিযান থেকে বিরত থাকার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, বরং নিরাপত্তা পরিষদে যাতে বিষয়টি না ওঠে সে জন্য কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা করেছে মিয়ানমার।
মিয়ানমারকে এই গণহত্যা বন্ধ করতে হবে। রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা অধিবাসীদের ফিরিয়ে দিতে হবে তাদের অধিকার। ফিরিয়ে নিতে হবে বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কয়েক শ সদস্যকে দমনের নামে নির্বিচারে মানুষ হত্যা, আবাসভূমি থেকে তাদের উচ্ছেদ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। মানবিক কারণে এখন আশ্রয় দিলেও এই বিপুল জনগোষ্ঠীর ভার বহন করার মতো ক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। তা ছাড়া দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখেই বাংলাদেশকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাংলাদেশ কোনোভাবেই জেনেশুনে কোনো আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দেবে না। কাজেই রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনে আমাদের কূটনৈতিক তত্পরতা আরো বাড়াতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ডেকে দেখাতে হবে মানবিকতার বিপর্যয়। পরিকল্পিত ‘এথনিক ক্লিনজিং’-এর ভয়াবহতা সবার কাছে তুলে ধরার কোনো বিকল্প নেই।