বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর যে বর্বর নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চলছে তার প্রতিবাদে গোটা বিশ্ব সরব হয়েছে। দাবি উঠেছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার। সেই দাবির সঙ্গে এবার সুর মিলিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও। তারা অবিলম্বে রাখাইন প্রদেশে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে এবং দ্রুত আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে মিয়ানমারের প্রতি। এ পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠীর সুরও কিছুটা নরম হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের আগ মুহূর্তে তারা অনেকটা আকস্মিকভাবেই আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে। এ লক্ষ্যে মিয়ানমার একটি কমিটিও গঠন করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবারই সেই কমিটির প্রথম বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। ফলে আশা করা যায়, মিয়ানমার এবার কিছুটা হলেও সুবুদ্ধির পরিচয় দেবে।
মিয়ানমারে সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলার কথা বলে দেশটির সেনাবাহিনী নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষ হত্যার মিশনে নামে।
বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হয়, সেখানে গত তিন সপ্তাহে তিন থেকে ১০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এ অবস্থায় প্রাণভয়ে রোহিঙ্গারা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে থাকে। জাতিসংঘেরই হিসাবে এই তিন সপ্তাহে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনীর নিপীড়ন থেকে বাঁচতে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে অবস্থান নিয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্তমান নৃশংসতা এবং এত বিপুলসংখ্যক মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনা বিশ্ববিবেককেও আহত করেছে। সারা বিশ্বেই প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্য ও সুইডেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকার আহ্বান জানালে গত বুধবার রাতে নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তাতে সবাই মিয়ানমারে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার হীন প্রচেষ্টার নিন্দা জানায়। অবিলম্বে নৃশংসতা বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার এবং জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি নিরাপত্তা পরিষদ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করে এবং দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করায় জাতিসংঘকেও ধন্যবাদ দেয়। বাংলাদেশ প্রায় চার দশক ধরে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার ভরণ-পোষণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। আশা করা যায়, এবার বৈশ্বিক উদ্যোগের কারণে মিয়ানমার বাধ্য হবে সেই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে এবং তাদের সম্মানজনক পুনর্বাসন করতে।
বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের নিয়ে বহু রকম সমস্যা মোকাবেলা করছে। সেসব সমস্যা যাতে আর বৃদ্ধি না পায় সে জন্য দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। এরই মধ্যে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন শুরু হয়েছে। এটি দ্রুততর করতে হবে। সম্ভব হলে এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে তা সম্পন্ন করতে হবে। রোহিঙ্গারা যাতে সারা দেশে ছড়িয়ে যেতে না পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। গত বুধবার মানিকগঞ্জ থেকেও ২০ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামজুড়েই তারা ছড়িয়ে গেছে। জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা যাতে রোহিঙ্গাদের দলে টানতে না পারে সেদিকেও কড়া নজর রাখতে হবে। পাশাপাশি আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের থাকা, খাওয়া ও চিকিত্সা নিশ্চিত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।