ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৃষ্টিতে ঢাকার দুরবস্থা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ কার্তিক মাসের বৃষ্টিতেও রাজধানী প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল। শনিবার পুরো দিন, এমনকি রাতেও ছিল প্রায় একই অবস্থা।

রাস্তায় গাড়িগুলো সাঁতার কেটেছে। অচল হয়েছে। যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকেছে মানুষ। কোনো কোনো রাস্তায় নৌকা চলেছে। ছেলে-মেয়েদের সাঁতার কাটতেও দেখা গেছে। তার ওপর রাস্তায় অসংখ্য গর্ত, ভাঙাচুরা তো আছেই। রিকশা-ভ্যান উল্টে যাওয়ায় অনেককে নোংরা পানিতে ডুব দিয়ে উঠতে হয়েছে। হাত-পা ভেঙেছে অনেকের। হাজার হাজার কণ্ঠে বিরক্তি উপচে পড়েছে। কেন এমন হচ্ছে? এই পরিমাণ বৃষ্টি কি আগে কখনো হয়নি। তখন তো এভাবে পুরো শহর তলিয়ে যায়নি। এখন তলাচ্ছে কেন? নগর বিশেষজ্ঞরা একবাক্যে বলছেন, ঢাকার ড্রেনেজ সিস্টেম বা নিষ্কাশনব্যবস্থা পুরোপুরি ধসে পড়েছে। খাল-নদীও ভরাট হয়ে গেছে। ফলে বৃষ্টির পানি নামতে পারছে না। এর প্রতিকার কী?

এ বছর বর্ষা অনেকটাই প্রলম্বিত হয়েছে। মার্চ থেকেই শুরু হয়েছিল অতিমাত্রায় বর্ষণ। হাওরাঞ্চলের বোরো ধান পুরোটাই গেছে। সারা দেশ কয়েক দফা বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। অক্টোবরের শেষার্ধেও চলছে সেই বৃষ্টি। গত শনিবারের বৃষ্টিতেও দক্ষিণাঞ্চলের বহু জনপদ পানির নিচে চলে গেছে। রাজধানীসহ কয়েকটি শহরেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকায় যানজট কমানোর লক্ষ্যে একের পর এক ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে রাস্তাঘাট নির্মাণ করা হচ্ছে। আবার বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় তা ভেঙেও যাচ্ছে। কোটি কোটি টাকা পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনার অনেক সমালোচনা আছে। কিন্তু আমাদের পরিকল্পনাবিদরা সেসব কি আমলে নেন? কেন আমাদের ড্রেনেজ-ব্যবস্থা এভাবে ভেঙে পড়বে? তাহলে রাষ্ট্রীয় অর্থে ঢাকা ওয়াসার মতো এত বড় শ্বেতহস্তী পালন করে লাভ কী? ঢাকার খালগুলো উদ্ধারের ব্যাপারে বহু আলোচনা, বহু লেখালেখি হয়েছে। এমনকি উচ্চ আদালত থেকেও বারবার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়েছে কি? কিছুই যে হয়নি, তার প্রমাণ তো সামান্য বৃষ্টিতেই এমন অসহনীয় জলাবদ্ধতা। অনেক নিচু এলাকায় বাড়িঘরেও পানি ঢুকে গেছে। বিশ্বের নিকৃষ্টতম এই শহরকে আর কোথায় নিয়ে যেতে চান আমাদের পরিকল্পনাবিদরা!

শুধু ঢাকা নয়, অনেক বড় শহরের অবস্থাও আজ শোচনীয়। চট্টগ্রামে এ বছর বার কয়েক এমন অবস্থা হয়েছে যে সেখানকার মানুষকে রীতিমতো পালিয়ে বাঁচার চিন্তা করতে হয়েছে কিন্তু পালিয়ে যাওয়া সহজ নয়। তাই সেখানেই থাকতে হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠ ক্রমে উঁচু হচ্ছে। আবহাওয়া ক্রমেই চরমভাবাপন্ন হচ্ছে। তার সঙ্গে সংগতি রেখেই আমাদের চলতে হবে। আমরা চাই, অবিলম্বে ঢাকার খালগুলো পুনরুদ্ধার ও পানি চলাচলের উপযুক্ত করা হোক। ড্রেনেজ-ব্যবস্থা সচল করা হোক। চারপাশের নদীগুলো খনন ও নাব্য করা হোক। ঢাকায় বসবাস করা প্রায় দুই কোটি মানুষের দুর্দশা দূর করা হোক।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

বৃষ্টিতে ঢাকার দুরবস্থা

আপডেট টাইম : ০৫:৫২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ কার্তিক মাসের বৃষ্টিতেও রাজধানী প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল। শনিবার পুরো দিন, এমনকি রাতেও ছিল প্রায় একই অবস্থা।

রাস্তায় গাড়িগুলো সাঁতার কেটেছে। অচল হয়েছে। যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকেছে মানুষ। কোনো কোনো রাস্তায় নৌকা চলেছে। ছেলে-মেয়েদের সাঁতার কাটতেও দেখা গেছে। তার ওপর রাস্তায় অসংখ্য গর্ত, ভাঙাচুরা তো আছেই। রিকশা-ভ্যান উল্টে যাওয়ায় অনেককে নোংরা পানিতে ডুব দিয়ে উঠতে হয়েছে। হাত-পা ভেঙেছে অনেকের। হাজার হাজার কণ্ঠে বিরক্তি উপচে পড়েছে। কেন এমন হচ্ছে? এই পরিমাণ বৃষ্টি কি আগে কখনো হয়নি। তখন তো এভাবে পুরো শহর তলিয়ে যায়নি। এখন তলাচ্ছে কেন? নগর বিশেষজ্ঞরা একবাক্যে বলছেন, ঢাকার ড্রেনেজ সিস্টেম বা নিষ্কাশনব্যবস্থা পুরোপুরি ধসে পড়েছে। খাল-নদীও ভরাট হয়ে গেছে। ফলে বৃষ্টির পানি নামতে পারছে না। এর প্রতিকার কী?

এ বছর বর্ষা অনেকটাই প্রলম্বিত হয়েছে। মার্চ থেকেই শুরু হয়েছিল অতিমাত্রায় বর্ষণ। হাওরাঞ্চলের বোরো ধান পুরোটাই গেছে। সারা দেশ কয়েক দফা বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। অক্টোবরের শেষার্ধেও চলছে সেই বৃষ্টি। গত শনিবারের বৃষ্টিতেও দক্ষিণাঞ্চলের বহু জনপদ পানির নিচে চলে গেছে। রাজধানীসহ কয়েকটি শহরেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকায় যানজট কমানোর লক্ষ্যে একের পর এক ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে রাস্তাঘাট নির্মাণ করা হচ্ছে। আবার বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় তা ভেঙেও যাচ্ছে। কোটি কোটি টাকা পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনার অনেক সমালোচনা আছে। কিন্তু আমাদের পরিকল্পনাবিদরা সেসব কি আমলে নেন? কেন আমাদের ড্রেনেজ-ব্যবস্থা এভাবে ভেঙে পড়বে? তাহলে রাষ্ট্রীয় অর্থে ঢাকা ওয়াসার মতো এত বড় শ্বেতহস্তী পালন করে লাভ কী? ঢাকার খালগুলো উদ্ধারের ব্যাপারে বহু আলোচনা, বহু লেখালেখি হয়েছে। এমনকি উচ্চ আদালত থেকেও বারবার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়েছে কি? কিছুই যে হয়নি, তার প্রমাণ তো সামান্য বৃষ্টিতেই এমন অসহনীয় জলাবদ্ধতা। অনেক নিচু এলাকায় বাড়িঘরেও পানি ঢুকে গেছে। বিশ্বের নিকৃষ্টতম এই শহরকে আর কোথায় নিয়ে যেতে চান আমাদের পরিকল্পনাবিদরা!

শুধু ঢাকা নয়, অনেক বড় শহরের অবস্থাও আজ শোচনীয়। চট্টগ্রামে এ বছর বার কয়েক এমন অবস্থা হয়েছে যে সেখানকার মানুষকে রীতিমতো পালিয়ে বাঁচার চিন্তা করতে হয়েছে কিন্তু পালিয়ে যাওয়া সহজ নয়। তাই সেখানেই থাকতে হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠ ক্রমে উঁচু হচ্ছে। আবহাওয়া ক্রমেই চরমভাবাপন্ন হচ্ছে। তার সঙ্গে সংগতি রেখেই আমাদের চলতে হবে। আমরা চাই, অবিলম্বে ঢাকার খালগুলো পুনরুদ্ধার ও পানি চলাচলের উপযুক্ত করা হোক। ড্রেনেজ-ব্যবস্থা সচল করা হোক। চারপাশের নদীগুলো খনন ও নাব্য করা হোক। ঢাকায় বসবাস করা প্রায় দুই কোটি মানুষের দুর্দশা দূর করা হোক।