ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিয়ন্ত্রণহীন বাজার

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। চাল-ডাল থেকে শুরু করে এমন কোনো খাদ্যপণ্য নেই, যার দাম বাড়েনি।

সবচেয়ে বেড়েছে শাকসবজির দাম। পুঁইশাকের ছোট ছোট আঁটিও এখন ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিকোয়। বেগুনের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। কোনো সবজিই এখন ৬০-৭০ টাকার নিচে নেই। কাঁচা মরিচের দাম তো লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কোনো কোনো বাজারে কাঁচা মরিচ তিন শ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ এখন দৈনন্দিন বাজারের চাহিদা মেটাতে গিয়ে রীতিমতো প্রমাদ গুনছে। এক বছর আগে দৈনন্দিন বাজারে যে পরিবারের মাসিক খরচ ছিল তিন হাজার টাকা, তা এখন ছয় হাজার টাকায়ও কুলোয় না। কিন্তু সেই পরিবারের আয় তো সে হারে বাড়েনি। তাই সবচেয়ে বিপদে আছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। যিনি দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করেন, তাঁর দিনের মজুরি একই আছে। ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পান যেসব চাকরিজীবী, তিনি ইচ্ছা করলেই তিন হাজার টাকার জায়গায় ছয় হাজার টাকা খরচ করতে পারেন না। বাধ্য হয়ে তাঁদের খাদ্যের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হচ্ছে। কারো কারো মাসিক বাজার খরচ অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে শরীরের ওপর। জীবনযাত্রার ওপর। অনেকে হয়তো ছেলে-মেয়েদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত করে পরিবার সামলাচ্ছেন। এই অবস্থার প্রতিকার কী?

ব্যবসায় এখন নীতি-নৈতিকতা নেই বললেই চলে। সুযোগ পেলেই কোনো না কোনো অজুহাতের কথা বলে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যেমন এখন বলা হচ্ছে, এবার বন্যার কারণে শাকসবজির উৎপাদন কমে গেছে। তাই বেশি দামে কিনে বেশি দামেই বিক্রি করতে হয়। ব্যবসায়ীদের এই কথাগুলো যে আদৌ সত্য নয়, কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তা উঠে এসেছে। দাম বেশি হলেও বাজারে কোনো পণ্যেরই কোনো ঘাটতি নেই। কারওয়ান বাজারে বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার সকালে পাইকারি বিক্রি হয়েছে (পাঁচ কেজির প্রতি পাল্লা হিসেবে) প্রতি কেজি বেগুন ৪৪ থেকে ৫৬ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ১২ থেকে ১৬ টাকা কেজি, কাঁচা পেঁপে ১২ থেকে ১৪ টাকা কেজি। অথচ সেখান থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরের খুচরা বাজারে একই সময়ে সবজির দাম ছিল অনেক বেশি—বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ও পেঁপে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এখানে ব্যবসায় ন্যূনতম সততা আছে কি? পাইকারি বিক্রেতা বা ফড়িয়ারা কৃষকদের কাছ থেকে এসব পণ্যই কিনছেন আরো কম দামে। বেগুন ২০-২৫ টাকার বেশি তো নয়ই। পেঁপে ও কুমড়া হয়তো পাঁচ-ছয় টাকা কেজি দরে কিনেছেন। তার অর্থ, এই দাম বাড়ার কারণে কৃষকরা কোনোভাবেই লাভবান হচ্ছেন না।

খুচরা বাজারে বিক্রেতাদের লাভ ও লোভের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাজারে তদারকিব্যবস্থা কঠোর করতে হবে। অযৌক্তিক মুনাফাকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তা না হলে দেশের বেশির ভাগ মানুষের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

নিয়ন্ত্রণহীন বাজার

আপডেট টাইম : ০৫:৫১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ অক্টোবর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। চাল-ডাল থেকে শুরু করে এমন কোনো খাদ্যপণ্য নেই, যার দাম বাড়েনি।

সবচেয়ে বেড়েছে শাকসবজির দাম। পুঁইশাকের ছোট ছোট আঁটিও এখন ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিকোয়। বেগুনের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। কোনো সবজিই এখন ৬০-৭০ টাকার নিচে নেই। কাঁচা মরিচের দাম তো লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কোনো কোনো বাজারে কাঁচা মরিচ তিন শ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ এখন দৈনন্দিন বাজারের চাহিদা মেটাতে গিয়ে রীতিমতো প্রমাদ গুনছে। এক বছর আগে দৈনন্দিন বাজারে যে পরিবারের মাসিক খরচ ছিল তিন হাজার টাকা, তা এখন ছয় হাজার টাকায়ও কুলোয় না। কিন্তু সেই পরিবারের আয় তো সে হারে বাড়েনি। তাই সবচেয়ে বিপদে আছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। যিনি দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করেন, তাঁর দিনের মজুরি একই আছে। ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পান যেসব চাকরিজীবী, তিনি ইচ্ছা করলেই তিন হাজার টাকার জায়গায় ছয় হাজার টাকা খরচ করতে পারেন না। বাধ্য হয়ে তাঁদের খাদ্যের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হচ্ছে। কারো কারো মাসিক বাজার খরচ অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে শরীরের ওপর। জীবনযাত্রার ওপর। অনেকে হয়তো ছেলে-মেয়েদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত করে পরিবার সামলাচ্ছেন। এই অবস্থার প্রতিকার কী?

ব্যবসায় এখন নীতি-নৈতিকতা নেই বললেই চলে। সুযোগ পেলেই কোনো না কোনো অজুহাতের কথা বলে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যেমন এখন বলা হচ্ছে, এবার বন্যার কারণে শাকসবজির উৎপাদন কমে গেছে। তাই বেশি দামে কিনে বেশি দামেই বিক্রি করতে হয়। ব্যবসায়ীদের এই কথাগুলো যে আদৌ সত্য নয়, কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তা উঠে এসেছে। দাম বেশি হলেও বাজারে কোনো পণ্যেরই কোনো ঘাটতি নেই। কারওয়ান বাজারে বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার সকালে পাইকারি বিক্রি হয়েছে (পাঁচ কেজির প্রতি পাল্লা হিসেবে) প্রতি কেজি বেগুন ৪৪ থেকে ৫৬ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ১২ থেকে ১৬ টাকা কেজি, কাঁচা পেঁপে ১২ থেকে ১৪ টাকা কেজি। অথচ সেখান থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরের খুচরা বাজারে একই সময়ে সবজির দাম ছিল অনেক বেশি—বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ও পেঁপে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এখানে ব্যবসায় ন্যূনতম সততা আছে কি? পাইকারি বিক্রেতা বা ফড়িয়ারা কৃষকদের কাছ থেকে এসব পণ্যই কিনছেন আরো কম দামে। বেগুন ২০-২৫ টাকার বেশি তো নয়ই। পেঁপে ও কুমড়া হয়তো পাঁচ-ছয় টাকা কেজি দরে কিনেছেন। তার অর্থ, এই দাম বাড়ার কারণে কৃষকরা কোনোভাবেই লাভবান হচ্ছেন না।

খুচরা বাজারে বিক্রেতাদের লাভ ও লোভের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাজারে তদারকিব্যবস্থা কঠোর করতে হবে। অযৌক্তিক মুনাফাকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তা না হলে দেশের বেশির ভাগ মানুষের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।