বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পরিবেশদূষণের কারণে ঘটা মৃত্যুর দিক থেকে বাংলাদেশ শীর্ষে অবস্থান করছে। আমরা হাসব, না কাঁদব? বাংলাদেশের পরই রয়েছে আফ্রিকার ছোট্ট ও দরিদ্র দেশ সোমালিয়া।
বাংলাদেশের অবস্থা সেই দেশটির চেয়েও খারাপ। এখানে প্রতি চারজনে একজন মারা যায় পরিবেশদূষণজনিত কারণে। তাহলে আমাদের এত উন্নয়ন কাদের জন্য, যদি মানুষের জীবনই রক্ষা না পায়।
বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী স্বাস্থ্য সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট’ গত বৃহস্পতিবার পরিবেশদূষণজনিত মৃত্যু নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘দ্য ল্যানসেট কমিশন অন পলিউশন অ্যান্ড হেলথ’ এই গবেষণাটি করেছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, বর্তমানে বিশ্বে প্রতিবছর পরিবেশদূষণের কারণে ৯০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ৯২ শতাংশই মারা যায় দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। এই মৃত্যুর মিছিলে থাকা শীর্ষ ১০টি দেশ হলো যথাক্রমে—বাংলাদেশ, সোমালিয়া, চাদ, নাইজার, ভারত, নেপাল, সাউথ সুদান, ইরিত্রিয়া, মাদাগাস্কার এবং পাকিস্তান। এর মধ্যে ভারত দূষণ রোধে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে।
আশা করা যায়, শিগগিরই তারা অবস্থান বদলাতে পারবে; কিন্তু বাংলাদেশ? বলতে গেলে এখনো কোনো পদক্ষেপই দৃশ্যমান নয়। তাহলে বাংলাদেশ কি দূষণ রোধে ও মানুষের জীবন রক্ষায় দরিদ্রতম দেশগুলোর চেয়েও দরিদ্র থেকে যাবে?
ঢাকা অনেক বছর ধরেই পৃথিবীর নিকৃষ্টতম শহরগুলোর একটি। এরও অন্যতম কারণ পরিবেশদূষণ। অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন, বাড়ি ও কলকারখানার গলাগলি ভাব, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, নাগরিক অসচেতনতা—এসবই পরিবেশদূষণের কারণ। উচ্চ আদালত দুই দশক ধরে তাগাদা দেওয়ার পর ট্যানারি কারখানা সরেছে বটে; কিন্তু সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে যেখানে গেছে সেখানকার পরিবেশ দূষিত করে চলেছে। ঢাকায় বা বড় শহরগুলোর কোনটিতে কত গাড়ি চলবে, গণপরিবহন বেশি চলবে, না ব্যক্তিগত গাড়ি বেশি চলবে, কত দিনের পুরনো গাড়ি চলতে পারবে—তার কোনো বাস্তবসম্মত সীমা নির্ধারিত হয়নি। বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট নির্মাণের নামে চলে ধুলাবালি ছড়ানোর প্রতিযোগিতা। ময়লা-আবর্জনা রাস্তার পাশে পড়ে থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। খাওয়ার পানির উেস গিয়ে মেশে। মশা-মাছি রোগ ছড়ায়। ঢাকায় কারখানা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ কোথায়? প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কারখানার অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, দূষণজনিত মৃত্যুর জন্য প্রধানত দায়ী বায়ুদূষণ। এর পরই রয়েছে পানিদূষণ। দায়ী অন্যান্য দূষণের মধ্যে রয়েছে মাটিদূষণ, রাসায়নিক দূষণ, কর্মক্ষেত্রের পরিবেশদূষণ, নাগরিক দূষণ ইত্যাদি। বাংলাদেশে এর সবগুলোই প্রবলভাবে সক্রিয়। সারা দেশেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য কারখানা। এর অনেকগুলোই ক্ষতিকর, এমনকি ক্যান্সার সৃষ্টিকারী বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়। ডায়িং কারখানার কথাই ধরা যাক। এসব কারখানায় ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্য আশপাশের ডোবা বা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। সেগুলো পানি ও মাটি দুটোই দূষিত করে।
উন্নয়নের লক্ষ্য যদি হয় মানুষ, তাহলে পরিবেশদূষণ রোধে আমাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে এবং কঠোরভাবে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।