বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বিশাল জনসমর্থিত দল না হলেও রাজনীতিসচেতন সাধারণ মানুষের কাছে কোনো কোনো ছোট দলের গুরুত্বও অনেক সময় অপরিসীম হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে তেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছি আমরা এখন।
সে হিসেবে দেখা যায়, বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ছোট রাজনৈতিক সংগঠনে রয়েছেন অত্যন্ত প্রাজ্ঞ-প্রবীণ বড় বড় নেতা। উল্লিখিত সংগঠনগুলোর তুলনায় তাদের প্রতিষ্ঠাতা কিংবা নেতাদের গ্রহণযোগ্যতা এবং জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। কিন্তু জনবল কিংবা অর্থবলের অভাব যা-ই হোক, অত্যন্ত বড় মাপের নেতা থাকা সত্ত্বেও সাংগঠনিক দিক থেকে সেসব দল ব্যাপকতা লাভ করতে সমর্থ হয়নি। তার জন্য তথ্যাভিজ্ঞ মহলের অনেকে দায়ী করেন রাজনীতিগতভাবে পরমতসহিষ্ণুতা ও গণতান্ত্রিক নীতি-নৈতিকতার অভাব এবং ক্ষমতাসীন দলের ফ্যাসিবাদী আচরণকে। তা ছাড়া নিজেদের অন্তর্দলীয় কোন্দল, নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব-সংঘাত এবং পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষও কম দায়ী নয়। সে কারণেই হয়তো অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট দলের বড় নেতাদের নিয়ে এখনো বৃহত্তর ঐক্যের ভিত্তিতে কোনো চ্যালেঞ্জিং জোট গঠন করা সম্ভব হয়নি, যা সম্ভব হয়েছিল ১৯৫৪ সালে। অর্থপূর্ণ কোনো জোট গঠনের প্রক্রিয়া এখনো বেশি দূর এগোয়নি। বারবার হোঁচট খেয়ে গতিবেগ লাভ করার আগেই থেমে যায় ঐক্য প্রক্রিয়া। তার পরও বাংলাদেশের রাজনীতিসচেতন কিছু মানুষ বারবার আশায় বুক বাঁধে প্রতিষ্ঠিত সরকারি কিংবা তথাকথিত বিরোধী দলের বাইরে দু-একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক জোট গঠন করার লক্ষ্যে; দেশ পরিচালনায় কাঙ্ক্ষিত ও বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে।
গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী এবং মোটামুটি উদারপন্থী হিসেবে পরিচিত পাঁচটি, ক্ষুদ্র হলেও প্রভাবশালী, সংগঠনের সমন্বয়ে দেশে তৃতীয় ধারার একটি রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা বহুদিন ধরে চলছে বলে মাঝেমধ্যে খবর পাওয়া যায়। সে খবরগুলো মাঝেমধ্যে নতুন আশা জাগায়। আবার কখনো যথারীতি হতাশার নিগড়ে ঠেলে দেয়। গত ৯ অক্টোবর কালের কণ্ঠে প্রকাশিত একটি খবরে জানা গেছে, ‘ঝুলে গেছে তৃতীয় ধারার জোট গঠনের প্রক্রিয়া’। ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের কর্মসূচিতে যাচ্ছেন না তরুণ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না। কাউকে কিছু না জানিয়েই ড. কামাল হোসেন বিদেশে চলে গেছেন এক মাসের জন্য। উদারপন্থী বলে বিবেচিত সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বি চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি, মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং তরুণ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে তৃতীয় ধারার বহুল আলোচিত এই বিকল্প রাজনৈতিক জোটটি গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এ ব্যাপারে বেশ কিছু দিন ধরে কখনো ডা. বি চৌধুরীর বাসভবনে কিংবা কখনো অন্য কোথাও আলাপ-আলোচনা চালানো হয়েছে। ধারাবাহিক বৈঠকের অংশ হিসেবে গত ২ আগস্ট রাতে অধ্যাপক বি চৌধুরীর বাসায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের পর লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্ব নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে দেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়। তারপর ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে জাতীয় পর্যায়ে নাগরিক কমিটি ঘোষণা করে পাঁচটি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন ডা. বি চৌধুরী। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে যে হঠাৎই জোটের কাউকে কিছু না জানিয়ে বিদেশে চলে গেছেন গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেন। তা ছাড়া সাম্প্রতিককালে সম্ভাব্য ওই জোটের দুই শীর্ষ নেতা বিকল্পধারার সভাপতি অধ্যাপক বি চৌধুরী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামালের একাধিক কর্মসূচিতে দেখা যায়নি নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক, তরুণ নেতা মান্নাকে। পত্র-পত্রিকার অভিযোগে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা খুশি হলেও দেশের গণতন্ত্রমনা অধিকারসচেতন মানুষের একটি অংশ তাতে অত্যন্ত হতাশ ও দুঃখ প্রকাশ করেছে।
কেউ কেউ মনে করেছিলেন, মাহমুদুর রহমান মান্নাকে সম্ভাব্য জোটভুক্ত দলগুলোর লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক করাতে অসস্তুষ্ট হয়েছেন প্রবীণ নেতা ড. কামাল। তিনি নাকি চেয়েছিলেন মান্নার পরিবর্তে তাঁর দলের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীকে সে দায়িত্ব দিতে। তাই তিনি যেকোনো কারণেই হোক কাউকে কিছু না বলে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তাতে জাতীয় কমিটি গঠন ও পাঁচটি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে গণমাধ্যমে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে অধ্যাপক বি চৌধুরী জানিয়েছেন, কামাল হোসেনের অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন ও কমিটি গঠনপ্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এর পাশাপাশি সম্ভাব্য জোটের দুই শীর্ষ নেতা (অধ্যাপক বি চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন) আহূত কর্মসূচিতে দেখা যায়নি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে। রাজনীতিগতভাবে প্রবীণ নেতা অধ্যাপক বি চৌধুরী মান্নার ব্যাপারে অত্যন্ত আশাবাদী বলে জানা গেছে। অন্যদিকে ড. কামাল নাকি চেয়েছিলেন সুব্রত চৌধুরী লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক হলে ভবিষ্যতে নবগঠিত জোটের ওপর তাঁর দলের প্রভাব বজায় থাকবে। এসব বিষয় বাংলাদেশের বিরোধী দল বা জোটের রাজনীতিতে নতুন নয়। সে কারণেই এ দেশে স্বৈরশাসক কিংবা ফ্যাসিবাদীরা অতীতে এত দীর্ঘ সময় ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছে। সময়োপযোগী বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি নিতে ব্যর্থ হয় বিরোধী দলগুলো। তা ছাড়া কোনো কর্মসূচি নিয়েও তা বাস্তবায়ন করতে পারে না নিজেদের মধ্যে বৃহত্তর সমাঝোতা ও ঐক্যের অভাবে। এ কথাগুলো দেশের অত্যন্ত প্রাজ্ঞ ও প্রবীণ নেতা ড. কামাল হোসেনকে লক্ষ্য করে বলা হচ্ছে না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভিন্ন ঐক্য প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত ছোটখাটো বিষয়গুলোও বিরাট উপসর্গ হিসেবে কাজ করে, যা মোটেও কাম্য নয়। উপযুক্ত ব্যক্তিকে যথাযথ দায়িত্ব না দিলে কোনো কর্মসূচি যেমন তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাবে না, তেমনি ভবিষ্যৎ নেতৃত্বও গড়ে উঠবে না।
সর্বশেষ ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সভার পর চলতি মাসের ১১ তারিখের মধ্যে সম্ভাব্য জোটের নেতারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অধ্যাপক বি চৌধুরীর বাসায় বসার কথা ছিল। তাতে রাজনৈতিক কর্মসূচি কিংবা বিষয়াদির আগে অরাজনৈতিক ইস্যু অর্থাৎ সম্ভাব্য জোটের নেতাদের ব্যক্তিগত মান-অভিমান কিংবা ক্ষোভের অবসান ঘটানোই একটি অগ্রাধিকারমূলক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সম্ভাব্য জোটের একজন অন্যতম প্রধান নেতা কিংবা রাজনৈতিক কারিগর ড. কামাল হোসেন এখনো দেশে এসে পৌঁছেছেন বলে জানা যায়নি। হয়তো আরো কিছুটা সময় তাঁর লাগতে পারে। তবে অতীতে বিভিন্ন ইস্যুতে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও মহাসচিব মোস্তফা মহসীন মন্টুর দল অনেক যৌথ কর্মসূচি পালন করেছে। মহানগর নাট্যমঞ্চের আঙিনা কিংবা নগরীর অন্যান্য সভাস্থলে তাঁদের যৌথভাবে আয়োজিত সভায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মূল্যবান বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। তাতে সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে জনমনে অনেক নতুন আশার সঞ্চার হয়েছিল। সুধী ও শিক্ষিত বলে পরিচিত এই নেতাদের সঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব অধ্যাপক বি চৌধুরীর বর্তমান বিকল্পধারার মেলবন্ধনে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি নতুন মেরুকরণের সূচনা হতে যাচ্ছিল। কিন্তু সেসব প্রাজ্ঞ নেতার অসতর্কতা কিংবা অবহেলায় যদি সম্ভাব্য জোট গঠনের বর্তমান উদ্যোগটি ভেস্তে যায়, তবে দেশের অধিকারসচেতন নাগরিকদের একটি বড় অংশ তাঁদের ক্ষমা করতে পারবে না। ড. কামাল হোসেন শুধু স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানপ্রণেতা কিংবা এ দেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রীই ছিলেন না, দেশের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী তিনি। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনি একজন নামকরা আইনজীবী। প্রবীণ এ গুরুত্বপূর্ণ নেতা আর বেশি দিন হয়তো দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সোচ্চার কিংবা কর্মক্ষম থাকতে পারবেন না। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মেই তাঁকে হয়তো একদিন রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করতে হবে। একই কথা বলা যায় অধ্যাপক বি চৌধুরীর বেলায়ও। দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তারও আগে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজনীতিসহ জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এ প্রবীণ নেতা বিভিন্ন ছোট অথচ প্রভাবশালী দল নিয়ে সমমনাদের একটি জোট গঠনে সম্প্রতি অত্যন্ত তত্পর হয়ে উঠেছেন। তিনি মনে করেছিলেন এটিই হবে তাঁর জীবনের পড়ন্তবেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান, যা এ দেশে গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার, আইনের শাসন ও প্রকৃত অর্থে নাগরিকদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করবে; অর্থ-সম্পদ কিংবা প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জনের লোভে হন্যে হয়ে ওঠা মানুষের মধ্যে ত্যাগের আদর্শ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনবে। সে কারণেই তিনি তাঁর বাসভবনে বারবার সভা ডাকেন এবং সম্ভাব্য জোট গঠনের উদ্দেশ্যে সমমনা নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি চান না কোনোমতেই তাঁর এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হোক। তা ছাড়া তরুণ নেতা হিসেবে দেশের অনেকেই মাহমুদুর রহমান মান্নার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনায় অত্যন্ত আশাবাদী। তাঁর (মান্নার) মতো সম্ভাবনাময় তরুণ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের জন্য চাই একটি যোগ্য প্ল্যাটফর্ম। দেশের অনেক চিন্তাশীল মানুষই ভেবেছিলেন, ‘তৃতীয় ধারার জোট’ই হবে সে প্ল্যাটফর্ম, যা একটি বিকল্পধারা সৃষ্টিশীল নেতৃত্ব গড়ে তুলবে।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির গতিবিধি কিংবা কর্মপন্থা অনুধাবন করা দুঃসাধ্য নয়। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির জন্য সব কিছু অত্যন্ত কঠিন করে তুলেছে। তার জন্য বিএনপির বিভ্রান্ত রাজনীতিও কম দায়ী নয়। বহু আগে থেকেই ক্রমে ক্রমে এ দলটি যেন গণসংগঠনের সব চরিত্র হারিয়ে ফেলছিল। এ দলের নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি একপর্যায়ে অত্যন্ত কুক্ষিগত হয়ে পড়েছিল। সে পর্যায়ে জামায়াতে ইসলামী তাদের আত্মরক্ষা এবং রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্য ক্রমে ক্রমে বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আশ্রয়প্রার্থী হয়ে পড়ে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নিজ সংগঠনের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যের কথা ভুলে বিএনপি নেতৃত্ব যেন তাদের সঙ্গে একাকার হয়ে গিয়েছিল। অথচ ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর পূর্ণাঙ্গ নির্বাচনী জোট গঠন ছাড়াই বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। সেই থেকে এক-এগারো পরবর্তী রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামীকে শাসন করতে গিয়ে কৌশলে বিএনপিকেও গৃহবন্দি করে ফেলেছে। দেশে তখন গৃহপালিত বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হয় পতিত স্বৈরশাসক এরশাদের জাতীয় পার্টি। বিরোধী দলে থেকেও মন্ত্রিত্বের পদ পাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে ওঠা কিছু নির্লজ্জ মানুষ আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এখনো আবার নানা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় বিকল্প নেতৃত্ব আসতে পারে ‘তৃতীয় ধারার জোট’ থেকে। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে তাঁরা নিজেরাই যদি তাঁদের মান-অভিমাননির্ভর অরাজনৈতিক কিছু বিষয় নিয়ে নয়া জোট গঠনের সব সম্ভাবনাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেন, তাহলে তো তাঁদের গণতন্ত্রের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা নেহাত অযৌক্তিক হবে না।
সম্ভাব্য ‘তৃতীয় ধারার জোট’ নেতাদের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি তাঁদের দলের তুলনায় অনেক বড়। প্রবীণ নেতা ড. কামাল হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বি চৌধুরী, ছাত্র ও যুবক শ্রেণির এককালের কণ্ঠস্বর আ স ম আবদুর রব, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী এবং বিশেষ করে তরুণ, নির্যাতিত ও সংগ্রামী নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নাকে নিয়ে গঠিত জোট দেশবাসীর সমর্থন ও আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ হলে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যাবে যে এ ব্যর্থতা উল্লিখিত নেতাদের, জনগণের নয়। গণসংগঠন গড়ে তোলার অভিজ্ঞতা অধ্যাপক বি চৌধুরী, আ স ম আবদুর রব কিংবা মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো অনেকেরই নেই। তাই বয়স বিবেচনায় (মান্না ছাড়া) তাঁদের সামনে দিয়ে সব রাজনৈতিক বাসই যদি একে একে চলে যায়, তাহলে তাঁদের নেতৃত্ব ও চিন্তাধারা আর বাস্তবায়িত হওয়ার নয়। তাতে দেশ ভবিষ্যতে এক চরম নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক শূন্যতা এবং সংকটে পড়বে বলে অনেকে মনে করেন। এ অবস্থায় ড. কামাল হোসেনসহ সম্ভাব্য নয়া জোটের সবারই তুচ্ছ বিষয় ভুলে তাঁদের জীবনের সবটুকু ঢেলে দেওয়ার সময় এখন। তাই এক কঠিন ব্রত নিয়ে এখনই ঐক্যবদ্ধ ও পরিকল্পিতভাবে ময়দানে নামা অত্যন্ত জরুরি।