ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিকৃষ্টতম শহর ঢাকা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পৃথিবীর নিকৃষ্টতম কয়েকটি শহরের একটি ঢাকা মহানগরী। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) ২০১৭ সালে বসবাসযোগ্যতার বিচারে বিশ্বের ১৪০টি শহরের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে ঢাকার অবস্থান ১৩৭তম।

ঢাকার চেয়েও খারাপ যে তিনটি শহর রয়েছে তার মধ্যে আছে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার দামেস্ক, লিবিয়ার ত্রিপলি ও নাইজেরিয়া লাগোস। এই তালিকা তৈরিতে যে ৪০টি সূচক ব্যবহার করা হয়, তার প্রায় সব কয়টিতেই ঢাকার অবস্থান নিচের দিকে। তার পরও মানুষ এখানে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছে। তার কারণ প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ থেকে শুরু করে ছোটখাটো কর্মসংস্থান পর্যন্ত প্রায় সবই এখনো ঢাকাকেন্দ্রিক। তাই ধারণা করা হচ্ছে, শিগগিরই ঢাকার জনসংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে যাবে। ঢাকার পরিবেশ, জলাবদ্ধতা, যানজট, নিরাপত্তা—সব কিছুরই আরো অবনতি হবে। অন্যদিকে নানা ধরনের সেবা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ জীবনযাত্রার সব খরচই শুধু বাড়তে থাকবে। তাতে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট শহরের তকমাটি স্থায়ীভাবে ঢাকার জন্য নির্ধারিত হয়ে যেতে পারে।

ঢাকার এই অবস্থা এক দিনে হয়নি। বহু আগে থেকেই পরিকল্পনাহীনভাবে বেড়েছে ঢাকা শহর। গত সপ্তাহে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজধানীর ৬০ শতাংশ আবাসনই গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। রাজধানীতে এমন অনেক গলি-ঘুপচি আছে, যেগুলোতে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি তো দূরের কথা একটা অ্যাম্বুল্যান্সও ঢুকতে পারে না। প্রধান সড়কগুলোও অপ্রশস্ত, আঁকাবাঁকা এবং প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। গণপরিবহনের বদলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ি। পথচারীরা যেমন যত্রতত্র রাস্তা পার হয়, তেমনি গাড়িচালকরাও নিয়ম-কানুনের ধার ধারে না। ফলে রাস্তায় শৃঙ্খলা বলে কিছুই নেই। এতে অসহনীয় যানজট হচ্ছে। প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। জ্বালানির অপব্যয় হচ্ছে। বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ—দুটিই বাড়ছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, যেখানে শব্দদূষণ ৬৫ ডেসিবেলের ওপরে গেলে হৃদরোগ হয়, ৯০ ডেসিবেলের ওপরে গেলে আলসার হয়, সেখানে ঢাকার কোনো কোনো এলাকায় শব্দদূষণ ১৩৫ ডেসিবেল পর্যন্ত। এতে মানুষের শ্রবণক্ষমতাও নষ্ট হচ্ছে।

এবার বর্ষা বেশ দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল। মার্চ থেকে শুরু করে অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকায় জলাবদ্ধতা ব্যাপক রূপ নিয়েছিল। নিষ্কাশনব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। ৪৬টির মধ্যে মাত্র ২৬টি খাল কোনো রকমে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর অবস্থাও তথৈবচ। দখল, দূষণ ও ভরাট হয়ে সেগুলোও এখন মৃতপ্রায়। ফলে নগরীর জলাবদ্ধতা প্রায় স্থায়ী রূপ নিয়েছে। বর্জ্য অপসারণব্যবস্থাও ভালো নয়। মানুষেরও সচেতনতার অভাব রয়েছে। যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। নিরাপত্তার অভাব কতটা তীব্র তা খুন-খারাবির চিত্র দেখলেই বোঝা যায়। এমন হাজারো সমস্যা থেকে ঢাকা শহরকে টেনে তোলা খুব সহজ নয়। কিছু বিচ্ছিন্ন উন্নয়নকাজ দিয়ে হবে না। ঢাকার অনেক সুযোগ-সুবিধার বিকেন্দ্রীকরণ করাও জরুরি। এ জন্য চাই মহাপরিকল্পনা এবং তার দ্রুত ও সঠিক বাস্তবায়ন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

নিকৃষ্টতম শহর ঢাকা

আপডেট টাইম : ০৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ নভেম্বর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পৃথিবীর নিকৃষ্টতম কয়েকটি শহরের একটি ঢাকা মহানগরী। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) ২০১৭ সালে বসবাসযোগ্যতার বিচারে বিশ্বের ১৪০টি শহরের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে ঢাকার অবস্থান ১৩৭তম।

ঢাকার চেয়েও খারাপ যে তিনটি শহর রয়েছে তার মধ্যে আছে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার দামেস্ক, লিবিয়ার ত্রিপলি ও নাইজেরিয়া লাগোস। এই তালিকা তৈরিতে যে ৪০টি সূচক ব্যবহার করা হয়, তার প্রায় সব কয়টিতেই ঢাকার অবস্থান নিচের দিকে। তার পরও মানুষ এখানে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছে। তার কারণ প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ থেকে শুরু করে ছোটখাটো কর্মসংস্থান পর্যন্ত প্রায় সবই এখনো ঢাকাকেন্দ্রিক। তাই ধারণা করা হচ্ছে, শিগগিরই ঢাকার জনসংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে যাবে। ঢাকার পরিবেশ, জলাবদ্ধতা, যানজট, নিরাপত্তা—সব কিছুরই আরো অবনতি হবে। অন্যদিকে নানা ধরনের সেবা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ জীবনযাত্রার সব খরচই শুধু বাড়তে থাকবে। তাতে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট শহরের তকমাটি স্থায়ীভাবে ঢাকার জন্য নির্ধারিত হয়ে যেতে পারে।

ঢাকার এই অবস্থা এক দিনে হয়নি। বহু আগে থেকেই পরিকল্পনাহীনভাবে বেড়েছে ঢাকা শহর। গত সপ্তাহে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজধানীর ৬০ শতাংশ আবাসনই গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। রাজধানীতে এমন অনেক গলি-ঘুপচি আছে, যেগুলোতে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি তো দূরের কথা একটা অ্যাম্বুল্যান্সও ঢুকতে পারে না। প্রধান সড়কগুলোও অপ্রশস্ত, আঁকাবাঁকা এবং প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। গণপরিবহনের বদলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ি। পথচারীরা যেমন যত্রতত্র রাস্তা পার হয়, তেমনি গাড়িচালকরাও নিয়ম-কানুনের ধার ধারে না। ফলে রাস্তায় শৃঙ্খলা বলে কিছুই নেই। এতে অসহনীয় যানজট হচ্ছে। প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। জ্বালানির অপব্যয় হচ্ছে। বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ—দুটিই বাড়ছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, যেখানে শব্দদূষণ ৬৫ ডেসিবেলের ওপরে গেলে হৃদরোগ হয়, ৯০ ডেসিবেলের ওপরে গেলে আলসার হয়, সেখানে ঢাকার কোনো কোনো এলাকায় শব্দদূষণ ১৩৫ ডেসিবেল পর্যন্ত। এতে মানুষের শ্রবণক্ষমতাও নষ্ট হচ্ছে।

এবার বর্ষা বেশ দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল। মার্চ থেকে শুরু করে অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকায় জলাবদ্ধতা ব্যাপক রূপ নিয়েছিল। নিষ্কাশনব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। ৪৬টির মধ্যে মাত্র ২৬টি খাল কোনো রকমে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর অবস্থাও তথৈবচ। দখল, দূষণ ও ভরাট হয়ে সেগুলোও এখন মৃতপ্রায়। ফলে নগরীর জলাবদ্ধতা প্রায় স্থায়ী রূপ নিয়েছে। বর্জ্য অপসারণব্যবস্থাও ভালো নয়। মানুষেরও সচেতনতার অভাব রয়েছে। যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। নিরাপত্তার অভাব কতটা তীব্র তা খুন-খারাবির চিত্র দেখলেই বোঝা যায়। এমন হাজারো সমস্যা থেকে ঢাকা শহরকে টেনে তোলা খুব সহজ নয়। কিছু বিচ্ছিন্ন উন্নয়নকাজ দিয়ে হবে না। ঢাকার অনেক সুযোগ-সুবিধার বিকেন্দ্রীকরণ করাও জরুরি। এ জন্য চাই মহাপরিকল্পনা এবং তার দ্রুত ও সঠিক বাস্তবায়ন।